খাদ্যপণ্যে প্রথম রপ্তানি জাহাজ গেল ভারতে

সড়কপথ থেকে ৩৫ শতাংশ খরচ সাশ্রয়ী

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নৌ-বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো নদীপথে বাংলাদেশ খাদ্যপণ্য গেল ভারতের কোলকাতায়। এর ফলে সড়কপথ থেকে ৩৫ শতাংশ খরচ কম হবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। গতকাল নরসিংদীর পলাশের ‘প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ জেটি থেকে ২৫ হাজার কার্টন লিচি ড্রিংক পণ্য নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা করে এমভি আলিফ লাম মীম-৩ নামের একটি কার্গো জাহাজ। বাংলাদেশ-ভারতের নৌ-প্রটোকল পানগাঁও থেকে নারায়ণগঞ্জ হয়ে চাঁদপুর দিয়ে হিজলা-বরিশাল-কাউখালী-মোংলা-খুলনা-চালনা-রায়মংগল-হলদিয়া-কালুঘাট দিয়ে কোলকাতায় পৌঁছতে ৪-৫ দিন সময় লাগবে বলে নৌ-মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নৌ-প্রটোকল চুক্তির আওতায় এটাই ‘বাংলাদেশ-ভারতে নৌপথে খাদ্যপণ্যের প্রথম রপ্তানি জাহাজ’। গতকাল পলাশে ‘প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’-এর জেটিতে এই রপ্তানি জাহাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আনোয়ারুল আশরাফ খান, বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন, নৌ-সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, বআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকে ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী প্রমুখ।

এর আগে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নৌ-প্রতিমন্ত্রী বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে সরকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে রপ্তানি বাণিজ্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নৌপথে সরাসরি ভারতে পণ্য রপ্তানি করতে যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ উদ্যোগের ফলে ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়বে। কারণ নৌপথে পণ্য পরিবহন তুলনামূলক সাশ্রয়ী। তাছাড়া কোলকাতাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে খাদ্যপণ্যসহ বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলাদেশ হতে ভারতে নৌপথে খাদ?্য পণ?্যবাহী জাহাজ প্রেরণের বিষয়টি সারা পৃথিবীতে অবস্থানরত বাংলাদেশের মানুষ গৌরববোধ করবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা পেয়েছি ঠিকই কিন্তু মুক্তির লক্ষ্যে এগোতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুর সময়ে দেশের মধ্যে অর্থনীতি এগিয়ে যেতে শুরু করেছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত?্যার পর সঠিক নেতৃত্ব না থাকায় সবকিছুতে দেশ পিছিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঝুড়ি শুধু ভরে যায় নি, ঝুড়ি ভরে নৌপথে খাদ?্যপণ?্য রপ্তানি করছি।’

অনুষ্ঠানে প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘বিশে^র ১৪৫টি দেশে প্রাণ-আরএফএল’র পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে। কিন্তু ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে প্রাণপণ্য রপ্তানি করা হলেও নৌপথে এটিই প্রথম যাত্রা। সরকার দুই দেশের মধ্যে নৌ-বাণিজ্যে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করলে নৌপথে ব্যবসা আরও সম্প্রসারণ হবে। সড়কপথ থেকে নৌ-পথে পণ্য রপ্তানির ফলে ৩৫ শতাংশ খরচ কম হবে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ প্রথমবারের মতো নৌপথে ভারতে পণ্য রপ্তানি করতে যাচ্ছে। দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ প্রাণ-আরএলএল দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ গ্রুপের পণ্য বিশে^র ১৪৫টি দেশে নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে। নরসিংদীর পলাশে প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ক্যান্ডি, বিস্কুট, বেকারি, কনফেকশনারি, ফ্রুটডিংক, জুস, বেভারেজ, হিমায়িত খাদ্যসহ নানা ধরনের খাদ্যদ্রব্য এবং পিভিসিপাইপ, চেয়ার, টেবিলসহ নানা উৎপাদিত পণ্যের অধিকাংশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সড়কপথের মাধ্যমে রপ্তানি করা হয়। এবারই প্রথম প্রাণ গ্রুপ নৌপথে পণ্য রপ্তানি করতে যাচ্ছে।

নৌপথে খাদ্যপণ্যের প্রথম চালান হিসেবে প্রাণ গ্রুপের পণ্য ২৫ হাজার কার্টন লিচি ড্রিংক নরসিংদীর পলাশে অবস্থিত প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক থেকে গতকাল রওনা হয়ে কোলকাতা বন্দরের টিটি শেডে গিয়ে পৌঁছাবে। এটি স্থল বন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি করলে ২৫টি ট্রাকের প্রয়োজন হতো। প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রাণ গ্রুপের রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৭ সালে ত্রিপুরায় চানাচুর রপ্তানির মাধ্যমে। সেখান থেকে এখন ভারতের ২৮টি রাজ্যের প্রতিটিতেই প্রাণ পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।

বুধবার, ১৭ মার্চ ২০২১ , ৩ চৈত্র ১৪২৭ ২ শাবান ১৪৪২

খাদ্যপণ্যে প্রথম রপ্তানি জাহাজ গেল ভারতে

সড়কপথ থেকে ৩৫ শতাংশ খরচ সাশ্রয়ী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নৌ-বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো নদীপথে বাংলাদেশ খাদ্যপণ্য গেল ভারতের কোলকাতায়। এর ফলে সড়কপথ থেকে ৩৫ শতাংশ খরচ কম হবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। গতকাল নরসিংদীর পলাশের ‘প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ জেটি থেকে ২৫ হাজার কার্টন লিচি ড্রিংক পণ্য নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা করে এমভি আলিফ লাম মীম-৩ নামের একটি কার্গো জাহাজ। বাংলাদেশ-ভারতের নৌ-প্রটোকল পানগাঁও থেকে নারায়ণগঞ্জ হয়ে চাঁদপুর দিয়ে হিজলা-বরিশাল-কাউখালী-মোংলা-খুলনা-চালনা-রায়মংগল-হলদিয়া-কালুঘাট দিয়ে কোলকাতায় পৌঁছতে ৪-৫ দিন সময় লাগবে বলে নৌ-মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নৌ-প্রটোকল চুক্তির আওতায় এটাই ‘বাংলাদেশ-ভারতে নৌপথে খাদ্যপণ্যের প্রথম রপ্তানি জাহাজ’। গতকাল পলাশে ‘প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’-এর জেটিতে এই রপ্তানি জাহাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আনোয়ারুল আশরাফ খান, বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন, নৌ-সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, বআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকে ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী প্রমুখ।

এর আগে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নৌ-প্রতিমন্ত্রী বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে সরকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে রপ্তানি বাণিজ্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নৌপথে সরাসরি ভারতে পণ্য রপ্তানি করতে যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ উদ্যোগের ফলে ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়বে। কারণ নৌপথে পণ্য পরিবহন তুলনামূলক সাশ্রয়ী। তাছাড়া কোলকাতাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে খাদ্যপণ্যসহ বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলাদেশ হতে ভারতে নৌপথে খাদ?্য পণ?্যবাহী জাহাজ প্রেরণের বিষয়টি সারা পৃথিবীতে অবস্থানরত বাংলাদেশের মানুষ গৌরববোধ করবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা পেয়েছি ঠিকই কিন্তু মুক্তির লক্ষ্যে এগোতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুর সময়ে দেশের মধ্যে অর্থনীতি এগিয়ে যেতে শুরু করেছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত?্যার পর সঠিক নেতৃত্ব না থাকায় সবকিছুতে দেশ পিছিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঝুড়ি শুধু ভরে যায় নি, ঝুড়ি ভরে নৌপথে খাদ?্যপণ?্য রপ্তানি করছি।’

অনুষ্ঠানে প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘বিশে^র ১৪৫টি দেশে প্রাণ-আরএফএল’র পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে। কিন্তু ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে প্রাণপণ্য রপ্তানি করা হলেও নৌপথে এটিই প্রথম যাত্রা। সরকার দুই দেশের মধ্যে নৌ-বাণিজ্যে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করলে নৌপথে ব্যবসা আরও সম্প্রসারণ হবে। সড়কপথ থেকে নৌ-পথে পণ্য রপ্তানির ফলে ৩৫ শতাংশ খরচ কম হবে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ প্রথমবারের মতো নৌপথে ভারতে পণ্য রপ্তানি করতে যাচ্ছে। দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ প্রাণ-আরএলএল দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ গ্রুপের পণ্য বিশে^র ১৪৫টি দেশে নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে। নরসিংদীর পলাশে প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ক্যান্ডি, বিস্কুট, বেকারি, কনফেকশনারি, ফ্রুটডিংক, জুস, বেভারেজ, হিমায়িত খাদ্যসহ নানা ধরনের খাদ্যদ্রব্য এবং পিভিসিপাইপ, চেয়ার, টেবিলসহ নানা উৎপাদিত পণ্যের অধিকাংশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সড়কপথের মাধ্যমে রপ্তানি করা হয়। এবারই প্রথম প্রাণ গ্রুপ নৌপথে পণ্য রপ্তানি করতে যাচ্ছে।

নৌপথে খাদ্যপণ্যের প্রথম চালান হিসেবে প্রাণ গ্রুপের পণ্য ২৫ হাজার কার্টন লিচি ড্রিংক নরসিংদীর পলাশে অবস্থিত প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক থেকে গতকাল রওনা হয়ে কোলকাতা বন্দরের টিটি শেডে গিয়ে পৌঁছাবে। এটি স্থল বন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি করলে ২৫টি ট্রাকের প্রয়োজন হতো। প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রাণ গ্রুপের রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৭ সালে ত্রিপুরায় চানাচুর রপ্তানির মাধ্যমে। সেখান থেকে এখন ভারতের ২৮টি রাজ্যের প্রতিটিতেই প্রাণ পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।