করোনার মধ্যেও চমক দেখাচ্ছে চীন ৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস

করোনার ধাক্কায় যখন সারাবিশ্ব টিকে থাকার লড়াই করছে ঠিক সেই সময় প্রায় ৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিচ্ছে। বছর শেষে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ। সিজিটিএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটি বর্তমানে অর্থনীতির সব সূচক প্রবৃদ্ধির রেকর্ড করে চলেছে। এজন্য বিশ্লেষকরাও চলতি বছর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হারের পূর্বাভাস বারবার বৃদ্ধি করছেন। সবশেষ সুইজারল্যান্ডের মাল্টিন্যাশনাল বিনিয়োগ ব্যাংক ইউবিএস চীনের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৯ শতাংশে উন্নীত করেছে। এর আগে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল এ বিনিয়োগ ব্যাংক।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইউবিএস প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বৃদ্ধির পেছনে চীনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিস্তৃত হওয়া এবং কভিড-১৯ মহামারী থেকে শক্তিশালী বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি উল্লেখ করেছে। বিনিয়োগ ব্যাংকটি একটি প্রতিবেদনে বলেছে, বাইডেন প্রশাসনের স্বাক্ষরিত ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও বৈশ্বিক অর্থনীতি আরও দ্রুত পুনরুদ্ধার হওয়া উচিত। এটি চীনা পণ্যের চাহিদা বাড়িয়ে তুলবে এবং দেশটির রপ্তানি আরও বেড়ে যাবে। তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে শি জিনপিংয়ের সরকার। চলতি বছর সরকার ৬ শতাংশের ওপর জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ভ্রমণ, রেস্তোরাঁ ও বিনোদনমূলক কার্যক্রমের মতো ভোক্তাব্যয়ে এখনও পিছিয়ে আছে দেশটি।

চীনের শুল্ক কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়কালে চীনের রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেকর্ড ৬০ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৪৬ হাজার ৮৯০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এটা দেশটির দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি। অন্যদিকে আমদানি ২২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ৩৬ হাজার ৫৬০ কোটি ডলারে পৌঁছে যায়। সামগ্রিকভাবে এ সময়ে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ১০ হাজার ৩৩০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। যেখানে গত বছরের একই সময়ে দেশটি ৭১০ কোটি ডলার বাণিজ্য ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছিল। প্রধান অর্থনীতিগুলো পুনরুদ্ধারের ফলে এ সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চীনা পণ্যের চালান আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ৮৭ শতাংশ এবং ৬৩ শতাংশ বেড়েছে। ইউবিএস আশা করছে, ২০২১ সালে ডলারের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি ১৬ শতাংশ বাড়বে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও বৈশ্বিক অর্থনীতি বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি চীনের আমদানি আগের বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বাড়বে। এ উভয় পূর্বাভাস আগের দেয়া প্রাক্কলনের তুলনায় বেশি।

চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত সরকারি ডাটায় অর্থনীতির মূল সূচকগুলোয় অভূতপূর্ব বৃদ্ধির হার ৩০ শতাংশেরও বেশি দেখা যায়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়কালে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় শিল্প উৎপাদন ৩৫ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশা ৩২ দশমিক ২ শতাংশের চেয়েও বেশি। ব্লুমবার্গের জরিপে অর্থনীতিবিদরা যেখানে ৩২ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, সেখানে প্রথম দুই মাসে দেশটিতে খুচরা বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। তবে গত দুই বছরের গড়ের তুলনায় খুচরা বিক্রি বেড়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। একই সময়ে দুই বছরের গড়ের তুলনায় শিল্প উৎপাদন বেড়েছে ৮ দশমিক ১ শতাংশ।

প্রথম দুই মাসে চীনের ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজার সূচক ৫০ পয়েন্টের ওপরে ছিল। এটি ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপকে নির্দেশ করে। বিশ্বজুড়ে পণ্যের দাম ও চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে উৎপাদক পর্যায়ের মূল্য বেড়েছে। মহামারীজনিত কারণে ২০২০ সালের শুরুর দিকে একেবারে নিম্নস্তর থেকে দেশটির অর্থনৈতিক কার্যক্রম তীব্রভাবে প্রত্যাবর্তন করেছিল। ইউবিএস আশা করছে, ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

শনিবার, ২০ মার্চ ২০২১ , ৬ চৈত্র ১৪২৭ ৫ শাবান ১৪৪২

করোনার মধ্যেও চমক দেখাচ্ছে চীন ৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস

সংবাদ ডেস্ক

image

করোনার ধাক্কায় যখন সারাবিশ্ব টিকে থাকার লড়াই করছে ঠিক সেই সময় প্রায় ৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিচ্ছে। বছর শেষে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ। সিজিটিএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটি বর্তমানে অর্থনীতির সব সূচক প্রবৃদ্ধির রেকর্ড করে চলেছে। এজন্য বিশ্লেষকরাও চলতি বছর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হারের পূর্বাভাস বারবার বৃদ্ধি করছেন। সবশেষ সুইজারল্যান্ডের মাল্টিন্যাশনাল বিনিয়োগ ব্যাংক ইউবিএস চীনের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৯ শতাংশে উন্নীত করেছে। এর আগে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল এ বিনিয়োগ ব্যাংক।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইউবিএস প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বৃদ্ধির পেছনে চীনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিস্তৃত হওয়া এবং কভিড-১৯ মহামারী থেকে শক্তিশালী বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি উল্লেখ করেছে। বিনিয়োগ ব্যাংকটি একটি প্রতিবেদনে বলেছে, বাইডেন প্রশাসনের স্বাক্ষরিত ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও বৈশ্বিক অর্থনীতি আরও দ্রুত পুনরুদ্ধার হওয়া উচিত। এটি চীনা পণ্যের চাহিদা বাড়িয়ে তুলবে এবং দেশটির রপ্তানি আরও বেড়ে যাবে। তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে শি জিনপিংয়ের সরকার। চলতি বছর সরকার ৬ শতাংশের ওপর জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ভ্রমণ, রেস্তোরাঁ ও বিনোদনমূলক কার্যক্রমের মতো ভোক্তাব্যয়ে এখনও পিছিয়ে আছে দেশটি।

চীনের শুল্ক কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়কালে চীনের রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেকর্ড ৬০ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৪৬ হাজার ৮৯০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এটা দেশটির দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি। অন্যদিকে আমদানি ২২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ৩৬ হাজার ৫৬০ কোটি ডলারে পৌঁছে যায়। সামগ্রিকভাবে এ সময়ে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ১০ হাজার ৩৩০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। যেখানে গত বছরের একই সময়ে দেশটি ৭১০ কোটি ডলার বাণিজ্য ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছিল। প্রধান অর্থনীতিগুলো পুনরুদ্ধারের ফলে এ সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চীনা পণ্যের চালান আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ৮৭ শতাংশ এবং ৬৩ শতাংশ বেড়েছে। ইউবিএস আশা করছে, ২০২১ সালে ডলারের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি ১৬ শতাংশ বাড়বে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও বৈশ্বিক অর্থনীতি বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি চীনের আমদানি আগের বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বাড়বে। এ উভয় পূর্বাভাস আগের দেয়া প্রাক্কলনের তুলনায় বেশি।

চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত সরকারি ডাটায় অর্থনীতির মূল সূচকগুলোয় অভূতপূর্ব বৃদ্ধির হার ৩০ শতাংশেরও বেশি দেখা যায়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়কালে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় শিল্প উৎপাদন ৩৫ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশা ৩২ দশমিক ২ শতাংশের চেয়েও বেশি। ব্লুমবার্গের জরিপে অর্থনীতিবিদরা যেখানে ৩২ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, সেখানে প্রথম দুই মাসে দেশটিতে খুচরা বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। তবে গত দুই বছরের গড়ের তুলনায় খুচরা বিক্রি বেড়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। একই সময়ে দুই বছরের গড়ের তুলনায় শিল্প উৎপাদন বেড়েছে ৮ দশমিক ১ শতাংশ।

প্রথম দুই মাসে চীনের ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজার সূচক ৫০ পয়েন্টের ওপরে ছিল। এটি ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপকে নির্দেশ করে। বিশ্বজুড়ে পণ্যের দাম ও চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে উৎপাদক পর্যায়ের মূল্য বেড়েছে। মহামারীজনিত কারণে ২০২০ সালের শুরুর দিকে একেবারে নিম্নস্তর থেকে দেশটির অর্থনৈতিক কার্যক্রম তীব্রভাবে প্রত্যাবর্তন করেছিল। ইউবিএস আশা করছে, ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।