মঞ্চে যে গ্রেনেড ‘ছুড়েছিল’ সেই ইকবাল গ্রেপ্তার

২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের বিশেষ টিম ১৬ বছরেরও বেশি সময় পর রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে সোমববার গভীর রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গি ইকবাল নিজেই সমাবেশস্থলের মঞ্চে গ্রেনেড হামলায় (নিক্ষেপ) জড়িত বলে স্বীকার করেছে। এ জঙ্গি এক সময়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এরপর সে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন প্রেসব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য জানিয়েছেন।

র‌্যাবের ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, জঙ্গি মো. ইকবাল হোসেন ওরফে ইকবাল ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিম। তার পিতার নাম আবদুল মজিদ মোল্লা। ঝিনাইদহে তাদের বাড়ি। সে এইচএসসি পাস। স্কুল ও কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। জঙ্গি ইকবাল ১৯৯৪ সালে কেসি কলেজ, ঝিনাইদহে ছাত্রসংসদে ছাত্রদলের নির্বাচিত শ্রেণী প্রতিনিধি ছিল। সে ১৯৯৫ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় প্রবাসী কর্মজীবী হিসেবে অবস্থান করে। দেশে ফিরে জঙ্গি ইকবাল আইএসডি ফোন ও অন্যান্য ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করে। ২০০১ সালে সে ঝিনাইদহের স্থানীয় জঙ্গি সদস্যদের মাধ্যমে সে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি) যোগদান করে। ২০০৩ সালে শীর্ষ জঙ্গি মুফতি হান্নান ও অন্যান্য জঙ্গি নেতাদের সানিধ্যে আসে। সে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছে। ২০০৪ সালে আগস্ট মাসে মুফতি হান্নানের নির্দেশে ঢাকায় আসে। এরপর বেশ কিছুদিন গোপন আস্তানায় থেকে শীর্ষ জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য সমমনা জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে। সে মুফতি হান্নানের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে দলীয় গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছিল।

২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের নির্দেশে সে গ্রেনেড হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে। মুফতি হান্নান হামলা পরিচালনার জন্য তাকে গ্রেনেড সরবরাহ করেছিল। হামলার সময় সে সমাবেশস্থলের মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছিল। হামলার পর সে ঝিনাইদহে চলে যায়। সেখানে সে আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় সে পরিচয় গোপন করে ছদ্মবেশ ধারণ করে। সে কখনও নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক, রিকশা মেকানিকসহ বিভিন্ন ধরনের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল। ২০০৮ সালে সে দেশ ত্যাগ করে। প্রবাসে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় প্রথমে সেলিম এবং পরবর্তীতে জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করে। এক পর্যায়ে সে প্রবাসে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হলে ২০২০ সালের শেষের দিকে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। দেশে ফিরে জঙ্গি ইকবাল আত্মগোপনে থেকে পুনরায় সমমনাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে।

র‌্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর গ্রেনেড হামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে ১৯ জনের মৃতুদন্ড ও ১৯ জনের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। তার মধ্যে জঙ্গি ইকবালও রয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন মেয়াদে আরও ১১ আসামির সাজা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ২৩ জন কারাগারে। ১৬ জন পলাতক ছিল। জঙ্গি ইকবাল গ্রেপ্তার হওয়ায় এখন পলাতকের তালিকায় ১৫ জন রয়েছে। তবে অন্য মামলায় শীর্ষ জঙ্গি মুফতি আবদুল হান্নানসহ ৩ জনের ফাঁসি ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। পলাতক অন্য আসামিদের ধরতে র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম অব্যাহত আছে। র‌্যাব এর আগেও এ মামলার ১৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। উদ্ধার করেছে একাধিক (১৬টি) গ্রেনেড।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, গ্রেনেড হামলার আসামি ইকবাল নাম পরিবর্তন করে অন্য পরিচয়ে দেশত্যাগ করেছে। সে অবৈধ অভিবাসীর মতই দেশে ফেরত এসেছিল। কার সহযোগিতায় বিদেশ গেছে ও দেশে ফিরিছে তা তদন্ত করা হচ্ছে।

র‌্যাব ডিজি বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে র‌্যাব কাজ করছে। দেশের মাটিতে জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই। জঙ্গিবিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। আর পলাতক আসামিদের ধরতে র‌্যাবের টিম কাজ করছেন।

উল্লেখ্য, ২০০৪ শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামালার ঘটনায় তাৎক্ষণিক ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত ও আহত হয়েছে অনেকেই। এখনও আহতদের মধ্যে অনেকের শরীরে ক্ষত নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১১ ফাল্গুন ১৪২৭ ১১ রজব ১৪৪২

মঞ্চে যে গ্রেনেড ‘ছুড়েছিল’ সেই ইকবাল গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের বিশেষ টিম ১৬ বছরেরও বেশি সময় পর রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে সোমববার গভীর রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গি ইকবাল নিজেই সমাবেশস্থলের মঞ্চে গ্রেনেড হামলায় (নিক্ষেপ) জড়িত বলে স্বীকার করেছে। এ জঙ্গি এক সময়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এরপর সে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন প্রেসব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য জানিয়েছেন।

র‌্যাবের ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, জঙ্গি মো. ইকবাল হোসেন ওরফে ইকবাল ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিম। তার পিতার নাম আবদুল মজিদ মোল্লা। ঝিনাইদহে তাদের বাড়ি। সে এইচএসসি পাস। স্কুল ও কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। জঙ্গি ইকবাল ১৯৯৪ সালে কেসি কলেজ, ঝিনাইদহে ছাত্রসংসদে ছাত্রদলের নির্বাচিত শ্রেণী প্রতিনিধি ছিল। সে ১৯৯৫ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় প্রবাসী কর্মজীবী হিসেবে অবস্থান করে। দেশে ফিরে জঙ্গি ইকবাল আইএসডি ফোন ও অন্যান্য ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করে। ২০০১ সালে সে ঝিনাইদহের স্থানীয় জঙ্গি সদস্যদের মাধ্যমে সে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি) যোগদান করে। ২০০৩ সালে শীর্ষ জঙ্গি মুফতি হান্নান ও অন্যান্য জঙ্গি নেতাদের সানিধ্যে আসে। সে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছে। ২০০৪ সালে আগস্ট মাসে মুফতি হান্নানের নির্দেশে ঢাকায় আসে। এরপর বেশ কিছুদিন গোপন আস্তানায় থেকে শীর্ষ জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য সমমনা জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে। সে মুফতি হান্নানের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে দলীয় গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছিল।

২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের নির্দেশে সে গ্রেনেড হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে। মুফতি হান্নান হামলা পরিচালনার জন্য তাকে গ্রেনেড সরবরাহ করেছিল। হামলার সময় সে সমাবেশস্থলের মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছিল। হামলার পর সে ঝিনাইদহে চলে যায়। সেখানে সে আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় সে পরিচয় গোপন করে ছদ্মবেশ ধারণ করে। সে কখনও নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক, রিকশা মেকানিকসহ বিভিন্ন ধরনের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল। ২০০৮ সালে সে দেশ ত্যাগ করে। প্রবাসে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় প্রথমে সেলিম এবং পরবর্তীতে জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করে। এক পর্যায়ে সে প্রবাসে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হলে ২০২০ সালের শেষের দিকে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। দেশে ফিরে জঙ্গি ইকবাল আত্মগোপনে থেকে পুনরায় সমমনাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে।

র‌্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর গ্রেনেড হামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে ১৯ জনের মৃতুদন্ড ও ১৯ জনের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। তার মধ্যে জঙ্গি ইকবালও রয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন মেয়াদে আরও ১১ আসামির সাজা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ২৩ জন কারাগারে। ১৬ জন পলাতক ছিল। জঙ্গি ইকবাল গ্রেপ্তার হওয়ায় এখন পলাতকের তালিকায় ১৫ জন রয়েছে। তবে অন্য মামলায় শীর্ষ জঙ্গি মুফতি আবদুল হান্নানসহ ৩ জনের ফাঁসি ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। পলাতক অন্য আসামিদের ধরতে র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম অব্যাহত আছে। র‌্যাব এর আগেও এ মামলার ১৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। উদ্ধার করেছে একাধিক (১৬টি) গ্রেনেড।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, গ্রেনেড হামলার আসামি ইকবাল নাম পরিবর্তন করে অন্য পরিচয়ে দেশত্যাগ করেছে। সে অবৈধ অভিবাসীর মতই দেশে ফেরত এসেছিল। কার সহযোগিতায় বিদেশ গেছে ও দেশে ফিরিছে তা তদন্ত করা হচ্ছে।

র‌্যাব ডিজি বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে র‌্যাব কাজ করছে। দেশের মাটিতে জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই। জঙ্গিবিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। আর পলাতক আসামিদের ধরতে র‌্যাবের টিম কাজ করছেন।

উল্লেখ্য, ২০০৪ শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামালার ঘটনায় তাৎক্ষণিক ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত ও আহত হয়েছে অনেকেই। এখনও আহতদের মধ্যে অনেকের শরীরে ক্ষত নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।