আমদানিকৃত মানহীন ইলেকট্রনিক্স পণ্যে সয়লাব দেশের বাজার

নীতিমালা সংস্কারের সুপারিশ

সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ দুর্বলতায় অবাধে আমদানি হচ্ছে নিম্নমানের ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় শিল্প। বাড়ছে কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ। এই খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশীয় শিল্প রক্ষায় বিদ্যমান অসম নীতিমালা সংস্কার দরকার। তা না হলে দেশি শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।

ইলেকট্রনিক্স খাতের উদ্যোক্তারা জানান, বর্তমান সরকারের সার্বিক সহযোগিতা ও দেশীয় উদ্যোক্তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশে ইলেকট্রিক, ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল শিল্পে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। দেশেই এখন গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। এসব পণ্য দামেও সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব ও দেশীয় আবহাওয়া উপযোগী। সরকারের শিল্পনীতিতে আমদানি বিকল্প স্থানীয় শিল্পের কথা গুরুত্ব দেয়া হলেও কিছুক্ষেত্রে বৈষম্য রয়ে গেছে। যে কারণে বিদেশি মানহীন পণ্য সহজেই ঢুকতে পারছে।

স্থানীয় উদ্যোক্তাদের দাবি, সরকারের সার্বিক সহযোগিতা ও দেশীয় উদ্যোক্তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অত্যাধুনিক মেশিনারি সম্ব^লিত আন্তর্জাতিক মানের ফ্যাক্টরিসমূহে এখন এদেশেই এয়ারকন্ডিশনার, রেফ্রিজারেটর-ফ্রিজার, কম্প্রেসার, টেলিভিশন, প্যাসেঞ্জার লিফ্ট, কার্গো লিফ্ট, ইলেকট্রিক্যাল সুইচ-সকেট, ফ্যান, এলইডি লাইট-বাল্ব, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ-ডেস্কটপ কম্পিউটার ও ইলেকট্রিক্যাল হোম এবং কিচেন অ্যাপ্লায়েন্সসহ বিভিন্ন কিছু উৎপাদিত হচ্ছে। এসব পণ্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, দামে সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব। দেশ এখন উল্লিখিত পণ্যসমূহ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

বাংলাদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এয়ারকন্ডিশনার, রেফ্রিজারেটর-ফ্রিজার, কম্প্রেসার, কম্প্রেসার পার্টস ও টেলিভিশন দেশের গন্ডি পার হয়ে জার্মানি, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, স্লোভাক রিপাবলিক, গ্রিস, স্লোভেনিয়া, রোমানিয়া, তুরস্ক, ভারত, ইয়েমেন, লেবানন, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, উগান্ডা, সুদান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, ইস্ট তিমুর, সিসিলি ও মালাওয়িসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে খ্যাতনামা বিভিন্ন ইউরোপিয়ান ও কোরিয়ান ব্র্যান্ডে এদেশে ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন হয়ে তা রপ্তানি হচ্ছে। অনেক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড/প্রতিষ্ঠান ও দেশীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডে আমাদের দেশীয় ফ্যাক্টরি হতে আন্তর্জাতিকমান বজায় রেখে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য তৈরি করে নিচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও সাশ্রয় করার পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলাম বলেন, এদেশের আবহাওয়া ও বৈদ্যুতিক অবকাঠামো বিবেচনা করে উল্লিখিত পণ্যসমূহের মধ্যে যেসব পণ্যের দেশীয় মান নিয়ন্ত্রণ সনদ (বিএসটিআই) দেশীয় উৎপাদনকারী বা ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক রয়েছে। ওই পণ্যসমূহের আমদানি পর্যায়ে বিদেশি ব্র্যান্ডসমূহেরও দেশীয় মান নিয়ন্ত্রণ সনদ (বিএসটিআই) বাধ্যতামূলক করা সময়ের দাবি।

উদ্যোক্তারা জানান, বিদেশে কোন পণ্য রপ্তানি করতে গেলে সেই দেশের মান নিয়ন্ত্রণ সনদ নেয়া আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। কিন্তু আমাদের দেশে যেকোন পণ্যই খুব সহজে আমদানি হয় কোনরূপ দেশীয় মান নিয়ন্ত্রণ সনদ ছাড়াই। ফলে নি¤œমানের পণ্যে দেশ সয়লাব হয়ে বিপুল অর্থের অপচয় ও পরিবেশের ক্ষতি করছে। পার্শ¦বর্তী দেশসহ যেকোন দেশে পণ্য রপ্তানি করতে গেলে আমাদের নিয়মতান্ত্রিকতার বাইরেও বিভিন্ন শুল্ক ও অশুল্ক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। কারণ তারা দেশীয় শিল্প বিকাশ ও পরিবেশের স্বার্থে আমদানি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতামূলক ব্যবস্থা করে রেখেছে। স্থানীয় উৎপাদনকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও আমদানি ব্যয় কমানোর জন্য স্থানীয় শিল্প সুরক্ষার জন্য আমদানি নীতিতে পরিবর্তন এনে একই রকম পদক্ষেপ আমাদের স্থানীয় শিল্পের স্বার্থে অতীব জরুরি।

বিপুল জনসম্পদের এই দেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদার যোগান দেয়ার সুযোগ যদি দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ পায়, তাহলে মানসম্মত পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে উৎপাদন করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ করে আরও ব্যাপক হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে শিল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

রবিবার, ২১ মার্চ ২০২১ , ৭ চৈত্র ১৪২৭ ৬ শাবান ১৪৪২

আমদানিকৃত মানহীন ইলেকট্রনিক্স পণ্যে সয়লাব দেশের বাজার

নীতিমালা সংস্কারের সুপারিশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ দুর্বলতায় অবাধে আমদানি হচ্ছে নিম্নমানের ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় শিল্প। বাড়ছে কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ। এই খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশীয় শিল্প রক্ষায় বিদ্যমান অসম নীতিমালা সংস্কার দরকার। তা না হলে দেশি শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।

ইলেকট্রনিক্স খাতের উদ্যোক্তারা জানান, বর্তমান সরকারের সার্বিক সহযোগিতা ও দেশীয় উদ্যোক্তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশে ইলেকট্রিক, ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল শিল্পে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। দেশেই এখন গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। এসব পণ্য দামেও সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব ও দেশীয় আবহাওয়া উপযোগী। সরকারের শিল্পনীতিতে আমদানি বিকল্প স্থানীয় শিল্পের কথা গুরুত্ব দেয়া হলেও কিছুক্ষেত্রে বৈষম্য রয়ে গেছে। যে কারণে বিদেশি মানহীন পণ্য সহজেই ঢুকতে পারছে।

স্থানীয় উদ্যোক্তাদের দাবি, সরকারের সার্বিক সহযোগিতা ও দেশীয় উদ্যোক্তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অত্যাধুনিক মেশিনারি সম্ব^লিত আন্তর্জাতিক মানের ফ্যাক্টরিসমূহে এখন এদেশেই এয়ারকন্ডিশনার, রেফ্রিজারেটর-ফ্রিজার, কম্প্রেসার, টেলিভিশন, প্যাসেঞ্জার লিফ্ট, কার্গো লিফ্ট, ইলেকট্রিক্যাল সুইচ-সকেট, ফ্যান, এলইডি লাইট-বাল্ব, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ-ডেস্কটপ কম্পিউটার ও ইলেকট্রিক্যাল হোম এবং কিচেন অ্যাপ্লায়েন্সসহ বিভিন্ন কিছু উৎপাদিত হচ্ছে। এসব পণ্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, দামে সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব। দেশ এখন উল্লিখিত পণ্যসমূহ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

বাংলাদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এয়ারকন্ডিশনার, রেফ্রিজারেটর-ফ্রিজার, কম্প্রেসার, কম্প্রেসার পার্টস ও টেলিভিশন দেশের গন্ডি পার হয়ে জার্মানি, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, স্লোভাক রিপাবলিক, গ্রিস, স্লোভেনিয়া, রোমানিয়া, তুরস্ক, ভারত, ইয়েমেন, লেবানন, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, উগান্ডা, সুদান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, ইস্ট তিমুর, সিসিলি ও মালাওয়িসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে খ্যাতনামা বিভিন্ন ইউরোপিয়ান ও কোরিয়ান ব্র্যান্ডে এদেশে ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন হয়ে তা রপ্তানি হচ্ছে। অনেক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড/প্রতিষ্ঠান ও দেশীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডে আমাদের দেশীয় ফ্যাক্টরি হতে আন্তর্জাতিকমান বজায় রেখে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য তৈরি করে নিচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও সাশ্রয় করার পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলাম বলেন, এদেশের আবহাওয়া ও বৈদ্যুতিক অবকাঠামো বিবেচনা করে উল্লিখিত পণ্যসমূহের মধ্যে যেসব পণ্যের দেশীয় মান নিয়ন্ত্রণ সনদ (বিএসটিআই) দেশীয় উৎপাদনকারী বা ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক রয়েছে। ওই পণ্যসমূহের আমদানি পর্যায়ে বিদেশি ব্র্যান্ডসমূহেরও দেশীয় মান নিয়ন্ত্রণ সনদ (বিএসটিআই) বাধ্যতামূলক করা সময়ের দাবি।

উদ্যোক্তারা জানান, বিদেশে কোন পণ্য রপ্তানি করতে গেলে সেই দেশের মান নিয়ন্ত্রণ সনদ নেয়া আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। কিন্তু আমাদের দেশে যেকোন পণ্যই খুব সহজে আমদানি হয় কোনরূপ দেশীয় মান নিয়ন্ত্রণ সনদ ছাড়াই। ফলে নি¤œমানের পণ্যে দেশ সয়লাব হয়ে বিপুল অর্থের অপচয় ও পরিবেশের ক্ষতি করছে। পার্শ¦বর্তী দেশসহ যেকোন দেশে পণ্য রপ্তানি করতে গেলে আমাদের নিয়মতান্ত্রিকতার বাইরেও বিভিন্ন শুল্ক ও অশুল্ক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। কারণ তারা দেশীয় শিল্প বিকাশ ও পরিবেশের স্বার্থে আমদানি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতামূলক ব্যবস্থা করে রেখেছে। স্থানীয় উৎপাদনকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও আমদানি ব্যয় কমানোর জন্য স্থানীয় শিল্প সুরক্ষার জন্য আমদানি নীতিতে পরিবর্তন এনে একই রকম পদক্ষেপ আমাদের স্থানীয় শিল্পের স্বার্থে অতীব জরুরি।

বিপুল জনসম্পদের এই দেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদার যোগান দেয়ার সুযোগ যদি দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ পায়, তাহলে মানসম্মত পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে উৎপাদন করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ করে আরও ব্যাপক হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে শিল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।