যাদের টিকা নেয়া জরুরি

ড. মো. শফিকুর রহমান

কোভিড-১৯ একটি ছোঁয়াচে রোগ, যা বিশ্বের প্রায় সবকটি দেশেই মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় ১১.১ কোটি লোক করোনা আক্রান্ত হয় এবং ২৪.৫ লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটে। করোনার মহামারী থেকে রক্ষার জন্য একমাত্র টিকার মাধ্যমে শরীরে হার্ড ইমিউনিটি সৃষ্টি করা ছাড়া আর কোন পন্থা নেই। কাজেই, টিকাদান কর্মসূচি আমাদের কোটি কোটি মানুষের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের পথ তৈরি করে করোনার সংক্রমণ প্রতিহত করবে এবং এটা আমরা যত দ্রুত অর্জন করতে পারব তত দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব। তাই কোভিড-১৯ থেকে জনগণকে সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ সরকারের একটি বড় সফলতা হচ্ছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সংগ্রহ করে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণ টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা; যেখানে বিশ্বের ১৩০টি দেশ এখনও টিকা সংগ্রহ করতে পারেনি।

বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে টিকাদান কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আগ্রহ দিন দিন বাড়লেও যারা শারীরিকভাবে দুর্বল ও দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগী, যেমন- ক্যান্সার, কিডনি, ডায়াবেটিস, লিভার (হেপাটাইটিস), নিউরোলজিক্যাল ও উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে আক্রান্ত; তারা টিকা নিতে পারবেন কিনা বা টিকা নিলে সমস্যা হয় কি না-এমন আতঙ্কে বা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। তবে, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা যে কোন সময় করোনাভাইরাস সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ হতে পারেন। ইমিউনোকম্প্রমাইজড বা ইমিউনোসাপ্রেসড (হ্রাসপ্রাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) বা ক্লিনিক্যালি খুবই দুর্বল (রোগশয্যায়) প্রকৃতির লোকদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি যেমন বেশি, তেমনি সংক্রমিত হলে গুরুতর অসুস্থ হওয়া এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিও অনেক বেশি। ইমিউনোসাপ্রেসড সাধারণত এইডস, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, অপুষ্টি এবং নির্দিষ্ট জিনগত ব্যাধি হিসাবে কিছু রোগের কারণে হতে পারে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের মতে, করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন যারা : দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত (উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদেরাগ, ডায়ালাইসিসসহ কিডনি বা লিভারের রোগী), ইমিউনোথেরাপি বা কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি অথবা অ্যান্টিবডি চিকিৎসাসহ ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছেন, অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছ; রক্ত বা অস্থি মজ্জা ক্যান্সার (যেমন- লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা বা মেলোমা), গত ৬ মাসের মধ্যে অস্থি মজ্জা বা স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়েছে, উচ্চ মাত্রার স্টেরয়েড বা ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট ওষুধ গ্রহণ করছেন, ফুসফুসের গুরুতর রোগী (যেমন- মারাত্মক হাঁপানি বা গুরুতর সিওপিডি), গর্ভবতী, প্লীহাতে সমস্যা বা প্লীহাটি অপসারণ করা হয়েছে এবং ৭০ বা তার বেশি বয়সীরা। গর্ভবতী, বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েরা ও ১৬ বা ১৮ বছরের কম বয়সীদের ওপর টিকাগুলোর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখনও শেষ হয়নি, বিধায় তাদের টিকা না নেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে, যুক্তরাজ্যের টিকা ও টিকাদান সম্পর্কিত যৌথ কমিটি বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জীবন্ত ভাইরাস টিকা ছাড়া অক্সফোর্ডের টিকাসহ অন্যান্য করোনা টিকা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

ফাইজার, মডার্না ও অক্সফোর্ড টিকাগুলোর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সময় কোন গুরুতর অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি এবং যাদের তীব্র অ্যালার্জি সমস্যা ছিল তাদের কাউকেই পরীক্ষার কোনটিতেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অক্সফোর্ডের টিকায় পলিইথিলিন গ্লাইকল নামক অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান নেই বলে অ্যালার্জি সমস্যা আছে এমন ব্যক্তিরা অক্সফোর্ড টিকা গ্রহণ করতে পারেন। যাদের হার্টএটাক বা স্ট্রোক হয়েছিল এমন হার্টের রোগী ও ফুসফুসসহ ডায়াবেটিসের রোগীদের অক্সফোর্ড টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সময় কোন মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তাই এসব রোগীরা এ টিকাটি নিতে পারেন।

কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন, স্টেম সেল বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন ও ইমিউনোথেরাপির মতো কিছু চিকিৎসা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাতে প্রভাব ফেলতে পারে, যা টিকাটির কার্যক্ষমতাকেও কমিয়ে দিতে পারে। তারপরও, যুক্তরাজ্যের টিকা ও টিকাদান সম্পর্কিত যৌথ কমিটি এসব লোকদের কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছে। করোনা টিকাগুলো ইমিউনোসাপ্রেসড ব্যক্তিদের ক্ষতি করতে পারে এমন কোন উদ্বেগ নেই, তবে তারা টিকা থেকে ততটা সুরক্ষা নাও পেতে পারেন। যারা এমন ওষুধ গ্রহণ করছেন, যা ইমিউনিটিকে দুর্বল করতে পারে বা যেসব চিকিৎসা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাটির কার্যকারিতা হ্রাস করে, তা টিকার কার্যকারিতাকেও হ্রাস করতে পারে।

কিছু ক্যান্সার রোগীসহ ইমিউনোসাপ্রেসড ব্যক্তিদের কেন টিকাগুলো কাজ করছে না? আমাদের শরীরে টিকাগুলোর প্রতিরক্ষামূলক প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির জন্য কার্যকর ইমিউনিটি দরকার। তাই, আমাদের শরীর টিকার অ্যান্টিজেনকে প্রতিরোধ ব্যবস্থাতে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে অবশ্যই সক্ষম হতে হবে, যাতে ইমিউন কোষগুলো তথা বি এবং টি কোষের অ্যাক্টিভেশন ঘটতে পারে এবং প্লাজমা বি কোষের অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয়। কাজেই, কার্যকর ইমিউন কোষের অভাবজনিত লোকেরা কোভিড-১৯ টিকার মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে প্রতিরক্ষামূলক প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে অক্ষম হতে পারেন।

আমেরিকান সোসাইটি অফ হেম্যাটোলজির মতে ইমিউনোসাপ্রেসিভ থেরাপির রোগীদের কখন টিকা দেয়া উচিত? পরিকল্পিত ইমিউনোসাপ্রেসিভ থেরাপি ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা সেপ্লানেক্টোমির কমপক্ষে ২-৪ সপ্তাহ আগে টিকা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যদি কোন রোগী ইমিউনোসাপ্রেসিভ থেরাপি গ্রহণ করে থাকেন, তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য থেরাপি বন্ধ করার ৬ মাস পরে টিকা নিতে হবে। তাছাড়া, হেমাটোপয়েটিক সেল প্রতিস্থাপনের ৩-৬ মাস পর টিকা গ্রহণ করা উচিত।

করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের করোনার কারণে গুরুতর অসুস্থতা বা মৃত্যু ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সবার আগে করোনা টিকা গ্রহণ করা জরুরি। তবে, টিকা নেয়ার পরও করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষা কতটুকু তৈরি হয়েছে বা আদৌ হয়েছে কি নাÑতা অবশ্যই বিবেচনায় নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং সংক্রমণ ঝুঁকি থেকে নিজেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের টিকার আওতায় আনতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোন টিকাই শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারে না এবং অক্সফোর্ড টিকাটিও ৬২-৯০ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে।

কাজেই, সংক্রমণ শতভাগ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত টিকা নেয়ার পরও করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে যারা রয়েছেন তারাসহ সবাইকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক পরাসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিতেই হবে।

[লেখক : অধ্যাপক,

মাইক্রোবয়োলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়]

shafiq.mbio@cu.ac.bd

বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১২ ফাল্গুন ১৪২৭ ১২ রজব ১৪৪২

যাদের টিকা নেয়া জরুরি

ড. মো. শফিকুর রহমান

কোভিড-১৯ একটি ছোঁয়াচে রোগ, যা বিশ্বের প্রায় সবকটি দেশেই মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় ১১.১ কোটি লোক করোনা আক্রান্ত হয় এবং ২৪.৫ লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটে। করোনার মহামারী থেকে রক্ষার জন্য একমাত্র টিকার মাধ্যমে শরীরে হার্ড ইমিউনিটি সৃষ্টি করা ছাড়া আর কোন পন্থা নেই। কাজেই, টিকাদান কর্মসূচি আমাদের কোটি কোটি মানুষের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের পথ তৈরি করে করোনার সংক্রমণ প্রতিহত করবে এবং এটা আমরা যত দ্রুত অর্জন করতে পারব তত দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব। তাই কোভিড-১৯ থেকে জনগণকে সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ সরকারের একটি বড় সফলতা হচ্ছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সংগ্রহ করে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণ টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা; যেখানে বিশ্বের ১৩০টি দেশ এখনও টিকা সংগ্রহ করতে পারেনি।

বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে টিকাদান কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আগ্রহ দিন দিন বাড়লেও যারা শারীরিকভাবে দুর্বল ও দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগী, যেমন- ক্যান্সার, কিডনি, ডায়াবেটিস, লিভার (হেপাটাইটিস), নিউরোলজিক্যাল ও উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে আক্রান্ত; তারা টিকা নিতে পারবেন কিনা বা টিকা নিলে সমস্যা হয় কি না-এমন আতঙ্কে বা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। তবে, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা যে কোন সময় করোনাভাইরাস সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ হতে পারেন। ইমিউনোকম্প্রমাইজড বা ইমিউনোসাপ্রেসড (হ্রাসপ্রাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) বা ক্লিনিক্যালি খুবই দুর্বল (রোগশয্যায়) প্রকৃতির লোকদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি যেমন বেশি, তেমনি সংক্রমিত হলে গুরুতর অসুস্থ হওয়া এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিও অনেক বেশি। ইমিউনোসাপ্রেসড সাধারণত এইডস, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, অপুষ্টি এবং নির্দিষ্ট জিনগত ব্যাধি হিসাবে কিছু রোগের কারণে হতে পারে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের মতে, করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন যারা : দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত (উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদেরাগ, ডায়ালাইসিসসহ কিডনি বা লিভারের রোগী), ইমিউনোথেরাপি বা কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি অথবা অ্যান্টিবডি চিকিৎসাসহ ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছেন, অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছ; রক্ত বা অস্থি মজ্জা ক্যান্সার (যেমন- লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা বা মেলোমা), গত ৬ মাসের মধ্যে অস্থি মজ্জা বা স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়েছে, উচ্চ মাত্রার স্টেরয়েড বা ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট ওষুধ গ্রহণ করছেন, ফুসফুসের গুরুতর রোগী (যেমন- মারাত্মক হাঁপানি বা গুরুতর সিওপিডি), গর্ভবতী, প্লীহাতে সমস্যা বা প্লীহাটি অপসারণ করা হয়েছে এবং ৭০ বা তার বেশি বয়সীরা। গর্ভবতী, বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েরা ও ১৬ বা ১৮ বছরের কম বয়সীদের ওপর টিকাগুলোর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখনও শেষ হয়নি, বিধায় তাদের টিকা না নেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে, যুক্তরাজ্যের টিকা ও টিকাদান সম্পর্কিত যৌথ কমিটি বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জীবন্ত ভাইরাস টিকা ছাড়া অক্সফোর্ডের টিকাসহ অন্যান্য করোনা টিকা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

ফাইজার, মডার্না ও অক্সফোর্ড টিকাগুলোর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সময় কোন গুরুতর অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি এবং যাদের তীব্র অ্যালার্জি সমস্যা ছিল তাদের কাউকেই পরীক্ষার কোনটিতেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অক্সফোর্ডের টিকায় পলিইথিলিন গ্লাইকল নামক অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান নেই বলে অ্যালার্জি সমস্যা আছে এমন ব্যক্তিরা অক্সফোর্ড টিকা গ্রহণ করতে পারেন। যাদের হার্টএটাক বা স্ট্রোক হয়েছিল এমন হার্টের রোগী ও ফুসফুসসহ ডায়াবেটিসের রোগীদের অক্সফোর্ড টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সময় কোন মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তাই এসব রোগীরা এ টিকাটি নিতে পারেন।

কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন, স্টেম সেল বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন ও ইমিউনোথেরাপির মতো কিছু চিকিৎসা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাতে প্রভাব ফেলতে পারে, যা টিকাটির কার্যক্ষমতাকেও কমিয়ে দিতে পারে। তারপরও, যুক্তরাজ্যের টিকা ও টিকাদান সম্পর্কিত যৌথ কমিটি এসব লোকদের কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছে। করোনা টিকাগুলো ইমিউনোসাপ্রেসড ব্যক্তিদের ক্ষতি করতে পারে এমন কোন উদ্বেগ নেই, তবে তারা টিকা থেকে ততটা সুরক্ষা নাও পেতে পারেন। যারা এমন ওষুধ গ্রহণ করছেন, যা ইমিউনিটিকে দুর্বল করতে পারে বা যেসব চিকিৎসা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাটির কার্যকারিতা হ্রাস করে, তা টিকার কার্যকারিতাকেও হ্রাস করতে পারে।

কিছু ক্যান্সার রোগীসহ ইমিউনোসাপ্রেসড ব্যক্তিদের কেন টিকাগুলো কাজ করছে না? আমাদের শরীরে টিকাগুলোর প্রতিরক্ষামূলক প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির জন্য কার্যকর ইমিউনিটি দরকার। তাই, আমাদের শরীর টিকার অ্যান্টিজেনকে প্রতিরোধ ব্যবস্থাতে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে অবশ্যই সক্ষম হতে হবে, যাতে ইমিউন কোষগুলো তথা বি এবং টি কোষের অ্যাক্টিভেশন ঘটতে পারে এবং প্লাজমা বি কোষের অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয়। কাজেই, কার্যকর ইমিউন কোষের অভাবজনিত লোকেরা কোভিড-১৯ টিকার মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে প্রতিরক্ষামূলক প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে অক্ষম হতে পারেন।

আমেরিকান সোসাইটি অফ হেম্যাটোলজির মতে ইমিউনোসাপ্রেসিভ থেরাপির রোগীদের কখন টিকা দেয়া উচিত? পরিকল্পিত ইমিউনোসাপ্রেসিভ থেরাপি ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা সেপ্লানেক্টোমির কমপক্ষে ২-৪ সপ্তাহ আগে টিকা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যদি কোন রোগী ইমিউনোসাপ্রেসিভ থেরাপি গ্রহণ করে থাকেন, তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য থেরাপি বন্ধ করার ৬ মাস পরে টিকা নিতে হবে। তাছাড়া, হেমাটোপয়েটিক সেল প্রতিস্থাপনের ৩-৬ মাস পর টিকা গ্রহণ করা উচিত।

করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের করোনার কারণে গুরুতর অসুস্থতা বা মৃত্যু ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সবার আগে করোনা টিকা গ্রহণ করা জরুরি। তবে, টিকা নেয়ার পরও করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষা কতটুকু তৈরি হয়েছে বা আদৌ হয়েছে কি নাÑতা অবশ্যই বিবেচনায় নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং সংক্রমণ ঝুঁকি থেকে নিজেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের টিকার আওতায় আনতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোন টিকাই শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারে না এবং অক্সফোর্ড টিকাটিও ৬২-৯০ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে।

কাজেই, সংক্রমণ শতভাগ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত টিকা নেয়ার পরও করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে যারা রয়েছেন তারাসহ সবাইকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক পরাসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিতেই হবে।

[লেখক : অধ্যাপক,

মাইক্রোবয়োলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়]

shafiq.mbio@cu.ac.bd