পিকে হালদারের ৭ হাজার ৮০ শতাংশ জমি জব্দ

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের ৫ হাজার ৯শ শতাংশ জমি জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল উত্তরা, দিয়াবাড়ি, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এসব জমি জব্দ করা হয়। এ নিয়ে ৩ দফায় ৭ হাজার ৮০ শতাংশ জমি জব্দ করলো দুদক। পিকের ব্যবহৃত গাড়িসহ অন্যান্য সম্পদও জব্দ করার জন্য দুদক অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

দুদকের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের মামলায় পিকে হালদারের ৫ হাজার ৯শ শতাংশ জমি জব্দ করা হয়েছে। এর আগে দুই দফায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা পিকের জমি জব্দ করা হয়েছে। ৩ দফায় জব্দ করা জমির পরিমান ৭ হাজার ৮০ শতাংশ হবে। এ ছাড়া ব্যাংক হিসেব ও শেয়ার হিসেবগুলোও জব্দ করা হয়েছে। পিকের আরও কোথায় সম্পদ আছে, কি সম্পদ আছেÑ সেগুলো খোঁজ নিয়ে জব্দের কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে গত বছর মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রহমান। এরপর মামলাটি দুদকের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। মামলা হওয়ার পর পরই দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও পালিয়ে যান পিকে হালদার। পিকে হালদার পালিয়ে যাওয়ার পর ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া করে ঋণের নামে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের উপর ১০ হাজার কোটি টাকাও বেশি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠে। অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান দুদকের আরেক উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার। ৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে ৫টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে বেআইনিভাবে সাড়ে ৩শ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাত ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে পিকেসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে পৃথক ৫টি মামলা করে দুদক। ওইসব মামলার আসামি ইন্টারন্যাশনাল লিজিং-এর সাবেক এমডি রাশেদুল হক এবং আরেকটি প্রতিষ্ঠান পিপলসের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল নন্দীকে গ্রেপ্তার করে দুদক। পরে তাদের রিমান্ড হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রিমান্ড শেষে তারা স্বেচ্ছায় আদালতে জবাববন্দি দেন। জবানবন্দিতে পিকের নানা কাহিনী, পিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নাম প্রকাশ করে। এতে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে।

দুদক সূত্র জানায়, ময়মনসিংহের ভালুকা, নরসিংদী, রূপগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিঘায় বিঘায় জমি কিনেছেন পিকে হালদার। এসব জমি নিজের নামের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনদের নামেও গড়েছেন। রাজধানীর উত্তরায় রয়েছে আলিশান ভবন। ব্যাংক হিসেবে রয়েছে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ। শেয়ার বাজারে রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। এসব বিষয়ে দুদক খোঁজ নিচ্ছে। আদালতের নির্দেশে গাড়ি জব্দ করার প্রক্রিয়া চলছে। গাড়ি কোথায় আছে, কাদের হেফাজতে আছে সে বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

দুদক সূত্র জানায়, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। এই চার কোম্পানি হলো- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এর মধ্যে আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে গত বছরের শুরুতে পিকে হালদারের বিদেশ পালানোর পর দুদক তার ২৭৫ কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ। ওই মামলায় পিকে হালদারকে গ্রেপ্তার করা না গেলেও তার ৪ সহযোগী সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধা, পিকে হালদারের বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল, ঘনিষ্ঠজন শংখ বেপারীকে গ্রেপ্তার করা হয় বিভিন্ন সময়ে। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, পিকে হালদার তার নিজের, আত্মীয়দের, বন্ধু ও কর্মচারীদের নাম ব্যবহার করে আটটি কোম্পানিতে বিপুল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছেন, যার ‘বৈধ কোন উৎস’ অনুসন্ধানে মেলেনি। পিকে হালদারকে গ্রেপ্তারের জন্য ইতোমধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে। তার মা লীলাবতী হালদারসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাইকোর্ট। পিকেসংশ্লিষ্ট ৬২ জনের ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা জব্দ রয়েছে। এসব অর্থ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ অবস্থায় রয়েছে।

শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৩ ফাল্গুন ১৪২৭ ১৩ রজব ১৪৪২

পিকে হালদারের ৭ হাজার ৮০ শতাংশ জমি জব্দ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের ৫ হাজার ৯শ শতাংশ জমি জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল উত্তরা, দিয়াবাড়ি, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এসব জমি জব্দ করা হয়। এ নিয়ে ৩ দফায় ৭ হাজার ৮০ শতাংশ জমি জব্দ করলো দুদক। পিকের ব্যবহৃত গাড়িসহ অন্যান্য সম্পদও জব্দ করার জন্য দুদক অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

দুদকের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের মামলায় পিকে হালদারের ৫ হাজার ৯শ শতাংশ জমি জব্দ করা হয়েছে। এর আগে দুই দফায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা পিকের জমি জব্দ করা হয়েছে। ৩ দফায় জব্দ করা জমির পরিমান ৭ হাজার ৮০ শতাংশ হবে। এ ছাড়া ব্যাংক হিসেব ও শেয়ার হিসেবগুলোও জব্দ করা হয়েছে। পিকের আরও কোথায় সম্পদ আছে, কি সম্পদ আছেÑ সেগুলো খোঁজ নিয়ে জব্দের কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে গত বছর মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রহমান। এরপর মামলাটি দুদকের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। মামলা হওয়ার পর পরই দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও পালিয়ে যান পিকে হালদার। পিকে হালদার পালিয়ে যাওয়ার পর ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া করে ঋণের নামে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের উপর ১০ হাজার কোটি টাকাও বেশি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠে। অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান দুদকের আরেক উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার। ৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে ৫টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে বেআইনিভাবে সাড়ে ৩শ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাত ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে পিকেসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে পৃথক ৫টি মামলা করে দুদক। ওইসব মামলার আসামি ইন্টারন্যাশনাল লিজিং-এর সাবেক এমডি রাশেদুল হক এবং আরেকটি প্রতিষ্ঠান পিপলসের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল নন্দীকে গ্রেপ্তার করে দুদক। পরে তাদের রিমান্ড হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রিমান্ড শেষে তারা স্বেচ্ছায় আদালতে জবাববন্দি দেন। জবানবন্দিতে পিকের নানা কাহিনী, পিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নাম প্রকাশ করে। এতে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে।

দুদক সূত্র জানায়, ময়মনসিংহের ভালুকা, নরসিংদী, রূপগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিঘায় বিঘায় জমি কিনেছেন পিকে হালদার। এসব জমি নিজের নামের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনদের নামেও গড়েছেন। রাজধানীর উত্তরায় রয়েছে আলিশান ভবন। ব্যাংক হিসেবে রয়েছে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ। শেয়ার বাজারে রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। এসব বিষয়ে দুদক খোঁজ নিচ্ছে। আদালতের নির্দেশে গাড়ি জব্দ করার প্রক্রিয়া চলছে। গাড়ি কোথায় আছে, কাদের হেফাজতে আছে সে বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

দুদক সূত্র জানায়, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। এই চার কোম্পানি হলো- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এর মধ্যে আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে গত বছরের শুরুতে পিকে হালদারের বিদেশ পালানোর পর দুদক তার ২৭৫ কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ। ওই মামলায় পিকে হালদারকে গ্রেপ্তার করা না গেলেও তার ৪ সহযোগী সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধা, পিকে হালদারের বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল, ঘনিষ্ঠজন শংখ বেপারীকে গ্রেপ্তার করা হয় বিভিন্ন সময়ে। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, পিকে হালদার তার নিজের, আত্মীয়দের, বন্ধু ও কর্মচারীদের নাম ব্যবহার করে আটটি কোম্পানিতে বিপুল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছেন, যার ‘বৈধ কোন উৎস’ অনুসন্ধানে মেলেনি। পিকে হালদারকে গ্রেপ্তারের জন্য ইতোমধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে। তার মা লীলাবতী হালদারসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাইকোর্ট। পিকেসংশ্লিষ্ট ৬২ জনের ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা জব্দ রয়েছে। এসব অর্থ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ অবস্থায় রয়েছে।