এমসিসিআই-এর দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যালোচনা

সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠছে অর্থনীতি

করোনা প্রাদুর্ভাবের পর অর্থনীতির সব সূচক এক সময় তলানিতে ঠেকেছিল। সেই সূচক আবার ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়েছে। দেশের অর্থনীতি বর্তমানে স্বাভাবিক পর্যায়ে যেতে শুরু করেছে। আর এটা হয়েছে, সরকারের সময়োপযী কার্যকরী পদক্ষেপ এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য। দেশের ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্য সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর প্রান্তিক) অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় এ তথ্য ওঠে আসে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত পর্যালোচনায় সংগঠনটি বলেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরের সার্বিক অবস্থা অনেকাংশেই ভালো। বিশেষ করে গেল অর্থবছরের মে মাসের শেষ থেকেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

এমসিসিআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি খাত সামস্টিক সূচকে বেশ সন্তোষজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। খাতগুলো হলো- রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, অর্থ সরবরাহ এবং মুদ্রাস্ফীতি। দীর্ঘ সময় ধরে মুদ্রাবিনিময় হার স্থিতিশীল ছিল এবং ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ভারসাম্যও ইতিবাচক ছিল। অনানুষ্ঠানিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে তাদের সেবা এবং অন্যান্য কার্যক্রম শুরু করলেও এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে সেগুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মহামারীর ধাক্কা এখনও এ প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা এখনো দুর্বল পর্যায়েই রয়ে গেছে। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী পোশাক, চামড়া এবং গৃহস্থালী শিল্পের বাজার, ইস্পাত শিল্প, খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ এবং পরিরবহন খাত এখনও পুরোপুরিভাবে সচল হয়ে ওঠেনি।

এমসিসিআইয়ের প্রতিবেদন আরও বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো হলো- ধীর গতির উন্নয়ন কার্যক্রম, ভয়াবহ বেকারত্ব পরিস্থিতি, কম বিনিয়োগ এবং অলস রাজস্ব বৃদ্ধি।

পুনরায় প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজার তৈরি করতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রয়োজন। বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির থাকলে কর্মসংস্থানজনিত বিদ্যমান সমস্যা সমাধান সম্ভব নয় উল্লেখ করে।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন কম হয়েছে। এ অবস্থায় প্রবৃদ্ধি ও সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির থাকলে কর্মসংস্থান পর্যাপ্ত গতি পাবে না। দীর্ঘদিন ধরেই দেশের বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২২ থেকে ২৩ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গতিশীলতার জন্য বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণের পরিবেশ জরুরি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় সরকার সময়মতো উদ্যোগ নিয়েছে। কৃষি ও শিল্প খাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষি খাতে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ৬৭ শতাংশ এবং শিল্প খাতের প্যাকেজের ৯৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এদিকে চাহিদা কমে যাওয়ায় বিদ্যুতের ব্যবহার কমেছে। শিক্ষা ছাড়া অন্যান্য সেবা খাতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেবা খাত অর্থনীতিতে উৎপাদনশীলতা, দক্ষতা ও কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করছে।

শিল্পখাতের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের মাসগুলিতে করোনা পরিস্তিতির কারণে অর্থনৈতিক কর্মকা- খুব ধীর গতির ছিল। তাই এই খাতটি ২০২০ অর্থবছরে ৬.৪৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে যা ২০১৯ অর্থবছরে ১২. ১২৭ শতাংশ ছিল। এ ছাড়া জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান মাত্র ২০২০ সালে দশমিক ০৬ শতাংশ বেড়েছে যা ২০১৯ অর্থবছরে ৩৫ শতাংশ ছিল।

রপ্তানি আয় সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনায় রপ্তানি কমে যাওয়ায় ২০২১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ আগের অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় দশমিক ০৫ শতাংশ কমেছে যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ২৯ শতাংশ কমেছে। ২০২১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত লেনদেন ভারসাম্যের তথ্যানুসারে, নিট বৈদেশিক বিনিয়োগ ২১ দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে ৪৫৫ মিলিয়ন ডলার দাঁড়িয়েছে যা এর আগের অর্থবছরে ছিল ৫৮৩ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে একই সময়ে এফডিআইয়ের মোট প্রবাহও ২০২০ অর্থবছরের একই সময়ে ৮.২৮ শতাংশ কমে ১.৫৫ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১.৬৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই সময়ে সমপর্যায়ের অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ কম এসেছে। এটা অর্থনীতির জন্য খারাপ খবর।

বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মাসে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি ২১.৩৮ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৬.৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের ৮.২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। করোনার কারণে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও আমদানি হ্রাস পেয়েছে। এই ছয় মাসে আমদানি রেকর্ড পরিমাণ অর্থাৎ ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ কমেছে এবং রপ্তানি বেড়েছে দশমিক ৪৪ শতাংশ। চলতি অর্থাৎ এই হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মাসে ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্বৃত্ত হয়েছে।

এছাড়া মুদ্রাস্ফীতির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলোচ্য সময় পয়েন্ট টু পয়েন্ট মুদ্রাস্ফীতি হার দশমিক ২৩ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে যা ডিসেম্বরে ৫.২৯ শতাংশ ও তারপরের মাস নভেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। আগের মাসগুলোর তুলনায় শাকসবজি, পেঁয়াজ, মুরগি এবং ডিমসহ কয়েকটি পণ্যের দাম কমায় মুদ্রাস্ফীতি কমেছিল। এক বছর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

এরপরও বাংলাদেশের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ আছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নিতে হলে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ধীর বাস্তবায়ন, বেকারত্ব, স্বল্প বিনিয়োগ এবং রাজস্ব আদায় স্বচ্ছতা ও চ্যালেঞ্জ, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ধীর গতি ইত্যাদির কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। আর তা করতে হলে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে না পারলে কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে না। তাই বেকার সমস্যা রোধ করার জন্য বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে।

শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৪ ফাল্গুন ১৪২৭ ১৪ রজব ১৪৪২

এমসিসিআই-এর দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যালোচনা

সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠছে অর্থনীতি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

করোনা প্রাদুর্ভাবের পর অর্থনীতির সব সূচক এক সময় তলানিতে ঠেকেছিল। সেই সূচক আবার ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়েছে। দেশের অর্থনীতি বর্তমানে স্বাভাবিক পর্যায়ে যেতে শুরু করেছে। আর এটা হয়েছে, সরকারের সময়োপযী কার্যকরী পদক্ষেপ এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য। দেশের ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্য সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর প্রান্তিক) অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় এ তথ্য ওঠে আসে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত পর্যালোচনায় সংগঠনটি বলেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরের সার্বিক অবস্থা অনেকাংশেই ভালো। বিশেষ করে গেল অর্থবছরের মে মাসের শেষ থেকেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

এমসিসিআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি খাত সামস্টিক সূচকে বেশ সন্তোষজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। খাতগুলো হলো- রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, অর্থ সরবরাহ এবং মুদ্রাস্ফীতি। দীর্ঘ সময় ধরে মুদ্রাবিনিময় হার স্থিতিশীল ছিল এবং ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ভারসাম্যও ইতিবাচক ছিল। অনানুষ্ঠানিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে তাদের সেবা এবং অন্যান্য কার্যক্রম শুরু করলেও এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে সেগুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মহামারীর ধাক্কা এখনও এ প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা এখনো দুর্বল পর্যায়েই রয়ে গেছে। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী পোশাক, চামড়া এবং গৃহস্থালী শিল্পের বাজার, ইস্পাত শিল্প, খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ এবং পরিরবহন খাত এখনও পুরোপুরিভাবে সচল হয়ে ওঠেনি।

এমসিসিআইয়ের প্রতিবেদন আরও বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো হলো- ধীর গতির উন্নয়ন কার্যক্রম, ভয়াবহ বেকারত্ব পরিস্থিতি, কম বিনিয়োগ এবং অলস রাজস্ব বৃদ্ধি।

পুনরায় প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজার তৈরি করতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রয়োজন। বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির থাকলে কর্মসংস্থানজনিত বিদ্যমান সমস্যা সমাধান সম্ভব নয় উল্লেখ করে।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন কম হয়েছে। এ অবস্থায় প্রবৃদ্ধি ও সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির থাকলে কর্মসংস্থান পর্যাপ্ত গতি পাবে না। দীর্ঘদিন ধরেই দেশের বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২২ থেকে ২৩ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গতিশীলতার জন্য বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণের পরিবেশ জরুরি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় সরকার সময়মতো উদ্যোগ নিয়েছে। কৃষি ও শিল্প খাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষি খাতে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ৬৭ শতাংশ এবং শিল্প খাতের প্যাকেজের ৯৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এদিকে চাহিদা কমে যাওয়ায় বিদ্যুতের ব্যবহার কমেছে। শিক্ষা ছাড়া অন্যান্য সেবা খাতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেবা খাত অর্থনীতিতে উৎপাদনশীলতা, দক্ষতা ও কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করছে।

শিল্পখাতের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের মাসগুলিতে করোনা পরিস্তিতির কারণে অর্থনৈতিক কর্মকা- খুব ধীর গতির ছিল। তাই এই খাতটি ২০২০ অর্থবছরে ৬.৪৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে যা ২০১৯ অর্থবছরে ১২. ১২৭ শতাংশ ছিল। এ ছাড়া জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান মাত্র ২০২০ সালে দশমিক ০৬ শতাংশ বেড়েছে যা ২০১৯ অর্থবছরে ৩৫ শতাংশ ছিল।

রপ্তানি আয় সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনায় রপ্তানি কমে যাওয়ায় ২০২১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ আগের অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় দশমিক ০৫ শতাংশ কমেছে যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ২৯ শতাংশ কমেছে। ২০২১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত লেনদেন ভারসাম্যের তথ্যানুসারে, নিট বৈদেশিক বিনিয়োগ ২১ দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে ৪৫৫ মিলিয়ন ডলার দাঁড়িয়েছে যা এর আগের অর্থবছরে ছিল ৫৮৩ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে একই সময়ে এফডিআইয়ের মোট প্রবাহও ২০২০ অর্থবছরের একই সময়ে ৮.২৮ শতাংশ কমে ১.৫৫ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১.৬৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই সময়ে সমপর্যায়ের অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ কম এসেছে। এটা অর্থনীতির জন্য খারাপ খবর।

বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মাসে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি ২১.৩৮ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৬.৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের ৮.২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। করোনার কারণে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও আমদানি হ্রাস পেয়েছে। এই ছয় মাসে আমদানি রেকর্ড পরিমাণ অর্থাৎ ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ কমেছে এবং রপ্তানি বেড়েছে দশমিক ৪৪ শতাংশ। চলতি অর্থাৎ এই হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মাসে ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্বৃত্ত হয়েছে।

এছাড়া মুদ্রাস্ফীতির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলোচ্য সময় পয়েন্ট টু পয়েন্ট মুদ্রাস্ফীতি হার দশমিক ২৩ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে যা ডিসেম্বরে ৫.২৯ শতাংশ ও তারপরের মাস নভেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। আগের মাসগুলোর তুলনায় শাকসবজি, পেঁয়াজ, মুরগি এবং ডিমসহ কয়েকটি পণ্যের দাম কমায় মুদ্রাস্ফীতি কমেছিল। এক বছর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

এরপরও বাংলাদেশের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ আছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নিতে হলে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ধীর বাস্তবায়ন, বেকারত্ব, স্বল্প বিনিয়োগ এবং রাজস্ব আদায় স্বচ্ছতা ও চ্যালেঞ্জ, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ধীর গতি ইত্যাদির কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। আর তা করতে হলে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে না পারলে কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে না। তাই বেকার সমস্যা রোধ করার জন্য বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে।