অশান্ত প্যালেস্টাইন ও যুদ্ধবিরতি

শাহ মো. জিয়াউদ্দিন

প্রাচীন ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার বছর আগে ইহুদি ধর্ম পালনকারী মানুষ যাযাবর ছিল। বাস্তুচ্যুত ইহুদিরা পৃথিবীর নানা প্রান্তে আশ্রয় নেয়। ১৮৯৭ সালের দিকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত ইহুদি ধর্মপালনকারী মানুষেরা একটি আলাদা ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায়। তখনকার ভূরাজনৈতিক কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। ১৯১৭ সালে জেরুজালেম দখলকে কেন্দ্র করে তুরস্ক সঙ্গে ব্রিটিশ সেনাদের যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে তুরস্ক সেনারা পরাজিত হলে জেরুজালেম শহরটি ব্রিটিশদের দখলে চলে যায়। ১৯১৭ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত প্যালেস্টাইন ভূখণ্ডটি ব্রিটিশদের অধীনে ছিল। এই ভূখণ্ডে ব্রিটিশরা ইউরোপ থেকে বিতাড়িত ইহুদি ধর্মপালনকারী মানুষদের আশ্রয় দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা হিটলারের নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইহুদিদের নিজেদের পক্ষে কাজে লাগায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে, প্যালেস্টাইনি মুসলিম ধর্মপালনকারী মানুষেরা বুঝতে পারেন তাদের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন, কারণ ব্রিটিশরা আশ্রিত ইহুদিদের বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। তখন তারা ব্রিটিশ এবং ইহুদি বসতির ওপর ছোটখাটো হামলা চালায়, যা ছিল অনেকটা তাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ। আর তখনই সূচনা হয় মধ্য প্রাচ্যের অশান্তির দামামা এবং কালক্রমে তা পরিণত হয় এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ধারাবাহিকতা এখনো বিদ্যমান।

এক ধর্মের মানুষকে উদ্বাস্তু করে আরেক ধর্মের মানুষকে প্রতিস্থাপন অমানবিক একটি বিষয়। ১৯৪৭ সালে যেভাবে প্যালেস্টাইন ভূখণ্ড দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছিল সেই ভাগাভাগিটা ইহুদি ইসরায়েল মানছে না। মূল প্যালেস্টাইন ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে আর পুরো ভূখণ্ডটিই এখন ইসরায়েল রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি প্রায় এক মাস ধরে চলছে গাজা ভূখণ্ডের ওপর ইসরায়েলি হামলা। এ হামলার কারণ হিসাবে ইসরায়েল বলছে, ফিলিস্তিনের কট্টরপন্থি হামাস নাকি ইসরায়েল ভূখণ্ডে রকেট নিক্ষেপ করেছিল তার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় নৃশংস বর্রতা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের বিষয়টিও আন্তর্জাতিক ভাবে মীমাংসিত হওয়া দরকার। মানসভ্যতার ক্রমবিকাশের ইতিবাচক ধারায় কেন এ ধরনের একটি সমস্যা প্রায় একশ’ বছর জিইয়ে রাখা হলো? এর উত্তরটা জাতিসংঘ নামক সংস্থাটির দেয়া প্রয়োজন।

সম্প্রতি প্যালেস্টাইন এবং ইসরায়েলের মাঝে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়েছে এ বিরতিতেই কী যুদ্ধ থেমে যাবে? নাৎসিবাদী নরঘাতক হিটলার পৃথিবীতে নেই তবে হিটলারের নৃশংসতার নবসংস্করণ হয়ে ভিন্নরূপে আবির্ভূত হয়েছে। এ নবসংস্করণ হিটলারি নৃশংসতার চেয়েও ভয়ংকর। সুতরাং মানব সভ্যতার উৎকর্ষতার বিষয়টি অক্ষুণœ রাখার জন্য প্যালেস্টানের এ সমস্যাটির দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।

[লেখক : ব্যবসায়ী ]

বুধবার, ২৬ মে ২০২১ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৩ শাওয়াল ১৪৪২

অশান্ত প্যালেস্টাইন ও যুদ্ধবিরতি

শাহ মো. জিয়াউদ্দিন

প্রাচীন ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার বছর আগে ইহুদি ধর্ম পালনকারী মানুষ যাযাবর ছিল। বাস্তুচ্যুত ইহুদিরা পৃথিবীর নানা প্রান্তে আশ্রয় নেয়। ১৮৯৭ সালের দিকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত ইহুদি ধর্মপালনকারী মানুষেরা একটি আলাদা ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায়। তখনকার ভূরাজনৈতিক কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। ১৯১৭ সালে জেরুজালেম দখলকে কেন্দ্র করে তুরস্ক সঙ্গে ব্রিটিশ সেনাদের যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে তুরস্ক সেনারা পরাজিত হলে জেরুজালেম শহরটি ব্রিটিশদের দখলে চলে যায়। ১৯১৭ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত প্যালেস্টাইন ভূখণ্ডটি ব্রিটিশদের অধীনে ছিল। এই ভূখণ্ডে ব্রিটিশরা ইউরোপ থেকে বিতাড়িত ইহুদি ধর্মপালনকারী মানুষদের আশ্রয় দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা হিটলারের নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইহুদিদের নিজেদের পক্ষে কাজে লাগায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে, প্যালেস্টাইনি মুসলিম ধর্মপালনকারী মানুষেরা বুঝতে পারেন তাদের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন, কারণ ব্রিটিশরা আশ্রিত ইহুদিদের বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। তখন তারা ব্রিটিশ এবং ইহুদি বসতির ওপর ছোটখাটো হামলা চালায়, যা ছিল অনেকটা তাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ। আর তখনই সূচনা হয় মধ্য প্রাচ্যের অশান্তির দামামা এবং কালক্রমে তা পরিণত হয় এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ধারাবাহিকতা এখনো বিদ্যমান।

এক ধর্মের মানুষকে উদ্বাস্তু করে আরেক ধর্মের মানুষকে প্রতিস্থাপন অমানবিক একটি বিষয়। ১৯৪৭ সালে যেভাবে প্যালেস্টাইন ভূখণ্ড দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছিল সেই ভাগাভাগিটা ইহুদি ইসরায়েল মানছে না। মূল প্যালেস্টাইন ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে আর পুরো ভূখণ্ডটিই এখন ইসরায়েল রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি প্রায় এক মাস ধরে চলছে গাজা ভূখণ্ডের ওপর ইসরায়েলি হামলা। এ হামলার কারণ হিসাবে ইসরায়েল বলছে, ফিলিস্তিনের কট্টরপন্থি হামাস নাকি ইসরায়েল ভূখণ্ডে রকেট নিক্ষেপ করেছিল তার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় নৃশংস বর্রতা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের বিষয়টিও আন্তর্জাতিক ভাবে মীমাংসিত হওয়া দরকার। মানসভ্যতার ক্রমবিকাশের ইতিবাচক ধারায় কেন এ ধরনের একটি সমস্যা প্রায় একশ’ বছর জিইয়ে রাখা হলো? এর উত্তরটা জাতিসংঘ নামক সংস্থাটির দেয়া প্রয়োজন।

সম্প্রতি প্যালেস্টাইন এবং ইসরায়েলের মাঝে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়েছে এ বিরতিতেই কী যুদ্ধ থেমে যাবে? নাৎসিবাদী নরঘাতক হিটলার পৃথিবীতে নেই তবে হিটলারের নৃশংসতার নবসংস্করণ হয়ে ভিন্নরূপে আবির্ভূত হয়েছে। এ নবসংস্করণ হিটলারি নৃশংসতার চেয়েও ভয়ংকর। সুতরাং মানব সভ্যতার উৎকর্ষতার বিষয়টি অক্ষুণœ রাখার জন্য প্যালেস্টানের এ সমস্যাটির দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।

[লেখক : ব্যবসায়ী ]