মহামানব বুদ্ধ

সীবলী বডুয়া

আজ ২৬ মে ২৫৬৫ বুদ্ধাব্দ; ত্রি-স্মৃতিবিজড়িত বৌদ্ধ ধর্মীয় তিথি পবিত্র বুদ্ধ পূর্ণিমা। এটা সমগ্র বিশ্বের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব। মহামানব গৌতম বুদ্ধ (গৃহী নাম- সিদ্ধার্থ ) খ্রিস্টপূর্ব ৬২৪ অব্দে জন্ম হয় নেপালের লুম্বিনী নামক বনের উন্মুক্ত আকাশতলে। ৩৫ বৎসর বয়সে বোধিলাভ বা বুদ্ধত্ব লাভ করেন- ভারতের গয়া জেলার নৈরন্জনা নদীর তীরে বোধিবৃক্ষ মূলে এবং ৮০ বৎসর বয়সে সোপাদিশেষ নির্বান লাভ করেন - ভারতের কাশীনগরের উন্মুক্ত আকাশতলে শালবৃক্ষমূলে। এই তিনটি প্রধান ঘটনা এই একই শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে সংগঠিত হয়েছিল। একজন মহামানবের জীবনে তিনটি ঘটনার সমন্বয় একই তিথিতে বিধায় অত্যন্ত গুরুত্ববহ এবং আবেদনময়।

জাতিসংঘ ১৫ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সাল থেকে এই দিনটিকে “বেশাখ ডে” হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালন করে আসছে।

বুদ্ধ পূর্ণিমা অত্যন্ত তাৎপর্যম-িত। এই দিনেই বিশ্ব মানবতার উন্মেষ ঘটেছিল। মানুষে- মানুষে সাম্য প্রতিষ্ঠার সর্বপ্রথম উদ্যোগ এসেছিল বুদ্ধ পূর্ণিমার এই শুভলগ্ন থেকে। তথাগত বুদ্ধ বুদ্ধত্ব লাভের পর ঘোষণা দিয়েছিলেন- জগতের সব মানুষ সমান। মানুষে- মানুষে কোন বৈষম্য নেই। পরবর্তীকালে তিনি ভিক্ষুসংঘ প্রতিষ্ঠা করে এর দৃঢ ভিত্তিস্থাপন করেছিলেন। তার ভিক্ষুসংঘে স্থান পেয়েছিল- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র, অন্তজ প্রভৃতি শ্রেণীর মানুষ। এটা যেন গঙ্গা, যমুনা, পদ্মা নদীর একই স্রোতধারায় মিশে যাওয়া- তেমনি করে সব বর্ণ, গোত্র ও শ্রেণীর মানুষ ভিক্ষু সংঘে প্রবেশ করে সাম্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজকের এই বর্ণবিদ্বেষ ও জাতি বৈষম্যের অভিশাপে জর্জরিত বিশ্বে তথাগতের মানব- মৈত্রীর বাণী অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

দুঃখ আছে, দুঃখের কারণ আছে, দুঃখের নিরোধ আছে এবং দুঃখ নিরোধের উপায় আছে। এই চারি আর্যসত্য হলো গৌতম বুদ্ধের ধর্মের মূল স্তম্ভ। বুদ্ধ, তৃষ্ণাকে দুঃখের কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন এবং সেই দুঃখ খেকে পরিত্রাণের উপায় হিসাবে- সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক জীবিকা, সম্যক কর্ম, সম্যক প্রচেষ্টা, সম্যক স্মৃতি ও সম্যক সমাধি নামক আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ বা পথের কথা বলেছেন। এই পথ মধ্যম পথ; যে পথ অনুসরণ করে তথাগত গৌতম অভিসম্বুদ্ধ হয়েছিলেন।

এটাকে শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞা- এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্য শীল হলো চরিত্র। যার চরিত্র নির্মল হবে, তিনি সমাধিতে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন। আর সমাধি হলেই তার চিত্ত প্রজ্ঞার পরিপূর্ণ হবে। আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ বা পথকে মানুষের জীবনবেদও বলা চলে। কেননা এই পথ বা দিক-নির্দেশনাগুলো পৃথিবীর সব মানুষের জন্য একান্ত পালনীয়। এর মাধ্যমেই মানুষ সৎ, পবিত্র, সুন্দর এবং সুখী হতে পারে; লোভ হিংসামুক্ত হয়ে সুখে বিচরণ করতে পারে। ভগবান বুদ্ধের মতে মানুষের জীবিকা হতে হবে সৎ। অসৎ পথে যে আয় তা মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। তাই , তিনি পঞ্চ বাণিজ্য (প্রাণী বাণিজ্য, মাংস বাণিজ্য, বিষ বাণিজ্য, অস্ত্র বাণিজ্য এবং মাদকদ্রব্য বাণিজ্য) নিষিদ্ধ করেছেন। আমরা যদি মহাকারণিক বুদ্ধের এই নির্দেশ মেনে চলি, তবে পৃথিবীতে অশান্তির কোন অবকাশ থাকবে না।

বর্তমানে এমন বৈশ্বিক মহামারীতে প্রতিদিন কত জীবন অকালে ঝড়ে যাচ্ছে, কতলোক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার মধ্যেও বৃহৎ রাষ্ট্রগুলো অত্যাধুনিক নুতন নুতন মারণাস্ত্র তৈরি করেই যাচ্ছে এবং সেই অস্ত্র দরিদ্র ও ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিক্রির জন্য কি নগ্ন এবং তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু করেছে, যা সমগ্র বিশ্বকে হুমকির সম্মুখীন করে রেখেছে। এখন এই নিত্যনুতন মারণাস্ত্রের ধনঝনায় মানব সভ্যতা ধ্বংসের মুখোমুখি। আর এর ভয়াবহতা অনুমান করেই তথাগত বুদ্ধ আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে এই ব্যবসা নিষিদ্ধ করেছিলেন। আজ গোটা বিশ্বব্যাপী যুদ্ধংদেহী ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বুদ্ধের কথায় যুদ্ধ মঙ্গলময় নয়, কারণ, যুদ্ধে জয়লূাভ করেও মানুষ প্রকৃত সুখী হতে পারে না; জয় বৈরিতার জন্ম দেয়। আর যিনি পরাজিত হন, তিনি দুঃখে কাল কাটান। কিন্তু, বাস্তবে যার জয়-পরাজয় নেই; তিনিই প্রকৃত সুখী। বুদ্ধের ভাষায় জগতে শত্রুতা দ্বারা শত্রুতাকে জয় করা যায় না, শত্রুতাকে মৈত্রী দিয়েই জয় করতে হয়।

এহেন অবস্থায় আজকের পবিত্র বুদ্ধ পূর্ণিমার আবেদন অত্যন্ত বেশি। আজকের দিনে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করি ভগবান বুদ্ধের অমর বাণী, সাম্য, মৈত্রী, করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষাকে। আসুন আমরা বৈশ্বিক মহামারীকে জয় করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, যারা অকালে-অসময়ে পরলোকবাসী হয়েছেন, তাদের জন্য পারলৌকিক শান্তি কামনা করি, যারা অসুস্থ হয়ে চিকিৎসায় আছেন, তারা সুস্থ হয়ে ফিরে যাক, মানুষে-মানুষে সাম্য ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠা করি। বৈরীদের মাঝে অবৈরী হয়ে বসবাস করি। কামনা হোক যারা ভয়প্রাপ্ত, যারা দুঃখপ্রাপ্ত, যারা শোকপ্রাপ্ত- তারা ভয় মুক্ত, শোকমুক্ত ও দুঃখমুক্ত হোক। বাংলাদেশসহ সাড়া পৃথিবী সুখময় ও সমৃদ্ধিময় হোক।

সব্বে সত্তা সুখিতা হোন্তু। বিশ্বের সব প্রাণী সুখী হোক।

[লেখক : সভাপতি ইন্টারন্যাশনাল বুডিডস্ট কাউন্সিল অব ফ্রান্স]

বুধবার, ২৬ মে ২০২১ , ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৩ শাওয়াল ১৪৪২

মহামানব বুদ্ধ

সীবলী বডুয়া

image

আজ ২৬ মে ২৫৬৫ বুদ্ধাব্দ; ত্রি-স্মৃতিবিজড়িত বৌদ্ধ ধর্মীয় তিথি পবিত্র বুদ্ধ পূর্ণিমা। এটা সমগ্র বিশ্বের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব। মহামানব গৌতম বুদ্ধ (গৃহী নাম- সিদ্ধার্থ ) খ্রিস্টপূর্ব ৬২৪ অব্দে জন্ম হয় নেপালের লুম্বিনী নামক বনের উন্মুক্ত আকাশতলে। ৩৫ বৎসর বয়সে বোধিলাভ বা বুদ্ধত্ব লাভ করেন- ভারতের গয়া জেলার নৈরন্জনা নদীর তীরে বোধিবৃক্ষ মূলে এবং ৮০ বৎসর বয়সে সোপাদিশেষ নির্বান লাভ করেন - ভারতের কাশীনগরের উন্মুক্ত আকাশতলে শালবৃক্ষমূলে। এই তিনটি প্রধান ঘটনা এই একই শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে সংগঠিত হয়েছিল। একজন মহামানবের জীবনে তিনটি ঘটনার সমন্বয় একই তিথিতে বিধায় অত্যন্ত গুরুত্ববহ এবং আবেদনময়।

জাতিসংঘ ১৫ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সাল থেকে এই দিনটিকে “বেশাখ ডে” হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালন করে আসছে।

বুদ্ধ পূর্ণিমা অত্যন্ত তাৎপর্যম-িত। এই দিনেই বিশ্ব মানবতার উন্মেষ ঘটেছিল। মানুষে- মানুষে সাম্য প্রতিষ্ঠার সর্বপ্রথম উদ্যোগ এসেছিল বুদ্ধ পূর্ণিমার এই শুভলগ্ন থেকে। তথাগত বুদ্ধ বুদ্ধত্ব লাভের পর ঘোষণা দিয়েছিলেন- জগতের সব মানুষ সমান। মানুষে- মানুষে কোন বৈষম্য নেই। পরবর্তীকালে তিনি ভিক্ষুসংঘ প্রতিষ্ঠা করে এর দৃঢ ভিত্তিস্থাপন করেছিলেন। তার ভিক্ষুসংঘে স্থান পেয়েছিল- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র, অন্তজ প্রভৃতি শ্রেণীর মানুষ। এটা যেন গঙ্গা, যমুনা, পদ্মা নদীর একই স্রোতধারায় মিশে যাওয়া- তেমনি করে সব বর্ণ, গোত্র ও শ্রেণীর মানুষ ভিক্ষু সংঘে প্রবেশ করে সাম্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজকের এই বর্ণবিদ্বেষ ও জাতি বৈষম্যের অভিশাপে জর্জরিত বিশ্বে তথাগতের মানব- মৈত্রীর বাণী অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

দুঃখ আছে, দুঃখের কারণ আছে, দুঃখের নিরোধ আছে এবং দুঃখ নিরোধের উপায় আছে। এই চারি আর্যসত্য হলো গৌতম বুদ্ধের ধর্মের মূল স্তম্ভ। বুদ্ধ, তৃষ্ণাকে দুঃখের কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন এবং সেই দুঃখ খেকে পরিত্রাণের উপায় হিসাবে- সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক জীবিকা, সম্যক কর্ম, সম্যক প্রচেষ্টা, সম্যক স্মৃতি ও সম্যক সমাধি নামক আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ বা পথের কথা বলেছেন। এই পথ মধ্যম পথ; যে পথ অনুসরণ করে তথাগত গৌতম অভিসম্বুদ্ধ হয়েছিলেন।

এটাকে শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞা- এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্য শীল হলো চরিত্র। যার চরিত্র নির্মল হবে, তিনি সমাধিতে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন। আর সমাধি হলেই তার চিত্ত প্রজ্ঞার পরিপূর্ণ হবে। আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ বা পথকে মানুষের জীবনবেদও বলা চলে। কেননা এই পথ বা দিক-নির্দেশনাগুলো পৃথিবীর সব মানুষের জন্য একান্ত পালনীয়। এর মাধ্যমেই মানুষ সৎ, পবিত্র, সুন্দর এবং সুখী হতে পারে; লোভ হিংসামুক্ত হয়ে সুখে বিচরণ করতে পারে। ভগবান বুদ্ধের মতে মানুষের জীবিকা হতে হবে সৎ। অসৎ পথে যে আয় তা মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। তাই , তিনি পঞ্চ বাণিজ্য (প্রাণী বাণিজ্য, মাংস বাণিজ্য, বিষ বাণিজ্য, অস্ত্র বাণিজ্য এবং মাদকদ্রব্য বাণিজ্য) নিষিদ্ধ করেছেন। আমরা যদি মহাকারণিক বুদ্ধের এই নির্দেশ মেনে চলি, তবে পৃথিবীতে অশান্তির কোন অবকাশ থাকবে না।

বর্তমানে এমন বৈশ্বিক মহামারীতে প্রতিদিন কত জীবন অকালে ঝড়ে যাচ্ছে, কতলোক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার মধ্যেও বৃহৎ রাষ্ট্রগুলো অত্যাধুনিক নুতন নুতন মারণাস্ত্র তৈরি করেই যাচ্ছে এবং সেই অস্ত্র দরিদ্র ও ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিক্রির জন্য কি নগ্ন এবং তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু করেছে, যা সমগ্র বিশ্বকে হুমকির সম্মুখীন করে রেখেছে। এখন এই নিত্যনুতন মারণাস্ত্রের ধনঝনায় মানব সভ্যতা ধ্বংসের মুখোমুখি। আর এর ভয়াবহতা অনুমান করেই তথাগত বুদ্ধ আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে এই ব্যবসা নিষিদ্ধ করেছিলেন। আজ গোটা বিশ্বব্যাপী যুদ্ধংদেহী ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বুদ্ধের কথায় যুদ্ধ মঙ্গলময় নয়, কারণ, যুদ্ধে জয়লূাভ করেও মানুষ প্রকৃত সুখী হতে পারে না; জয় বৈরিতার জন্ম দেয়। আর যিনি পরাজিত হন, তিনি দুঃখে কাল কাটান। কিন্তু, বাস্তবে যার জয়-পরাজয় নেই; তিনিই প্রকৃত সুখী। বুদ্ধের ভাষায় জগতে শত্রুতা দ্বারা শত্রুতাকে জয় করা যায় না, শত্রুতাকে মৈত্রী দিয়েই জয় করতে হয়।

এহেন অবস্থায় আজকের পবিত্র বুদ্ধ পূর্ণিমার আবেদন অত্যন্ত বেশি। আজকের দিনে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করি ভগবান বুদ্ধের অমর বাণী, সাম্য, মৈত্রী, করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষাকে। আসুন আমরা বৈশ্বিক মহামারীকে জয় করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, যারা অকালে-অসময়ে পরলোকবাসী হয়েছেন, তাদের জন্য পারলৌকিক শান্তি কামনা করি, যারা অসুস্থ হয়ে চিকিৎসায় আছেন, তারা সুস্থ হয়ে ফিরে যাক, মানুষে-মানুষে সাম্য ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠা করি। বৈরীদের মাঝে অবৈরী হয়ে বসবাস করি। কামনা হোক যারা ভয়প্রাপ্ত, যারা দুঃখপ্রাপ্ত, যারা শোকপ্রাপ্ত- তারা ভয় মুক্ত, শোকমুক্ত ও দুঃখমুক্ত হোক। বাংলাদেশসহ সাড়া পৃথিবী সুখময় ও সমৃদ্ধিময় হোক।

সব্বে সত্তা সুখিতা হোন্তু। বিশ্বের সব প্রাণী সুখী হোক।

[লেখক : সভাপতি ইন্টারন্যাশনাল বুডিডস্ট কাউন্সিল অব ফ্রান্স]