পদোন্নতি নেই ৬ হাজার শিক্ষকের

বঞ্চিতদের কেউ দুই, কেউ পাঁচ, কেউবা ৮ বছর ধরে পদোন্নতির অপেক্ষায়

চাকরির মৌলিক সব শর্ত পূরণ করেও পদোন্নতি পাচ্ছেন না সরকারি কলেজের পাঁচ হাজার ৭৪৮ জন শিক্ষক, তারা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য। তাদের মধ্যে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে দুই হাজার ৪৪০ জন এবং সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে তিন হাজার ৩০৮ জন শিক্ষক পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ করেছেন। এসব শিক্ষক শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি পাচ্ছেন না।

বঞ্চিত শিক্ষকদের মধ্যে কেউ দুই, কেউ পাঁচ, কেউবা আট বছর ধরে পদোন্নতির অপেক্ষায় আছেন। শিক্ষা প্রশাসনে গত দুই বছর ধরেই কলেজ শিক্ষকদের পদোন্নতির তোড়জোড় চললেও এ কার্যক্রম চূড়ান্ত হচ্ছে না। পদোন্নতির জন্য শিক্ষকরা প্রায়ই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ভিড় করছেন, বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করছেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপকের এক হাজার ৮০টি এবং সহকারী অধ্যাপকের ৫৬০টি পদ শূন্য রয়েছে। এসব কর্মকর্তারা দুই থেকে আট বছর আগেই পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ করেছেন। এই সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বেশ কয়েকবার পদোন্নতির আশ্বাস দিলেও তা আর হয়নি। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি’র আহ্বায়ক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আইকে সেলিম উল্লাহ খন্দকার সংবাদকে বলেন, ‘শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য আমরা ইতোমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব স্যারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাতের চেষ্টা করছি। কারণ দীর্ঘদিন পদোন্নতি না থাকায় শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। শিক্ষক সংকটেও সারাদেশে সরকারি কলেজগুলোয় পাঠদান তীব্রভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের পদোন্নতি কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশা করছি খুর শীঘ্রই তা শুরু করা হবে।’

পদোন্নতির শর্ত

সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির মূল শর্ত হলো- তিন বছর সন্তোষজনক চাকরির অর্থাৎ বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) যথাযথ হতে হবে। প্রভাষক (লেকচারার) থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির শর্তগুলো হলোÑ চাকরি স্থায়ীকরণ, সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া এবং পাঁচবছর সন্তোষজনক চাকরির (এসিআর)।

মাউশি’র তথ্যানুযায়ী, ন্যূনতম দুই থেকে পাঁচ বছর আগে বিসিএসের চারটি ব্যাচের দুই হাজার ৪৪০ জন প্রভাষক সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির সব শর্তপূরণ করেছেন। তারা হলেন ২০১১ সালে নিয়োগ পাওয়া ২৯তম ব্যাচ, ২০১২ সালে নিয়োগ পাওয়া ৩০তম ব্যাচ, ২০১৩ সালে নিয়োগ পাওয়া ৩২তম ব্যাচ এবং ২০১৪ সালে নিয়োগ পাওয়া ৩৩তম ব্যাচের প্রভাষক। ৩১তম বিসিএসে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য ক্যাডারের চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়।

৩,৩০৮ সহকারী অধ্যাপকের পদোন্নতি নেই

মাউশি জানিয়েছে, সারাদেশের সরকারি কলেজে দীর্ঘদিন ধরে সহযোগী অধ্যাপকের এক হাজার ৮০টি পদ শূন্য রয়েছে। এর বিপরীতে পাঁচটি ব্যাচের তিন হাজার ৩০৮ জন সহকারী অধ্যাপক সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ করেছেন। এই পাঁচ ব্যাচের মধ্যে ২০০৩ সালে নিয়োগ পাওয়া ২২তম ব্যাচ, ২০০৮ সালে (ভূতাপেক্ষ) নিয়োগ পাওয়া ২৩তম ব্যাচ, ২০০৫ সালে নিয়োগ পাওয়া ২৪তম ব্যাচ, ২০০৬ সালে নিয়োগ পাওয়া ২৫তম এবং ২৬তম ব্যাচ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ‘২৪তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ফোরাম’-এর সাবেক সভাপতি বিজয় কুমার ঘোষ সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের ব্যাচের প্রায় সব কর্মকর্তা-শিক্ষকই সিলেকশন গ্রেডের মাধ্যমে ২০১৫ সালে পঞ্চম গ্রেড পেয়েছেন। এই মুহূর্তেও যদি আমাদের পদোন্নতি দেয়া হয়, তাতে সরকারের অতিরিক্ত কোন আর্থিক সংশ্লেষের প্রয়োজন হবে না। এরপরও আমরা পদোন্নতি পাচ্ছি না।’

একই ব্যাচে নিয়োগ পাওয়া অন্য ২৭টি ক্যাডারের সবাই পদোন্নতি পেয়েছেন- জানিয়ে বিজয় কুমার ঘোষ বলেন, ‘কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারে বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতির প্রক্রিয়া চালু থাকায়, আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। আপাতত সুপার নিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত) পদ সৃষ্টি করে আমাদের পদোন্নতি দেয়া যায়।’

পদোন্নতি পেয়েও ২-৩ বছর নিচের পদে চাকরি

মাউশি জানিয়েছে, ২০১৮ সালের অক্টোবর এবং ২০১৭ সালে সহকারী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত তিন স্তরে সরকারি কলেজের প্রায় এক হাজার শিক্ষককে পদোন্নতি দেয়া হয়। শূন্য পদ না থাকায় তাদের এখনও ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হিসেবে নিচের পদে চাকরি করতে হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় তিনশ’ অধ্যাপক ইনসিটু (পদোন্নতি পেয়েও নিচে কর্মরত) হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। দীর্ঘদিন পদায়ন না পেয়ে ওইসব শিক্ষকের মধ্যেও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

সংখ্যা বিবেচনায় সিভিল সার্ভিসের দ্বিতীয় বৃহৎ ক্যাডার ‘শিক্ষা’। শিক্ষা ক্যাডারে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজারের বেশি পদ রয়েছে। শিক্ষা ক্যাডারে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। তিন হাজার ৫৮৫টি পদ শূন্য রয়েছে। শূন্য পদের প্রায় সবগুলোই উপজেলা ও মফস্বল এলাকার কলেজের।

শিক্ষা ক্যাডার সদস্যরা সারাদেশের ৩৩৫টি সরকারি কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি ১১টি শিক্ষা বোর্ড, মাউশি, পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন প্রকল্পে প্রেষণেও চাকরি করছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি’র সদস্য সচিব ও মাউশি’র পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘শিক্ষকদের পদোন্নতির আনুষঙ্গিক কাজগুলি ইতোমধ্যেই আমরা সম্পন্ন করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। তারা বিগত সময়ে নানা কুয়্যারি (প্রয়োজনীয় তথ্য) চেয়েছে, আমরা তা দিয়েছি। জানতে পারছি, খুব শীঘ্রই ডিপিসি’র (পদোন্নতি সংক্রান্ত কমিটি) বৈঠক বসবে।’

শূন্যপদ পূরণে বিশেষ বিসিএসের উদ্যোগ

জানা গেছে, সরকারি কলেজগুলোর শূন্য পদ পূরণের জন্য গত ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক-২ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তরের শূন্য পদের তালিকা ও নিয়োগের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে জানানো হয়, সরকারি কলেজে প্রভাষকের পদ আছে, কিন্তু শিক্ষক নেই এ সংখ্যা তিন হাজার ৫৮৫টি।

এসব শূন্য পদ পূরণের জন্য একটি বিশেষ বিসিএস নেয়া যায় কি-না তা যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এরপর গত ৬ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) এ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে একটি প্রস্তাব তৈরির জন্য বলা হয়।

সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৯ ফাল্গুন ১৪২৭ ৯ রজব ১৪৪২

পদোন্নতি নেই ৬ হাজার শিক্ষকের

বঞ্চিতদের কেউ দুই, কেউ পাঁচ, কেউবা ৮ বছর ধরে পদোন্নতির অপেক্ষায়

রাকিব উদ্দিন

চাকরির মৌলিক সব শর্ত পূরণ করেও পদোন্নতি পাচ্ছেন না সরকারি কলেজের পাঁচ হাজার ৭৪৮ জন শিক্ষক, তারা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য। তাদের মধ্যে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে দুই হাজার ৪৪০ জন এবং সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে তিন হাজার ৩০৮ জন শিক্ষক পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ করেছেন। এসব শিক্ষক শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি পাচ্ছেন না।

বঞ্চিত শিক্ষকদের মধ্যে কেউ দুই, কেউ পাঁচ, কেউবা আট বছর ধরে পদোন্নতির অপেক্ষায় আছেন। শিক্ষা প্রশাসনে গত দুই বছর ধরেই কলেজ শিক্ষকদের পদোন্নতির তোড়জোড় চললেও এ কার্যক্রম চূড়ান্ত হচ্ছে না। পদোন্নতির জন্য শিক্ষকরা প্রায়ই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ভিড় করছেন, বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করছেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপকের এক হাজার ৮০টি এবং সহকারী অধ্যাপকের ৫৬০টি পদ শূন্য রয়েছে। এসব কর্মকর্তারা দুই থেকে আট বছর আগেই পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ করেছেন। এই সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বেশ কয়েকবার পদোন্নতির আশ্বাস দিলেও তা আর হয়নি। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি’র আহ্বায়ক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আইকে সেলিম উল্লাহ খন্দকার সংবাদকে বলেন, ‘শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য আমরা ইতোমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব স্যারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাতের চেষ্টা করছি। কারণ দীর্ঘদিন পদোন্নতি না থাকায় শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। শিক্ষক সংকটেও সারাদেশে সরকারি কলেজগুলোয় পাঠদান তীব্রভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের পদোন্নতি কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশা করছি খুর শীঘ্রই তা শুরু করা হবে।’

পদোন্নতির শর্ত

সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির মূল শর্ত হলো- তিন বছর সন্তোষজনক চাকরির অর্থাৎ বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) যথাযথ হতে হবে। প্রভাষক (লেকচারার) থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির শর্তগুলো হলোÑ চাকরি স্থায়ীকরণ, সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া এবং পাঁচবছর সন্তোষজনক চাকরির (এসিআর)।

মাউশি’র তথ্যানুযায়ী, ন্যূনতম দুই থেকে পাঁচ বছর আগে বিসিএসের চারটি ব্যাচের দুই হাজার ৪৪০ জন প্রভাষক সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির সব শর্তপূরণ করেছেন। তারা হলেন ২০১১ সালে নিয়োগ পাওয়া ২৯তম ব্যাচ, ২০১২ সালে নিয়োগ পাওয়া ৩০তম ব্যাচ, ২০১৩ সালে নিয়োগ পাওয়া ৩২তম ব্যাচ এবং ২০১৪ সালে নিয়োগ পাওয়া ৩৩তম ব্যাচের প্রভাষক। ৩১তম বিসিএসে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য ক্যাডারের চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়।

৩,৩০৮ সহকারী অধ্যাপকের পদোন্নতি নেই

মাউশি জানিয়েছে, সারাদেশের সরকারি কলেজে দীর্ঘদিন ধরে সহযোগী অধ্যাপকের এক হাজার ৮০টি পদ শূন্য রয়েছে। এর বিপরীতে পাঁচটি ব্যাচের তিন হাজার ৩০৮ জন সহকারী অধ্যাপক সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ করেছেন। এই পাঁচ ব্যাচের মধ্যে ২০০৩ সালে নিয়োগ পাওয়া ২২তম ব্যাচ, ২০০৮ সালে (ভূতাপেক্ষ) নিয়োগ পাওয়া ২৩তম ব্যাচ, ২০০৫ সালে নিয়োগ পাওয়া ২৪তম ব্যাচ, ২০০৬ সালে নিয়োগ পাওয়া ২৫তম এবং ২৬তম ব্যাচ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ‘২৪তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ফোরাম’-এর সাবেক সভাপতি বিজয় কুমার ঘোষ সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের ব্যাচের প্রায় সব কর্মকর্তা-শিক্ষকই সিলেকশন গ্রেডের মাধ্যমে ২০১৫ সালে পঞ্চম গ্রেড পেয়েছেন। এই মুহূর্তেও যদি আমাদের পদোন্নতি দেয়া হয়, তাতে সরকারের অতিরিক্ত কোন আর্থিক সংশ্লেষের প্রয়োজন হবে না। এরপরও আমরা পদোন্নতি পাচ্ছি না।’

একই ব্যাচে নিয়োগ পাওয়া অন্য ২৭টি ক্যাডারের সবাই পদোন্নতি পেয়েছেন- জানিয়ে বিজয় কুমার ঘোষ বলেন, ‘কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারে বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতির প্রক্রিয়া চালু থাকায়, আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। আপাতত সুপার নিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত) পদ সৃষ্টি করে আমাদের পদোন্নতি দেয়া যায়।’

পদোন্নতি পেয়েও ২-৩ বছর নিচের পদে চাকরি

মাউশি জানিয়েছে, ২০১৮ সালের অক্টোবর এবং ২০১৭ সালে সহকারী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত তিন স্তরে সরকারি কলেজের প্রায় এক হাজার শিক্ষককে পদোন্নতি দেয়া হয়। শূন্য পদ না থাকায় তাদের এখনও ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হিসেবে নিচের পদে চাকরি করতে হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় তিনশ’ অধ্যাপক ইনসিটু (পদোন্নতি পেয়েও নিচে কর্মরত) হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। দীর্ঘদিন পদায়ন না পেয়ে ওইসব শিক্ষকের মধ্যেও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

সংখ্যা বিবেচনায় সিভিল সার্ভিসের দ্বিতীয় বৃহৎ ক্যাডার ‘শিক্ষা’। শিক্ষা ক্যাডারে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজারের বেশি পদ রয়েছে। শিক্ষা ক্যাডারে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। তিন হাজার ৫৮৫টি পদ শূন্য রয়েছে। শূন্য পদের প্রায় সবগুলোই উপজেলা ও মফস্বল এলাকার কলেজের।

শিক্ষা ক্যাডার সদস্যরা সারাদেশের ৩৩৫টি সরকারি কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি ১১টি শিক্ষা বোর্ড, মাউশি, পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন প্রকল্পে প্রেষণেও চাকরি করছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি’র সদস্য সচিব ও মাউশি’র পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘শিক্ষকদের পদোন্নতির আনুষঙ্গিক কাজগুলি ইতোমধ্যেই আমরা সম্পন্ন করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। তারা বিগত সময়ে নানা কুয়্যারি (প্রয়োজনীয় তথ্য) চেয়েছে, আমরা তা দিয়েছি। জানতে পারছি, খুব শীঘ্রই ডিপিসি’র (পদোন্নতি সংক্রান্ত কমিটি) বৈঠক বসবে।’

শূন্যপদ পূরণে বিশেষ বিসিএসের উদ্যোগ

জানা গেছে, সরকারি কলেজগুলোর শূন্য পদ পূরণের জন্য গত ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক-২ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তরের শূন্য পদের তালিকা ও নিয়োগের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে জানানো হয়, সরকারি কলেজে প্রভাষকের পদ আছে, কিন্তু শিক্ষক নেই এ সংখ্যা তিন হাজার ৫৮৫টি।

এসব শূন্য পদ পূরণের জন্য একটি বিশেষ বিসিএস নেয়া যায় কি-না তা যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এরপর গত ৬ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) এ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে একটি প্রস্তাব তৈরির জন্য বলা হয়।