ভাষা মতিনের চোখের আলোয় গর্বিত রেশমা

কোটি মানুষের প্রাণের ভাষা বাঙলা। যে ভাষাকে রাষ্ট্র্র ভাষা করার দাবিতে রাজপথে নেমে ছিলেন শত শত বাঙালী। তাদের মধ্যে একজন ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন। তিনি ২০১৪ সালে ৮ অক্টোবর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন । কিন্তু তিনি এখনো তার চোখের দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন রেশমা নামে এক স্বাস্থ্য কর্মীর মাধ্যমে ।

রেশমা ধামারাইয়ে সূয়াপুর ইউনিয়নের শিয়ালকূল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেকের মেয়ে। সে পেশায় এক স্বাস্থ্যকর্মী। ভাষা মতিনের কর্ণিয়ায় নিজের চোখের আলো ফিরে পেয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করেন রেশমা।

রেশমা জানান, মাত্র ৭ বছর বয়সে রেশমার বাম চোখে সমস্যা দেখা দেয় । সে সময় তার চোখ অনেক চুলকাতেন । এরপর থেকে যতই দিন যাচ্ছে ততই চোখের সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠছে। একের পর এক চিকিৎসক পরামর্শ দিলেও চোখের সমস্যার উন্নতি ঘটেনি । চোখ চুলকানের সাথে পানি পড়াও শুরু হয়। কমতে শুরু করে চোখের দৃষ্টি শক্তি । এরমধ্যে ২০১৩ সালে ধামরাই সরকারি কলেজ থেকে ইচ্ছে আর মনোবল দিয়ে স্নাতক শেষ করেন রেশমা। কিন্তু বাম চোখের দৃষ্টি তখন নিভু নিভু অবস্থায়। তখন এক প্রতিবেশী পরামর্শে বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির পরিচালিত ওসবি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। সেখান থেকেই প্রথম তার কর্ণিয়ার সমস্যার কথা জানতে পারেন । সেখানের চিকিৎসক তাকে আরও জানান বাম চোখের কর্ণিয়ার কারণে ডান চোখেও সমস্যা হতে পারে।

তখন পরিবারের মধ্যে এক উৎকণ্ঠা দেখা যায়। কিছুদিন পার হতেই ২০১৩ সালেই পুরোপুরি বাম চোখে আলো নিভে আসে। অন্ধ হয়ে যায় রেশমা। এরপরে ২০১৩ সালে চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি সন্ধানীতে কর্ণিয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন। কিন্তু তার চোখের কর্ণিয়া পাওয়া যাচ্ছিল না ।

এ সময় রেশমা আরও জানান, ২০১৪ সালে ৮ অক্টোবর টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পারে ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন মারা গিয়েছে। সে (মতিন) তার দুই কর্ণিয়া দান করেছে। তখন রেশমা সাথে সাথে সন্ধানীতে যোগাযোগ করলে তাকে ৯ অক্টোবর সকালে হাসপাতালে যেতে বলে। পরে ৯ অক্টোবর সকালে রেশমার চোখের কর্ণিয়ার সঙ্গে ভাষা সৈনিক মতিনের কর্ণিয়ার হস্তান্তর সম্ভব হবে বলে নিশ্চিত করেন চিকিৎসক। এরপরে এদিনই বিকেলে রেশমার কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন করা হয় সন্ধানী হাসপাতালে। ১০ অক্টোবর সকালে আবার ফিরে পান চোখের আলো ।

এখন রেশমা এক জন স্বাস্থ্যকর্মী। ধামরাইয়ের সূয়াপুর কমিনিউটি ক্লিনিকে গ্রামে হতদরিদ্র মানুষের সেবা দিচ্ছেন। আর সেই সঙ্গে এমন এক জন গুণী মানুষের কর্ণিয়া পেয়ে তিনি গর্বিত এবং নিজের জীবনকে সার্থক বলে জানান।

মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১০ ফাল্গুন ১৪২৭ ১০ রজব ১৪৪২

ভাষা মতিনের চোখের আলোয় গর্বিত রেশমা

লোটন আচার্য্য, সাভার (ঢাকা)

image

কোটি মানুষের প্রাণের ভাষা বাঙলা। যে ভাষাকে রাষ্ট্র্র ভাষা করার দাবিতে রাজপথে নেমে ছিলেন শত শত বাঙালী। তাদের মধ্যে একজন ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন। তিনি ২০১৪ সালে ৮ অক্টোবর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন । কিন্তু তিনি এখনো তার চোখের দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন রেশমা নামে এক স্বাস্থ্য কর্মীর মাধ্যমে ।

রেশমা ধামারাইয়ে সূয়াপুর ইউনিয়নের শিয়ালকূল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেকের মেয়ে। সে পেশায় এক স্বাস্থ্যকর্মী। ভাষা মতিনের কর্ণিয়ায় নিজের চোখের আলো ফিরে পেয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করেন রেশমা।

রেশমা জানান, মাত্র ৭ বছর বয়সে রেশমার বাম চোখে সমস্যা দেখা দেয় । সে সময় তার চোখ অনেক চুলকাতেন । এরপর থেকে যতই দিন যাচ্ছে ততই চোখের সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠছে। একের পর এক চিকিৎসক পরামর্শ দিলেও চোখের সমস্যার উন্নতি ঘটেনি । চোখ চুলকানের সাথে পানি পড়াও শুরু হয়। কমতে শুরু করে চোখের দৃষ্টি শক্তি । এরমধ্যে ২০১৩ সালে ধামরাই সরকারি কলেজ থেকে ইচ্ছে আর মনোবল দিয়ে স্নাতক শেষ করেন রেশমা। কিন্তু বাম চোখের দৃষ্টি তখন নিভু নিভু অবস্থায়। তখন এক প্রতিবেশী পরামর্শে বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির পরিচালিত ওসবি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। সেখান থেকেই প্রথম তার কর্ণিয়ার সমস্যার কথা জানতে পারেন । সেখানের চিকিৎসক তাকে আরও জানান বাম চোখের কর্ণিয়ার কারণে ডান চোখেও সমস্যা হতে পারে।

তখন পরিবারের মধ্যে এক উৎকণ্ঠা দেখা যায়। কিছুদিন পার হতেই ২০১৩ সালেই পুরোপুরি বাম চোখে আলো নিভে আসে। অন্ধ হয়ে যায় রেশমা। এরপরে ২০১৩ সালে চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি সন্ধানীতে কর্ণিয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন। কিন্তু তার চোখের কর্ণিয়া পাওয়া যাচ্ছিল না ।

এ সময় রেশমা আরও জানান, ২০১৪ সালে ৮ অক্টোবর টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পারে ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন মারা গিয়েছে। সে (মতিন) তার দুই কর্ণিয়া দান করেছে। তখন রেশমা সাথে সাথে সন্ধানীতে যোগাযোগ করলে তাকে ৯ অক্টোবর সকালে হাসপাতালে যেতে বলে। পরে ৯ অক্টোবর সকালে রেশমার চোখের কর্ণিয়ার সঙ্গে ভাষা সৈনিক মতিনের কর্ণিয়ার হস্তান্তর সম্ভব হবে বলে নিশ্চিত করেন চিকিৎসক। এরপরে এদিনই বিকেলে রেশমার কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন করা হয় সন্ধানী হাসপাতালে। ১০ অক্টোবর সকালে আবার ফিরে পান চোখের আলো ।

এখন রেশমা এক জন স্বাস্থ্যকর্মী। ধামরাইয়ের সূয়াপুর কমিনিউটি ক্লিনিকে গ্রামে হতদরিদ্র মানুষের সেবা দিচ্ছেন। আর সেই সঙ্গে এমন এক জন গুণী মানুষের কর্ণিয়া পেয়ে তিনি গর্বিত এবং নিজের জীবনকে সার্থক বলে জানান।