হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে

কয়েক দশক আগেও পাখির কলতানে মুখর থাকত হাকালুকি হাওর এলাকা। বিশেষ করে শীতকালে গোটা এলাকা ছেয়ে যেত পরিযায়ী পাখিতে। হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বড় একটি অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছিল নানা প্রজাতির পাখির বিচরণ। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় হাওরে পাখির পরিমাণ কমেছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচারের (আইইউসিএন) এক জরিপ তথ্যেও দেখা যাচ্ছে, গত দুই দশকে হাকালুকি হাওরে পাখির বিচরণ কমেছে প্রায় ৪৫ শতাংশ।

হাকালুকি হাওর দেশীয় আর পরিযায়ী পাখির নিরাপদ অভয়াশ্রম। সেই সঙ্গে মিঠা পানির মাছ আর নানা প্রজাতির জীববৈচিত্র্যেরও নিরাপদ আবাসস্থল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এমন পরিচিতি এখন ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। শুধু হাকালুকিই নয়, দেশের অন্যান্য হাওরের অবস্থাও এখন এমন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মূল কারণ মানবের দানবীয় আচরণ। নানা কৌশলে নির্বিচারে অতিথি পাখি নিধন হচ্ছে। পাখির খাবার ও আবাসস্থল ধ্বংস করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে নাব্য হ্রাসে চরম সংকটে পড়েছে হাওরের বিল এলাকা। আবার সেখানেই ইজারায় চলছে মৎস্য চাষ। এসব কারণেই দেশের প্রায় হাওর এলাকায় জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। এটা মনে রাখা উচিত, হাওর ধ্বংস হলে শুধু পাখী, জলজ উদ্ভিদ কিংবা পরিবেশ সহায়ক কীটপতঙ্গ নয়, হাওরপারের মানুষের জীবন-জীবিকাও বিপন্ন হবে। পাখি কমে গেলে মাছও কমে যাবে। যে হাওরে পাখি থাকে না, প্রাকৃতিক নিয়মেই সেখানে মাছও হবে না।

হাওরে পরিযায়ী পাখির আগমন ধরে রাখতে সবার আগে প্রয়োজন চোরা শিকার বন্ধ করা। চোরা শিকার বন্ধ করা না গেলে একদিন এখানে পাখি আসবে না। দেশে পাখি শিকার বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ধরা নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু এক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ তেমনভাবে দৃশ্যমান নয়। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। কিন্তু এতে স্থায়ী কোন সুফল মেলে না। হাওরের পাখি শিকার বন্ধ করতে হলে প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। চোরা শিকারি যে-ই হোক তাকে আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে।

প্রতিবেশ রক্ষায় অনন্য ভূমিকা পালন করা পাখিদের আবাসস্থল রক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বাংলাদেশ পাখি সংরক্ষণে উদাহরণ হতে পারে। কাজেই এ ব্যাপারে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। হাওরের পাখিদের রক্ষা করতে হলে এখান থেকে ইজারা প্রথা বাতিল করতে হবে। পাখিদের বিচরণ ও আবাসস্থল নির্বিঘœ রাখতে হবে। হাওরের নাব্য ফিরিয়ে দিতে হবে। এবং শস্য আবাদে কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে।

বুধবার, ২৬ মে ২০২১ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৩ শাওয়াল ১৪৪২

হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে

কয়েক দশক আগেও পাখির কলতানে মুখর থাকত হাকালুকি হাওর এলাকা। বিশেষ করে শীতকালে গোটা এলাকা ছেয়ে যেত পরিযায়ী পাখিতে। হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বড় একটি অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছিল নানা প্রজাতির পাখির বিচরণ। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় হাওরে পাখির পরিমাণ কমেছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচারের (আইইউসিএন) এক জরিপ তথ্যেও দেখা যাচ্ছে, গত দুই দশকে হাকালুকি হাওরে পাখির বিচরণ কমেছে প্রায় ৪৫ শতাংশ।

হাকালুকি হাওর দেশীয় আর পরিযায়ী পাখির নিরাপদ অভয়াশ্রম। সেই সঙ্গে মিঠা পানির মাছ আর নানা প্রজাতির জীববৈচিত্র্যেরও নিরাপদ আবাসস্থল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এমন পরিচিতি এখন ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। শুধু হাকালুকিই নয়, দেশের অন্যান্য হাওরের অবস্থাও এখন এমন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মূল কারণ মানবের দানবীয় আচরণ। নানা কৌশলে নির্বিচারে অতিথি পাখি নিধন হচ্ছে। পাখির খাবার ও আবাসস্থল ধ্বংস করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে নাব্য হ্রাসে চরম সংকটে পড়েছে হাওরের বিল এলাকা। আবার সেখানেই ইজারায় চলছে মৎস্য চাষ। এসব কারণেই দেশের প্রায় হাওর এলাকায় জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। এটা মনে রাখা উচিত, হাওর ধ্বংস হলে শুধু পাখী, জলজ উদ্ভিদ কিংবা পরিবেশ সহায়ক কীটপতঙ্গ নয়, হাওরপারের মানুষের জীবন-জীবিকাও বিপন্ন হবে। পাখি কমে গেলে মাছও কমে যাবে। যে হাওরে পাখি থাকে না, প্রাকৃতিক নিয়মেই সেখানে মাছও হবে না।

হাওরে পরিযায়ী পাখির আগমন ধরে রাখতে সবার আগে প্রয়োজন চোরা শিকার বন্ধ করা। চোরা শিকার বন্ধ করা না গেলে একদিন এখানে পাখি আসবে না। দেশে পাখি শিকার বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ধরা নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু এক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ তেমনভাবে দৃশ্যমান নয়। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। কিন্তু এতে স্থায়ী কোন সুফল মেলে না। হাওরের পাখি শিকার বন্ধ করতে হলে প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। চোরা শিকারি যে-ই হোক তাকে আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে।

প্রতিবেশ রক্ষায় অনন্য ভূমিকা পালন করা পাখিদের আবাসস্থল রক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বাংলাদেশ পাখি সংরক্ষণে উদাহরণ হতে পারে। কাজেই এ ব্যাপারে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। হাওরের পাখিদের রক্ষা করতে হলে এখান থেকে ইজারা প্রথা বাতিল করতে হবে। পাখিদের বিচরণ ও আবাসস্থল নির্বিঘœ রাখতে হবে। হাওরের নাব্য ফিরিয়ে দিতে হবে। এবং শস্য আবাদে কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে।