দু’গ্রুপের রেষারেষি ১০ বছরে বগুড়ায় ৮ খুন

বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার চিহ্নিত ফোরকানকে (৩৫) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। গত সোমবার উপজেলার জাহাঙ্গীরাবাদ ফুলতলা বাজার এলাকায় বিকেল সোয়া ৩টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে এসে তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গতকাল ভোর ৬টার দিকে সে মারা যায়।

হত্যার বদলা নিতে একের পর এক প্রতিপক্ষ গ্রুপের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে ৮ জনকে। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মজনুর বন্ধু শাহীনের হাতে খুন হয় মজনুর পিতা শুকুর আলী প্রামানিক। পিতার হত্যার বদলা নিতে শাজাহানপুর উপজেলার ফুলদীঘি এলাকায় সরকারি আমবাগানে মজনুর হাতে খুন হন শাহীন। শাহীন-মজনু গ্রুপের সন্ত্রাসীরা শক্তি বাড়াতে ভিড়ে যান রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়ে। শীর্ষ সন্ত্রাসীর খাতায় নাম লেখাতে মরিয়া হয়ে উঠে দু’গ্রুপের সন্ত্রাসীরা। অস্ত্রের ঝনঝনানিতে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। কিন্তু কারও প্রতিবাদ করার সাহস নেই।

শাহীন হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই শাহীন বাহিনীর হাতে প্রথমে খুন হন মজনুর ভাতিজা শামীম আহম্মেদ বুশ। একই বাহিনীর হাতে একই এলাকায় একটি বাড়ির ভিভরে খুন হন মজনু প্রামানিক ও তার ভাতিজা নাহিদ প্রামানিক। এ ঘটনার কিছুদিন পরই বাড়ির অদূরে খুন হন মজনুর ভাই রঞ্জু প্রামানিক। পরবর্তিতে নিহত মজনু পরিবারের হাতে খুন হন শাহীন গ্রুপের অন্যতম সদস্য আকুল। ২০০০ সাল থেকে শুরু করে ২০২১ সাল পর্যন্ত বগুড়া শহরতলীর ফুলতলা এলাকা সন্ত্রাসীদের অভায়ারন্য হয়ে উঠে। চলতে থাকে আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা।

পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রতিশোধের স্পৃহা একের পর এক চলতে থাকে হত্যা পাল্টা হত্যা। এক সন্ত্রাসী খুন হন। আবার ওই খুনের বদলা নিতে তার ছেলে অথবা ভাই ভাতিজা সন্ত্রাসী হয়ে উঠে। দীর্ঘদিন ধরে এসব ঘটনা চলতে থাকলেও এ ঘটনা কখনই মীমাংসা হয়নি। এসব সন্ত্রাসীরা কোন না কোন দলের সদস্য কিন্তু দলের নেতারাও কখনও মীমাংসার উদ্যোগ নেননি। একটি খুনের পর সন্ত্রাসীরা কিছু গা ঢাকা দিয়ে থেকেছে। কিন্তু আবারও এলাকায় ফিরে হয় সে খুন হয়েছেন না হয় অন্য কাউকে খুন করা হয়েছে।

সর্বশেষ শাজাহানপুরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ফোরকান (৩৫) প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন। পূর্ব শত্রুতার জের এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ইট বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। গত সোমবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে উপজেলার জাহাঙ্গীরাবাদ ফুলতলা বাজার এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে কুপিয়ে ফেলে যায়। পুলিশ এবং স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে ইনটেনসিভ কেয়ায়র ইউনিট (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোর ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

নিহত ব্যক্তি ওই এলাকার মৃত মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তারের ছেলে। নিহত ফোরকানের বিরুদ্ধে ওই এলাকার পৃথক ২টি হত্যা মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সে নিহত শাহীন বাহিনীর সদস্য। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু করে গতকাল পর্যন্ত উভয় পক্ষের মোট ৮ জন নিহত হয়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি এবং জড়িত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। পাল্টা হামলার আশঙ্কায় বর্তমানে ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

নিহতের মা শাহানা বেওয়া জানান, তার ছেলে ভালো হয়ে গিয়েছিল। সোমবার দুপুরে ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর প্রতিপক্ষের লোকজন রাস্তা থেকে তাকে ধরে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

সরেজমিন জানা যায়, ফুলতলা এলাকায় শাহীন এবং মজনু প্রামানিক দুই বন্ধু সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে নিজেদের বগুড়া জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম লেখান। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে শাহীনের হাতে ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মজনুর পিতা শুকুর আলী প্রামানিক নিহত হন।

কোনঠাসা হয় মজনু পরিবার। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় দীর্ঘ সময় পালিয়ে থাকে শাহীন। তার সহযোগিরাও বিভিন্ন পেশায় ঢুকে যায়। একটা সময় ফিরে আসে শাহীন এবং পুরাতনের সঙ্গে নতুন সযোগীদের নিয়ে আবারও আধিপত্য বিস্তার শুরু করে এবং মজনু পরিবারের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। উপজেলার ফুলদীঘি এলাকায় সরকারি একটি বাগানে মজনু পরিবারের হাতে নিহত হয় শাহীন। আম বাগানের একটি কাঠের চকির উপর মাথায় কুপিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। এরমধ্যে বগুড়ায় খুনের একটি স্টাইল চালু হয়ে যায়।

শাহীন হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই উপজেলার জাহাঙ্গীরাবাদ ফুলতলা বাজার এলাকায় নিজের পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে ছাগলের খামারে খুন হয় মজনু প্রামানিকের ভাগিনা যুবলীগ নেতা শামীম আহম্মেদ বুশ। তার মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে কুপিয়ে খুন করে শাহীন বাহিনীর সদ্যরা। এই ঘটনার কিছু দিনের মাথায় উপজেলার গন্ডগ্রাম এলাকায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বাড়িতে মজনু এবং তার ভাতিজা নাহিদকে একসঙ্গে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে খুন করে শাহীন বাহিনীর সদস্যরা।

এর রেশ কাটতে না কাটতেই একই বাহিনী ফুলতলা এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করে মজনুর ছোট ভাই রঞ্জু প্রামানিককে। সিরিয়াল কিলার হিসেবে পরিচিতি পায় শাহীন বাহিনীর সদস্যরা। কোণঠাসা মজনু পরিবার আক্রমণের চেয়ে আত্মরক্ষায় চেষ্টা চালায়। এরমধ্যে বুশ এবং রঞ্জু হত্যা মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন ফোরকান। মামলায় তদন্ত শেষে অন্য আসামিদের সঙ্গে ফোরকানের নামসহ কোর্টে চার্জশিট দেয় পুলিশ।

মামলাগুলোয় জামিন নিয়ে এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করে শাহীন বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় মজনু পরিবারের সদস্যদের হাতে খুন হয় শাহীন বাহিনীর সহযোগী আকুল।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাজাহানপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে সে সময় বিপুল পরিমাণ দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেন। পরে আরেকটি র‌্যাবের অভিযানে মজনুর ছোট ভাই নান্টুকে বিদেশি অস্ত্র, গুলিসহ গ্রেপ্তার করেন র‌্যাব বগুড়া। আগামী ২৮ফেব্রুয়ারি বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন নিহত মজনুর ভাতিজা নাদিম প্রামানিক। এই সুযোগে এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছিলেন শাহীন বাহিনীর সদস্যরা।

বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গত সোমবার সকালের দিকে রঞ্জুর ছেলে সুমন এবং তার ফুপাতো ভাই মানিককে মারপিট করে ফোরকান। এতে মানিক আহত হন। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ফোরকানকে ফুলতলা বাজারের পার্শ্বে মাথায় কুপিয়ে চলে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন। পুলিশ এবং স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে ফোরকানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। মজনু পরিবারের গুলফি বেগম এবং জরিনা বেওয়া জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সুমন এবং মানিকের সঙ্গে ফোরকানের বাগবিতন্ডা হয়। ফোরকানরা মানিককে মেরে আহত করে। তারপর কি হয়েছে তা তাদের জানা নেই।

শাজাহানপুর থানার পরিদর্শক (সার্বিক) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। এখনও মামলা হয়নি। তবে এলাকার মানুষ মধ্যে আলোচনা চলছে ফোরকানের পরে টার্গেট কে?

বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১১ ফাল্গুন ১৪২৭ ১১ রজব ১৪৪২

দু’গ্রুপের রেষারেষি ১০ বছরে বগুড়ায় ৮ খুন

আমজাদ হোসেন মিন্টু, বগুড়া

বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার চিহ্নিত ফোরকানকে (৩৫) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। গত সোমবার উপজেলার জাহাঙ্গীরাবাদ ফুলতলা বাজার এলাকায় বিকেল সোয়া ৩টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে এসে তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গতকাল ভোর ৬টার দিকে সে মারা যায়।

হত্যার বদলা নিতে একের পর এক প্রতিপক্ষ গ্রুপের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে ৮ জনকে। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মজনুর বন্ধু শাহীনের হাতে খুন হয় মজনুর পিতা শুকুর আলী প্রামানিক। পিতার হত্যার বদলা নিতে শাজাহানপুর উপজেলার ফুলদীঘি এলাকায় সরকারি আমবাগানে মজনুর হাতে খুন হন শাহীন। শাহীন-মজনু গ্রুপের সন্ত্রাসীরা শক্তি বাড়াতে ভিড়ে যান রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়ে। শীর্ষ সন্ত্রাসীর খাতায় নাম লেখাতে মরিয়া হয়ে উঠে দু’গ্রুপের সন্ত্রাসীরা। অস্ত্রের ঝনঝনানিতে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। কিন্তু কারও প্রতিবাদ করার সাহস নেই।

শাহীন হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই শাহীন বাহিনীর হাতে প্রথমে খুন হন মজনুর ভাতিজা শামীম আহম্মেদ বুশ। একই বাহিনীর হাতে একই এলাকায় একটি বাড়ির ভিভরে খুন হন মজনু প্রামানিক ও তার ভাতিজা নাহিদ প্রামানিক। এ ঘটনার কিছুদিন পরই বাড়ির অদূরে খুন হন মজনুর ভাই রঞ্জু প্রামানিক। পরবর্তিতে নিহত মজনু পরিবারের হাতে খুন হন শাহীন গ্রুপের অন্যতম সদস্য আকুল। ২০০০ সাল থেকে শুরু করে ২০২১ সাল পর্যন্ত বগুড়া শহরতলীর ফুলতলা এলাকা সন্ত্রাসীদের অভায়ারন্য হয়ে উঠে। চলতে থাকে আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা।

পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রতিশোধের স্পৃহা একের পর এক চলতে থাকে হত্যা পাল্টা হত্যা। এক সন্ত্রাসী খুন হন। আবার ওই খুনের বদলা নিতে তার ছেলে অথবা ভাই ভাতিজা সন্ত্রাসী হয়ে উঠে। দীর্ঘদিন ধরে এসব ঘটনা চলতে থাকলেও এ ঘটনা কখনই মীমাংসা হয়নি। এসব সন্ত্রাসীরা কোন না কোন দলের সদস্য কিন্তু দলের নেতারাও কখনও মীমাংসার উদ্যোগ নেননি। একটি খুনের পর সন্ত্রাসীরা কিছু গা ঢাকা দিয়ে থেকেছে। কিন্তু আবারও এলাকায় ফিরে হয় সে খুন হয়েছেন না হয় অন্য কাউকে খুন করা হয়েছে।

সর্বশেষ শাজাহানপুরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ফোরকান (৩৫) প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন। পূর্ব শত্রুতার জের এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ইট বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। গত সোমবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে উপজেলার জাহাঙ্গীরাবাদ ফুলতলা বাজার এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে কুপিয়ে ফেলে যায়। পুলিশ এবং স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে ইনটেনসিভ কেয়ায়র ইউনিট (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোর ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

নিহত ব্যক্তি ওই এলাকার মৃত মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তারের ছেলে। নিহত ফোরকানের বিরুদ্ধে ওই এলাকার পৃথক ২টি হত্যা মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সে নিহত শাহীন বাহিনীর সদস্য। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু করে গতকাল পর্যন্ত উভয় পক্ষের মোট ৮ জন নিহত হয়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি এবং জড়িত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। পাল্টা হামলার আশঙ্কায় বর্তমানে ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

নিহতের মা শাহানা বেওয়া জানান, তার ছেলে ভালো হয়ে গিয়েছিল। সোমবার দুপুরে ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর প্রতিপক্ষের লোকজন রাস্তা থেকে তাকে ধরে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

সরেজমিন জানা যায়, ফুলতলা এলাকায় শাহীন এবং মজনু প্রামানিক দুই বন্ধু সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে নিজেদের বগুড়া জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম লেখান। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে শাহীনের হাতে ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মজনুর পিতা শুকুর আলী প্রামানিক নিহত হন।

কোনঠাসা হয় মজনু পরিবার। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় দীর্ঘ সময় পালিয়ে থাকে শাহীন। তার সহযোগিরাও বিভিন্ন পেশায় ঢুকে যায়। একটা সময় ফিরে আসে শাহীন এবং পুরাতনের সঙ্গে নতুন সযোগীদের নিয়ে আবারও আধিপত্য বিস্তার শুরু করে এবং মজনু পরিবারের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। উপজেলার ফুলদীঘি এলাকায় সরকারি একটি বাগানে মজনু পরিবারের হাতে নিহত হয় শাহীন। আম বাগানের একটি কাঠের চকির উপর মাথায় কুপিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। এরমধ্যে বগুড়ায় খুনের একটি স্টাইল চালু হয়ে যায়।

শাহীন হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই উপজেলার জাহাঙ্গীরাবাদ ফুলতলা বাজার এলাকায় নিজের পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে ছাগলের খামারে খুন হয় মজনু প্রামানিকের ভাগিনা যুবলীগ নেতা শামীম আহম্মেদ বুশ। তার মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে কুপিয়ে খুন করে শাহীন বাহিনীর সদ্যরা। এই ঘটনার কিছু দিনের মাথায় উপজেলার গন্ডগ্রাম এলাকায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বাড়িতে মজনু এবং তার ভাতিজা নাহিদকে একসঙ্গে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে খুন করে শাহীন বাহিনীর সদস্যরা।

এর রেশ কাটতে না কাটতেই একই বাহিনী ফুলতলা এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করে মজনুর ছোট ভাই রঞ্জু প্রামানিককে। সিরিয়াল কিলার হিসেবে পরিচিতি পায় শাহীন বাহিনীর সদস্যরা। কোণঠাসা মজনু পরিবার আক্রমণের চেয়ে আত্মরক্ষায় চেষ্টা চালায়। এরমধ্যে বুশ এবং রঞ্জু হত্যা মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন ফোরকান। মামলায় তদন্ত শেষে অন্য আসামিদের সঙ্গে ফোরকানের নামসহ কোর্টে চার্জশিট দেয় পুলিশ।

মামলাগুলোয় জামিন নিয়ে এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করে শাহীন বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় মজনু পরিবারের সদস্যদের হাতে খুন হয় শাহীন বাহিনীর সহযোগী আকুল।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাজাহানপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে সে সময় বিপুল পরিমাণ দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেন। পরে আরেকটি র‌্যাবের অভিযানে মজনুর ছোট ভাই নান্টুকে বিদেশি অস্ত্র, গুলিসহ গ্রেপ্তার করেন র‌্যাব বগুড়া। আগামী ২৮ফেব্রুয়ারি বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন নিহত মজনুর ভাতিজা নাদিম প্রামানিক। এই সুযোগে এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছিলেন শাহীন বাহিনীর সদস্যরা।

বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গত সোমবার সকালের দিকে রঞ্জুর ছেলে সুমন এবং তার ফুপাতো ভাই মানিককে মারপিট করে ফোরকান। এতে মানিক আহত হন। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ফোরকানকে ফুলতলা বাজারের পার্শ্বে মাথায় কুপিয়ে চলে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন। পুলিশ এবং স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে ফোরকানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। মজনু পরিবারের গুলফি বেগম এবং জরিনা বেওয়া জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সুমন এবং মানিকের সঙ্গে ফোরকানের বাগবিতন্ডা হয়। ফোরকানরা মানিককে মেরে আহত করে। তারপর কি হয়েছে তা তাদের জানা নেই।

শাজাহানপুর থানার পরিদর্শক (সার্বিক) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। এখনও মামলা হয়নি। তবে এলাকার মানুষ মধ্যে আলোচনা চলছে ফোরকানের পরে টার্গেট কে?