রংপুর বিএনপি : চার বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি

দীর্ঘ ৪ বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থতা তৃনমূল পর্যায়ে কমিটি না করাসহ নানা কারণে রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি কমিটি বাতিল করে অ্যাডহক কমিটি গঠন করে দেয়ার ঘোষণা আসছে যেকোন দিন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন শুক্রবার রংপুরে একটি হোটেলে জেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে চার ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

জেলা ও মহানগর বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করলেও নাম প্রকাশে রাজি হননি।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, চার বছর আগে ঢাকা থেকে জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। সাইফুল ইসলামকে সভাপতি, রইছ আহাম্মেদকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা কমিটি এবং প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেনকে সভাপতি, শহিদুল ইসলাম মিজুকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর বিএনপি কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুটি কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা না করে পরে ঘোষণা করা হবে জানানো হয়। এরপর চার বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি।

এদিকে রংপুর মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত রংপুর সিটি করপোরেশনের ৬টি থানাসহ ৩৩টি ওয়ার্ডের একটি কমিটির সম্মেলন হয়নি, কমিটিও গঠন করা হয়নি।

মহানগর বিএনপির এক নেতা জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে দেয়ার পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি আর ঘোষণা করেনি দলের হাইকমান্ড। ইতোমধ্যে মহানগর কমিটির ১৬ জন, সভাপতিসহ বিভিন্ন পদের নেতা দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন এদের মধ্যে দুই নেতা আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। ফলে মহানগর বিএনপি নামসর্বস্ব দলে পরিণত হয়েছে। ওই নেতা বলেন, ঢাকা থেকে দলের বড় বড় নেতারা যতই লম্ফ জম্ফ করুক না কেন দল না থাকলে নেতাকর্মী না থাকলে আন্দোলন সংগ্রাম সফল করা সম্ভব হয় না। রংপুর মহানগরে যদি বিএনপির এ অবস্থা হয় তাহলে দল চলবে কি করে?

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাবেক ছাত্র নেতা শামসুজ্জামান শামুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মহানগর বিএনপির সভাপতি এক বছরেও বেশি হলো মারা গেছেন। তারপরও দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা ও কার্যক্রম চলছে।

অন্যদিকে জেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, একই দিনে ৪ বছর আগে মহানগর বিএনপির মতো জেলা কমিটিও ঘোষণা করা হয়। সাইফুল ইসলামকে সভাপতি রইছ আহাম্মেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষণা করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি আজও ঘোষণা করা হয়নি। এরমধ্যে ঘোষিত কমিটির প্রায় ১৫ জন নেতা দলের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই, তারা দলের কোন কর্মকাণ্ডে অংশ নেন না। অন্যদিকে উপজেলা পর্যায়ে বিএনপির অবস্থা আরও করুণ পীরগাছা, পীরগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলা বাদে বাকি ৫টি উপজেলায় দলের কোন কর্মকাণ্ড একেবারে নেই বলে জানান দলের নেতারা।

এমন অবস্থাতে দলকে চাঙ্গা করতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা রংপুরে আসেন। তারা নগরীর নর্থভিউ হোটেলে জেলা বিএনপির ৩৫ সদস্যের সবাইকে নিয়ে আলোচনা করার কথা জানালেও ২২ জন নেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ জেলার নেতাদের নিয়ে দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির কর্মকাণ্ডে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোণা করবেন। জেলার নেতাদের এ ব্যাপারে মতামত জানতে চাওয়া হলে অধিকাংশ নেতা কমিটি বাতিল করার পক্ষে মতামত দেন। সভায় জেলার নেতারা দাবি করেন, আপাতত দলের মধ্যে সক্রিয় ত্যাগী নেতাদের নিয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠন করে দেয়া হোক এরপর তৃনমূল পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ে সস্মেলন অনুষ্ঠান করে পরে জেলা বিএনপির কাউন্সিল করার কথা জানান। জেলা বিএনপির নেতাদের মতামত নিয়ে বিষয়টি তারেক রহমানকে জানাবেন বলে জানান। তবে যেকোন দিন জেলা ও মহানগর বিএনপি বাতিল করার ঘোষণা আসবে বলে জানিয়ে দেন তিনি। এ ব্যাপারে সভায় উপস্থিত জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কমিটি বাতিলসহ অন্যান্য বিষয় এড়িয়ে গিয়ে বলেন, বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হয়েছে। একই কথা বলেন জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

তবে নাম প্রকাশে অনিশ্চুক জেলা বিএনপির দুই নেতা কমিটি বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দলের হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা দলের জন্য ইতিবাচক তবে এবারও যেন দলের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করা না হয়।

মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১০ ফাল্গুন ১৪২৭ ১০ রজব ১৪৪২

রংপুর বিএনপি : চার বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

দীর্ঘ ৪ বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থতা তৃনমূল পর্যায়ে কমিটি না করাসহ নানা কারণে রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি কমিটি বাতিল করে অ্যাডহক কমিটি গঠন করে দেয়ার ঘোষণা আসছে যেকোন দিন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন শুক্রবার রংপুরে একটি হোটেলে জেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে চার ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

জেলা ও মহানগর বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করলেও নাম প্রকাশে রাজি হননি।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, চার বছর আগে ঢাকা থেকে জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। সাইফুল ইসলামকে সভাপতি, রইছ আহাম্মেদকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা কমিটি এবং প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেনকে সভাপতি, শহিদুল ইসলাম মিজুকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর বিএনপি কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুটি কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা না করে পরে ঘোষণা করা হবে জানানো হয়। এরপর চার বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি।

এদিকে রংপুর মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত রংপুর সিটি করপোরেশনের ৬টি থানাসহ ৩৩টি ওয়ার্ডের একটি কমিটির সম্মেলন হয়নি, কমিটিও গঠন করা হয়নি।

মহানগর বিএনপির এক নেতা জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে দেয়ার পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি আর ঘোষণা করেনি দলের হাইকমান্ড। ইতোমধ্যে মহানগর কমিটির ১৬ জন, সভাপতিসহ বিভিন্ন পদের নেতা দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন এদের মধ্যে দুই নেতা আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। ফলে মহানগর বিএনপি নামসর্বস্ব দলে পরিণত হয়েছে। ওই নেতা বলেন, ঢাকা থেকে দলের বড় বড় নেতারা যতই লম্ফ জম্ফ করুক না কেন দল না থাকলে নেতাকর্মী না থাকলে আন্দোলন সংগ্রাম সফল করা সম্ভব হয় না। রংপুর মহানগরে যদি বিএনপির এ অবস্থা হয় তাহলে দল চলবে কি করে?

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাবেক ছাত্র নেতা শামসুজ্জামান শামুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মহানগর বিএনপির সভাপতি এক বছরেও বেশি হলো মারা গেছেন। তারপরও দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা ও কার্যক্রম চলছে।

অন্যদিকে জেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, একই দিনে ৪ বছর আগে মহানগর বিএনপির মতো জেলা কমিটিও ঘোষণা করা হয়। সাইফুল ইসলামকে সভাপতি রইছ আহাম্মেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষণা করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি আজও ঘোষণা করা হয়নি। এরমধ্যে ঘোষিত কমিটির প্রায় ১৫ জন নেতা দলের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই, তারা দলের কোন কর্মকাণ্ডে অংশ নেন না। অন্যদিকে উপজেলা পর্যায়ে বিএনপির অবস্থা আরও করুণ পীরগাছা, পীরগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলা বাদে বাকি ৫টি উপজেলায় দলের কোন কর্মকাণ্ড একেবারে নেই বলে জানান দলের নেতারা।

এমন অবস্থাতে দলকে চাঙ্গা করতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা রংপুরে আসেন। তারা নগরীর নর্থভিউ হোটেলে জেলা বিএনপির ৩৫ সদস্যের সবাইকে নিয়ে আলোচনা করার কথা জানালেও ২২ জন নেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ জেলার নেতাদের নিয়ে দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির কর্মকাণ্ডে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোণা করবেন। জেলার নেতাদের এ ব্যাপারে মতামত জানতে চাওয়া হলে অধিকাংশ নেতা কমিটি বাতিল করার পক্ষে মতামত দেন। সভায় জেলার নেতারা দাবি করেন, আপাতত দলের মধ্যে সক্রিয় ত্যাগী নেতাদের নিয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠন করে দেয়া হোক এরপর তৃনমূল পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ে সস্মেলন অনুষ্ঠান করে পরে জেলা বিএনপির কাউন্সিল করার কথা জানান। জেলা বিএনপির নেতাদের মতামত নিয়ে বিষয়টি তারেক রহমানকে জানাবেন বলে জানান। তবে যেকোন দিন জেলা ও মহানগর বিএনপি বাতিল করার ঘোষণা আসবে বলে জানিয়ে দেন তিনি। এ ব্যাপারে সভায় উপস্থিত জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কমিটি বাতিলসহ অন্যান্য বিষয় এড়িয়ে গিয়ে বলেন, বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হয়েছে। একই কথা বলেন জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

তবে নাম প্রকাশে অনিশ্চুক জেলা বিএনপির দুই নেতা কমিটি বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দলের হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা দলের জন্য ইতিবাচক তবে এবারও যেন দলের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করা না হয়।