পুঁজিবাজার উন্নয়নে বাজেটে ৮ প্রস্তাব দেবে বিএসইসি

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য মার্জিন ঋণের সুদ হার কমিয়ে আনাসহ ৮টি বিষয়ে প্রস্তাবনা থাকবে বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। গতকাল সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনের সম্মেলন কক্ষে দুবাইয়ে রোড শো পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাজেটে প্রস্তাবনা নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আগামী বাজেটে (২০২১-২২) পুঁজিবাজারের জন্য ৮টি প্রস্তাবনা রাখা হবে। এরমধ্যে উল্লেখ্য বিষয়গুলো হচ্ছে, ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে করপোরেট কর এ অ-তালিকাভুক্তি কোম্পানির সঙ্গে সর্বনিম্ন ১৫ শতাংশ ব্যবধান, মার্জিন ঋণের সুদহার ১২ শতাংশ থেকে আরও কমিয়ে আনা, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কর কমানো, দ্বৈত কর প্রত্যাহার, আইসিবিকে পুনর্গঠনের জন্য ফান্ডসহ আরও কিছু ছোটখাটো বিষয় মিলিয়ে ৮টি প্রস্তাব থাকবে। গত বাজেটের (২০২০-২১) প্রস্তাব হয়ে যাওয়ার পরে বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে। তারপরও আমরা খুব জোর দিয়ে দুটি বিষয়ে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছিলাম। এবার বাজেটের আগে প্রস্তাবের অনেক সময় পেয়েছি। আশা করছি, প্রস্তাবনার অধিকাংশ বিষয়ে পাস হবে। ৮টি বিষয়ের মধ্যে থেকে যদি ৫টি বিষয়েও অনুমোদন হয়। তবে আমরা মনে করব অগ্রসর হয়েছি।

দুবাইতে রোড শো নিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা রোড শো-তে আমাদের ইকোনোমিকস ইন্ট্রোডিউস তুলে ধরলাম, আমরা কোথায় আছি টোটাল তথ্য প্রবাহ। কিছু কিছু জায়গায় ওরা আমাদের অনেক প্রশ্নœ করেছে, অনেক কিছু জানল এবং সামনাসামনি অনেক কিছু শোনার পরে ওরা ডিসিশন নিল এখন ওরা কী করবে? এখন আমাদের প্রত্যেক দিন মেইল আসে। তাদের মধ্যে কিছু কিছু মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ইনভেস্ট করতে চায়। সেখানে কী কী কারেকশন দরকার সেটার বিষয়ে ওরা সাজেশন দেয়। আমরা যখন এই প্রেজেন্টেশনটা করলাম, প্রেজেন্টেশনের পরে এরা প্রত্যেকেই আমাদের সঙ্গে আলাদা আলাদা মিটিং করেছে। প্রত্যেকেই বড় বড় ইনভেস্টর। এখানে বিশ্বের সব নাম করা, যাদের পোটফলিও সাত ট্রিলিয়ন, তিন ট্রিলিয়ন। তারা ভালো জায়গা খুঁজছে কোথায় ইনভেস্ট করতে পারে। তাদের দেশে বিনিয়োগ করে তারা তেমন কোন রিটার্ন পাচ্ছে না এবং এই রেটিংয়ে যেসব দেশ সেসব দেশেই তারা বিনিয়োগ করে। আমাদের যে প্রজেক্টগুলো আসছে সেগুলোর সাইজ ৫০০ কোটি, হাজার কোটি, দুই হাজার কোটি, চার হাজার কোটি এ রকম বিরাট বিরাট সাইজ। শুধু ইক্যুইটি মার্কেট দিয়ে এটার কোন সলিউশন দেয়া সম্ভব না বলেই আমার বন্ডের কাজ করছি। বন্ডের মাধ্যমে একমাত্র আমাদের এই সলিউশন দেয়া সম্ভব। দেখা গেছে, কনভেনশনাল বন্ড ও সুকুক মার্কেট ট্রিলিয়ন ডলারের ওপর আছে এবং তাদের বিনিয়োগের জায়গা তারা খুঁজে পাচ্ছে না’ বলেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

বিএসইসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, দুবাইতে গিয়ে আমরা বাংলাদেশর উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকের চিত্র তুলে ধরলাম। তারা আমাদের ডেটা দেখে অবাক হয়েছে। তারা জানতে চেয়েছে, আমার ঠিক বলেছি কিনা; আমরা বলেছি, এগুলো সব সঠিক। কোথাও তোমাদের সন্দেহ থাকলে গুগল সার্চ করে দেখতে পার। তখন তারা বিশ্বাস করা শুরু করল। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে দুবাইয়ে অবস্থানরত দুই-তিনজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বলল আমরা এখানে খুব সম্মান পাচ্ছি। যখন কোন কাজে ব্যাংকে যাই, তারা আমাদের সম্মানের চোখে দেখে। আগের মতো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা যদি বিভিন্ন জায়গায় অর্থাৎ ফাইন্যান্সিয়াল হাব যেগুলো দুবাই, লন্ডন, নিউইয়র্ক, হংকং বা সিঙ্গাপুর এসব জায়গায় যদি বাংলাদেশের সঠিক তথ্য মানুষের কাছে, বিনিয়োগকারীর কাছে, বিদেশের সংবাদপত্র বা বিদেশের ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে একটা নেতিবাচক মনোভাব অনেক বছর ধরে রয়ে গেছে সেখান থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব। আমাদেরকে মানুষ সম্মানের চোখে দেখবে। এখনও তারা ভাবে আমরা বোধহয় মানুষের ডোনেশনের ওপর চলি। আমাদের যে এখন ডোনেশন লাগে না সেটা তারা জানে না।

মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১০ ফাল্গুন ১৪২৭ ১০ রজব ১৪৪২

পুঁজিবাজার উন্নয়নে বাজেটে ৮ প্রস্তাব দেবে বিএসইসি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য মার্জিন ঋণের সুদ হার কমিয়ে আনাসহ ৮টি বিষয়ে প্রস্তাবনা থাকবে বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। গতকাল সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনের সম্মেলন কক্ষে দুবাইয়ে রোড শো পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাজেটে প্রস্তাবনা নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আগামী বাজেটে (২০২১-২২) পুঁজিবাজারের জন্য ৮টি প্রস্তাবনা রাখা হবে। এরমধ্যে উল্লেখ্য বিষয়গুলো হচ্ছে, ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে করপোরেট কর এ অ-তালিকাভুক্তি কোম্পানির সঙ্গে সর্বনিম্ন ১৫ শতাংশ ব্যবধান, মার্জিন ঋণের সুদহার ১২ শতাংশ থেকে আরও কমিয়ে আনা, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কর কমানো, দ্বৈত কর প্রত্যাহার, আইসিবিকে পুনর্গঠনের জন্য ফান্ডসহ আরও কিছু ছোটখাটো বিষয় মিলিয়ে ৮টি প্রস্তাব থাকবে। গত বাজেটের (২০২০-২১) প্রস্তাব হয়ে যাওয়ার পরে বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে। তারপরও আমরা খুব জোর দিয়ে দুটি বিষয়ে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছিলাম। এবার বাজেটের আগে প্রস্তাবের অনেক সময় পেয়েছি। আশা করছি, প্রস্তাবনার অধিকাংশ বিষয়ে পাস হবে। ৮টি বিষয়ের মধ্যে থেকে যদি ৫টি বিষয়েও অনুমোদন হয়। তবে আমরা মনে করব অগ্রসর হয়েছি।

দুবাইতে রোড শো নিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা রোড শো-তে আমাদের ইকোনোমিকস ইন্ট্রোডিউস তুলে ধরলাম, আমরা কোথায় আছি টোটাল তথ্য প্রবাহ। কিছু কিছু জায়গায় ওরা আমাদের অনেক প্রশ্নœ করেছে, অনেক কিছু জানল এবং সামনাসামনি অনেক কিছু শোনার পরে ওরা ডিসিশন নিল এখন ওরা কী করবে? এখন আমাদের প্রত্যেক দিন মেইল আসে। তাদের মধ্যে কিছু কিছু মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ইনভেস্ট করতে চায়। সেখানে কী কী কারেকশন দরকার সেটার বিষয়ে ওরা সাজেশন দেয়। আমরা যখন এই প্রেজেন্টেশনটা করলাম, প্রেজেন্টেশনের পরে এরা প্রত্যেকেই আমাদের সঙ্গে আলাদা আলাদা মিটিং করেছে। প্রত্যেকেই বড় বড় ইনভেস্টর। এখানে বিশ্বের সব নাম করা, যাদের পোটফলিও সাত ট্রিলিয়ন, তিন ট্রিলিয়ন। তারা ভালো জায়গা খুঁজছে কোথায় ইনভেস্ট করতে পারে। তাদের দেশে বিনিয়োগ করে তারা তেমন কোন রিটার্ন পাচ্ছে না এবং এই রেটিংয়ে যেসব দেশ সেসব দেশেই তারা বিনিয়োগ করে। আমাদের যে প্রজেক্টগুলো আসছে সেগুলোর সাইজ ৫০০ কোটি, হাজার কোটি, দুই হাজার কোটি, চার হাজার কোটি এ রকম বিরাট বিরাট সাইজ। শুধু ইক্যুইটি মার্কেট দিয়ে এটার কোন সলিউশন দেয়া সম্ভব না বলেই আমার বন্ডের কাজ করছি। বন্ডের মাধ্যমে একমাত্র আমাদের এই সলিউশন দেয়া সম্ভব। দেখা গেছে, কনভেনশনাল বন্ড ও সুকুক মার্কেট ট্রিলিয়ন ডলারের ওপর আছে এবং তাদের বিনিয়োগের জায়গা তারা খুঁজে পাচ্ছে না’ বলেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

বিএসইসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, দুবাইতে গিয়ে আমরা বাংলাদেশর উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকের চিত্র তুলে ধরলাম। তারা আমাদের ডেটা দেখে অবাক হয়েছে। তারা জানতে চেয়েছে, আমার ঠিক বলেছি কিনা; আমরা বলেছি, এগুলো সব সঠিক। কোথাও তোমাদের সন্দেহ থাকলে গুগল সার্চ করে দেখতে পার। তখন তারা বিশ্বাস করা শুরু করল। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে দুবাইয়ে অবস্থানরত দুই-তিনজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বলল আমরা এখানে খুব সম্মান পাচ্ছি। যখন কোন কাজে ব্যাংকে যাই, তারা আমাদের সম্মানের চোখে দেখে। আগের মতো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা যদি বিভিন্ন জায়গায় অর্থাৎ ফাইন্যান্সিয়াল হাব যেগুলো দুবাই, লন্ডন, নিউইয়র্ক, হংকং বা সিঙ্গাপুর এসব জায়গায় যদি বাংলাদেশের সঠিক তথ্য মানুষের কাছে, বিনিয়োগকারীর কাছে, বিদেশের সংবাদপত্র বা বিদেশের ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে একটা নেতিবাচক মনোভাব অনেক বছর ধরে রয়ে গেছে সেখান থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব। আমাদেরকে মানুষ সম্মানের চোখে দেখবে। এখনও তারা ভাবে আমরা বোধহয় মানুষের ডোনেশনের ওপর চলি। আমাদের যে এখন ডোনেশন লাগে না সেটা তারা জানে না।