ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ৩ রোগী শনাক্ত : একজনের মৃত্যু 

বাংলাদেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত অন্তত ৩ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। অন্য ২ জন চিকিৎসাধীন আছেন। রাজধানীর ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রফেসর ডা. মো. শরীফুল আলম জিলানী গতকাল রাতে সংবাদকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে বেঁচে থাকা দুইজন এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছে। একজন বারডেম জেনারেল হাসপাতালে। অন্যজন রাজধানীর আরেক হাসপাতালে আছেন। আক্রান্তদের বুকের কফ পরীক্ষা করে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন বলে তিনি জানান।

জানা গেছে, রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে বিশেষজ্ঞরা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয় নিশ্চিত করেছেন। অন্যজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত তিনদিন আগে মারা গেছেন। তবে তিনি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে মারা গেছেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ বিষয় নিশ্চিত করার জন্য ল্যাবরেটরিতে আলামত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

বারডেম হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন সংবাদকে জানান, বারডেম হাসপাতালে ১৫ দিন ধরে চিকিৎসাধীন ৬৫ বছর বয়সের ওই ব্যক্তি গত ৩ দিন আগেই মারা গেছেন। এর এক মাস আগে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছিলেন। এরপর তিনি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা, জ্বর, শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তার লান্সে সমস্যা ছিল। তিনি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে মারা গেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ল্যাবরেটরিতে আলামত পরীক্ষা করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরার এক ব্যক্তি দেড় মাস আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। দশদিন আগে আবার তিনি জ্বর, কাশি নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে আবার তাকে চিকিৎসা দেয়া হয় কিন্তু তিনি সুস্থ হননি। অবশেষে রমজানের ঈদের পরের দিন তিনি ঢাকায় বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন।

এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, এ রোগ নিয়ে ভয়ের কোন কারণ নেই। কিন্তু চিকিৎসা ব্যয় বহুল। দিনে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। একটি ইনজেকশনের দাম ৭৬ হাজার টাকা। ফাঙ্গাসের চিকিৎসায় দুই থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগে।

এ বিশেষজ্ঞের মতে, এটা ছোঁয়াচে রোগ নয়। এ রোগ আগেও ছিল। আগে বিভিন্ন সময় ৫ থেকে ৬ জনের চিকিৎসা করছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন মারা গেছেন। তিনি বলেন, সবার শরীরে এই ধরনের ফাঙ্গাস বা ছত্রাক আছে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো তাদের কোন সমস্যা হয় না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেস্থেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের (আইসিইউ বিশেষজ্ঞ) প্রফেসর ডা. দেবব্রত বণিক সংবাদকে জানান, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস অনেকের শরীরের মধ্যেই থাকে। কারও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে কিংবা কেউ অসুস্থ হয়ে স্ট্রেরয়েড ব্যবহার করলে এ ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় আর অসুস্থার কারণে কেউ অ্যান্টিবায়োটিক দীর্ঘদিন নিয়মবহির্ভূতভাবে গ্রহণ করলে শরীরের উপকারী জীবাণু নষ্ট হয়। এ দুর্বলতার সুযোগে অসুস্থ ব্যক্তির শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর মানুষের শরীরে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে নাক, চোখ, মুখে ঢোকে। এরপরই ব্রেনেই আক্রমণ করে। ব্রেনের পরে চোখের নার্ভের মারাত্মক ক্ষতি করে। অনেকেই অন্ধ হয়ে যায়।

বুধবার, ২৬ মে ২০২১ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৩ শাওয়াল ১৪৪২

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ৩ রোগী শনাক্ত : একজনের মৃত্যু 

বাকী বিল্লাহ

image

বাংলাদেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত অন্তত ৩ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। অন্য ২ জন চিকিৎসাধীন আছেন। রাজধানীর ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রফেসর ডা. মো. শরীফুল আলম জিলানী গতকাল রাতে সংবাদকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে বেঁচে থাকা দুইজন এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছে। একজন বারডেম জেনারেল হাসপাতালে। অন্যজন রাজধানীর আরেক হাসপাতালে আছেন। আক্রান্তদের বুকের কফ পরীক্ষা করে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন বলে তিনি জানান।

জানা গেছে, রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে বিশেষজ্ঞরা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয় নিশ্চিত করেছেন। অন্যজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত তিনদিন আগে মারা গেছেন। তবে তিনি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে মারা গেছেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ বিষয় নিশ্চিত করার জন্য ল্যাবরেটরিতে আলামত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

বারডেম হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন সংবাদকে জানান, বারডেম হাসপাতালে ১৫ দিন ধরে চিকিৎসাধীন ৬৫ বছর বয়সের ওই ব্যক্তি গত ৩ দিন আগেই মারা গেছেন। এর এক মাস আগে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছিলেন। এরপর তিনি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা, জ্বর, শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তার লান্সে সমস্যা ছিল। তিনি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে মারা গেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ল্যাবরেটরিতে আলামত পরীক্ষা করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরার এক ব্যক্তি দেড় মাস আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। দশদিন আগে আবার তিনি জ্বর, কাশি নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে আবার তাকে চিকিৎসা দেয়া হয় কিন্তু তিনি সুস্থ হননি। অবশেষে রমজানের ঈদের পরের দিন তিনি ঢাকায় বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন।

এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, এ রোগ নিয়ে ভয়ের কোন কারণ নেই। কিন্তু চিকিৎসা ব্যয় বহুল। দিনে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। একটি ইনজেকশনের দাম ৭৬ হাজার টাকা। ফাঙ্গাসের চিকিৎসায় দুই থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগে।

এ বিশেষজ্ঞের মতে, এটা ছোঁয়াচে রোগ নয়। এ রোগ আগেও ছিল। আগে বিভিন্ন সময় ৫ থেকে ৬ জনের চিকিৎসা করছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন মারা গেছেন। তিনি বলেন, সবার শরীরে এই ধরনের ফাঙ্গাস বা ছত্রাক আছে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো তাদের কোন সমস্যা হয় না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেস্থেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের (আইসিইউ বিশেষজ্ঞ) প্রফেসর ডা. দেবব্রত বণিক সংবাদকে জানান, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস অনেকের শরীরের মধ্যেই থাকে। কারও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে কিংবা কেউ অসুস্থ হয়ে স্ট্রেরয়েড ব্যবহার করলে এ ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় আর অসুস্থার কারণে কেউ অ্যান্টিবায়োটিক দীর্ঘদিন নিয়মবহির্ভূতভাবে গ্রহণ করলে শরীরের উপকারী জীবাণু নষ্ট হয়। এ দুর্বলতার সুযোগে অসুস্থ ব্যক্তির শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর মানুষের শরীরে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে নাক, চোখ, মুখে ঢোকে। এরপরই ব্রেনেই আক্রমণ করে। ব্রেনের পরে চোখের নার্ভের মারাত্মক ক্ষতি করে। অনেকেই অন্ধ হয়ে যায়।