করোনার টিকা সম্পর্কে উদাসীন অধিকাংশ বস্তিবাসী

জুরাইন বস্তির বাসিন্দা আবদুল করিম। তিনি পেশায় একজন রিকশা চালক। বয়স ৪৮ বছর। তিনি করোনভাইরাস সম্পর্কে শুনেছেন। তবে করোনার টিকা নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘টিকা সম্পর্কে কিছুই জানি না।’

চা দোকানদার হানিফ জানান, তিনি ছোট বেলায় টিকা নিয়েছেন। তাই তার আর টিকার প্রয়োজন নেই। ওই এলাকার ৫৫ বছর বয়সী মর্জিনা বলেন, ‘টিকা নেয়ার জন্য আমাকে কেউ কিছু বলেনি। এটি কীভাবে পাওয়া যাবে, জানি না।’ তবে টিকা নিতে তিনি আগ্রহী।

ডিম বিক্রেতা আরিফুল মনে করেন, করোনা টিকা নিলে নতুন রোগের সৃষ্টি হতে পারে। কিছুদিন টিকা প্রক্রিয়া চলার পর অন্যদের ওপর এর প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা তা দেখে তবে তিনি টিকা নিতে পারে।

জুরাইনে প্রায় তিনটি বস্তি রয়েছে। এসব বস্তিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করে। কিন্তু নিম্ন আয়ের এসব মানুষের অনেকেই মনে করেন, করোনা ধনীদের রোগ। তাদের এ রোগ হবে না। বস্তিতে এ রোগে কেউ আক্রান্ত হয়েছে তারা তা শোনেননি। অনেকইে আবার মনে করেন, টিকার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে নানা জটিলতা রয়েছে।

অর্থনৈতিক কর্মকা-ে গতি ফেরাতে ও করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে ভ্যাকসিনেশন (করোনার টিকা প্রদান) প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া সফল করতে ধারাবাহিকভাবে দেশের প্রত্যেক মানুষকে করোনার টিকার আওয়াতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। কিন্তু টিকার বিষয়ে জানেন না অধিকাংশ বস্তিবাসী। এসব নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, করোনা বড়লোকদের রোগ। তাদের এ রোগ হবে না। তাই তারা টিকা নিতে আগ্রহী নয়। কেউ কেউ মনে করেন, করোনার টিকা নিলে তাদের নতুন রোগ হতে পারে। গত শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী জুরাইনের কয়েকটি বস্তি ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী সংবাদকে বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমারা কাজ করছি। প্রত্যেক ওয়ার্ডে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বাড়িতে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালানোর বিষয়ে নির্দেশনা নেই। সবাইকে নিজ উদ্যোগেই টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। প্রত্যেক ওয়ার্ডে কাউন্সিল অফিসে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা রয়েছে।’ নিম্নবিত্তদের টিকা নিতে উদ্ভূদ্ধ করতে গণমাধ্যমকে আরও প্রচারণা চালানোর আহ্বান জানান তিনি।

জুরাইনের বস্তিগুলোতে বসবাসকারীদের টিকার আওতায় আনার জন্য কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ওই এলাকার ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সফিকুর রহমান সংবাদকে জানান, করোনা টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে মসজিদে মাইকিং করা হয়েছে। অনেকেই ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

রাজধানী ঢাকার কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, টিকা নিতে আসা মানুষের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তরা। লেখাপড়া না জানা, সুবিধাবঞ্চিত অথবা বস্তি এলাকার মানুষ একেবারেই নেই। অথচ প্রতিটি মানুষকে দুই ডোজ করে মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন মানুষকে এই টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।

রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে করোনাভাইরাসের গণটিকা কার্যক্রম শুরুর পর এখন পর্যন্ত ২০ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৭ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। এই সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ।

মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১০ ফাল্গুন ১৪২৭ ১০ রজব ১৪৪২

করোনার টিকা সম্পর্কে উদাসীন অধিকাংশ বস্তিবাসী

ইয়াকুব আলী

জুরাইন বস্তির বাসিন্দা আবদুল করিম। তিনি পেশায় একজন রিকশা চালক। বয়স ৪৮ বছর। তিনি করোনভাইরাস সম্পর্কে শুনেছেন। তবে করোনার টিকা নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘টিকা সম্পর্কে কিছুই জানি না।’

চা দোকানদার হানিফ জানান, তিনি ছোট বেলায় টিকা নিয়েছেন। তাই তার আর টিকার প্রয়োজন নেই। ওই এলাকার ৫৫ বছর বয়সী মর্জিনা বলেন, ‘টিকা নেয়ার জন্য আমাকে কেউ কিছু বলেনি। এটি কীভাবে পাওয়া যাবে, জানি না।’ তবে টিকা নিতে তিনি আগ্রহী।

ডিম বিক্রেতা আরিফুল মনে করেন, করোনা টিকা নিলে নতুন রোগের সৃষ্টি হতে পারে। কিছুদিন টিকা প্রক্রিয়া চলার পর অন্যদের ওপর এর প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা তা দেখে তবে তিনি টিকা নিতে পারে।

জুরাইনে প্রায় তিনটি বস্তি রয়েছে। এসব বস্তিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করে। কিন্তু নিম্ন আয়ের এসব মানুষের অনেকেই মনে করেন, করোনা ধনীদের রোগ। তাদের এ রোগ হবে না। বস্তিতে এ রোগে কেউ আক্রান্ত হয়েছে তারা তা শোনেননি। অনেকইে আবার মনে করেন, টিকার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে নানা জটিলতা রয়েছে।

অর্থনৈতিক কর্মকা-ে গতি ফেরাতে ও করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে ভ্যাকসিনেশন (করোনার টিকা প্রদান) প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া সফল করতে ধারাবাহিকভাবে দেশের প্রত্যেক মানুষকে করোনার টিকার আওয়াতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। কিন্তু টিকার বিষয়ে জানেন না অধিকাংশ বস্তিবাসী। এসব নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, করোনা বড়লোকদের রোগ। তাদের এ রোগ হবে না। তাই তারা টিকা নিতে আগ্রহী নয়। কেউ কেউ মনে করেন, করোনার টিকা নিলে তাদের নতুন রোগ হতে পারে। গত শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী জুরাইনের কয়েকটি বস্তি ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী সংবাদকে বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমারা কাজ করছি। প্রত্যেক ওয়ার্ডে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বাড়িতে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালানোর বিষয়ে নির্দেশনা নেই। সবাইকে নিজ উদ্যোগেই টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। প্রত্যেক ওয়ার্ডে কাউন্সিল অফিসে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা রয়েছে।’ নিম্নবিত্তদের টিকা নিতে উদ্ভূদ্ধ করতে গণমাধ্যমকে আরও প্রচারণা চালানোর আহ্বান জানান তিনি।

জুরাইনের বস্তিগুলোতে বসবাসকারীদের টিকার আওতায় আনার জন্য কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ওই এলাকার ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সফিকুর রহমান সংবাদকে জানান, করোনা টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে মসজিদে মাইকিং করা হয়েছে। অনেকেই ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

রাজধানী ঢাকার কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, টিকা নিতে আসা মানুষের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তরা। লেখাপড়া না জানা, সুবিধাবঞ্চিত অথবা বস্তি এলাকার মানুষ একেবারেই নেই। অথচ প্রতিটি মানুষকে দুই ডোজ করে মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন মানুষকে এই টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।

রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে করোনাভাইরাসের গণটিকা কার্যক্রম শুরুর পর এখন পর্যন্ত ২০ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৭ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। এই সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ।