বিশ্ববিদ্যালয়ে হল ছাড়ছে না শিক্ষার্থীরা

শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পর সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। মার্চে ছাত্রাবাস খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তও প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি সভায় জানানো হয় ১৭ মে’র আগে হল খোলা হবে না।

২৪ মে’র পর ক্লাস শুরুর পর পরীক্ষা নেয়া হবে। এছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অনলাইনসহ সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে আবাসিক হলে অবস্থান করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হল খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। একই দাবি রাজশাহী ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের।

গত বছর ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কয়েক ধাপে এই ছুটি ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও ক্লাস খুলে দেয়ার দাবিতে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগরসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৪ মে থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু ও ১৭ মে থেকে ছাত্রাবাস খুলে দেয়া হবে বলে গত সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এরপর সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘ক্যাম্পাস বন্ধের পরও যারা বাড়ি যাননি, তারা মূলত নি¤œবিত্ত পরিবারের সন্তান। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি অনেকেই টিউশনি করেন। অনেকে আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খন্ডকালীন কাজও করেন। আয় থেকে পড়াশোনার খরচ যেভাবে আসে, অনেকে আবার পরিবারকেও পাঠান। এত দিন তারা ভাড়া বাসায় থেকেই সেই কাজ করে আসছিলেন। সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আবাসিক হল খোলার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন। এর ফলে আগামী ১৭ মে খুলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল এবং ২৪ মে শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে হল খোলার ১ মাস আগে আগামী ১৭ এপ্রিলের মধ্যে শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা দেয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল সাত কলেজের অধ্যক্ষ ও সংশ্লিষ্ট তিন ডিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘হল খোলার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবে না। তবে হল খোলার এক মাস আগেই শিক্ষার্থীদের করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। নিজ ব্যবস্থাপনায় নেয়া বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষাসমূহ চলমান থাকবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে নতুন করে কোন পরীক্ষা নেয়া হবে না।’ গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশ শেষে সকল বর্ষের জন্য হল খুলে দেয়ার দাবিতে উপাচার্যের কাছে শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ সময় ৭২ ঘণ্টা আলটিমেটাম দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তাদের নতুন কর্মসূচি আজ ঘোষণা করা হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের ছাত্রীরাসহ ছেলেদের চারটি হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়েছেন হল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে তিনটি হল সিলগালা ও বাকি দুটি হলে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হলে অবস্থান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়া পর্যন্ত প্রাধ্যক্ষরা হলে অবস্থান করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই প্রাধ্যক্ষরা হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে অনুরোধ করেন। পরে শহীদ রফিক-জব্বার হল, শহীদ সালাম-বরকত হল ও ছাত্রীদের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল সিলগালা করা হয়। এছাড়া আ ফ ম কামালউদ্দিন হল ও মীর মশাররফ হোসেন হলে শিক্ষার্থীদের বের করে তালা লাগিয়ে দেয় প্রশাসন।

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের একাধিক ছাত্রী বলেন, ‘আমরা ছেলেদের হলের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবো। ছেলেরা যদি হলে থাকে তবে আমরাও আবার হলে উঠবো।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘ইতোমধ্যে পাঁচটি হলের শিক্ষার্থীদের বের করে ফটকে তালা লাগানো হয়েছে। বাকি হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে। ওই হলগুলোতেও আমাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আর অনুরোধ জানানো হবে না। বাকিটা রাষ্ট্রীয় প্রশাসন দেখবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বৈঠকের ব্যাপারে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘বৈঠকে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করার অনুরোধ জানানো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যদি শিক্ষার্থীরা অন্যত্রে নিরাপত্তা চায় তবে আমরা সেটিও নিশ্চিত করবো বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

এদিকে গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা, হল খুলে প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধা দেয়া এবং হামলায় আহতদের চিকিৎসা ব্যয় ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। এসব দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবারের কর্মসূচি স্থগিত ছিল। তবে নিরাপত্তহীনতার কারণে আমরা হলে অবস্থান করবো। দাবি আদায়ের জন্য পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে।

মঙ্গলবার দুপুরে প্রশাসনের আশ্বাসে পূর্ব ঘোষিত দুপুর ১২টার বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে আন্দোলনকারীরা। অপরদিকে শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বললে- তারাও রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা রাখবে বলে জানিয়েছেন। গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন গেরুয়া এলাকায় ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে পূর্ব বিরোধের জেরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে স্থানীয়রা। পরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ ঘটনায় ৪০ শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে জোরপূর্বক হলে ওঠে শিক্ষার্থীরা।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

হল ও ক্যাম্পাস খুলে দিতে পাঁচ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা। গতকাল ক্যাম্পাসের ডায়েনা চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সময়সীমা দেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্দেশ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘দ্রুত হল ও ক্যাম্পাস খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা হলে ঢোকার ব্যবস্থা নিজেরাই করে নিতে বাধ্য হবেন।’ তাদের দাবিগুলো হলো : বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থগিত করা সব পরীক্ষা পুনরায় শুরু করতে হবে এবং আগামী ১ মার্চের আগে হল ও ক্যাম্পাস খুলে দিতে হবে। এই সময়ের মধ্যে হল খুলে না দিলে শিক্ষার্থীরা ১ মার্চ হলে ঢুকে যেতে বাধ্য হবেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘সরকার সবকিছু স্বাভাবিক করে দিয়েছে। ৬৪ জেলায় স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এ ছাড়া ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনগুলো তাদের সব ধরনের কার্যক্রম চলমান রেখেছে। সরকার যদি সত্যিই শিক্ষার্থীদের তথা দেশের মানুষের চিন্তা করে করোনা সংক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকত, তাহলে এসব কার্যক্রম চলমান থাকত না। অন্যদিকে, প্রায় ছয় মাস আগে দেশের কওমি ও হাফেজি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে- সরকারের এই দাবির কোন যৌক্তিকতা নেই।’

বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১১ ফাল্গুন ১৪২৭ ১১ রজব ১৪৪২

বিশ্ববিদ্যালয়ে হল ছাড়ছে না শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পর সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। মার্চে ছাত্রাবাস খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তও প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি সভায় জানানো হয় ১৭ মে’র আগে হল খোলা হবে না।

২৪ মে’র পর ক্লাস শুরুর পর পরীক্ষা নেয়া হবে। এছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অনলাইনসহ সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে আবাসিক হলে অবস্থান করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হল খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। একই দাবি রাজশাহী ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের।

গত বছর ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কয়েক ধাপে এই ছুটি ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও ক্লাস খুলে দেয়ার দাবিতে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগরসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৪ মে থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু ও ১৭ মে থেকে ছাত্রাবাস খুলে দেয়া হবে বলে গত সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এরপর সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘ক্যাম্পাস বন্ধের পরও যারা বাড়ি যাননি, তারা মূলত নি¤œবিত্ত পরিবারের সন্তান। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি অনেকেই টিউশনি করেন। অনেকে আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খন্ডকালীন কাজও করেন। আয় থেকে পড়াশোনার খরচ যেভাবে আসে, অনেকে আবার পরিবারকেও পাঠান। এত দিন তারা ভাড়া বাসায় থেকেই সেই কাজ করে আসছিলেন। সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আবাসিক হল খোলার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন। এর ফলে আগামী ১৭ মে খুলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল এবং ২৪ মে শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে হল খোলার ১ মাস আগে আগামী ১৭ এপ্রিলের মধ্যে শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা দেয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল সাত কলেজের অধ্যক্ষ ও সংশ্লিষ্ট তিন ডিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘হল খোলার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবে না। তবে হল খোলার এক মাস আগেই শিক্ষার্থীদের করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। নিজ ব্যবস্থাপনায় নেয়া বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষাসমূহ চলমান থাকবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে নতুন করে কোন পরীক্ষা নেয়া হবে না।’ গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশ শেষে সকল বর্ষের জন্য হল খুলে দেয়ার দাবিতে উপাচার্যের কাছে শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ সময় ৭২ ঘণ্টা আলটিমেটাম দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তাদের নতুন কর্মসূচি আজ ঘোষণা করা হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের ছাত্রীরাসহ ছেলেদের চারটি হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়েছেন হল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে তিনটি হল সিলগালা ও বাকি দুটি হলে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হলে অবস্থান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়া পর্যন্ত প্রাধ্যক্ষরা হলে অবস্থান করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই প্রাধ্যক্ষরা হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে অনুরোধ করেন। পরে শহীদ রফিক-জব্বার হল, শহীদ সালাম-বরকত হল ও ছাত্রীদের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল সিলগালা করা হয়। এছাড়া আ ফ ম কামালউদ্দিন হল ও মীর মশাররফ হোসেন হলে শিক্ষার্থীদের বের করে তালা লাগিয়ে দেয় প্রশাসন।

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের একাধিক ছাত্রী বলেন, ‘আমরা ছেলেদের হলের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবো। ছেলেরা যদি হলে থাকে তবে আমরাও আবার হলে উঠবো।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘ইতোমধ্যে পাঁচটি হলের শিক্ষার্থীদের বের করে ফটকে তালা লাগানো হয়েছে। বাকি হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে। ওই হলগুলোতেও আমাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আর অনুরোধ জানানো হবে না। বাকিটা রাষ্ট্রীয় প্রশাসন দেখবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বৈঠকের ব্যাপারে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘বৈঠকে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করার অনুরোধ জানানো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যদি শিক্ষার্থীরা অন্যত্রে নিরাপত্তা চায় তবে আমরা সেটিও নিশ্চিত করবো বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

এদিকে গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা, হল খুলে প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধা দেয়া এবং হামলায় আহতদের চিকিৎসা ব্যয় ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। এসব দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবারের কর্মসূচি স্থগিত ছিল। তবে নিরাপত্তহীনতার কারণে আমরা হলে অবস্থান করবো। দাবি আদায়ের জন্য পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে।

মঙ্গলবার দুপুরে প্রশাসনের আশ্বাসে পূর্ব ঘোষিত দুপুর ১২টার বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে আন্দোলনকারীরা। অপরদিকে শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বললে- তারাও রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা রাখবে বলে জানিয়েছেন। গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন গেরুয়া এলাকায় ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে পূর্ব বিরোধের জেরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে স্থানীয়রা। পরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ ঘটনায় ৪০ শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে জোরপূর্বক হলে ওঠে শিক্ষার্থীরা।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

হল ও ক্যাম্পাস খুলে দিতে পাঁচ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা। গতকাল ক্যাম্পাসের ডায়েনা চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সময়সীমা দেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্দেশ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘দ্রুত হল ও ক্যাম্পাস খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা হলে ঢোকার ব্যবস্থা নিজেরাই করে নিতে বাধ্য হবেন।’ তাদের দাবিগুলো হলো : বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থগিত করা সব পরীক্ষা পুনরায় শুরু করতে হবে এবং আগামী ১ মার্চের আগে হল ও ক্যাম্পাস খুলে দিতে হবে। এই সময়ের মধ্যে হল খুলে না দিলে শিক্ষার্থীরা ১ মার্চ হলে ঢুকে যেতে বাধ্য হবেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘সরকার সবকিছু স্বাভাবিক করে দিয়েছে। ৬৪ জেলায় স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এ ছাড়া ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনগুলো তাদের সব ধরনের কার্যক্রম চলমান রেখেছে। সরকার যদি সত্যিই শিক্ষার্থীদের তথা দেশের মানুষের চিন্তা করে করোনা সংক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকত, তাহলে এসব কার্যক্রম চলমান থাকত না। অন্যদিকে, প্রায় ছয় মাস আগে দেশের কওমি ও হাফেজি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে- সরকারের এই দাবির কোন যৌক্তিকতা নেই।’