সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু ২৪ মে

হল খুলবে ১৭ মে, হলে ওঠার আগে টিকা নিতে হবে

হল ও ক্লাস রুম খুলে দেয়ার দাবিতে গত কয়েকদিন যাবত আন্দোলন করছে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন হলে তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী জোর করে হলে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে প্রশাসনের আশ্বাসে বিকেলে তারা হল ছেড়ে আসে। এই অবস্থায় আগামী ২৪ মে ঈদুল ফিতরের পর সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এর আগে ১৭ মে থেকে ছাত্রাবাস খুলে দেয়া হবে বলে জানান তিনি। তবে ছাত্রাবাসে উঠার আগেই শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকে টিকা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া বিসিএস পরীক্ষার আবেদন ও পরীক্ষার তারিখ পিছিয়ে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দীপু মনি বলেন, ‘এই সময়ে অর্থাৎ ২৪ মে পর্যন্ত কোন ধরনের পরীক্ষা হবে না। পরে পরীক্ষাগুলো নেয়া হবে। আর অনলাইন ক্লাস যেভাবে চলছে সেভাবেই চলবে। হল খুলে দেয়ার আগেই আবাসিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকেই টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কারও যদি স্বাস্থ্যগত (মেডিকেল) কারণে টিকা না নেয়ার মতো অবস্থা থাকে, তাহলে তারা হলে থাকতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়েই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ সরকারি ও বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এসব সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষামন্ত্রী এই ঘোষণায় নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হলগুলো খুলে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হল খুলে দেয়াসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মার্চের প্রথম দিনই হলে উঠতে চান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হল খুলে দেয়া ও পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, ‘দেশের সব প্রতিষ্ঠান করোনা মহামারীর ভেতর চালু থাকলেও শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এটা সরকারের খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত। দেড় লাখ আবাসিক শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিন দিতে কেন ৩ মাস সময় লাগবে। দীর্ঘ ১১ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দীর্ঘ সেশনজটে সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা শেষে এদেশে কর্মসংস্থানের কোন নিশ্চয়তা নেই। সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলোয় বয়সসীমা বাড়ানো হচ্ছে না। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রেখে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে সরকার। আমরা এই অপচেষ্টা রুখে দিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই।’

গত বছর ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কয়েক ধাপে এই ছুটি ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও ক্লাস খুলে দেয়ার দাবিতে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগরসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ ১ বছর ২ মাস ৬ দিন পর শুধু আবাসিক বিশ^বিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে স্কুল-কলেজ এবং মাদরাসাগুলো কবে থেকে খোলা হবে তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। তার আগে করোনা মোকাবিলা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে কবে থেকে ক্লাস শুরু হবে, তা জানিয়ে দেয়া হবে।’

বর্তমানে দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কার্যকর আছে। এছাড়া অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১০৭টি। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মোট ২২০টি আবাসিক হল আছে। এর মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থী প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার। সরকারি ও বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এসব সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে।’

কেউ যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করে এর দায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গ্রহণ করবে না উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যারা হলে আছেন, তাদের অবিলম্বে হল ত্যাগ করতে হবে। এছাড়া কেউ যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করেন, তবে এর দায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গ্রহণ করবে না। হল খোলার আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে ভর্তি পরীক্ষার তারিখও এই নতুন খোলার (বিশ্ববিদ্যালয় খোলার) তারিখের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করা হবে। তড়িঘড়ি করে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের করোনা নিয়ন্ত্রণের যে সাফল্য, তা নষ্ট করে দেয়া যেতে পারে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মার্চের মধ্যে হল খোলার সিদ্ধান্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে গতকাল বেলা বারোটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী জোর করে হলে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে প্রশাসনের আশ্বাসে বিকেলে তারা হল ছেড়ে আসে। গতকাল এক মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং স্মারকলিপি প্রদান করে। এ সময় উপাচার্য তাদের বলেন, মঙ্গলবার একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং রয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো উত্থাপন করা হবে।

বিকেলে নিজ কার্যালয়ে ঢাবি উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার শিক্ষার্থীদের করোনা টিকার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে মে মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার একটা সিদ্ধান্তও ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। এদিকে শিক্ষার্থীরাও তাদের দাবির কথা আমাকে অবহিত করেছে। মঙ্গলবার একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক রয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া, হল খোলা এবং পরীক্ষা নেয়া সবকিছুর পুনর্বিবেচনা করে একটা সার্বিক সিদ্ধান্ত দেয়া হবে।

মার্চের মধ্যে হল খোলার আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে ঢাবির সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী গোলাম আজাদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা স্বায়ত্তসাশিত প্রতিষ্ঠান। যেখানে সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে আচার্য কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। এক্ষেত্রে বারাবার সরকারি সিদ্ধান্তের দোহাই দেয়ার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের চরম লঙ্ঘন হচ্ছে। প্রশাসন যে টিকা দেয়ার কথা বলছে সেক্ষেত্রে ৫-৬ লাখ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে মে মাসের মধ্যে আদৌ বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যাবে কিনা সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনার পরও আবাসিক হলে অবস্থান করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় হল ত্যাগ করতে পারছেন না বলে দাবি করছেন তারা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের তালা ভেঙে আবারও হলে অবস্থান নিয়েছেন ছাত্রীরা। এর আগে গত রোববার রাত দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগ করা নির্দেশ প্রদান করা হয়। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণাও দেন প্রশাসন। কিন্তু প্রশাসনের সেই নির্দেশকে অমান্য করে হলে অবস্থানের ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি সভায় হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়ার জন্য হল প্রাধ্যক্ষকে নির্দেশনা দেন উপাচার্য। পরে বেলা ১১টায় প্রভোস্টরা নিজ নিজ হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের আহ্বান জানান। কিন্তু শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত হল ত্যাগ করবেন না বলে জানান তারা। শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান প্রভোস্টরা।

পরে বেলা ১২টার দিকে বিশবিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে সমাবেত হয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী শারমীন আক্তার সাথী বলেন, ‘আমরা শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যকে সাধুবাদ জানাই। তবে জাহাঙ্গীরনগরের পরিস্থিতি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো না। এখানকার অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকাগুলোতে অবস্থান করছে। যা মোটেই আমাদের জন্য নিরাপদ নয়। হলই বর্তমানে আমাদের একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়স্থল। তাই আমরা হলে অবস্থান করব এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ছাত্রী হলে শিক্ষার্থীরা উঠবে।’ পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে হলের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন তারা। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে হলের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন তারা।

হল ত্যাগ না করার কারণ জানতে চাইলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলার ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও সমস্যা সমাধানে কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এখন আমাদের প্রায় হাজারো শিক্ষার্থী গেরুয়া এলাকার মেসগুলোতে অবস্থান করে। হামলার ঘটনার পর তারা হলে অবস্থান করছে। হামলার ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান না হলে তারা গেরুয়া এলাকার মেসগুলোতে কিভাবে ফিরবে?’

পরে দুপুর আড়াইটায় ৫ দাবিতে আবারও সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হল ছাড়ার প্রজ্ঞাপন ১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে, হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের কোনভাবেই হল থেকে বের করার চেষ্টা করা যাবে না, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করতে হবে, হামলায় যুক্ত থাকা ক্যাম্পাসের কতিপয় ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী-কর্মকর্তা জড়িতের বিষয়টি দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে সত্যতা নিশ্চিত করতে হবে এবং অজ্ঞাত মামলা তুলে নিয়ে চিহ্নিত ব্যক্তিদের নামে মামলা করতে হবে। এ দাবিগুলো মানা না হলে আগামী ২৪ তারিখ আমরা সর্বোচ্চ কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেব। এ বিষয়ে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আমরা হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার অনুরোধ করেছি। আমরা মনে করি আমাদের শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট পরিণত। তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

মার্চের প্রথম দিনই হলে উঠতে চান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের বলেন, হল খোলা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে ইউজিসির বৈঠক রয়েছে মঙ্গলবার। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের’ স্টিয়ারিং কমিটির নির্বাচন রয়েছে। এই কারণে দুই দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করা হলো, তবে আগামী মার্চের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ করবে বলে ঘোষণায় জানানো হয়।

পরীক্ষা স্থগিত করায় অসন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সব বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীরা। ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের শিক্ষার্থী আরিফ বলেন, ‘মাত্র ঢাকা থেকে আসলাম পরশু পরীক্ষা জেনে। মেস ভাড়া করেছি। এখন আবার পরীক্ষা বন্ধ। এমন বিড়ম্বনা সত্যিই কষ্টদায়ক।’ এছাড়া শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখান ও পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। গতকাল সকাল থেকে হল খোলার দাবিতে ২য় দিনের মতো আন্দোলন ও বিভিন্ন হলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ আমাদের নেই। এটি নির্বাহী আদেশ। এজন্য পরীক্ষাগুলোও স্থগিত করা হয়েছে। তবুও মঙ্গলবার ডিনস কমিটির জরুরি সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১০ ফাল্গুন ১৪২৭ ১০ রজব ১৪৪২

সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু ২৪ মে

হল খুলবে ১৭ মে, হলে ওঠার আগে টিকা নিতে হবে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে শহীদুল্লাহ হলে প্রবেশ করে -সংবাদ

হল ও ক্লাস রুম খুলে দেয়ার দাবিতে গত কয়েকদিন যাবত আন্দোলন করছে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন হলে তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী জোর করে হলে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে প্রশাসনের আশ্বাসে বিকেলে তারা হল ছেড়ে আসে। এই অবস্থায় আগামী ২৪ মে ঈদুল ফিতরের পর সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এর আগে ১৭ মে থেকে ছাত্রাবাস খুলে দেয়া হবে বলে জানান তিনি। তবে ছাত্রাবাসে উঠার আগেই শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকে টিকা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া বিসিএস পরীক্ষার আবেদন ও পরীক্ষার তারিখ পিছিয়ে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দীপু মনি বলেন, ‘এই সময়ে অর্থাৎ ২৪ মে পর্যন্ত কোন ধরনের পরীক্ষা হবে না। পরে পরীক্ষাগুলো নেয়া হবে। আর অনলাইন ক্লাস যেভাবে চলছে সেভাবেই চলবে। হল খুলে দেয়ার আগেই আবাসিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকেই টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কারও যদি স্বাস্থ্যগত (মেডিকেল) কারণে টিকা না নেয়ার মতো অবস্থা থাকে, তাহলে তারা হলে থাকতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়েই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ সরকারি ও বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এসব সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষামন্ত্রী এই ঘোষণায় নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হলগুলো খুলে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হল খুলে দেয়াসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মার্চের প্রথম দিনই হলে উঠতে চান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হল খুলে দেয়া ও পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, ‘দেশের সব প্রতিষ্ঠান করোনা মহামারীর ভেতর চালু থাকলেও শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এটা সরকারের খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত। দেড় লাখ আবাসিক শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিন দিতে কেন ৩ মাস সময় লাগবে। দীর্ঘ ১১ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দীর্ঘ সেশনজটে সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা শেষে এদেশে কর্মসংস্থানের কোন নিশ্চয়তা নেই। সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলোয় বয়সসীমা বাড়ানো হচ্ছে না। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রেখে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে সরকার। আমরা এই অপচেষ্টা রুখে দিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই।’

গত বছর ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কয়েক ধাপে এই ছুটি ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও ক্লাস খুলে দেয়ার দাবিতে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগরসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ ১ বছর ২ মাস ৬ দিন পর শুধু আবাসিক বিশ^বিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে স্কুল-কলেজ এবং মাদরাসাগুলো কবে থেকে খোলা হবে তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। তার আগে করোনা মোকাবিলা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে কবে থেকে ক্লাস শুরু হবে, তা জানিয়ে দেয়া হবে।’

বর্তমানে দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কার্যকর আছে। এছাড়া অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১০৭টি। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মোট ২২০টি আবাসিক হল আছে। এর মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থী প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার। সরকারি ও বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এসব সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে।’

কেউ যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করে এর দায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গ্রহণ করবে না উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যারা হলে আছেন, তাদের অবিলম্বে হল ত্যাগ করতে হবে। এছাড়া কেউ যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করেন, তবে এর দায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গ্রহণ করবে না। হল খোলার আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে ভর্তি পরীক্ষার তারিখও এই নতুন খোলার (বিশ্ববিদ্যালয় খোলার) তারিখের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করা হবে। তড়িঘড়ি করে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের করোনা নিয়ন্ত্রণের যে সাফল্য, তা নষ্ট করে দেয়া যেতে পারে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মার্চের মধ্যে হল খোলার সিদ্ধান্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে গতকাল বেলা বারোটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী জোর করে হলে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে প্রশাসনের আশ্বাসে বিকেলে তারা হল ছেড়ে আসে। গতকাল এক মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং স্মারকলিপি প্রদান করে। এ সময় উপাচার্য তাদের বলেন, মঙ্গলবার একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং রয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো উত্থাপন করা হবে।

বিকেলে নিজ কার্যালয়ে ঢাবি উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার শিক্ষার্থীদের করোনা টিকার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে মে মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার একটা সিদ্ধান্তও ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। এদিকে শিক্ষার্থীরাও তাদের দাবির কথা আমাকে অবহিত করেছে। মঙ্গলবার একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক রয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া, হল খোলা এবং পরীক্ষা নেয়া সবকিছুর পুনর্বিবেচনা করে একটা সার্বিক সিদ্ধান্ত দেয়া হবে।

মার্চের মধ্যে হল খোলার আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে ঢাবির সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী গোলাম আজাদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা স্বায়ত্তসাশিত প্রতিষ্ঠান। যেখানে সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে আচার্য কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। এক্ষেত্রে বারাবার সরকারি সিদ্ধান্তের দোহাই দেয়ার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের চরম লঙ্ঘন হচ্ছে। প্রশাসন যে টিকা দেয়ার কথা বলছে সেক্ষেত্রে ৫-৬ লাখ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে মে মাসের মধ্যে আদৌ বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যাবে কিনা সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনার পরও আবাসিক হলে অবস্থান করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় হল ত্যাগ করতে পারছেন না বলে দাবি করছেন তারা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের তালা ভেঙে আবারও হলে অবস্থান নিয়েছেন ছাত্রীরা। এর আগে গত রোববার রাত দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগ করা নির্দেশ প্রদান করা হয়। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণাও দেন প্রশাসন। কিন্তু প্রশাসনের সেই নির্দেশকে অমান্য করে হলে অবস্থানের ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি সভায় হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়ার জন্য হল প্রাধ্যক্ষকে নির্দেশনা দেন উপাচার্য। পরে বেলা ১১টায় প্রভোস্টরা নিজ নিজ হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের আহ্বান জানান। কিন্তু শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত হল ত্যাগ করবেন না বলে জানান তারা। শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান প্রভোস্টরা।

পরে বেলা ১২টার দিকে বিশবিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে সমাবেত হয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী শারমীন আক্তার সাথী বলেন, ‘আমরা শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যকে সাধুবাদ জানাই। তবে জাহাঙ্গীরনগরের পরিস্থিতি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো না। এখানকার অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকাগুলোতে অবস্থান করছে। যা মোটেই আমাদের জন্য নিরাপদ নয়। হলই বর্তমানে আমাদের একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়স্থল। তাই আমরা হলে অবস্থান করব এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ছাত্রী হলে শিক্ষার্থীরা উঠবে।’ পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে হলের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন তারা। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে হলের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন তারা।

হল ত্যাগ না করার কারণ জানতে চাইলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলার ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও সমস্যা সমাধানে কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এখন আমাদের প্রায় হাজারো শিক্ষার্থী গেরুয়া এলাকার মেসগুলোতে অবস্থান করে। হামলার ঘটনার পর তারা হলে অবস্থান করছে। হামলার ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান না হলে তারা গেরুয়া এলাকার মেসগুলোতে কিভাবে ফিরবে?’

পরে দুপুর আড়াইটায় ৫ দাবিতে আবারও সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হল ছাড়ার প্রজ্ঞাপন ১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে, হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের কোনভাবেই হল থেকে বের করার চেষ্টা করা যাবে না, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করতে হবে, হামলায় যুক্ত থাকা ক্যাম্পাসের কতিপয় ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী-কর্মকর্তা জড়িতের বিষয়টি দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে সত্যতা নিশ্চিত করতে হবে এবং অজ্ঞাত মামলা তুলে নিয়ে চিহ্নিত ব্যক্তিদের নামে মামলা করতে হবে। এ দাবিগুলো মানা না হলে আগামী ২৪ তারিখ আমরা সর্বোচ্চ কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেব। এ বিষয়ে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আমরা হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার অনুরোধ করেছি। আমরা মনে করি আমাদের শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট পরিণত। তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

মার্চের প্রথম দিনই হলে উঠতে চান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের বলেন, হল খোলা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে ইউজিসির বৈঠক রয়েছে মঙ্গলবার। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের’ স্টিয়ারিং কমিটির নির্বাচন রয়েছে। এই কারণে দুই দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করা হলো, তবে আগামী মার্চের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ করবে বলে ঘোষণায় জানানো হয়।

পরীক্ষা স্থগিত করায় অসন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সব বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীরা। ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের শিক্ষার্থী আরিফ বলেন, ‘মাত্র ঢাকা থেকে আসলাম পরশু পরীক্ষা জেনে। মেস ভাড়া করেছি। এখন আবার পরীক্ষা বন্ধ। এমন বিড়ম্বনা সত্যিই কষ্টদায়ক।’ এছাড়া শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখান ও পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। গতকাল সকাল থেকে হল খোলার দাবিতে ২য় দিনের মতো আন্দোলন ও বিভিন্ন হলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ আমাদের নেই। এটি নির্বাহী আদেশ। এজন্য পরীক্ষাগুলোও স্থগিত করা হয়েছে। তবুও মঙ্গলবার ডিনস কমিটির জরুরি সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’