অস্ত্র হাতে পাচ্ছে মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা

দেশব্যাপী মাদকের বিস্তার ঠেকাতে অপারেশনাল কাজে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অস্ত্র দেয়া হচ্ছে। এখন থেকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে নামবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এজন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-সৈনিকদের দেয়া হবে বিশেষ প্রশিক্ষণ। অস্ত্রের পাশাপাশি মাদকদ্র্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যুক্ত হচ্ছে ডগ স্কোয়াড টিম। দেয়া হবে ট্র্যাকার মেশিন, স্ক্যানারসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। এ লক্ষ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নতুন আইন অনুযায়ী একটি বিধিমালা প্রণয়নের কাজও চলছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্মকর্তাদের ভাষ্য, অস্ত্র দেয়ার পাশাপাশি মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রমে আধুনিকায়নে এসব উদ্যোগের ফলে কাজে আরও গতি বাড়বে। কিছুটা হলেও মাদককের বিস্তার প্রতিরোধ সম্ভব হবে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মঞ্জুরিকৃত জনবলের অর্ধেক জনবল নিয়ে কাজ করছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনায় যুক্ত মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সৈনিকদের ছিল না অস্ত্র ও আধুনিক যন্ত্রপাতি। দীর্ঘ প্রতিক্ষা আর চেষ্টার পর মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিজস্ব ভবনটি আধুনিকায়ণ হলেও বাহিনীর অপারেশনে এখনও আধুনিকায়ণ ফিরে আসেনি। রয়েছে নানা সমস্যা। সেসব সমস্যার অবসান ঘটিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অস্ত্র দেয়া হচ্ছে অপারেশনাল কাজের জন্য। মাদকের বিস্তার ঠেকাতে স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন জায়গায় যুক্ত হচ্ছে আধুনিক স্ক্যানার। গঠন করা হচ্ছে ডগস্কোয়াড টিম। নতুন আইন অনুযায়ী বিধিমালা প্রণয়নের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির এক বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রধান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম, নানা সমস্যা নিয়ে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর অনলাইনে একটি মিটিং হয়। ওই মিটিংয়ে সভপতিত্ব করেন জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বৈঠকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সুরক্ষাসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব, শিক্ষামন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অনেকেই অংশ নিয়েছেন। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আলোচনার মধ্যে ছিল- মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুকূলে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদান, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস ও এক্সপোর্ট কার্গোর ওপর নজরদারি, বন্দরগুলোতে আধুনিক স্ক্যানার স্থাপন, ডগ স্কোয়াড মোতায়েন, মোবাইল ট্র্যাকারের ব্যবস্থা, মাদকবিরোধী জনসচেতনতা কার্যক্রম, বিদেশগামী কর্মীদের মাদক অপরাধ ও মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে সচেতন করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কার্যক্রম, মাদকাসক্তদের চিকিসা সুবিধা সম্প্রচারণ, মাদকাসক্ত শনাক্তকরণে ডোপটেস্ট প্রবর্তন, মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন, বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রসমূহের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য কারিগরি কমিটি গঠন, বোর্ড তহবিল, অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের রেশন ও ঝুঁকিভাতা প্রদান, আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন, মাদক সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি এবং আন্তর্জাতিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করা। বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ গত ফেব্রুয়ারি মাসে রেজ্যুলেশন আকারে প্রকাশ করার পর তাতে স্বাক্ষর করেছেন কমিটির চেয়ারম্যান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

ওই কর্মকর্তা বলেন, রেজ্যুলেশনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও মাঠ পর্যায়ে অপারেশনের কাজে যুক্ত সৈনিকদের অস্ত্র প্রদান করা। এরপর স্ক্যানার, ডগস্কোয়াড টিম গঠন, এমটিএমসিতে মাদকের একজন প্রতিনিধি দেয়া, মাদকের বিধিমালা প্রণয়ন করা।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, একেতো সীমিত জনবল, তার ওপর ছিল না অস্ত্র। খালি হাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে হয়েছে এতোদিন। ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারের মতো মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে হয়েছে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। খালি হাতে অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা ও সদস্য। এখন অস্ত্র দেয়ায় মাদকের অভিযানে আরও গতি ফিরবে। সেই সঙ্গে ডগ স্কোয়াড, স্ক্যানার যুক্ত হওয়ায় মাদকবিরোধী অভিযানে আরও সফলতা আসবে। এমটি এমসিতে মাদকের প্রতিনিধি যুক্ত থাকলে মাদক ব্যবসায়ীদের সহজে ট্র্যাক করে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের উপপরিচালক বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অদিপ্তরের কর্মকর্তাদের এতদিন ঝুঁকি নিয়ে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে হয়েছে। অপারেশনাল কাজে যানবাহন সমস্যা, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় দেশব্যাপী মাদক প্রতিরোধে কাজ করতে গিয়ে অধিদপ্তরকে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে বিধিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিপ্তর থেকে একটি খসড়া বিধিমালা প্রণয়ন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পাঠানো হয়েছে। বিধিমালা প্রণয়ন হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরর আরও আধুনিকায়ণ হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাজে আরও গতি ফিরবে।

অপারেশনে যুক্ত হচ্ছে অস্ত্র, স্ক্যানার, ডগ স্কোয়াড

এদিকে কম জনবল নিয়ে কাজ করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ে অপারেশনে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের অস্ত্র দেয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেই দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। মাদকবিরোধী অভিযানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অস্ত্র দেয়ার পাশাপাশি যুক্ত করা হচ্ছে স্ক্যানার, ডগ স্কোয়াডসহ নানা প্রযুক্তি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জাতীয় মাদকদ্রব্য উপদেষ্টা কমিটির প্রথম জুম মিটিং হয়। সেখানে যুক্ত হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান খান কামাল। মিটিংয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুকূলে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদানের বিষয়ে আলোচনা হয়।

এখনও যেসব পদে লোক নেই

প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষকের পদ থাকলেও এ পদে কোন লোক নেই। সিস্টেম এনালিস্টের পদও শূন্য। সিনিয়র মেডিকেল কনসালটেন্ট (মেডিকেল) পদ শূন্য। সিনিয়র কনসালটেন্ট (সাইক) ৮ পদের সবগুলোই শূন্য। জুনিয়র কনসালটেন্ট (প্যাথলজি), রেডিওলজি, জুনিয়র কনসালটেন্ট, কলসানটেন্ট সাইয়িাট্রিক সোস্যাল ওয়ার্কার, ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার, সহকারী রেজিস্ট্রার, সাইকিয়াট্রিক সোস্যাল ওয়ার্কার, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, সিনিয়র মেট্রন, একাউন্ট অফিসার, আইন কর্মকর্তার প্রদগুলো শূন্য। এগুলো প্রথম শ্রেণীর পদ। প্রথম শ্রেণীতে শূন্য পদের সংখ্যা ২০৬ জন। দ্বিতীয় শ্রেণীতে ২৯৭ জনবলের মধ্যে ১৩৬টি পদ শূন্য। তৃতীয় শ্রেণীতে ২১৪৫ জনবলের মধ্যে ১১৭৪ টি শূন্য। ৪র্থ শ্রেণীতে ৩০৫৯ জনবলের মধ্যে ১৬০৩টি পদ শূন্য। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জনবল অর্ধেক থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, নতুনভাবে ৬শ’ জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী জনু মাসের মধ্যে ৫শ’ সৈনিক এবং অন্যান্য পদে ১শ’ জনবল নিয়োগ শেষ হবে। এতে জনবল ঘাটতি কিছুটা হলেও কমে আসবে।

অর্ধেক জনবলে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যা অর্জন

১২ বছরে (২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত) সারাদেশে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ১শ‘ ৫টি অভিযান চালিয়েছে সংস্থাটি। অভিযানে মাদক সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৬৭টি। আসামির সংখ্যা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭শ’ ৩৩ জন। মাদকের মধ্যে একযুগের অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ১ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ২৩ পিস ইয়াবা, ১৪৯.৩৫৮ কেজি হেরোইন, ৯.৪০৪ কেজি কোকেন, ২.৫৫৭ কেজি আফিম, ৩৯ হাজার ২৭৬ কেজি গাঁজা, ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৫০ বোতল ফেনসিডিল, ১৬১২.৭৬৩ লিটার তরল ফেনসিডিল, দেশীয় মদ ১১৬২৭.৭৬৭ লিটারসহ বিভিন্ন মাদক।

শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৩ ফাল্গুন ১৪২৭ ১৩ রজব ১৪৪২

অস্ত্র হাতে পাচ্ছে মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা

সাইফ বাবলু

দেশব্যাপী মাদকের বিস্তার ঠেকাতে অপারেশনাল কাজে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অস্ত্র দেয়া হচ্ছে। এখন থেকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে নামবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এজন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-সৈনিকদের দেয়া হবে বিশেষ প্রশিক্ষণ। অস্ত্রের পাশাপাশি মাদকদ্র্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যুক্ত হচ্ছে ডগ স্কোয়াড টিম। দেয়া হবে ট্র্যাকার মেশিন, স্ক্যানারসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। এ লক্ষ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নতুন আইন অনুযায়ী একটি বিধিমালা প্রণয়নের কাজও চলছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্মকর্তাদের ভাষ্য, অস্ত্র দেয়ার পাশাপাশি মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রমে আধুনিকায়নে এসব উদ্যোগের ফলে কাজে আরও গতি বাড়বে। কিছুটা হলেও মাদককের বিস্তার প্রতিরোধ সম্ভব হবে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মঞ্জুরিকৃত জনবলের অর্ধেক জনবল নিয়ে কাজ করছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনায় যুক্ত মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সৈনিকদের ছিল না অস্ত্র ও আধুনিক যন্ত্রপাতি। দীর্ঘ প্রতিক্ষা আর চেষ্টার পর মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিজস্ব ভবনটি আধুনিকায়ণ হলেও বাহিনীর অপারেশনে এখনও আধুনিকায়ণ ফিরে আসেনি। রয়েছে নানা সমস্যা। সেসব সমস্যার অবসান ঘটিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অস্ত্র দেয়া হচ্ছে অপারেশনাল কাজের জন্য। মাদকের বিস্তার ঠেকাতে স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন জায়গায় যুক্ত হচ্ছে আধুনিক স্ক্যানার। গঠন করা হচ্ছে ডগস্কোয়াড টিম। নতুন আইন অনুযায়ী বিধিমালা প্রণয়নের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির এক বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রধান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম, নানা সমস্যা নিয়ে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর অনলাইনে একটি মিটিং হয়। ওই মিটিংয়ে সভপতিত্ব করেন জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বৈঠকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সুরক্ষাসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব, শিক্ষামন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অনেকেই অংশ নিয়েছেন। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আলোচনার মধ্যে ছিল- মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুকূলে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদান, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস ও এক্সপোর্ট কার্গোর ওপর নজরদারি, বন্দরগুলোতে আধুনিক স্ক্যানার স্থাপন, ডগ স্কোয়াড মোতায়েন, মোবাইল ট্র্যাকারের ব্যবস্থা, মাদকবিরোধী জনসচেতনতা কার্যক্রম, বিদেশগামী কর্মীদের মাদক অপরাধ ও মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে সচেতন করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কার্যক্রম, মাদকাসক্তদের চিকিসা সুবিধা সম্প্রচারণ, মাদকাসক্ত শনাক্তকরণে ডোপটেস্ট প্রবর্তন, মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন, বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রসমূহের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য কারিগরি কমিটি গঠন, বোর্ড তহবিল, অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের রেশন ও ঝুঁকিভাতা প্রদান, আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন, মাদক সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি এবং আন্তর্জাতিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করা। বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ গত ফেব্রুয়ারি মাসে রেজ্যুলেশন আকারে প্রকাশ করার পর তাতে স্বাক্ষর করেছেন কমিটির চেয়ারম্যান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

ওই কর্মকর্তা বলেন, রেজ্যুলেশনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও মাঠ পর্যায়ে অপারেশনের কাজে যুক্ত সৈনিকদের অস্ত্র প্রদান করা। এরপর স্ক্যানার, ডগস্কোয়াড টিম গঠন, এমটিএমসিতে মাদকের একজন প্রতিনিধি দেয়া, মাদকের বিধিমালা প্রণয়ন করা।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, একেতো সীমিত জনবল, তার ওপর ছিল না অস্ত্র। খালি হাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে হয়েছে এতোদিন। ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারের মতো মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে হয়েছে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। খালি হাতে অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা ও সদস্য। এখন অস্ত্র দেয়ায় মাদকের অভিযানে আরও গতি ফিরবে। সেই সঙ্গে ডগ স্কোয়াড, স্ক্যানার যুক্ত হওয়ায় মাদকবিরোধী অভিযানে আরও সফলতা আসবে। এমটি এমসিতে মাদকের প্রতিনিধি যুক্ত থাকলে মাদক ব্যবসায়ীদের সহজে ট্র্যাক করে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের উপপরিচালক বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অদিপ্তরের কর্মকর্তাদের এতদিন ঝুঁকি নিয়ে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে হয়েছে। অপারেশনাল কাজে যানবাহন সমস্যা, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় দেশব্যাপী মাদক প্রতিরোধে কাজ করতে গিয়ে অধিদপ্তরকে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে বিধিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিপ্তর থেকে একটি খসড়া বিধিমালা প্রণয়ন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পাঠানো হয়েছে। বিধিমালা প্রণয়ন হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরর আরও আধুনিকায়ণ হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাজে আরও গতি ফিরবে।

অপারেশনে যুক্ত হচ্ছে অস্ত্র, স্ক্যানার, ডগ স্কোয়াড

এদিকে কম জনবল নিয়ে কাজ করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ে অপারেশনে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের অস্ত্র দেয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেই দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। মাদকবিরোধী অভিযানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অস্ত্র দেয়ার পাশাপাশি যুক্ত করা হচ্ছে স্ক্যানার, ডগ স্কোয়াডসহ নানা প্রযুক্তি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জাতীয় মাদকদ্রব্য উপদেষ্টা কমিটির প্রথম জুম মিটিং হয়। সেখানে যুক্ত হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান খান কামাল। মিটিংয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুকূলে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদানের বিষয়ে আলোচনা হয়।

এখনও যেসব পদে লোক নেই

প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষকের পদ থাকলেও এ পদে কোন লোক নেই। সিস্টেম এনালিস্টের পদও শূন্য। সিনিয়র মেডিকেল কনসালটেন্ট (মেডিকেল) পদ শূন্য। সিনিয়র কনসালটেন্ট (সাইক) ৮ পদের সবগুলোই শূন্য। জুনিয়র কনসালটেন্ট (প্যাথলজি), রেডিওলজি, জুনিয়র কনসালটেন্ট, কলসানটেন্ট সাইয়িাট্রিক সোস্যাল ওয়ার্কার, ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার, সহকারী রেজিস্ট্রার, সাইকিয়াট্রিক সোস্যাল ওয়ার্কার, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, সিনিয়র মেট্রন, একাউন্ট অফিসার, আইন কর্মকর্তার প্রদগুলো শূন্য। এগুলো প্রথম শ্রেণীর পদ। প্রথম শ্রেণীতে শূন্য পদের সংখ্যা ২০৬ জন। দ্বিতীয় শ্রেণীতে ২৯৭ জনবলের মধ্যে ১৩৬টি পদ শূন্য। তৃতীয় শ্রেণীতে ২১৪৫ জনবলের মধ্যে ১১৭৪ টি শূন্য। ৪র্থ শ্রেণীতে ৩০৫৯ জনবলের মধ্যে ১৬০৩টি পদ শূন্য। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জনবল অর্ধেক থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, নতুনভাবে ৬শ’ জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী জনু মাসের মধ্যে ৫শ’ সৈনিক এবং অন্যান্য পদে ১শ’ জনবল নিয়োগ শেষ হবে। এতে জনবল ঘাটতি কিছুটা হলেও কমে আসবে।

অর্ধেক জনবলে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যা অর্জন

১২ বছরে (২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত) সারাদেশে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ১শ‘ ৫টি অভিযান চালিয়েছে সংস্থাটি। অভিযানে মাদক সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৬৭টি। আসামির সংখ্যা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭শ’ ৩৩ জন। মাদকের মধ্যে একযুগের অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ১ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ২৩ পিস ইয়াবা, ১৪৯.৩৫৮ কেজি হেরোইন, ৯.৪০৪ কেজি কোকেন, ২.৫৫৭ কেজি আফিম, ৩৯ হাজার ২৭৬ কেজি গাঁজা, ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৫০ বোতল ফেনসিডিল, ১৬১২.৭৬৩ লিটার তরল ফেনসিডিল, দেশীয় মদ ১১৬২৭.৭৬৭ লিটারসহ বিভিন্ন মাদক।