পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শনের অনুমতি দেবে ইরান

তিন মাসের জন্য ইরান তাদের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে জাতিসংঘের পারমাণবিক অস্ত্র নজরদারিবিষয়ক সংস্থাকে পরিদর্শনে সুযোগ দেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। জাতিসংঘের পরমাণুবিষয়ক আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান এ তথ্য জানিয়েছে। বিবিসি

এ নিয়ে গত মঙ্গলবার নতুন আইনও পাস হয়েছে ইরানের পার্লামেন্টে। এতে বলা হয়, ঘোষিত বা অঘোষিত পরমাণু স্থাপনা স্বল্প সময়ের নোটিশে আইএইএর বিশেষজ্ঞদের পরিদর্শনের অনুমতি বন্ধ করতে হবে ইরানকে।

রাজধানী তেহরানে ইরানের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রসি বলেন, ‘ওই আইনটির অর্থ অতিরিক্ত প্রটোকল স্থগিত করা হবে। পরমাণু কেন্দ্রে কম প্রবেশাধিকার পাব আমরা। তারপরও প্রয়োজনীয় পর্যায়ের তদারকি ও যাচাইয়ের কাজ করতে সক্ষম হব আমরা।’ বাড়তি প্রটোকলের অর্থ, কোনো দেশ তার পরমাণু স্থাপনার অস্তিত্বের কথা না জানালেও অঘোষিতভাবে ওই সব স্থাপনা পরিদর্শন করতে পারবে আইএইএ।

২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, বিনা নোটিশে তাৎক্ষণিকভাবে আইএইএর কর্মকর্তাদের পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শনে ফের সম্মত হয়েছিল ইরান, যা ২০০৬ সাল থেকে স্থগিত ছিল। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহার না করায় পরমাণু চুক্তি থেকে অনেকটাই সরে আসে ইরান। গত বছর দুইটি সন্দেহজনক স্থাপনা পরিদর্শনে আইএইএর অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করে দেশটি। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে জয়েন্ট কম্প্রেহেন্সিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করে ইরান। এতে বলা হয়, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সীমিতকরণের বিনিময়ে দেশটির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। বারাক ওবামার আমলের সেই চুক্তি থেকে একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের ওপর ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তার প্রশাসন।

এরপর ইরানও চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার পথে হাঁটে, মনোযোগ দেয় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে। তেহরানের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বলা হয়, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ফিরতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। তবেই দেশটির ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি থেকে সরবে তারা। কিন্তু এক মাস আগে ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিন পরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ইরানকে আগে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ করতে হবে।

তবেই দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলা হবে।

এখনও ইরানের ওপর অবরোধ জারি থাকায় দেশটির পরমাণু স্থাপনাগুলোতে পূর্ণ প্রবোশাধিকার পাবেন না আইএইএর কর্মকর্তারা। পাশাপাশি তাৎক্ষণিক পরিদর্শনের অধিকারও সংস্থাটির থাকছে না।

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ঘিরে সংকট গত প্রায় ২০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্যতম প্রধান ইস্যু। শান্তিপূর্ণ কাজের উদ্দেশ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালানো হচ্ছে বলে ইরান সব সময় দাবি করে আসছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের পরাশক্তি দেশগুলোর সন্দেহ, এ কর্মসূচির মাধ্যমে ইরান গোপনে নিজেদের পরমাণু অস্ত্রের পরিসর বাড়াচ্ছে।

মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১০ ফাল্গুন ১৪২৭ ১০ রজব ১৪৪২

পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শনের অনুমতি দেবে ইরান

image

তিন মাসের জন্য ইরান তাদের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে জাতিসংঘের পারমাণবিক অস্ত্র নজরদারিবিষয়ক সংস্থাকে পরিদর্শনে সুযোগ দেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। জাতিসংঘের পরমাণুবিষয়ক আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান এ তথ্য জানিয়েছে। বিবিসি

এ নিয়ে গত মঙ্গলবার নতুন আইনও পাস হয়েছে ইরানের পার্লামেন্টে। এতে বলা হয়, ঘোষিত বা অঘোষিত পরমাণু স্থাপনা স্বল্প সময়ের নোটিশে আইএইএর বিশেষজ্ঞদের পরিদর্শনের অনুমতি বন্ধ করতে হবে ইরানকে।

রাজধানী তেহরানে ইরানের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রসি বলেন, ‘ওই আইনটির অর্থ অতিরিক্ত প্রটোকল স্থগিত করা হবে। পরমাণু কেন্দ্রে কম প্রবেশাধিকার পাব আমরা। তারপরও প্রয়োজনীয় পর্যায়ের তদারকি ও যাচাইয়ের কাজ করতে সক্ষম হব আমরা।’ বাড়তি প্রটোকলের অর্থ, কোনো দেশ তার পরমাণু স্থাপনার অস্তিত্বের কথা না জানালেও অঘোষিতভাবে ওই সব স্থাপনা পরিদর্শন করতে পারবে আইএইএ।

২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, বিনা নোটিশে তাৎক্ষণিকভাবে আইএইএর কর্মকর্তাদের পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শনে ফের সম্মত হয়েছিল ইরান, যা ২০০৬ সাল থেকে স্থগিত ছিল। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহার না করায় পরমাণু চুক্তি থেকে অনেকটাই সরে আসে ইরান। গত বছর দুইটি সন্দেহজনক স্থাপনা পরিদর্শনে আইএইএর অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করে দেশটি। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে জয়েন্ট কম্প্রেহেন্সিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করে ইরান। এতে বলা হয়, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সীমিতকরণের বিনিময়ে দেশটির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। বারাক ওবামার আমলের সেই চুক্তি থেকে একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের ওপর ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তার প্রশাসন।

এরপর ইরানও চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার পথে হাঁটে, মনোযোগ দেয় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে। তেহরানের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বলা হয়, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ফিরতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। তবেই দেশটির ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি থেকে সরবে তারা। কিন্তু এক মাস আগে ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিন পরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ইরানকে আগে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ করতে হবে।

তবেই দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলা হবে।

এখনও ইরানের ওপর অবরোধ জারি থাকায় দেশটির পরমাণু স্থাপনাগুলোতে পূর্ণ প্রবোশাধিকার পাবেন না আইএইএর কর্মকর্তারা। পাশাপাশি তাৎক্ষণিক পরিদর্শনের অধিকারও সংস্থাটির থাকছে না।

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ঘিরে সংকট গত প্রায় ২০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্যতম প্রধান ইস্যু। শান্তিপূর্ণ কাজের উদ্দেশ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালানো হচ্ছে বলে ইরান সব সময় দাবি করে আসছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের পরাশক্তি দেশগুলোর সন্দেহ, এ কর্মসূচির মাধ্যমে ইরান গোপনে নিজেদের পরমাণু অস্ত্রের পরিসর বাড়াচ্ছে।