লটারির পরিবর্তে আনুপাতিক হারে আইপিও শেয়ার বণ্টনে প্রস্তুত সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো

আগামী এপ্রিল থেকে যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে সেসব কোম্পানির শেয়ার লটারির মাধ্যমে বণ্টন হবে না। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, লটারির পরিবর্তে আনুপাতিক হারে শেয়ার বণ্টনের নিয়ম প্রয়োগ হবে। বিএসইসির খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, স্থির মূল্য বা ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে সেসব কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য রাখা হবে ২০ শতাংশ শেয়ার। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের জন্য থাকবে ১০ শতাংশ। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের জন্য থাকবে ৭০ শতাংশ শেয়ার। এপ্রিল থেকে এই নিয়মে শেয়ার বণ্টনে প্রস্তুত রয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।

জানা গেছে, এই পদ্ধতিতে শেয়ার বণ্টনের জন্য দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সিডিবিএলকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শেষ করতে সময়ও বেঁধে দেয়া হয়েছে। যদিও শেয়ার বণ্টনের ক্ষেত্রে কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েই বিনিয়োগকারীদের প্রলোভন দেখিয়ে বড় অঙ্কের বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি বন্ধ করারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে খসড়া নীতিমালায়।

বিএসইসির খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চাইলে সেই কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার রাখা হবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য। সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা পাবেন কোম্পানির ৭০ শতাংশ শেয়ার। আরও বলা হয়েছে, নতুন তালিকাভুক্ত হওয়ার শুরুর দুই বছর কোন বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো যাবে না। যদিও সম্প্রতি বিএসইসি ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে সম্প্রতি তালিকাভুক্ত ইজেনারেশন লিমিটেডকে চার বছর এবং বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় নিলাম শেষ করা বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডকে পাঁচ বছর কোন বোনাস লভ্যাংশ দিতে পারবে না বলে শর্ত দিয়েছে।

কোম্পানির নামমাত্র শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। খসড়ায় বলা হয়েছে, কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়াতে চাইলে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। তবে আইপিও ছাড়ার পর যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা থেকে ১৫০ কোটি টাকা হবে, সেসব কোম্পানিকে অন্তত ২০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। একইভাবে যে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকার বেশি হবে, সে কোম্পানিকে অন্তত ১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। খসড়া নীতিমালায় নতুন কোম্পানিকে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির সুযোগ দেয়া হয়েছে।

খসড়া অনুসারে, আইপিওর মাধ্যমে কোন কোম্পানি ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চাইলে সে কোম্পানি ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার প্রাইভেট প্লেসমেন্টে ইস্যু করার সুযোগ পাবে। প্লেসমেন্টের এসব শেয়ার কারা পাবে তা ইস্যুয়ার নির্ধারণ করবে। তবে এসব শেয়ার দুই বছরের জন্য ‘লক-ইন’ বা বিক্রি নিষেধাজ্ঞায় থাকবে। বিএসইসির এই পাবলিক ইস্যু বিধিমালার সংশোধনীর খসড়া সম্পর্কে আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত মতামত দেয়া যাবে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আনুপাতিক হারে শেয়ার বণ্টনের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা প্রয়োজন নেই। কোটা ব্যবস্থা থাকলে সমবণ্টনের যে কথা বলা হচ্ছে, সেটি যথাযথভাবে কার্যকর হবে না।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কোটা দিয়ে বরং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারে এখন কোন লক-ইন নেই। তারা চাইলের শেয়ার বিক্রি করতে পারে। আনুপাতিক হারে শেয়ার বণ্টন করার পর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিজেদের মতো শেয়ার বিক্রি বা ধরে রাখলে হয় শেয়ারের দর অতিমূল্যায়িত হবে নয়তো আইপিও শেয়ারেও লোকসান গুণতে হবে বিনিয়োগাকারীদের।’

এই বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারে আগে লক-ইন ছিল। তখন বলা হয়েছিল বাজারের শেয়ার সরবরাহ হচ্ছে না। লেনদেনের প্রথম দিনই শেয়ারের দর বাড়ত শতভাগ। সে অবস্থার পরিবর্তনের জন্য ‘লক’ বাতিল করা হয়েছে। আগে যেভাবে কোটা ব্যবস্থা ছিল সেটাই থাকবে। কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে কোটা থাকবে। শুধু বণ্টন প্রক্রিয়াটির পরিবর্তন হবে। আগামী এপ্রিল থেকে আইপিও আবেদন করলেই পাওয়া যাবে শেয়ার। এজন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ-সিএসই ও সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি অব বাংলাদেশ-সিডিবিএলকে। এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনায় বিএসইসি জানিয়েছিল, আইপিও আবেদন করলেই শেয়ার পেতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থাকতে হবে অন্তত ২০ হাজার টাকা। আর আবেদন করতে হবে ১০ হাজার বা তার গুণিতক হারে।

রবিবার, ১৪ মার্চ ২০২১ , ২৯ ফাল্গুন ১৪২৭ ২৯ রজব ১৪৪২

লটারির পরিবর্তে আনুপাতিক হারে আইপিও শেয়ার বণ্টনে প্রস্তুত সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

আগামী এপ্রিল থেকে যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে সেসব কোম্পানির শেয়ার লটারির মাধ্যমে বণ্টন হবে না। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, লটারির পরিবর্তে আনুপাতিক হারে শেয়ার বণ্টনের নিয়ম প্রয়োগ হবে। বিএসইসির খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, স্থির মূল্য বা ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে সেসব কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য রাখা হবে ২০ শতাংশ শেয়ার। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের জন্য থাকবে ১০ শতাংশ। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের জন্য থাকবে ৭০ শতাংশ শেয়ার। এপ্রিল থেকে এই নিয়মে শেয়ার বণ্টনে প্রস্তুত রয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।

জানা গেছে, এই পদ্ধতিতে শেয়ার বণ্টনের জন্য দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সিডিবিএলকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শেষ করতে সময়ও বেঁধে দেয়া হয়েছে। যদিও শেয়ার বণ্টনের ক্ষেত্রে কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েই বিনিয়োগকারীদের প্রলোভন দেখিয়ে বড় অঙ্কের বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি বন্ধ করারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে খসড়া নীতিমালায়।

বিএসইসির খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চাইলে সেই কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার রাখা হবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য। সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা পাবেন কোম্পানির ৭০ শতাংশ শেয়ার। আরও বলা হয়েছে, নতুন তালিকাভুক্ত হওয়ার শুরুর দুই বছর কোন বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো যাবে না। যদিও সম্প্রতি বিএসইসি ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে সম্প্রতি তালিকাভুক্ত ইজেনারেশন লিমিটেডকে চার বছর এবং বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় নিলাম শেষ করা বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডকে পাঁচ বছর কোন বোনাস লভ্যাংশ দিতে পারবে না বলে শর্ত দিয়েছে।

কোম্পানির নামমাত্র শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। খসড়ায় বলা হয়েছে, কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়াতে চাইলে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। তবে আইপিও ছাড়ার পর যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা থেকে ১৫০ কোটি টাকা হবে, সেসব কোম্পানিকে অন্তত ২০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। একইভাবে যে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকার বেশি হবে, সে কোম্পানিকে অন্তত ১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। খসড়া নীতিমালায় নতুন কোম্পানিকে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির সুযোগ দেয়া হয়েছে।

খসড়া অনুসারে, আইপিওর মাধ্যমে কোন কোম্পানি ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চাইলে সে কোম্পানি ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার প্রাইভেট প্লেসমেন্টে ইস্যু করার সুযোগ পাবে। প্লেসমেন্টের এসব শেয়ার কারা পাবে তা ইস্যুয়ার নির্ধারণ করবে। তবে এসব শেয়ার দুই বছরের জন্য ‘লক-ইন’ বা বিক্রি নিষেধাজ্ঞায় থাকবে। বিএসইসির এই পাবলিক ইস্যু বিধিমালার সংশোধনীর খসড়া সম্পর্কে আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত মতামত দেয়া যাবে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আনুপাতিক হারে শেয়ার বণ্টনের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা প্রয়োজন নেই। কোটা ব্যবস্থা থাকলে সমবণ্টনের যে কথা বলা হচ্ছে, সেটি যথাযথভাবে কার্যকর হবে না।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কোটা দিয়ে বরং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারে এখন কোন লক-ইন নেই। তারা চাইলের শেয়ার বিক্রি করতে পারে। আনুপাতিক হারে শেয়ার বণ্টন করার পর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিজেদের মতো শেয়ার বিক্রি বা ধরে রাখলে হয় শেয়ারের দর অতিমূল্যায়িত হবে নয়তো আইপিও শেয়ারেও লোকসান গুণতে হবে বিনিয়োগাকারীদের।’

এই বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারে আগে লক-ইন ছিল। তখন বলা হয়েছিল বাজারের শেয়ার সরবরাহ হচ্ছে না। লেনদেনের প্রথম দিনই শেয়ারের দর বাড়ত শতভাগ। সে অবস্থার পরিবর্তনের জন্য ‘লক’ বাতিল করা হয়েছে। আগে যেভাবে কোটা ব্যবস্থা ছিল সেটাই থাকবে। কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে কোটা থাকবে। শুধু বণ্টন প্রক্রিয়াটির পরিবর্তন হবে। আগামী এপ্রিল থেকে আইপিও আবেদন করলেই পাওয়া যাবে শেয়ার। এজন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ-সিএসই ও সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি অব বাংলাদেশ-সিডিবিএলকে। এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনায় বিএসইসি জানিয়েছিল, আইপিও আবেদন করলেই শেয়ার পেতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থাকতে হবে অন্তত ২০ হাজার টাকা। আর আবেদন করতে হবে ১০ হাজার বা তার গুণিতক হারে।