মাস্ক ব্যবহারে অনীহা

মুখে মাস্ক ব্যবহার করলে গরম লাগে। গাল চুলকায়, তাই মাস্ক ব্যবহার করেন না গুলিস্তান স্পোর্টস মার্কেটের সামনের ফুটপাতের ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান। মাস্ক ব্যবহার না করলে ভয় লাগে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘করোনায় গরিব মরে না। আল্লাহ চাইলে নিয়ে যাবে।’

কামরুজ্জামানের উত্তরে সায় দিয়েছেন পাশের বিক্রেতাও। সেলিম নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, মাস্ক ব্যবহার করলে ‘কথা বলতে সমস্যা’ হয়। ‘ক্রেতারা ঠিকভাবে কথা বুঝতে পারে না।’

রায়েরবাগের চা বিক্রেতা সাইফুল ইসলামের কাছে মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দোকান থেকে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করি। কিন্তু দোকানে থাকলে কাস্টমারের সঙ্গে কথা বলতে অসুবিধা হয় তাই মাস্ক পরা হয় না।’

বেসরকারি চাকরিজীবী হোসাইন কবিরের সঙ্গে কথা হয় মতিঝিলে। তিনি বলেন, একটি সার্জিকাল মাস্কের দাম প্রকারভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা। একটি মাস্ক সারাদিন ব্যবহার করলে পরের দিন নতুন আরেকটি মাস্ক ব্যবহার করতে হয়। নয়তো ময়লা হয়ে যায়। ‘প্রতিদিন নতুন নতুন মাস্ক কিনলে সংসারের খরচ চলবে কেমন করে। তাই একটি মাস্কই একাধিকবার ব্যবহার করি।’

শুক্রবার রাজধানীর পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল, শনির আখড়া, রায়েরবাগ ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। নেই দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের কোন ব্যবস্থা। বিশেষ করে বিক্রেতাদের মুখে মাস্ক ব্যবহার কম দেখা গেছে। একই পরিস্থিতি দেখা গেছে সব ধরনের গণপরিবহনে। রাজধানীতে চলাচল করা বাসগুলোর পাশাপাশি দূরপাল্লার বাসগুলোতেই যাত্রীদের বেশিরভাগের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের ঘোষণা আসে। গত শনিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে সর্বমোট ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৩৫১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৮ হাজার ৩৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধে গত ২১ জুলাই বাংলাদেশে বসবাসরত সবার জন্য মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে পরিপত্র জারি করেছে সরকার। রাস্তার হকার, রিকশা-ভ্যানচালক থেকে শুরু করে গণপরিবহন এবং অফিস-আদালতে সবার জন্য মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

পরিপত্র জারির পর দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় স্থানীয়দের মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহী ও বাধ্য করতে সক্রিয় ছিল স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় মাস্ক ব্যবহারে মানুষের মধ্যে উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। ব্যাংক, বীমা, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরগুলোতে সেবা পেতে মাস্কের ব্যবহার সাময়িকভাবে দেখা গেলেও রাস্তাঘাট, গণপরিবহন, শপিংমল, মসজিদ-মাদ্রাসা, হাট-বাজার ও পর্যটন স্পটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার চর্চা নেই। তেমনি বালাই নেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার। যারা ব্যবহার করছেন তাদের অধিকাংশই মাস্ক খুলে পকেটে রাখছেন। কোন অফিসে প্রবেশ করলে প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করে। এতে নতুন করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা প্রতিরোধী টিকা কর্মসূচি শুরু হলেও তা মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ গ্রহণ করেছে। তাই টিকা গ্রহণের পরও সবাইকে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা উচিত।

এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড ক্যানসার রিসার্চ’ নামে নারায়ণগঞ্জে একটি ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টার ও হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভ্যাকসিন দেয়া সত্ত্বেও সবাইকে স্বাস্থ্যসুরক্ষা মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে, হাত ধুতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। তাহলে আমি মনে করি, আমাদের দেশ থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব পুরোপুরি চলে যাবে। তাই সবাইকে এটা মেনে চলার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, দেশে সরকারিভাবে বিনামূল্যে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা কর্মসূচি শুরু হয়। সর্বশেষ শনিবার পর্যন্ত দেশে ২০ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৭ জন টিকা নিয়েছেন। শনিবার টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৬৪ জন।

শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৩ ফাল্গুন ১৪২৭ ১৩ রজব ১৪৪২

মাস্ক ব্যবহারে অনীহা

জাহিদুল ইসলাম সুজন

image

রাজধানীতে মাস্ক ছাড়াই বাসে চড়ছেন যাত্রীরা -সংবাদ

মুখে মাস্ক ব্যবহার করলে গরম লাগে। গাল চুলকায়, তাই মাস্ক ব্যবহার করেন না গুলিস্তান স্পোর্টস মার্কেটের সামনের ফুটপাতের ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান। মাস্ক ব্যবহার না করলে ভয় লাগে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘করোনায় গরিব মরে না। আল্লাহ চাইলে নিয়ে যাবে।’

কামরুজ্জামানের উত্তরে সায় দিয়েছেন পাশের বিক্রেতাও। সেলিম নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, মাস্ক ব্যবহার করলে ‘কথা বলতে সমস্যা’ হয়। ‘ক্রেতারা ঠিকভাবে কথা বুঝতে পারে না।’

রায়েরবাগের চা বিক্রেতা সাইফুল ইসলামের কাছে মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দোকান থেকে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করি। কিন্তু দোকানে থাকলে কাস্টমারের সঙ্গে কথা বলতে অসুবিধা হয় তাই মাস্ক পরা হয় না।’

বেসরকারি চাকরিজীবী হোসাইন কবিরের সঙ্গে কথা হয় মতিঝিলে। তিনি বলেন, একটি সার্জিকাল মাস্কের দাম প্রকারভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা। একটি মাস্ক সারাদিন ব্যবহার করলে পরের দিন নতুন আরেকটি মাস্ক ব্যবহার করতে হয়। নয়তো ময়লা হয়ে যায়। ‘প্রতিদিন নতুন নতুন মাস্ক কিনলে সংসারের খরচ চলবে কেমন করে। তাই একটি মাস্কই একাধিকবার ব্যবহার করি।’

শুক্রবার রাজধানীর পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল, শনির আখড়া, রায়েরবাগ ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। নেই দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের কোন ব্যবস্থা। বিশেষ করে বিক্রেতাদের মুখে মাস্ক ব্যবহার কম দেখা গেছে। একই পরিস্থিতি দেখা গেছে সব ধরনের গণপরিবহনে। রাজধানীতে চলাচল করা বাসগুলোর পাশাপাশি দূরপাল্লার বাসগুলোতেই যাত্রীদের বেশিরভাগের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের ঘোষণা আসে। গত শনিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে সর্বমোট ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৩৫১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৮ হাজার ৩৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধে গত ২১ জুলাই বাংলাদেশে বসবাসরত সবার জন্য মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে পরিপত্র জারি করেছে সরকার। রাস্তার হকার, রিকশা-ভ্যানচালক থেকে শুরু করে গণপরিবহন এবং অফিস-আদালতে সবার জন্য মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

পরিপত্র জারির পর দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় স্থানীয়দের মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহী ও বাধ্য করতে সক্রিয় ছিল স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় মাস্ক ব্যবহারে মানুষের মধ্যে উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। ব্যাংক, বীমা, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরগুলোতে সেবা পেতে মাস্কের ব্যবহার সাময়িকভাবে দেখা গেলেও রাস্তাঘাট, গণপরিবহন, শপিংমল, মসজিদ-মাদ্রাসা, হাট-বাজার ও পর্যটন স্পটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার চর্চা নেই। তেমনি বালাই নেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার। যারা ব্যবহার করছেন তাদের অধিকাংশই মাস্ক খুলে পকেটে রাখছেন। কোন অফিসে প্রবেশ করলে প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করে। এতে নতুন করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা প্রতিরোধী টিকা কর্মসূচি শুরু হলেও তা মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ গ্রহণ করেছে। তাই টিকা গ্রহণের পরও সবাইকে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা উচিত।

এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড ক্যানসার রিসার্চ’ নামে নারায়ণগঞ্জে একটি ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টার ও হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভ্যাকসিন দেয়া সত্ত্বেও সবাইকে স্বাস্থ্যসুরক্ষা মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে, হাত ধুতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। তাহলে আমি মনে করি, আমাদের দেশ থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব পুরোপুরি চলে যাবে। তাই সবাইকে এটা মেনে চলার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, দেশে সরকারিভাবে বিনামূল্যে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা কর্মসূচি শুরু হয়। সর্বশেষ শনিবার পর্যন্ত দেশে ২০ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৭ জন টিকা নিয়েছেন। শনিবার টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৬৪ জন।