রাজধানীর ওয়ারীতে চুরি করতে দেখে ফেলায় মো. হাসান (১২) নামের এক শিশুকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে ওয়ারীর ৮/১/এ পদ্মনিধি লেনের একটি ৭ তলা ভবনের ৬ তলা থেকে তার লাশ উদ্ধা করা হয়। অন্যদিকে, বুধবার রাতেই বনানীর স্টার কাবাবের সামনে চার কিশোরের ছুরিকাঘাতে মো. শাকিল গাজী (১৪) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দুই ঘটনায় নিহত দুজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। ওয়ারী থানা পুলিশ বলছে, কাছের স্বজনদের দ্বারাই হত্যার শিকার হয়েছে শিশু হাসান। অন্যদিকে বনানী থানা পুলিশ জানায়, মারধরের প্রতিশোধ নিতেই ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় কিশোর শাকিলকে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, যে বাসায় হাসানকে খুন করা হয়েছে, সেটি তার খালুর বাসা। তার বাবার নাম মজনু মিয়া। গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায়। হাসান ছোট থাকতে তার বাবা মজনুর সঙ্গে মা ফাতেমা আক্তারের ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর থেকে তারা দুই ভাই, দুই বোন নানা বাড়িতে থাকতো। ছয় মাস ধরে হাসান তার খালুর বাসায় ছিল। নিহত হাসানের খালু জামান ভূঁইয়া জানান, গত বুধবার বিকেলে তিনি বাসার বাইরে ছিলেন। গতকাল তাদের কক্সবাজার যাওয়ার কথা ছিল। এই উপলক্ষে কেনাকাটা করতে তার স্ত্রী আয়শা বুধবার সন্ধ্যায় মার্কেটে যান। আর ছেলে আজিজুল ইসলাম কোচিংয়ে ছিল। রাত ৮টার দিকে আজিজুল বাসায় এসে দেখে, বাইরে থেকে বাসার দরজায় তালা ঝুলছে। তখন সে অপেক্ষা করতে থাকে। সাড়ে ৮টার দিকে তার স্ত্রী মার্কেট থেকে এসে ছেলেকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। এসময় তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে হাসানের গলাকাটা লাশ তোষক দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় দেখতে পান। বাসার ভিতরে সব আসবাবপত্র ভাঙ্গা ছিল। পরে দেখা যায়, বাসা থেকে আনুমানিক নগদ ৮৫ হাজার টাকা ও আট থেকে নয় ভরি স্বর্ণ খোয়া গেছে। এরপর তারা পুলিশকে খবর দেন।
ওয়ারী থানার উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, খবর পেয়ে বুধবার রাত ১০টার দিকে ওয়ারীর ওই বাসায় গিয়ে তোষকের উপর থেকে হাসানের জবাই করা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বাসার লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ঘটনার সময় হাসান বাসায় একাই ছিল। কয়েকজন যুবক চুরি করার উদ্দেশ্যে বাসায় ঢুকে। বাসায় হাসানকে একা পেয়ে জবাই করে বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা পয়সা নিয়ে যায়। ওয়ারী থানার ওসি আজিজুর রহমান বলেন, এই ঘটনায় এক যুবকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল। তাদেরও আটকের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, অন্তত দুই জন নিকটাত্মীয় ওই বাসায় চুরি করতে গেলে চিনে ফেলায় তারা হাসানকে খুন করে টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাসায় যাতায়াত রয়েছে এমন কেউই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বানানী স্টার কাবাবের সামনে বন্ধুদের ছুরিকাঘাতে কিশোর শাকিল গাজী নিহত হয়েছে। শাকিল বনানীর পাঠশালা বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছিল। দুই ভাইয়ের মধ্যে শাকিল ছিল ছোট। তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। পরিবারের সঙ্গে কড়াইল বস্তি এলাকায় থাকত শাকিল। নিহতের বাবা জসিম গাজী বলেন, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে শাকিলের কয়েকজন বন্ধু তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর আমরা তার ছুরিকাঘাতের খবর পাই। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে কে বা কারা কি কারণে শাকিলকে ছুরিকাঘাত করেছে সে বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। তিনি এ ঘটনায় চারজনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেছেন।
বনানী থানার ওসি নূরে আজম মিয়া বলেন, এ ঘটনায় জড়িত তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিহত শাকিল গ্রেপ্তারকৃত তিন কিশোরকে আগে দুইবার মারধর করেছিল। তাই তারাও শাকিলকে মারধর করার পরিকল্পনা করতে থাকে। গত বুধবার সন্ধ্যায় শাকিলকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে গ্রেপ্তারকৃত তিনজন। তাদের বয়স ১৩-১৪ বছর। ঘটনায় জড়িত আরেক আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৩ ফাল্গুন ১৪২৭ ১৩ রজব ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
রাজধানীর ওয়ারীতে চুরি করতে দেখে ফেলায় মো. হাসান (১২) নামের এক শিশুকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে ওয়ারীর ৮/১/এ পদ্মনিধি লেনের একটি ৭ তলা ভবনের ৬ তলা থেকে তার লাশ উদ্ধা করা হয়। অন্যদিকে, বুধবার রাতেই বনানীর স্টার কাবাবের সামনে চার কিশোরের ছুরিকাঘাতে মো. শাকিল গাজী (১৪) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দুই ঘটনায় নিহত দুজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। ওয়ারী থানা পুলিশ বলছে, কাছের স্বজনদের দ্বারাই হত্যার শিকার হয়েছে শিশু হাসান। অন্যদিকে বনানী থানা পুলিশ জানায়, মারধরের প্রতিশোধ নিতেই ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় কিশোর শাকিলকে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, যে বাসায় হাসানকে খুন করা হয়েছে, সেটি তার খালুর বাসা। তার বাবার নাম মজনু মিয়া। গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায়। হাসান ছোট থাকতে তার বাবা মজনুর সঙ্গে মা ফাতেমা আক্তারের ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর থেকে তারা দুই ভাই, দুই বোন নানা বাড়িতে থাকতো। ছয় মাস ধরে হাসান তার খালুর বাসায় ছিল। নিহত হাসানের খালু জামান ভূঁইয়া জানান, গত বুধবার বিকেলে তিনি বাসার বাইরে ছিলেন। গতকাল তাদের কক্সবাজার যাওয়ার কথা ছিল। এই উপলক্ষে কেনাকাটা করতে তার স্ত্রী আয়শা বুধবার সন্ধ্যায় মার্কেটে যান। আর ছেলে আজিজুল ইসলাম কোচিংয়ে ছিল। রাত ৮টার দিকে আজিজুল বাসায় এসে দেখে, বাইরে থেকে বাসার দরজায় তালা ঝুলছে। তখন সে অপেক্ষা করতে থাকে। সাড়ে ৮টার দিকে তার স্ত্রী মার্কেট থেকে এসে ছেলেকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। এসময় তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে হাসানের গলাকাটা লাশ তোষক দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় দেখতে পান। বাসার ভিতরে সব আসবাবপত্র ভাঙ্গা ছিল। পরে দেখা যায়, বাসা থেকে আনুমানিক নগদ ৮৫ হাজার টাকা ও আট থেকে নয় ভরি স্বর্ণ খোয়া গেছে। এরপর তারা পুলিশকে খবর দেন।
ওয়ারী থানার উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, খবর পেয়ে বুধবার রাত ১০টার দিকে ওয়ারীর ওই বাসায় গিয়ে তোষকের উপর থেকে হাসানের জবাই করা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বাসার লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ঘটনার সময় হাসান বাসায় একাই ছিল। কয়েকজন যুবক চুরি করার উদ্দেশ্যে বাসায় ঢুকে। বাসায় হাসানকে একা পেয়ে জবাই করে বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা পয়সা নিয়ে যায়। ওয়ারী থানার ওসি আজিজুর রহমান বলেন, এই ঘটনায় এক যুবকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল। তাদেরও আটকের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, অন্তত দুই জন নিকটাত্মীয় ওই বাসায় চুরি করতে গেলে চিনে ফেলায় তারা হাসানকে খুন করে টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাসায় যাতায়াত রয়েছে এমন কেউই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বানানী স্টার কাবাবের সামনে বন্ধুদের ছুরিকাঘাতে কিশোর শাকিল গাজী নিহত হয়েছে। শাকিল বনানীর পাঠশালা বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছিল। দুই ভাইয়ের মধ্যে শাকিল ছিল ছোট। তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। পরিবারের সঙ্গে কড়াইল বস্তি এলাকায় থাকত শাকিল। নিহতের বাবা জসিম গাজী বলেন, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে শাকিলের কয়েকজন বন্ধু তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর আমরা তার ছুরিকাঘাতের খবর পাই। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে কে বা কারা কি কারণে শাকিলকে ছুরিকাঘাত করেছে সে বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। তিনি এ ঘটনায় চারজনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেছেন।
বনানী থানার ওসি নূরে আজম মিয়া বলেন, এ ঘটনায় জড়িত তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিহত শাকিল গ্রেপ্তারকৃত তিন কিশোরকে আগে দুইবার মারধর করেছিল। তাই তারাও শাকিলকে মারধর করার পরিকল্পনা করতে থাকে। গত বুধবার সন্ধ্যায় শাকিলকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে গ্রেপ্তারকৃত তিনজন। তাদের বয়স ১৩-১৪ বছর। ঘটনায় জড়িত আরেক আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।