জমে উঠেছে মাদার বাঁশ সাংস্কৃতিক মহোৎসব

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার শিলই ইউনিয়নের শিলই গ্রামে জমে উঠেছে শত বছরের ঐতিহ্যময় মাদার বাঁশ উৎসব। সাত দিনব্যাপী এই উৎসবে যেন মানুষের ঢল নেমেছে। আজ জমজমাট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর পরিসমাপ্তি ঘটবে। সব শ্রেণীর মানুষ এই অনুষ্ঠান উপভোগ করছে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে এই অনুষ্ঠানটি সাত দিনব্যাপী হয়ে থাকে। এই ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার অনুসারী এই কৃষ্টি অনুসরণ করে থাকে। এলাকার অনেকেই জানিয়েছেন, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং-এর শিমুলিয়ার মনাল ফকির নামে এক ব্যক্তি এই সংস্কৃতির উদ্ভাবক। তিনি গত হওয়ার পর শিমুলিয়ার বুদাই ফকির এই অনুসারীদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার ইন্তেকালের পর তরাব আলী ফকির মাদার বাঁশ অনুসারীদের দায়িত্ব পান। তরাব আলী ফকির ইন্তেকাল করার পর শিলই গ্রামের রিয়াজউদ্দিন ফকির মাদার বাঁশ অনুসারীদের নেতা নিযুক্ত হন। এরপর তিনি অনেক দিন এই দায়িত্ব পালন করার পর তিনি ইন্তেকাল করেন এবং সর্বশেষ দায়িত্ব পান সানাল, যিনি সানাল ফকির জুনিয়র নামে পরিচিত। সম্পর্কে তিনি রিয়াজউদ্দিন ফকিরের দৌহিত্র।

মাদার বাঁশ উৎসবের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই উৎসবে ৭টি পতাকা সাতদিন বহন করে উৎসবের সমাপ্তি দিনে রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের মাজারে রাখা হবে। এই ৭টি পতাকার মধ্যে পাঁচটির রং লাল এবং একটি হলুদ, অপরটি সাদা হয়ে থাকে। পতাকা টানানো এই বাঁশগুলো ৭ দিন বহন করা হবে এবং পুরো শিলই ইউনিয়ন প্রদক্ষিণ করা হবে। এ সময় বাজনা বাজানো হয়ে থাকে। পর্যায়ক্রমে এই মাদার বাঁশগুলো বহন করার জন্য ৬০/৭০ জন যুবক পালাক্রমে সহযোগিতা করবে পরস্পরকে।

যারা এসব বাঁশ বহন করবে তারা নিরামিশ, ভাজি ও ভর্তাসহ অন্যান্য খাবার বহন করলেও সাতদিন তারা মাছ খাবে না। তাদের ধারণা মাছ খেলে তারা পাগল হয়ে যাবে, নইলে বিভিন্ন সমস্যায় পতিত হবে। তাদের ধারণা অমান্য করা মানে অভিশপ্ত হওয়া। এই বাঁশ বহনকারীরা শুক্রবার অনুষ্ঠান শেষে শনিবার খাসি জবেহ করে তার মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে ৭ দিনের মাছের কষ্ট ভুলবে।

আলাপ করে জানা গেছে, আগামী শুক্রবার সমাপ্তি দিনে পায়েস রান্না করে তা পুড়ানো হবে এবং তা তবারক হিসেবে ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে। নিয়্যত করে তা খেলে অনেকের সমস্যা দূর হয় বলে তারা জানায়। যদিও সবাই ইসলাম ধর্মের অনুসারী কিন্তু মাদার বাঁশ কালচার এর পরিপন্থী হলেও সবাই তাকে বিশ্বাস ও আমলে নেয়ার কারণে এ নিয়ে অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও ধর্মীয় বিশ্বাস একত্রিত করার ফলে দ্বিধাগ্রস্তের মধ্যে রয়েছেন বলেও অনেকে মন্তব্য করেছেন। অনেকের ধারণা ধর্মীয় মূল উপদেশ এবং ব্যাখ্যা তাদের সামনে তুলে ধরতে পারলে তারা এ ধরনের বিশ্বাস থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে পারবে। এ ব্যাপারে মুক্তমনের বিশেষজ্ঞ আলেমগণ এলাকায় গিয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ব্যাখ্যা তুলে ধরতে পারলে, তাদের কালচার সঠিক না ভুল সে ব্যাপারেও তারা অনুধাবন করতে পারবে বলে অনেকে মনে করছেন।

শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৩ ফাল্গুন ১৪২৭ ১৩ রজব ১৪৪২

জমে উঠেছে মাদার বাঁশ সাংস্কৃতিক মহোৎসব

মাহাবুব আলম লিটন, মুন্সীগঞ্জ

image

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার শিলই ইউনিয়নের শিলই গ্রামে জমে উঠেছে শত বছরের ঐতিহ্যময় মাদার বাঁশ উৎসব। সাত দিনব্যাপী এই উৎসবে যেন মানুষের ঢল নেমেছে। আজ জমজমাট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর পরিসমাপ্তি ঘটবে। সব শ্রেণীর মানুষ এই অনুষ্ঠান উপভোগ করছে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে এই অনুষ্ঠানটি সাত দিনব্যাপী হয়ে থাকে। এই ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার অনুসারী এই কৃষ্টি অনুসরণ করে থাকে। এলাকার অনেকেই জানিয়েছেন, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং-এর শিমুলিয়ার মনাল ফকির নামে এক ব্যক্তি এই সংস্কৃতির উদ্ভাবক। তিনি গত হওয়ার পর শিমুলিয়ার বুদাই ফকির এই অনুসারীদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার ইন্তেকালের পর তরাব আলী ফকির মাদার বাঁশ অনুসারীদের দায়িত্ব পান। তরাব আলী ফকির ইন্তেকাল করার পর শিলই গ্রামের রিয়াজউদ্দিন ফকির মাদার বাঁশ অনুসারীদের নেতা নিযুক্ত হন। এরপর তিনি অনেক দিন এই দায়িত্ব পালন করার পর তিনি ইন্তেকাল করেন এবং সর্বশেষ দায়িত্ব পান সানাল, যিনি সানাল ফকির জুনিয়র নামে পরিচিত। সম্পর্কে তিনি রিয়াজউদ্দিন ফকিরের দৌহিত্র।

মাদার বাঁশ উৎসবের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই উৎসবে ৭টি পতাকা সাতদিন বহন করে উৎসবের সমাপ্তি দিনে রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের মাজারে রাখা হবে। এই ৭টি পতাকার মধ্যে পাঁচটির রং লাল এবং একটি হলুদ, অপরটি সাদা হয়ে থাকে। পতাকা টানানো এই বাঁশগুলো ৭ দিন বহন করা হবে এবং পুরো শিলই ইউনিয়ন প্রদক্ষিণ করা হবে। এ সময় বাজনা বাজানো হয়ে থাকে। পর্যায়ক্রমে এই মাদার বাঁশগুলো বহন করার জন্য ৬০/৭০ জন যুবক পালাক্রমে সহযোগিতা করবে পরস্পরকে।

যারা এসব বাঁশ বহন করবে তারা নিরামিশ, ভাজি ও ভর্তাসহ অন্যান্য খাবার বহন করলেও সাতদিন তারা মাছ খাবে না। তাদের ধারণা মাছ খেলে তারা পাগল হয়ে যাবে, নইলে বিভিন্ন সমস্যায় পতিত হবে। তাদের ধারণা অমান্য করা মানে অভিশপ্ত হওয়া। এই বাঁশ বহনকারীরা শুক্রবার অনুষ্ঠান শেষে শনিবার খাসি জবেহ করে তার মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে ৭ দিনের মাছের কষ্ট ভুলবে।

আলাপ করে জানা গেছে, আগামী শুক্রবার সমাপ্তি দিনে পায়েস রান্না করে তা পুড়ানো হবে এবং তা তবারক হিসেবে ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে। নিয়্যত করে তা খেলে অনেকের সমস্যা দূর হয় বলে তারা জানায়। যদিও সবাই ইসলাম ধর্মের অনুসারী কিন্তু মাদার বাঁশ কালচার এর পরিপন্থী হলেও সবাই তাকে বিশ্বাস ও আমলে নেয়ার কারণে এ নিয়ে অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও ধর্মীয় বিশ্বাস একত্রিত করার ফলে দ্বিধাগ্রস্তের মধ্যে রয়েছেন বলেও অনেকে মন্তব্য করেছেন। অনেকের ধারণা ধর্মীয় মূল উপদেশ এবং ব্যাখ্যা তাদের সামনে তুলে ধরতে পারলে তারা এ ধরনের বিশ্বাস থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে পারবে। এ ব্যাপারে মুক্তমনের বিশেষজ্ঞ আলেমগণ এলাকায় গিয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ব্যাখ্যা তুলে ধরতে পারলে, তাদের কালচার সঠিক না ভুল সে ব্যাপারেও তারা অনুধাবন করতে পারবে বলে অনেকে মনে করছেন।