আম্পানে বিধ্বস্ত বাঘারপাড়া কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্র সংস্কারে উদ্যোগ নেই

বাঘারপাড়ার গাইদঘাট গ্রামে অবস্থিত দেশের একমাত্র কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্রটি বিগত আম্পান ঝড়ে বিধ্বস্ত হলেও আজ অবধি তা সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এই কেন্দ্রটি ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ছিলেন ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনিই এই কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেছিলেন। তখন এই কেন্দ্রের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন কৃষক সংগঠক আইয়ুব হোসেন। আজীবন এই সংগ্রামী কৃষক নেতা, নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনের পুরোধা কৃষিবান্ধব সফল কৃষক সংগঠক আইয়ূব হোসেন ২০১৬ সালের ১৬ই জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। তার জীবদ্দশায় এই কেন্দ্রের উদ্যোগে এলাকার ৬০টি গ্রামে গড়ে তুলেছিলেন ৬৪টি কৃষি ক্লাব। এই কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্র ৬৪টি কৃষি ক্লাবকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আইয়ূব হোসেনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এলাকার কৃষকেরা বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশিক্ষিত হয়েছিল। এলাকার অন্তত দশ সহস্রাধিক কৃষক কৃষির বিভিন্ন বিষয়ে সরকারী বিভিন্ন বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করেছিল এবং এসব প্রশিক্ষণ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতা নিজেদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগায়ে যাচ্ছেন। এই কেন্দ্রের উদ্যোগে যশোরের গাইদঘাট গ্রামে বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের কাজ শুরু হয়। যে কারণে বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদনের মডেল এলাকা হিসেবে যশোর জেলা সারা বিশ্বের মধ্যে স্থান পায়। এই কৃষক সংগঠক আইয়ূব হোসেন ও তার সহযোগী সাংবাদিক লক্ষ্মণ চন্দ্র মণ্ডলকে ২০১০ সালে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী পুরস্কৃত করেছিলেন। তার জীবদ্দশায় এই কেন্দ্রের উদ্যোগে তখন এ এলাকায় দেশের সকল স্বনামধন্য কৃষি বিজ্ঞানী, কৃষিবিদ ও অগনিত বিদেশী বিজ্ঞানীদের পদচারণা ঘটেছিল। সেই বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদনের মডেলকে সামনে নিয়েই এখন সারাদেশেই চলছে বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদনের আন্দোলন।

কেন্দ্রটির শুরু থেকে যে ঘরটিতে যাবতীয় কর্মকাণ্ড সম্পাদন হতো, যেখানে সকল দেশি বিদেশি বিজ্ঞানীদের নিয়ে কৃষক-কৃষানীদের প্রশিক্ষণ দেয়াসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড চালানো হতো। সেই ঘরটি বিগত আম্পান ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়। ঘরটিতে সংরক্ষিত এ যাবতকালের সব ধরনের মূল্যবান কাপজপত্র ঝড়ে বিধ্বস্ত ঘরে বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরটিতে সংরক্ষিত বিভিন্ন ধরনের পোস্টার, ফেস্টুন, গবেষণামূলক বই পুস্তক ও সব ধরনের আসবাবপত্র ভিজে পঁচে গেছে। কেন্দ্রের সভাপতি আইয়ুব হোসেনের মৃত্যুর আগপর্যন্ত তার সহযোগী বন্ধু লক্ষ্মণ চন্দ্র মণ্ডল ছিলেন, ওই কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক। লক্ষ্মণ চন্দ্র মণ্ডল নিজেই কেন্দ্রের নামে জমিদানসহ তিনিই ঘরটি নিজ খরচে গড়ে দিয়েছিলেন। আইয়ুব হোসেনের মৃত্যুর পর এলাকার কিছু কৃষক নেতাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে, সেই কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয় কৃষক সংগঠক ও সাংবাদিক লক্ষ্মণ চন্দ্র মণ্ডলকে। তিনি বিগত বছর দুইদিন ধরে বিভিন্ন রোগে অসুস্থ হয়ে বর্তমান অর্থকষ্টে আছেন। যে কারণে কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্রের ওই ঘরটি মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১২ ফাল্গুন ১৪২৭ ১২ রজব ১৪৪২

আম্পানে বিধ্বস্ত বাঘারপাড়া কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্র সংস্কারে উদ্যোগ নেই

প্রতিনিধি, বাঘারপাড়া (যশোর)

image

বাঘারপাড়ার গাইদঘাট গ্রামে অবস্থিত দেশের একমাত্র কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্রটি বিগত আম্পান ঝড়ে বিধ্বস্ত হলেও আজ অবধি তা সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এই কেন্দ্রটি ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ছিলেন ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনিই এই কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেছিলেন। তখন এই কেন্দ্রের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন কৃষক সংগঠক আইয়ুব হোসেন। আজীবন এই সংগ্রামী কৃষক নেতা, নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনের পুরোধা কৃষিবান্ধব সফল কৃষক সংগঠক আইয়ূব হোসেন ২০১৬ সালের ১৬ই জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। তার জীবদ্দশায় এই কেন্দ্রের উদ্যোগে এলাকার ৬০টি গ্রামে গড়ে তুলেছিলেন ৬৪টি কৃষি ক্লাব। এই কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্র ৬৪টি কৃষি ক্লাবকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আইয়ূব হোসেনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এলাকার কৃষকেরা বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশিক্ষিত হয়েছিল। এলাকার অন্তত দশ সহস্রাধিক কৃষক কৃষির বিভিন্ন বিষয়ে সরকারী বিভিন্ন বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করেছিল এবং এসব প্রশিক্ষণ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতা নিজেদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগায়ে যাচ্ছেন। এই কেন্দ্রের উদ্যোগে যশোরের গাইদঘাট গ্রামে বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের কাজ শুরু হয়। যে কারণে বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদনের মডেল এলাকা হিসেবে যশোর জেলা সারা বিশ্বের মধ্যে স্থান পায়। এই কৃষক সংগঠক আইয়ূব হোসেন ও তার সহযোগী সাংবাদিক লক্ষ্মণ চন্দ্র মণ্ডলকে ২০১০ সালে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী পুরস্কৃত করেছিলেন। তার জীবদ্দশায় এই কেন্দ্রের উদ্যোগে তখন এ এলাকায় দেশের সকল স্বনামধন্য কৃষি বিজ্ঞানী, কৃষিবিদ ও অগনিত বিদেশী বিজ্ঞানীদের পদচারণা ঘটেছিল। সেই বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদনের মডেলকে সামনে নিয়েই এখন সারাদেশেই চলছে বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদনের আন্দোলন।

কেন্দ্রটির শুরু থেকে যে ঘরটিতে যাবতীয় কর্মকাণ্ড সম্পাদন হতো, যেখানে সকল দেশি বিদেশি বিজ্ঞানীদের নিয়ে কৃষক-কৃষানীদের প্রশিক্ষণ দেয়াসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড চালানো হতো। সেই ঘরটি বিগত আম্পান ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়। ঘরটিতে সংরক্ষিত এ যাবতকালের সব ধরনের মূল্যবান কাপজপত্র ঝড়ে বিধ্বস্ত ঘরে বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরটিতে সংরক্ষিত বিভিন্ন ধরনের পোস্টার, ফেস্টুন, গবেষণামূলক বই পুস্তক ও সব ধরনের আসবাবপত্র ভিজে পঁচে গেছে। কেন্দ্রের সভাপতি আইয়ুব হোসেনের মৃত্যুর আগপর্যন্ত তার সহযোগী বন্ধু লক্ষ্মণ চন্দ্র মণ্ডল ছিলেন, ওই কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক। লক্ষ্মণ চন্দ্র মণ্ডল নিজেই কেন্দ্রের নামে জমিদানসহ তিনিই ঘরটি নিজ খরচে গড়ে দিয়েছিলেন। আইয়ুব হোসেনের মৃত্যুর পর এলাকার কিছু কৃষক নেতাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে, সেই কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয় কৃষক সংগঠক ও সাংবাদিক লক্ষ্মণ চন্দ্র মণ্ডলকে। তিনি বিগত বছর দুইদিন ধরে বিভিন্ন রোগে অসুস্থ হয়ে বর্তমান অর্থকষ্টে আছেন। যে কারণে কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্রের ওই ঘরটি মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।