ব্যাংক থেকে ঋণ পায় মাত্র ২৩ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা

ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে নারী উদ্যোক্তারা। সম্প্রতি ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাংকের সাধারণ ঋণের খাত থেকে নারীদের চাহিদা পূরণ হচ্ছে ১৩ শতাংশ এবং ব্যাংকের নারী উদ্যোক্তা ঋণ খাত থেকে আসছে আরও প্রায় ১০ শতাংশ। ফলে নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে ব্যাংকের অর্থায়ন অবদান মাত্র ২৩ শতাংশ।

‘সিচুয়েশন অব উইমেন সিএএসএমই এন্ট্রাপ্রিনিউরস অ্যান্ড ইনফরমাল সেক্টর ওয়ার্কার্স’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দেশের আটটি বিভাগের ২৮ জেলায় প্রায় ১ হাজার ৫৮৯ জন নারী উদ্যোক্তা ও শ্রমিকের ওপর জরিপ কার্য পরিচালনা করা হয়। গবেষণায় ১০ খাতের উদ্যোক্তাদের মতামত নেয়া হয়েছে।

ব্র্যাকের গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নারীরা কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। সেখানে অর্থায়নের উৎস হিসেবে এনজিওগুলোর অবদান ৪৯ শতাংশ। এরপরই ব্যক্তিগত সঞ্চয় থেকে আসছে ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ, পারিবারিক উৎস থেকে ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ। ব্যাংকের সাধারণ ঋণের খাত থেকে নারীদের চাহিদা পূরণ হচ্ছে ১৩ শতাংশ এবং ব্যাংকের নারী উদ্যোক্তা ঋণ খাত থেকে আসছে আরও প্রায় ১০ শতাংশ। ফলে নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে ব্যাংকের অর্থায়ন অবদান মাত্র ২৩ শতাংশ। পাশাপাশি আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে আসছে ১০ শতাংশ। অন্য ব্যবসায়িক খাত বা আয়ের উৎস থেকে ৬ শতাংশ এবং অন্য খাত থেকে আসছে প্রায় ১ শতাংশ অর্থায়ন।

গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, ব্যাংকগুলোর অর্থায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আগ্রহের জায়গা হলো মাঝারি উদ্যোগ। তবে কটেজ ও ক্ষুদ্র উদ্যোগে অর্থায়ন খুবই কম। ফলে ছোট এসব ব্যবসা করার ক্ষেত্রে উচ্চসুদে ঋণ ও পারিবারিক উেসর ওপর নির্ভর করতে হয়। এসব ব্যবসা টেকসই করাটাও কষ্টকর হয়, যার প্রভাব দেখা গেছে করোনাকালে। অনেকের ব্যবসা বন্ধ রাখতে হয়েছে কিংবা কোন ধরনের আয় ছিল না। ফলে তারা অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব নারী শিক্ষিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তাদের জামানত ছাড়াই ঋণ দেয়া দরকার। কারণ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে ব্যাংক এক্ষেত্রে জামানত হিসেবে বিবেচনা করতে পারে। নারীরা যদি উদ্যোক্তা হয়, তাহলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন সহজ হবে।

নারীরা সাধারণত বাসায় থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করতে পছন্দ করেন। এ কারণে ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তারা প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে গড়ে ৮-১০ লাখ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়। এসব ঋণের মধ্যে নারীরা পান মাত্র ১ শতাংশের কাছাকাছি। নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর নেতিবাচক মনোভাব বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছেন উদ্যোক্তারা। কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার চাপের কারণে ব্যাংকাররা দায়সারাভাবে নারীদের কিছু ঋণ দেন। বিভিন্ন শর্তের বেড়াজাল ও হয়রানির কারণে নারীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে ভয় পান।

শনিবার, ০৬ মার্চ ২০২১ , ২১ ফাল্গুন ১৪২৭ ২১ রজব ১৪৪২

ব্যাংক থেকে ঋণ পায় মাত্র ২৩ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে নারী উদ্যোক্তারা। সম্প্রতি ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাংকের সাধারণ ঋণের খাত থেকে নারীদের চাহিদা পূরণ হচ্ছে ১৩ শতাংশ এবং ব্যাংকের নারী উদ্যোক্তা ঋণ খাত থেকে আসছে আরও প্রায় ১০ শতাংশ। ফলে নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে ব্যাংকের অর্থায়ন অবদান মাত্র ২৩ শতাংশ।

‘সিচুয়েশন অব উইমেন সিএএসএমই এন্ট্রাপ্রিনিউরস অ্যান্ড ইনফরমাল সেক্টর ওয়ার্কার্স’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দেশের আটটি বিভাগের ২৮ জেলায় প্রায় ১ হাজার ৫৮৯ জন নারী উদ্যোক্তা ও শ্রমিকের ওপর জরিপ কার্য পরিচালনা করা হয়। গবেষণায় ১০ খাতের উদ্যোক্তাদের মতামত নেয়া হয়েছে।

ব্র্যাকের গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নারীরা কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। সেখানে অর্থায়নের উৎস হিসেবে এনজিওগুলোর অবদান ৪৯ শতাংশ। এরপরই ব্যক্তিগত সঞ্চয় থেকে আসছে ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ, পারিবারিক উৎস থেকে ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ। ব্যাংকের সাধারণ ঋণের খাত থেকে নারীদের চাহিদা পূরণ হচ্ছে ১৩ শতাংশ এবং ব্যাংকের নারী উদ্যোক্তা ঋণ খাত থেকে আসছে আরও প্রায় ১০ শতাংশ। ফলে নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে ব্যাংকের অর্থায়ন অবদান মাত্র ২৩ শতাংশ। পাশাপাশি আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে আসছে ১০ শতাংশ। অন্য ব্যবসায়িক খাত বা আয়ের উৎস থেকে ৬ শতাংশ এবং অন্য খাত থেকে আসছে প্রায় ১ শতাংশ অর্থায়ন।

গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, ব্যাংকগুলোর অর্থায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আগ্রহের জায়গা হলো মাঝারি উদ্যোগ। তবে কটেজ ও ক্ষুদ্র উদ্যোগে অর্থায়ন খুবই কম। ফলে ছোট এসব ব্যবসা করার ক্ষেত্রে উচ্চসুদে ঋণ ও পারিবারিক উেসর ওপর নির্ভর করতে হয়। এসব ব্যবসা টেকসই করাটাও কষ্টকর হয়, যার প্রভাব দেখা গেছে করোনাকালে। অনেকের ব্যবসা বন্ধ রাখতে হয়েছে কিংবা কোন ধরনের আয় ছিল না। ফলে তারা অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব নারী শিক্ষিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তাদের জামানত ছাড়াই ঋণ দেয়া দরকার। কারণ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে ব্যাংক এক্ষেত্রে জামানত হিসেবে বিবেচনা করতে পারে। নারীরা যদি উদ্যোক্তা হয়, তাহলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন সহজ হবে।

নারীরা সাধারণত বাসায় থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করতে পছন্দ করেন। এ কারণে ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তারা প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে গড়ে ৮-১০ লাখ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়। এসব ঋণের মধ্যে নারীরা পান মাত্র ১ শতাংশের কাছাকাছি। নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর নেতিবাচক মনোভাব বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছেন উদ্যোক্তারা। কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার চাপের কারণে ব্যাংকাররা দায়সারাভাবে নারীদের কিছু ঋণ দেন। বিভিন্ন শর্তের বেড়াজাল ও হয়রানির কারণে নারীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে ভয় পান।