ইজিপিপি বাস্তবায়নে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করুন

হতদরিদ্র বেকার জনগোষ্ঠীর স্বার্থে ‘অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান’ কর্মসূচি (ইজিপিপি) হাতে নিয়েছে সরকার। মূলত ভূমিহীন, অদক্ষ ব্যক্তি বা দুস্থ পরিবারগুলোকে সুরক্ষা দিতে কর্মসূচি চালু করা হয়। অথচ ময়মনসিংহের নান্দাইলে এ কর্মসূচির আওতায় কাজ করা হয়েছে এক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে। হতদরিদ্রদের কাজ না দিয়ে দলীয় লোক দিয়ে তালিকা তৈরি করে তাদের টিপসই নিয়ে ব্যাংক থেকে প্রকল্পের টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে। নান্দাইলে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৪০ দিনের প্রথম পর্র্যায়ে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ৯৭টি প্রকল্প। বাস্তবে বেশিরভাগ প্রকল্পই খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংবাদ-এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

শুধু একটি এলাকাতেই ইজিপিপি নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি থেমে নেই। সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকেও অনিয়ম-দুর্নীতির খবর জানা গেছে। সেখানে কোন কোন প্রকল্পে অনেক ভুয়া শ্রমিকের নামে বিল করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। কোন কোন প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজের টাকা শ্রমিকরা কাজ শেষের প্রায় ৩ মাসের মাথায় পেয়েছে। অথচ প্রতি সপ্তাহেই শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের নিয়ম রয়েছে।

অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে প্রকৃত উপকারভোগী বাছাই করতে হয় দক্ষতার সঙ্গে। অথচ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তি ও একশ্রেণীর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কূটকৌশলের কারণে হতদরিদ্ররা বঞ্চিত হচ্ছে। শ্রমিকদের পরিবর্তে মেশিন ব্যবহার করার কোন সুযোগ এ কর্মসূচিতে নেই। তবে প্রায়ই এ ধরনের প্রকল্পে মেশিন ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ভুয়া শ্রমিক সাজিয়ে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা পুরনো। প্রকৃত শ্রমিকদের যথাসময়ে মজুরি দেয়া হয় না। ইজিপিপির উদ্দেশ্য ছিল প্রকল্পের আওতায় গ্রামের কর্মহীন মানুষ গায়ে-গতরে খেটে গ্রামীণ অবকাঠোমো নির্মাণ করার পাশাপাশি অর্থ উপার্জন করে নিজেদের বেকারত্বও দূর করবে। কিন্তু অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে কর্মহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুর্দশা দূর করা যাচ্ছে না।

কর্মসৃজন কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। জাতীয় সংসদেও এ অভিযোগ উঠেছিল। ইজিপিপি বাস্তবায়নে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে ২১ জেলায় একযোগে অভিযানও চালিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একাধিক স্থানে ঠিকমতো কাজ না করেই ভাতা উত্তোলন, কমসংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে বেশি টাকা তোলা, ভাতা তোলার স্বাক্ষরে গরমিলসহ নানা অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার কথা দুদক তখন জানিয়েছিল। সেসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছিল।

আমরা চাই, ইজিপিপি বাস্তবায়নে সব অনিয়ম-দুর্নীতির অবসান ঘটুক। অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।

বুধবার, ২৬ মে ২০২১ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৩ শাওয়াল ১৪৪২

ইজিপিপি বাস্তবায়নে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করুন

হতদরিদ্র বেকার জনগোষ্ঠীর স্বার্থে ‘অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান’ কর্মসূচি (ইজিপিপি) হাতে নিয়েছে সরকার। মূলত ভূমিহীন, অদক্ষ ব্যক্তি বা দুস্থ পরিবারগুলোকে সুরক্ষা দিতে কর্মসূচি চালু করা হয়। অথচ ময়মনসিংহের নান্দাইলে এ কর্মসূচির আওতায় কাজ করা হয়েছে এক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে। হতদরিদ্রদের কাজ না দিয়ে দলীয় লোক দিয়ে তালিকা তৈরি করে তাদের টিপসই নিয়ে ব্যাংক থেকে প্রকল্পের টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে। নান্দাইলে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৪০ দিনের প্রথম পর্র্যায়ে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ৯৭টি প্রকল্প। বাস্তবে বেশিরভাগ প্রকল্পই খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংবাদ-এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

শুধু একটি এলাকাতেই ইজিপিপি নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি থেমে নেই। সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকেও অনিয়ম-দুর্নীতির খবর জানা গেছে। সেখানে কোন কোন প্রকল্পে অনেক ভুয়া শ্রমিকের নামে বিল করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। কোন কোন প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজের টাকা শ্রমিকরা কাজ শেষের প্রায় ৩ মাসের মাথায় পেয়েছে। অথচ প্রতি সপ্তাহেই শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের নিয়ম রয়েছে।

অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে প্রকৃত উপকারভোগী বাছাই করতে হয় দক্ষতার সঙ্গে। অথচ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তি ও একশ্রেণীর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কূটকৌশলের কারণে হতদরিদ্ররা বঞ্চিত হচ্ছে। শ্রমিকদের পরিবর্তে মেশিন ব্যবহার করার কোন সুযোগ এ কর্মসূচিতে নেই। তবে প্রায়ই এ ধরনের প্রকল্পে মেশিন ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ভুয়া শ্রমিক সাজিয়ে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা পুরনো। প্রকৃত শ্রমিকদের যথাসময়ে মজুরি দেয়া হয় না। ইজিপিপির উদ্দেশ্য ছিল প্রকল্পের আওতায় গ্রামের কর্মহীন মানুষ গায়ে-গতরে খেটে গ্রামীণ অবকাঠোমো নির্মাণ করার পাশাপাশি অর্থ উপার্জন করে নিজেদের বেকারত্বও দূর করবে। কিন্তু অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে কর্মহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুর্দশা দূর করা যাচ্ছে না।

কর্মসৃজন কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। জাতীয় সংসদেও এ অভিযোগ উঠেছিল। ইজিপিপি বাস্তবায়নে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে ২১ জেলায় একযোগে অভিযানও চালিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একাধিক স্থানে ঠিকমতো কাজ না করেই ভাতা উত্তোলন, কমসংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে বেশি টাকা তোলা, ভাতা তোলার স্বাক্ষরে গরমিলসহ নানা অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার কথা দুদক তখন জানিয়েছিল। সেসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছিল।

আমরা চাই, ইজিপিপি বাস্তবায়নে সব অনিয়ম-দুর্নীতির অবসান ঘটুক। অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।