মালিক জানে না তার গাড়িচালক ছিনতাইকারী

রাজধানীতে একজন চলচ্চিত্র অভিনেতার গাড়িচালক করছে ছিনতাই। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারকৃত এই ছিনতাইকারীর নাম সুমন মিয়া। টঙ্গীতে তার বাসা। প্রাইভেটকার মালিক বিশ্রামে গেলে ড্রাইভার সুযোগ বুঝে সে প্রাইভেটকার নিয়ে ছিনতাই করতে বের হতো। গত তিন বছরে সে রাজধানীর উত্তরা, গুলশান ও বনানী এলাকায় একাই ১৪ থেকে ১৫টি ছিনতাই করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।

সম্প্রতি উত্তরা এলাকায় একজন শিক্ষিকার ব্যাগ ছিনতাই করার পর পুলিশের টনক নড়ে। পুলিশ সিসি টিভির ফুটেজ দেখে ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমে প্রাইভেটকারটি শনাক্ত করে। এরপর প্রাইভেটকারের মালিকের (চলচ্চিত্র অভিনেতা) সহায়তায় অভিযুক্ত ছিনতাইকারী সুমন মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি মতে শিক্ষিকার ছিনতাইকৃত ব্যাগ, দুইটি মোবাইল ফোন সেট ও কিছু টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশের উত্তরা জোনের এসি খন্দকার রেজাউল হাসান জানান, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কয়েকজন শিক্ষিকা উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর ৪ নম্বর রোড এলাকা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। একজন শিক্ষিকার ডান হাতে তার ব্যবহৃত ব্যাগটি ছিল। হঠাৎ করে একটি প্রাইভেটকার তার কাছাকাছি গিয়ে কিছু বুঝে উঠার আগেই তার হাত ব্যাগটি টান দিয়ে নিয়ে যায়। তিনি চিৎকার দিয়ে ব্যাগটি উদ্ধারের চেষ্টা করতে গিয়ে টানাহেঁচড়ার সময় রাস্তায় পড়ে যান। প্রাইভেটকারচালক ও ছিনতাইকারী সুমন জোরে টান দিয়ে ব্যাগটি নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর তার সঙ্গে থাকা ও আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে আহত শিক্ষিকাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। খবর শুনে পুলিশের উত্তরা জোনের ডিসি মো. শহীদুল্লাহসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে যান। এরপর তারা তদন্তে নামে। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি টিভির ফুটের ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি শনাক্ত করেন। এরপর ওই প্রাইভেটকারের মালিকের (অভিনেতা) সঙ্গে পুলিশ দেখা করে তার ড্রাইভার সম্পর্কে তাকে অবহিত করে। এরপর মালিকের সহায়তায় ড্রাইভার সুমনকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে ছিনতাইকৃত ব্যাগ, ৮টি মোবাইল সেট ও ৮শ’ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সে দীর্ঘদিন ধরে নামি-দামি ব্যক্তিদের প্রাইভেট কার চালাত। এজন্য কেউ তাকে সন্দেহ করত না। ডিউটি শেষে পেশার আড়ালে সে ছিনতাই করত। ঘটনার দিন সে ডিউটি শেষে ওই গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় সুযোগ বুঝে শিক্ষিকার হাতব্যাগ, মোবাইল ফোন সেট ছিনতাই করছে। গত ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে সে ছিনতাই করছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। তার দেয়া তথ্য পুলিশ তদন্ত করছে। ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তাও তদন্ত করা হচ্ছে।

আহত স্কুল শিক্ষিকা শামীমা পারভিন মুঠোফোনে সংবাদকে জানান, ঘটনার দিন উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে একটি দাওয়াতের অনুষ্ঠান থেকে বিকেলে বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। ব্যাগ টানা-হেঁচড়ার সময় তিনি মারাত্মক আহত হন। তার ডান পায়ের হাঁটু ও মাথার পেছনে এবং হাতে মারাত্মক ব্যথা পেয়েছেন। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। প্রচ- যন্ত্রণায় তার রাতে ঘুমও হয় না। ঘটনার পর পুলিশের উত্তরা জোনের ডিসি মো. শহীদুল্লাহসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করছেন। তাদের সহযোগিতায় দ্রুত অপরাধী ধরা পড়েছে।

উত্তরা পূর্ব থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেমস বলেন, গ্রেপ্তারকৃত সুমন ছাড়াও বহিরাগত ছিনতাইকারীরা উত্তরা এলাকায় গিয়ে ছিনতাই করত কিনা তাও তদন্ত করা হচ্ছে। ছিনতাই মামলাটি এখনও তদন্ত পর্যায়ে আছে।

মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১০ ফাল্গুন ১৪২৭ ১০ রজব ১৪৪২

মালিক জানে না তার গাড়িচালক ছিনতাইকারী

বাকী বিল্লাহ

রাজধানীতে একজন চলচ্চিত্র অভিনেতার গাড়িচালক করছে ছিনতাই। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারকৃত এই ছিনতাইকারীর নাম সুমন মিয়া। টঙ্গীতে তার বাসা। প্রাইভেটকার মালিক বিশ্রামে গেলে ড্রাইভার সুযোগ বুঝে সে প্রাইভেটকার নিয়ে ছিনতাই করতে বের হতো। গত তিন বছরে সে রাজধানীর উত্তরা, গুলশান ও বনানী এলাকায় একাই ১৪ থেকে ১৫টি ছিনতাই করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।

সম্প্রতি উত্তরা এলাকায় একজন শিক্ষিকার ব্যাগ ছিনতাই করার পর পুলিশের টনক নড়ে। পুলিশ সিসি টিভির ফুটেজ দেখে ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমে প্রাইভেটকারটি শনাক্ত করে। এরপর প্রাইভেটকারের মালিকের (চলচ্চিত্র অভিনেতা) সহায়তায় অভিযুক্ত ছিনতাইকারী সুমন মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি মতে শিক্ষিকার ছিনতাইকৃত ব্যাগ, দুইটি মোবাইল ফোন সেট ও কিছু টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশের উত্তরা জোনের এসি খন্দকার রেজাউল হাসান জানান, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কয়েকজন শিক্ষিকা উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর ৪ নম্বর রোড এলাকা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। একজন শিক্ষিকার ডান হাতে তার ব্যবহৃত ব্যাগটি ছিল। হঠাৎ করে একটি প্রাইভেটকার তার কাছাকাছি গিয়ে কিছু বুঝে উঠার আগেই তার হাত ব্যাগটি টান দিয়ে নিয়ে যায়। তিনি চিৎকার দিয়ে ব্যাগটি উদ্ধারের চেষ্টা করতে গিয়ে টানাহেঁচড়ার সময় রাস্তায় পড়ে যান। প্রাইভেটকারচালক ও ছিনতাইকারী সুমন জোরে টান দিয়ে ব্যাগটি নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর তার সঙ্গে থাকা ও আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে আহত শিক্ষিকাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। খবর শুনে পুলিশের উত্তরা জোনের ডিসি মো. শহীদুল্লাহসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে যান। এরপর তারা তদন্তে নামে। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি টিভির ফুটের ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি শনাক্ত করেন। এরপর ওই প্রাইভেটকারের মালিকের (অভিনেতা) সঙ্গে পুলিশ দেখা করে তার ড্রাইভার সম্পর্কে তাকে অবহিত করে। এরপর মালিকের সহায়তায় ড্রাইভার সুমনকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে ছিনতাইকৃত ব্যাগ, ৮টি মোবাইল সেট ও ৮শ’ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সে দীর্ঘদিন ধরে নামি-দামি ব্যক্তিদের প্রাইভেট কার চালাত। এজন্য কেউ তাকে সন্দেহ করত না। ডিউটি শেষে পেশার আড়ালে সে ছিনতাই করত। ঘটনার দিন সে ডিউটি শেষে ওই গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় সুযোগ বুঝে শিক্ষিকার হাতব্যাগ, মোবাইল ফোন সেট ছিনতাই করছে। গত ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে সে ছিনতাই করছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। তার দেয়া তথ্য পুলিশ তদন্ত করছে। ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তাও তদন্ত করা হচ্ছে।

আহত স্কুল শিক্ষিকা শামীমা পারভিন মুঠোফোনে সংবাদকে জানান, ঘটনার দিন উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে একটি দাওয়াতের অনুষ্ঠান থেকে বিকেলে বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। ব্যাগ টানা-হেঁচড়ার সময় তিনি মারাত্মক আহত হন। তার ডান পায়ের হাঁটু ও মাথার পেছনে এবং হাতে মারাত্মক ব্যথা পেয়েছেন। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। প্রচ- যন্ত্রণায় তার রাতে ঘুমও হয় না। ঘটনার পর পুলিশের উত্তরা জোনের ডিসি মো. শহীদুল্লাহসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করছেন। তাদের সহযোগিতায় দ্রুত অপরাধী ধরা পড়েছে।

উত্তরা পূর্ব থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেমস বলেন, গ্রেপ্তারকৃত সুমন ছাড়াও বহিরাগত ছিনতাইকারীরা উত্তরা এলাকায় গিয়ে ছিনতাই করত কিনা তাও তদন্ত করা হচ্ছে। ছিনতাই মামলাটি এখনও তদন্ত পর্যায়ে আছে।