অর্থনীতিবিদ ইব্রাহিম খালেদের জীবনাবসান

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ আর নেই। গতকাল ভোর পৌনে ৬টার দিকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের পারিবারিক সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর গত ১ ফেব্রুয়ারি তাকে রাজধানীর শ্যামলীতে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হলেও নিউমনিয়া দেখা দেয়। গত ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে বিএসএমএমইউতে স্থানান্তর করা হয়।’

গতকাল বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কচিকাঁচা ভবনে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দুই জানাজায় সংস্কৃতি অঙ্গন, বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা ও তার শুভানুধ্যায়ীরা অংশ নেন। গোপালগঞ্জ শহরে তৃতীয় জানাজা শেষে বিকেল তিনটায় তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরের দায়িত্ব ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সোনালী, অগ্রণী ও পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি তার শোকবার্তায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সুষ্ঠু বিকাশে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যে মেধা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন তা এদেশের মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ১৯৪১ সালের ৪ জুলাই গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ভূগোলে স্নাতকোত্তর ও আইবিএ থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করে ১৯৬৩ সালে ব্যাংকিং পেশায় যুক্ত হন। ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন ইব্রাহিম খালেদ। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারের পতনের কারণ অনুসন্ধানে সরকার যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অনিয়মের বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলে বিভিন্ন সময়ে ইব্রাহিম খালেদ আলোচনায় এসেছেন। তার সেই ভূমিকার কথা স্মরণ করে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এক শোকবার্তায় বলেছেন, ‘প্রখ্যাত ব্যাংকার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষহীন যোদ্ধা খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের বহুমুখী কর্মজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর তদন্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসন নিয়েও গণমাধ্যমে সরব ছিলেন প্রয়াত এ ব্যাংকার।’ স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে গেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সাবেক ডেপুটি গভর্নর।

ইব্রাহিম খালেদ ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ১৯৯৬ সালে অগ্রণী ব্যাংক এবং ১৯৯৭ সালে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তিনি ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকে পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

২০১১ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। ব্যাংকিং ও অর্থনীতি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে ২০০৯ সালে ‘খান বাহাদুর আহছানউল্লা স্বর্ণপদক’ ও ২০১৩ সালে ‘খান বাহাদুর নওয়াব আলী চৌধুরী’ জাতীয় পুরস্কার দেয়া হয়। ২০০০ সাল থেকে তিনি কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলার পরিচালক, নির্বাহী পরিষদের সভাপতি ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। গতকাল এক শোকবার্তায় স্পিকার খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবার-পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। শোকবার্তায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং ও অর্থনীতি খাতে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের অনবদ্য অবদান রয়েছে। তার কর্মের মধ্য দিয়ে তিনি দীর্ঘকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এছাড়াও ইব্রাহিম খালেদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্রাচার্য, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এবং চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী। শোক জানানো হয়েছে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও ঐক্য ন্যাপের পক্ষ থেকেও।

বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১২ ফাল্গুন ১৪২৭ ১২ রজব ১৪৪২

অর্থনীতিবিদ ইব্রাহিম খালেদের জীবনাবসান

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ আর নেই। গতকাল ভোর পৌনে ৬টার দিকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের পারিবারিক সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর গত ১ ফেব্রুয়ারি তাকে রাজধানীর শ্যামলীতে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হলেও নিউমনিয়া দেখা দেয়। গত ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে বিএসএমএমইউতে স্থানান্তর করা হয়।’

গতকাল বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কচিকাঁচা ভবনে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দুই জানাজায় সংস্কৃতি অঙ্গন, বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা ও তার শুভানুধ্যায়ীরা অংশ নেন। গোপালগঞ্জ শহরে তৃতীয় জানাজা শেষে বিকেল তিনটায় তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরের দায়িত্ব ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সোনালী, অগ্রণী ও পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি তার শোকবার্তায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সুষ্ঠু বিকাশে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যে মেধা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন তা এদেশের মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ১৯৪১ সালের ৪ জুলাই গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ভূগোলে স্নাতকোত্তর ও আইবিএ থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করে ১৯৬৩ সালে ব্যাংকিং পেশায় যুক্ত হন। ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন ইব্রাহিম খালেদ। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারের পতনের কারণ অনুসন্ধানে সরকার যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অনিয়মের বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলে বিভিন্ন সময়ে ইব্রাহিম খালেদ আলোচনায় এসেছেন। তার সেই ভূমিকার কথা স্মরণ করে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এক শোকবার্তায় বলেছেন, ‘প্রখ্যাত ব্যাংকার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষহীন যোদ্ধা খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের বহুমুখী কর্মজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর তদন্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসন নিয়েও গণমাধ্যমে সরব ছিলেন প্রয়াত এ ব্যাংকার।’ স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে গেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সাবেক ডেপুটি গভর্নর।

ইব্রাহিম খালেদ ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ১৯৯৬ সালে অগ্রণী ব্যাংক এবং ১৯৯৭ সালে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তিনি ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকে পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

২০১১ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। ব্যাংকিং ও অর্থনীতি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে ২০০৯ সালে ‘খান বাহাদুর আহছানউল্লা স্বর্ণপদক’ ও ২০১৩ সালে ‘খান বাহাদুর নওয়াব আলী চৌধুরী’ জাতীয় পুরস্কার দেয়া হয়। ২০০০ সাল থেকে তিনি কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলার পরিচালক, নির্বাহী পরিষদের সভাপতি ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। গতকাল এক শোকবার্তায় স্পিকার খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবার-পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। শোকবার্তায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং ও অর্থনীতি খাতে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের অনবদ্য অবদান রয়েছে। তার কর্মের মধ্য দিয়ে তিনি দীর্ঘকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এছাড়াও ইব্রাহিম খালেদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্রাচার্য, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এবং চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী। শোক জানানো হয়েছে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও ঐক্য ন্যাপের পক্ষ থেকেও।