শত শত যুবকের কোটি টাকা নিয়ে উধাও সিডিএইচআরএস

সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ

যশোরের কেশবপুরে একটি প্রতারক চক্র ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস সোসাইটির নামে যশোর, খুলনা জেলার শত শত যুবকের কাছ থেকে পৌনে এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে। দীর্ঘ দিনেও টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে গত সোমবার ভুক্তভোগী উপজেলার মাদারডাঙ্গা গ্রামের ওলিয়ার রহমানের ছেলে মেহেদী হাসান কেশবপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

লিখিত বক্তব্য পাঠকালে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস সোসাইটি (সিডিএইচআরএস) নামের একটি বেসরকারি সংগঠনের একাধিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। উপজেলার সাহাপুর মেহেরুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ও দোরমুটিয়া গ্রামের মনিরুজ্জামান মনি ওই সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি পরিচয় দিয়ে দোরমুটিয়া বাজারে একটি দোকান ঘরে ওই সংগঠনের সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে কর্মী নিয়োগসহ ঋণদান কার্যক্রম শুরু করেন। এ সময় তিনি সংগঠনের যাবতীয় কাজের ঠিকাদারের দায়িত্ব দেন দোরমুটিয়া গ্রামের ইসমাইল খাঁর ছেলে মুনছুর রহমানের মেসার্স শোয়াইব এন্টারপ্রাইজকে। সহকারি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় মুনছুর রহমানের ভাই আনিছুর রহমান ও তেঘরী গ্রামের আব্দুল আহাদের ছেলে মারুফুল হককে। ওই প্রতারক চক্রের প্রধান মনিরুজ্জামান মনি ও মুনছুর রহমান যোগসাজসে ২৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা বেতন দেয়ার আশ্বাস দিয়ে এ উপজেলার ২শ’ লোকের প্রতিজনের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা জামানতের নামে ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এর মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী পদে সাড়ে ১২ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা বেতনের আশ্বাস দেয়া হয়। খুলনা বিভাগে ৪ হাজার ৮৪০টি প্রি-প্রাইমারি স্কুলে চাকরির কথা বলে ৫৩ হাজার ২৪০ জনের কাছ থেকে স্কুল প্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেয়। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক পদে ১৮ হাজার, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ১৫ হাজার টাকা ও পিয়ন পদে ১২ হাজার টাকা বেতনের আশ্বাস দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, খুলনা বিভাগীয় সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি পাওয়ার হাউজিং নামের এক কোম্পানির টিনশেড ঘর দেয়ার কথা বলে যশোর ও খুলনা জেলায় ১২শ’ গরিব অসহায় পরিবারের প্রতিজনের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৩ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত পাথরঘাটা গ্রামের সুবহান সরদার অভিযোগ করেন, মনিরুজ্জামান মনি আমার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা জামানত নিয়ে চাকরি দেয়। পরবর্তীতে তার মাধ্যমে যে সমস্ত ভূক্তভোগী টাকা দিয়েছিল টাকা ফেরৎ দিতে না পারায় তারা আমার ৪টি দুধের গভী ধরে নিয়ে গেছে। সাগরদত্তকাটি গ্রামের হতদরিদ্র আকাম গোলদার, পাথরঘাটা গ্রামের হায়দার আলী, নতুন মূল গ্রামের তরিকুল ইসলাম, আব্দুল গফুর টাকা দিয়েও ঘর না পেয়ে বর্তমান পলিথিনের ছাউনির টঙঘরে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এছাড়া বিদেশে ৫৩ দিনের প্রশিক্ষণের কথা বলে ৪১ জনের নিজ খরচে ভিসা করাসহ প্রতিজনের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন।

দোরমুটিয়া গ্রামের মেম্বার কামালউদ্দীন জানান, ভুক্তভোগীদের টাকা আদায়ে গত ৩ মাস আগে মনিরুজ্জামান মনির বিরুদ্ধে সালিস করায় সে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করেছে। এরপরও যদি কেউ পাওনা টাকা আদায়ে তাদের বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগ দেয় তবে তাকে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা জড়িয়ে হয়রানি করার হুমকি দিচ্ছে। যে কারণে অনেকেই তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊধ্বর্তন কর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, আছাদুজ্জামান, মফিজুল ইসলাম, আবুল কালাম প্রমুখ।

এ ব্যাপারে সিডিএইচআরএসের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে তার সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে অনেকের ঘর করাসহ টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।

গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের কোন সুযোগ নেই। আগামী জুলাই থেকে এর কার্যক্রম শুরু হবে।

বুধবার, ২৬ মে ২০২১ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৩ শাওয়াল ১৪৪২

শত শত যুবকের কোটি টাকা নিয়ে উধাও সিডিএইচআরএস

সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ

প্রতিনিধি, কেশবপুর (যশোর)

যশোরের কেশবপুরে একটি প্রতারক চক্র ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস সোসাইটির নামে যশোর, খুলনা জেলার শত শত যুবকের কাছ থেকে পৌনে এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে। দীর্ঘ দিনেও টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে গত সোমবার ভুক্তভোগী উপজেলার মাদারডাঙ্গা গ্রামের ওলিয়ার রহমানের ছেলে মেহেদী হাসান কেশবপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

লিখিত বক্তব্য পাঠকালে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস সোসাইটি (সিডিএইচআরএস) নামের একটি বেসরকারি সংগঠনের একাধিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। উপজেলার সাহাপুর মেহেরুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ও দোরমুটিয়া গ্রামের মনিরুজ্জামান মনি ওই সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি পরিচয় দিয়ে দোরমুটিয়া বাজারে একটি দোকান ঘরে ওই সংগঠনের সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে কর্মী নিয়োগসহ ঋণদান কার্যক্রম শুরু করেন। এ সময় তিনি সংগঠনের যাবতীয় কাজের ঠিকাদারের দায়িত্ব দেন দোরমুটিয়া গ্রামের ইসমাইল খাঁর ছেলে মুনছুর রহমানের মেসার্স শোয়াইব এন্টারপ্রাইজকে। সহকারি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় মুনছুর রহমানের ভাই আনিছুর রহমান ও তেঘরী গ্রামের আব্দুল আহাদের ছেলে মারুফুল হককে। ওই প্রতারক চক্রের প্রধান মনিরুজ্জামান মনি ও মুনছুর রহমান যোগসাজসে ২৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা বেতন দেয়ার আশ্বাস দিয়ে এ উপজেলার ২শ’ লোকের প্রতিজনের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা জামানতের নামে ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এর মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী পদে সাড়ে ১২ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা বেতনের আশ্বাস দেয়া হয়। খুলনা বিভাগে ৪ হাজার ৮৪০টি প্রি-প্রাইমারি স্কুলে চাকরির কথা বলে ৫৩ হাজার ২৪০ জনের কাছ থেকে স্কুল প্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেয়। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক পদে ১৮ হাজার, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ১৫ হাজার টাকা ও পিয়ন পদে ১২ হাজার টাকা বেতনের আশ্বাস দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, খুলনা বিভাগীয় সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি পাওয়ার হাউজিং নামের এক কোম্পানির টিনশেড ঘর দেয়ার কথা বলে যশোর ও খুলনা জেলায় ১২শ’ গরিব অসহায় পরিবারের প্রতিজনের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৩ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত পাথরঘাটা গ্রামের সুবহান সরদার অভিযোগ করেন, মনিরুজ্জামান মনি আমার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা জামানত নিয়ে চাকরি দেয়। পরবর্তীতে তার মাধ্যমে যে সমস্ত ভূক্তভোগী টাকা দিয়েছিল টাকা ফেরৎ দিতে না পারায় তারা আমার ৪টি দুধের গভী ধরে নিয়ে গেছে। সাগরদত্তকাটি গ্রামের হতদরিদ্র আকাম গোলদার, পাথরঘাটা গ্রামের হায়দার আলী, নতুন মূল গ্রামের তরিকুল ইসলাম, আব্দুল গফুর টাকা দিয়েও ঘর না পেয়ে বর্তমান পলিথিনের ছাউনির টঙঘরে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এছাড়া বিদেশে ৫৩ দিনের প্রশিক্ষণের কথা বলে ৪১ জনের নিজ খরচে ভিসা করাসহ প্রতিজনের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন।

দোরমুটিয়া গ্রামের মেম্বার কামালউদ্দীন জানান, ভুক্তভোগীদের টাকা আদায়ে গত ৩ মাস আগে মনিরুজ্জামান মনির বিরুদ্ধে সালিস করায় সে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করেছে। এরপরও যদি কেউ পাওনা টাকা আদায়ে তাদের বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগ দেয় তবে তাকে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা জড়িয়ে হয়রানি করার হুমকি দিচ্ছে। যে কারণে অনেকেই তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊধ্বর্তন কর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, আছাদুজ্জামান, মফিজুল ইসলাম, আবুল কালাম প্রমুখ।

এ ব্যাপারে সিডিএইচআরএসের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে তার সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে অনেকের ঘর করাসহ টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।

গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের কোন সুযোগ নেই। আগামী জুলাই থেকে এর কার্যক্রম শুরু হবে।