করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব ইআরএফের

করমুক্ত আয়সীমা একলাখ টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে অর্থনীতিবিষয়ক প্রতিবেদকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোরটার্স ফোরাম (ইআরএফ)। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় এই প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারী আরও জটিল আকার ধারণ করার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। আসছে অর্থবছরে সাধারণ মানুষের আয় চলতি অর্থবছরের চেয়েও কমে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে কম আয়ের মানুষকে কিছু স্বস্তি দিতে আমরা করমুক্ত আয় সীমা ৪ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করছি।’

৬০ বছরের বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই সীমা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে ইআরএফ। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে করপোরেট করহার ৫ শতাংশ কমানোর সুপারিশ করেন ইআরএফ সভাপতি। শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করপোরেট কর ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ২৫ শতাংশ।

ভাড়া আদায়কারী বাড়িওয়ালাদের করের আওতায় আনার প্রস্তাব দিয়ে ইআরএফ সভাপতি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন বা স্থানীয় নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে এটি করা যেতে পারে।’

আগামী অর্থবছর থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণ আরও বাড়ানোর জন্য উপজেলা পর্যায়ে কর আহরণ অবকাঠামো তৈরি করে করজাল সম্প্রসারণের তাগাদা দেন এই সাংবাদিক নেতা। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এনবিআরকে প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে রপ্তানি বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রপ্তানি বাণিজ্যে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তিতে (পিটিএ) যেতে হবে। এজন্য সম্ভাব্য শুল্ক ছাড়ের লক্ষ্যে এনবিআরকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।’

এছাড়া কর আদায়ে সংস্কার কার্যক্রমকে গতিশীল করা, বিনিয়োগ আকর্ষণে কর সংক্রান্ত জটিলতা কমানো, পাবলিক-প্রাইভেট কর কমিটি গঠন করা, প্রতি তিন মাস অন্তর রাজস্ব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বিষয়ে পর্যালোচনা বৈঠকসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেন।

কালো টাকা বিনিয়োগের বিদ্যমান নীতিমালা নিয়মিত কর দাতাদের নিরুৎসাহিত এবং অবৈধ আয়কে উৎসাহিত করছে উল্লেখ করে তিনি কেবল বৈধভাবে উপার্জিত অপ্রদর্শিত আয় নির্ধারণ, ও জরিমানাসাপেক্ষে বৈধ করতে আইনে পরিবর্তন আনার প্রস্তাবও দেয় ইআরএফ।

এনবিআরে পৃথক মানি লন্ডারিং ইউনিট স্থাপনের দাবি জানিয়ে ইআরএফ বলছে, বন্ড লাইসেন্সের অপব্যবহার কিংবা মিথ্যা ঘোষণায় বিদেশে অর্থপাচার হরহামেশাই চোখে পড়ছে। বর্তমানে দেশ থেকে বাণিজ্যনির্ভর অর্থপাচার বেশি হয়। ২০১৫ সালে মানি লন্ডারিং আইনে ক্ষমতা পাওয়ার পর এনবিআরের কর্মপরিসর কেবল রাজস্ব আদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; বরং বিদেশে যারা টাকা পাচার করছে তাদের সাজা দেওয়ার ক্ষমতাও পেয়েছে। এ কারণে আমাদের প্রস্তাব থাকবে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানি লন্ডারিং ইউনিট গড়ে তোলা এবং লোকবল নিয়োগ দেওয়া।

বাজেটে দেশীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে স্থানীয় শিল্পকে গুরুত্ব দিতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কোন কোন খাতে সহায়তা দিলে স্থানীয় উৎপাদন বাড়বে এবং পরনির্ভরশীলতা কমে আসবে সে বিষয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় শিল্পকে উৎপাদনে সহায়তা দিতে চাই। কোন জায়গায় সহায়তা দিলে দেশীয় অর্থনীতি গতিশীল হবে এবং ভিন্ন ভিন্ন পণ্য উৎপাদন যাতে বাড়ে, সেটি দেখছি।’

এ সময় তিনি রাজস্ব আদায় বাড়াতে এনবিআরের নেয়া কিছু পদক্ষেপও তুলে ধরেন। বিশেষত করযোগ্য আয় রয়েছে, কিন্তু করের আওতার বাইরে রয়েছেন এমন ব্যক্তিদের করের আওতায় আনতে অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এনবিআর সংযুক্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি।

শুক্রবার, ২৬ মার্চ ২০২১ , ১২ চৈত্র ১৪২৭ ১১ শাবান ১৪৪২

করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব ইআরএফের

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

করমুক্ত আয়সীমা একলাখ টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে অর্থনীতিবিষয়ক প্রতিবেদকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোরটার্স ফোরাম (ইআরএফ)। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় এই প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারী আরও জটিল আকার ধারণ করার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। আসছে অর্থবছরে সাধারণ মানুষের আয় চলতি অর্থবছরের চেয়েও কমে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে কম আয়ের মানুষকে কিছু স্বস্তি দিতে আমরা করমুক্ত আয় সীমা ৪ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করছি।’

৬০ বছরের বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই সীমা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে ইআরএফ। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে করপোরেট করহার ৫ শতাংশ কমানোর সুপারিশ করেন ইআরএফ সভাপতি। শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করপোরেট কর ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ২৫ শতাংশ।

ভাড়া আদায়কারী বাড়িওয়ালাদের করের আওতায় আনার প্রস্তাব দিয়ে ইআরএফ সভাপতি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন বা স্থানীয় নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে এটি করা যেতে পারে।’

আগামী অর্থবছর থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণ আরও বাড়ানোর জন্য উপজেলা পর্যায়ে কর আহরণ অবকাঠামো তৈরি করে করজাল সম্প্রসারণের তাগাদা দেন এই সাংবাদিক নেতা। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এনবিআরকে প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে রপ্তানি বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রপ্তানি বাণিজ্যে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তিতে (পিটিএ) যেতে হবে। এজন্য সম্ভাব্য শুল্ক ছাড়ের লক্ষ্যে এনবিআরকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।’

এছাড়া কর আদায়ে সংস্কার কার্যক্রমকে গতিশীল করা, বিনিয়োগ আকর্ষণে কর সংক্রান্ত জটিলতা কমানো, পাবলিক-প্রাইভেট কর কমিটি গঠন করা, প্রতি তিন মাস অন্তর রাজস্ব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বিষয়ে পর্যালোচনা বৈঠকসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেন।

কালো টাকা বিনিয়োগের বিদ্যমান নীতিমালা নিয়মিত কর দাতাদের নিরুৎসাহিত এবং অবৈধ আয়কে উৎসাহিত করছে উল্লেখ করে তিনি কেবল বৈধভাবে উপার্জিত অপ্রদর্শিত আয় নির্ধারণ, ও জরিমানাসাপেক্ষে বৈধ করতে আইনে পরিবর্তন আনার প্রস্তাবও দেয় ইআরএফ।

এনবিআরে পৃথক মানি লন্ডারিং ইউনিট স্থাপনের দাবি জানিয়ে ইআরএফ বলছে, বন্ড লাইসেন্সের অপব্যবহার কিংবা মিথ্যা ঘোষণায় বিদেশে অর্থপাচার হরহামেশাই চোখে পড়ছে। বর্তমানে দেশ থেকে বাণিজ্যনির্ভর অর্থপাচার বেশি হয়। ২০১৫ সালে মানি লন্ডারিং আইনে ক্ষমতা পাওয়ার পর এনবিআরের কর্মপরিসর কেবল রাজস্ব আদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; বরং বিদেশে যারা টাকা পাচার করছে তাদের সাজা দেওয়ার ক্ষমতাও পেয়েছে। এ কারণে আমাদের প্রস্তাব থাকবে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানি লন্ডারিং ইউনিট গড়ে তোলা এবং লোকবল নিয়োগ দেওয়া।

বাজেটে দেশীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে স্থানীয় শিল্পকে গুরুত্ব দিতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কোন কোন খাতে সহায়তা দিলে স্থানীয় উৎপাদন বাড়বে এবং পরনির্ভরশীলতা কমে আসবে সে বিষয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় শিল্পকে উৎপাদনে সহায়তা দিতে চাই। কোন জায়গায় সহায়তা দিলে দেশীয় অর্থনীতি গতিশীল হবে এবং ভিন্ন ভিন্ন পণ্য উৎপাদন যাতে বাড়ে, সেটি দেখছি।’

এ সময় তিনি রাজস্ব আদায় বাড়াতে এনবিআরের নেয়া কিছু পদক্ষেপও তুলে ধরেন। বিশেষত করযোগ্য আয় রয়েছে, কিন্তু করের আওতার বাইরে রয়েছেন এমন ব্যক্তিদের করের আওতায় আনতে অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এনবিআর সংযুক্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি।