বিরোধের জেরে অস্ট্রেলিয়ায় চীনা বিনিয়োগ কমছে

অস্ট্রেলিয়া ও চীন ধীরে ধীরে শীতল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে। দেশ দুটির মধ্যে সাম্প্রতিক বিরোধ রাজনীতি ও কূটনীতির সীমানা ছাড়িয়ে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। যত দিন যাচ্ছে, দেশ দুটির মধ্যে বিদ্যমান বিবাদপূর্ণ সম্পর্কে জটিলতা ততই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে আগের বছরের তুলনায় ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় চীনা বিনিয়োগ ৬১ শতাংশ কমে গেছে। দেশটিতে চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিবিসি।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে গত বছর মাত্র ৭৮ কোটি ডলার চীনা বিনিয়োগ এসেছে। এ সময়কালে মাত্র ২০টি চীনা সংস্থা অস্ট্রেলিয়ায় বিনিয়োগ করেছে। ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ১১১টি চীনা প্রতিষ্ঠান দেশটিতে বিনিয়োগ করেছিল। যদিও ২০১৯ সালে এ বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছিল। সে বছর ২০১৮ সালের তুলনায় চীনা সংস্থার বিনিয়োগ কমেছিল ৪৭ শতাংশ। ২০১৯ সালে চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৫৭ কোটি ডলার।

ইস্ট এশিয়ান ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের পরিচালক শিরো আর্মস্ট্রং বলেন, অস্ট্রেলিয়ার চীনা বিনিয়োগ হ্রাস গত বছর বিশ্বজুড়ে বৈদেশিক বিনিয়োগের পতনকে ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ৪২ শতাংশ কমেছে। তবে অস্ট্রেলিয়ায় চীনা বিনিয়োগ হ্রাসের বিষয়টি অনেক বেশি ছিল। সম্প্রতি চীনা সংস্থাগুলো অস্ট্রেলীয় অর্থনীতির সব খাতে বিনিয়োগ করেছে। তবে গত বছর সংস্থাগুলো কেবল আবাসন খাতে ৩৫ কোটি ৭০ লাখ, খনি সম্পর্কিত খাতে ৩২ কোটি ১০ লাখ এবং উৎপাদন খাতে ১১ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছে। এ বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পেছনে কভিড-১৯ মহামারীরও আংশিক প্রভাব ছিল। গত মাসে অস্ট্রেলীয় সরকার অস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। এ ব্যবস্থার আওতায় প্রস্তাবিত বিনিয়োগ অস্ট্রেলীয় বিদেশি বিনিয়োগ পর্যালোচনা বোর্ডের তদন্তের অধীনে থাকবে। আগে এ পর্যালোচনা কেবল অসংবেদনশীল লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হতো। যেখানে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বাইরের দেশগুলোর বিনিয়োগকারীরা ২১ কোটি ৩০ লাখ থেকে ৯৩ কোটি ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করত। গত জুলাইয়ে দেশটির সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আইনগুলো ব্যাপক সংস্কারেরও ঘোষণা করেছিল। দেশ দুটির মধ্যে প্রথম বিরোধ শুরু হয় করোনা পাদুর্ভাবের সময়। এরপর থেকে অস্ট্রেলিয়া ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনার পর থেকে এ বিনিয়োগের পরিমাণ কমছে। গত এপ্রিলে চীনের দিকে আঙুল তুলে কভিড-১৯ মহামারীর উৎস খুঁজতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি তদন্তের আহ্বান জানালে দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা শুরু হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে চীন অস্ট্রেলীয় পণ্য যব, গম, ওয়াইন, মাংস, গলদা চিংড়িতে ক্রমাগত শুল্ক কিংবা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে এ শুল্ক ২০০ শতাংশেরও বেশি করা হয়েছিল।

শনিবার, ০৬ মার্চ ২০২১ , ২১ ফাল্গুন ১৪২৭ ২১ রজব ১৪৪২

বিরোধের জেরে অস্ট্রেলিয়ায় চীনা বিনিয়োগ কমছে

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

অস্ট্রেলিয়া ও চীন ধীরে ধীরে শীতল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে। দেশ দুটির মধ্যে সাম্প্রতিক বিরোধ রাজনীতি ও কূটনীতির সীমানা ছাড়িয়ে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। যত দিন যাচ্ছে, দেশ দুটির মধ্যে বিদ্যমান বিবাদপূর্ণ সম্পর্কে জটিলতা ততই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে আগের বছরের তুলনায় ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় চীনা বিনিয়োগ ৬১ শতাংশ কমে গেছে। দেশটিতে চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিবিসি।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে গত বছর মাত্র ৭৮ কোটি ডলার চীনা বিনিয়োগ এসেছে। এ সময়কালে মাত্র ২০টি চীনা সংস্থা অস্ট্রেলিয়ায় বিনিয়োগ করেছে। ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ১১১টি চীনা প্রতিষ্ঠান দেশটিতে বিনিয়োগ করেছিল। যদিও ২০১৯ সালে এ বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছিল। সে বছর ২০১৮ সালের তুলনায় চীনা সংস্থার বিনিয়োগ কমেছিল ৪৭ শতাংশ। ২০১৯ সালে চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৫৭ কোটি ডলার।

ইস্ট এশিয়ান ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের পরিচালক শিরো আর্মস্ট্রং বলেন, অস্ট্রেলিয়ার চীনা বিনিয়োগ হ্রাস গত বছর বিশ্বজুড়ে বৈদেশিক বিনিয়োগের পতনকে ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ৪২ শতাংশ কমেছে। তবে অস্ট্রেলিয়ায় চীনা বিনিয়োগ হ্রাসের বিষয়টি অনেক বেশি ছিল। সম্প্রতি চীনা সংস্থাগুলো অস্ট্রেলীয় অর্থনীতির সব খাতে বিনিয়োগ করেছে। তবে গত বছর সংস্থাগুলো কেবল আবাসন খাতে ৩৫ কোটি ৭০ লাখ, খনি সম্পর্কিত খাতে ৩২ কোটি ১০ লাখ এবং উৎপাদন খাতে ১১ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছে। এ বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পেছনে কভিড-১৯ মহামারীরও আংশিক প্রভাব ছিল। গত মাসে অস্ট্রেলীয় সরকার অস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। এ ব্যবস্থার আওতায় প্রস্তাবিত বিনিয়োগ অস্ট্রেলীয় বিদেশি বিনিয়োগ পর্যালোচনা বোর্ডের তদন্তের অধীনে থাকবে। আগে এ পর্যালোচনা কেবল অসংবেদনশীল লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হতো। যেখানে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বাইরের দেশগুলোর বিনিয়োগকারীরা ২১ কোটি ৩০ লাখ থেকে ৯৩ কোটি ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করত। গত জুলাইয়ে দেশটির সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আইনগুলো ব্যাপক সংস্কারেরও ঘোষণা করেছিল। দেশ দুটির মধ্যে প্রথম বিরোধ শুরু হয় করোনা পাদুর্ভাবের সময়। এরপর থেকে অস্ট্রেলিয়া ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনার পর থেকে এ বিনিয়োগের পরিমাণ কমছে। গত এপ্রিলে চীনের দিকে আঙুল তুলে কভিড-১৯ মহামারীর উৎস খুঁজতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি তদন্তের আহ্বান জানালে দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা শুরু হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে চীন অস্ট্রেলীয় পণ্য যব, গম, ওয়াইন, মাংস, গলদা চিংড়িতে ক্রমাগত শুল্ক কিংবা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে এ শুল্ক ২০০ শতাংশেরও বেশি করা হয়েছিল।