কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীকে আজিমপুরে সমাহিত

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশের বিশিষ্ট কবি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। গতকাল সকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নজরুল মঞ্চে সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আজিমপুর কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। হাবীবুল্লাহ সিরাজী ৭২ বছর বয়সে সোমবার রাত ১১টায় শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি মরহুম হাবীবুল্লাহ সিরাজীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, হাবীবুল্লাহ সিরাজী কবিতা ও কর্মে মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রগতিশীলতাকে তুলে ধরেছেন, যা পাঠকমহলে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

হাবীবুল্লাহ সিরাজী তিন বছরের জন্য বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে ২০১৮ সালে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। চলতি বছর করোনা সংক্রমণের কারণে অমর একুশের গ্রন্থমেলা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ছিল। নির্ধারিত সময় ফেব্রুয়ারিতে মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। তার বিশেষ উদ্যোগে গত ১৮ মার্চ থেকে মেলা শুরু হয়েছিল।

হাবীবুল্লাহ সিরাজী অনেক দিন থেকে কোলন ক্যানসারে ভুগছিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তার হৃদযন্ত্রে রিং পরানো হয়েছিল। প্রবল পেটব্যথা হলে গত ২৫ এপ্রিল তাকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আর কোন উন্নতি হয়নি।

গতকাল সকাল পৌনে ১০টায় কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর মরদেহ সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বাংলা একাডেমিতে আনা হয়। বটতলার নজরুল মঞ্চে পুষ্পস্তবক নিবেদন করে অন্তিম শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ ও সচিব মো. বদরুল আরেফীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) কবি মুহাম্মদ সামদ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বাংলা একাডেমির সচিব ও ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এএইচএম লোকমানের নেতৃত্বে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রয়াত মহাপরিচালককে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অসীম কুমার উকিল, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ, গোলাম কুদ্দুছের নেতৃত্বে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, তারিক সুজাতের নেতৃত্বে জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সাবেক সভাপতি আলমগীর সিকদার, রাইটার্স ক্লাবের পক্ষে মুহম্মদ নূরুল হুদা শ্রদ্ধা জানান। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল, বাংলাদেশ আবৃত্তিশিল্পী সংসদ, ছোটকাগজ শালুকের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ব্যক্তিগতভাবে নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, চলচ্চিত্রজন জাঁ নেসার ওসমান, আইনজীবী সাহিদা বেগম, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, রেজানুর রহমান, শিশুসাহিত্যিক আনজীর লিটন, রহীম শাহসহ অনেকেই হাবীবুল্লাহ সিরাজীকে তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বাংলা একাডেমিতে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর প্রথম জানাজা পরিচালনা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক হাসান কবীর। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, হাবীবুল্লাহ সিরাজী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বাংলা একাডেমি পরিচালনা করেছেন। তিনি একজন সফল প্রশাসক ছিলেন। এ ধরনের মানুষের মৃত্যু রাষ্ট্র, সমাজ এবং সংস্কৃতি অঙ্গনের ক্ষতি।

নাট্যজন রামেন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘সিরাজীর প্রশাসনিক দক্ষতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল সৃষ্টিশীলতা। এই দুটো গুণ নিয়ে বাংলা একাডেমিকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ছিল তার। তাকে হারিয়ে আমরা সত্যিই শোকাহত। এমন মানুষের শূন্যতা কখনও পূরণ হবার নয়।

এ সময় প্রয়াত হাবীবুল্লাহ সিরাজীর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। একাডেমিতে তার প্রথম জানাজা শেষে বেলা ১১টার দিকে দাফনের জন্য আজিমপুর কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী পেশায় ছিলেন প্রকৌশলী। তবে কবি হিসেবেই তিনি সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। ফরিদপুরের রসুলপুরে তার জন্ম ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর। বাবা আবুল হোসেন সিরাজী, মা জাহানারা বেগম। ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে ১৯৬৪ সালে মাধ্যমিক ও রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ১৯৬৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১৯৭০ সালে স্নাতক ডিগ্রি নেন।

ছাত্রজীবন থেকেই হাবীবুল্লাহ সিরাজী সাহিত্য চর্চা করতেন। কবিতাই তার প্রধান ক্ষেত্র। তবে অনুবাদ, প্রবন্ধ, শিশুতোষ রচনা আর উপন্যাসও রচনা করেছে তিনি। গত শতকের আশির দশকে জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন।

কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ৩০টির বেশি। এছাড়া ছড়া, উপন্যাস, প্রবন্ধ, অনুবাদ মিলিয়ে গ্রন্থসংখ্যা অর্ধশতাধিক। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘দাও বৃক্ষ দাও দিন’, ‘নোনা জলে বুনো সংসার’, ‘সিংহদরজা’, ‘সারিবদ্ধ জ্যোৎস্না’, ‘স্বপ্নহীনতার পক্ষে’, ‘একা ও করুণা’, ‘কবিরাজ বিল্ডিংয়ের ছাদ’ ইত্যাদি।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য হাবীবুল্লাহ সিরাজী ২০১৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। এছাড়াও সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, বিষ্ণু দে পুরস্কারসহ দেশে-বিদেশে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। ২০১৮ সালে ২০ ডিসেম্বর সরকার তাকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব দেয়।

বুধবার, ২৬ মে ২০২১ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৩ শাওয়াল ১৪৪২

কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীকে আজিমপুরে সমাহিত

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশের বিশিষ্ট কবি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। গতকাল সকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নজরুল মঞ্চে সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আজিমপুর কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। হাবীবুল্লাহ সিরাজী ৭২ বছর বয়সে সোমবার রাত ১১টায় শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি মরহুম হাবীবুল্লাহ সিরাজীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, হাবীবুল্লাহ সিরাজী কবিতা ও কর্মে মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রগতিশীলতাকে তুলে ধরেছেন, যা পাঠকমহলে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

হাবীবুল্লাহ সিরাজী তিন বছরের জন্য বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে ২০১৮ সালে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। চলতি বছর করোনা সংক্রমণের কারণে অমর একুশের গ্রন্থমেলা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ছিল। নির্ধারিত সময় ফেব্রুয়ারিতে মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। তার বিশেষ উদ্যোগে গত ১৮ মার্চ থেকে মেলা শুরু হয়েছিল।

হাবীবুল্লাহ সিরাজী অনেক দিন থেকে কোলন ক্যানসারে ভুগছিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তার হৃদযন্ত্রে রিং পরানো হয়েছিল। প্রবল পেটব্যথা হলে গত ২৫ এপ্রিল তাকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আর কোন উন্নতি হয়নি।

গতকাল সকাল পৌনে ১০টায় কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর মরদেহ সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বাংলা একাডেমিতে আনা হয়। বটতলার নজরুল মঞ্চে পুষ্পস্তবক নিবেদন করে অন্তিম শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ ও সচিব মো. বদরুল আরেফীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) কবি মুহাম্মদ সামদ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বাংলা একাডেমির সচিব ও ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এএইচএম লোকমানের নেতৃত্বে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রয়াত মহাপরিচালককে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অসীম কুমার উকিল, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ, গোলাম কুদ্দুছের নেতৃত্বে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, তারিক সুজাতের নেতৃত্বে জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সাবেক সভাপতি আলমগীর সিকদার, রাইটার্স ক্লাবের পক্ষে মুহম্মদ নূরুল হুদা শ্রদ্ধা জানান। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল, বাংলাদেশ আবৃত্তিশিল্পী সংসদ, ছোটকাগজ শালুকের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ব্যক্তিগতভাবে নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, চলচ্চিত্রজন জাঁ নেসার ওসমান, আইনজীবী সাহিদা বেগম, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, রেজানুর রহমান, শিশুসাহিত্যিক আনজীর লিটন, রহীম শাহসহ অনেকেই হাবীবুল্লাহ সিরাজীকে তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বাংলা একাডেমিতে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর প্রথম জানাজা পরিচালনা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক হাসান কবীর। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, হাবীবুল্লাহ সিরাজী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বাংলা একাডেমি পরিচালনা করেছেন। তিনি একজন সফল প্রশাসক ছিলেন। এ ধরনের মানুষের মৃত্যু রাষ্ট্র, সমাজ এবং সংস্কৃতি অঙ্গনের ক্ষতি।

নাট্যজন রামেন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘সিরাজীর প্রশাসনিক দক্ষতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল সৃষ্টিশীলতা। এই দুটো গুণ নিয়ে বাংলা একাডেমিকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ছিল তার। তাকে হারিয়ে আমরা সত্যিই শোকাহত। এমন মানুষের শূন্যতা কখনও পূরণ হবার নয়।

এ সময় প্রয়াত হাবীবুল্লাহ সিরাজীর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। একাডেমিতে তার প্রথম জানাজা শেষে বেলা ১১টার দিকে দাফনের জন্য আজিমপুর কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী পেশায় ছিলেন প্রকৌশলী। তবে কবি হিসেবেই তিনি সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। ফরিদপুরের রসুলপুরে তার জন্ম ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর। বাবা আবুল হোসেন সিরাজী, মা জাহানারা বেগম। ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে ১৯৬৪ সালে মাধ্যমিক ও রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ১৯৬৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১৯৭০ সালে স্নাতক ডিগ্রি নেন।

ছাত্রজীবন থেকেই হাবীবুল্লাহ সিরাজী সাহিত্য চর্চা করতেন। কবিতাই তার প্রধান ক্ষেত্র। তবে অনুবাদ, প্রবন্ধ, শিশুতোষ রচনা আর উপন্যাসও রচনা করেছে তিনি। গত শতকের আশির দশকে জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন।

কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ৩০টির বেশি। এছাড়া ছড়া, উপন্যাস, প্রবন্ধ, অনুবাদ মিলিয়ে গ্রন্থসংখ্যা অর্ধশতাধিক। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘দাও বৃক্ষ দাও দিন’, ‘নোনা জলে বুনো সংসার’, ‘সিংহদরজা’, ‘সারিবদ্ধ জ্যোৎস্না’, ‘স্বপ্নহীনতার পক্ষে’, ‘একা ও করুণা’, ‘কবিরাজ বিল্ডিংয়ের ছাদ’ ইত্যাদি।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য হাবীবুল্লাহ সিরাজী ২০১৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। এছাড়াও সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, বিষ্ণু দে পুরস্কারসহ দেশে-বিদেশে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। ২০১৮ সালে ২০ ডিসেম্বর সরকার তাকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব দেয়।