নিম গাছের চারা পাল্টে দিয়েছে লেবু মিয়ার ভাগ্যের চাকা। ডিঙ্গি নৌকার মতো তরতর করে দুর্বার গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তার নার্সারি ব্যবসার এই নৌকা। এক বিঘা জমির নিম গাছের চারা দিয়ে শুরু করা তার এই ছোট্ট ব্যবসা আজ ২৫ বিঘায় রূপ নিয়েছে। তার নার্সারিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে ১৫ পরিবার। লেবু মিয়ার মতো আজ তারাও স্বচ্ছল।
নীলফামারী সদর উপজেলার কচুকাটা ইউনিয়নের কচুকাটা হাইস্কুল সংলগ্ন বন্দরপাড়া এলাকার লেবু মিয়া জীবিকার তাগিদে এক সময় ফেরি করে কাপড় বিক্রি করত। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে এ ব্যবসায় তেমন একটা মুনাফা হতো না। যা হতো তা দিয়ে টেনে টেনে চলত সংসার। এ ব্যবসা করোনাকালীন খুঁজতে থাকেন ভিন্ন ব্যবসা। শুরু করেন পুকুর ভাড়া নিয়ে মাছ চাষের ব্যবসা। এ ব্যবসা কিছুদিন করার পরে আশানুররূপ মুনাফা না হওয়ায় সেটিও ছেড়ে দিয়ে এক বিঘা জমি বন্ধক নিয়ে তাতে নিম গাছের বীজ রোপণ করেন। এই এক বিঘা জমির নিম চারা বিক্রি করে তার প্রচুর মুনাফা হয়। এতে তিনি ঝুঁকে পড়েন নার্সারি ব্যবসার দিকে। এভাবে পর্যায়ক্রমে নিজের আট বিঘা ও অন্যের ১৭ বিঘা জমি নিয়ে নার্সারি ব্যবসা করতে থাকেন। আজ তিনি একজন সফল নার্সারি ব্যবসায়ী।
স্ত্রী ও দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে লেবু মিয়ার সংসার। ছোট ছেলে এ আর মামুন রংপুর সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করছে। মেয়ে মাহামুদা আক্তার লিহা নীলফামারী সরকারি মহিলা কলেজে এইচএসসির ছাত্রী। ছোট ছেলে ও মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পেরে আজ গর্বিত বাবা।
লেবু মিয়া জানান, নার্সারি ব্যবসাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পেছনে সক্রিয়ভাবে তাকে সহযোগিতা করছে ছোট ছেলে এ আর মামুন। তার শ্রম আর মেধা নার্সারি ব্যবসাকে সফলতার শীর্ষে নিয়ে গেছে। এছাড়াও বন বিভাগের কর্মকর্তা মাহবুবার রহমান নানান পরামর্শ দিয়ে তাকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। প্রতিবছর জেলা পর্যায়ে চারা মেলায় তার এ আর মামুন নার্সারি অংশ নেয় এবং প্রতিবারই প্রথম স্থান অর্জন করে। তার নার্সারির নাম আজ সকলের মুখে মুখে।
তিনি আরও জানান, এখন গাছ থেকে কলম (গ্রাফটিং) করে নিজেরাই চারা উৎপাদন করছেন। নার্সারিতে ফলজ, বনজ, ভেষজ ও শোভাবদ্ধনসহ ছয়শ’র বেশি দেশি ও বিদেশি জাতের চারা রয়েছে। নার্সারিতে ফলজ গাছের মধ্যে অন্যতম কমলার জাত সাদকি, দার্জিলিং, পাকিস্তানী, থাই ও জর্ডান, মালটার জাত বাড়ি-১, বাউ-৩, ওয়াশিংটন নেভাল, সাউথ আফ্রিকান ইয়োলো, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম, থাই জমবুরা, এবাকাডো ফল, ম্যাঙ্গোস্টিন ফল গাছ, এফ্রিকট গাছ, পিনাটবাটার, ফুলচান, রামবুটান, মালবেরী, ভেষজ গাছ যেমন ক্যান্সার প্রতিরোধক করোসল গাছ, ননীফল গাছ, ডায়াবেটিক গাছ যেমন গোয়নূরা প্রোগাম্বেস, ডাইবেটিক আম গাছের চারা রয়েছে। গাছ ও প্রকৃতিকে ভালবেসে প্রতিষ্ঠিত এ নার্সারি দেখতে প্রতি মৌসুমে কৃষি ও বন বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তা পরিদর্শন করে তাকে দিয়েছে উৎসাহ।
নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, তার নার্সারির সফলতা শুনে আমি মুগ্ধ হয়েছি। মামুন নার্সারি আজ অনুকরণীয়। তার নার্সারি মতো আরও অনেকে নার্সারি ব্যবসায় এগিয়ে এলে অনায়াসেই স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।
বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১ , ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ শাওয়াল ১৪৪২
জেলা বার্তা পরিবেশক, নীলফামারী
নিম গাছের চারা পাল্টে দিয়েছে লেবু মিয়ার ভাগ্যের চাকা। ডিঙ্গি নৌকার মতো তরতর করে দুর্বার গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তার নার্সারি ব্যবসার এই নৌকা। এক বিঘা জমির নিম গাছের চারা দিয়ে শুরু করা তার এই ছোট্ট ব্যবসা আজ ২৫ বিঘায় রূপ নিয়েছে। তার নার্সারিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে ১৫ পরিবার। লেবু মিয়ার মতো আজ তারাও স্বচ্ছল।
নীলফামারী সদর উপজেলার কচুকাটা ইউনিয়নের কচুকাটা হাইস্কুল সংলগ্ন বন্দরপাড়া এলাকার লেবু মিয়া জীবিকার তাগিদে এক সময় ফেরি করে কাপড় বিক্রি করত। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে এ ব্যবসায় তেমন একটা মুনাফা হতো না। যা হতো তা দিয়ে টেনে টেনে চলত সংসার। এ ব্যবসা করোনাকালীন খুঁজতে থাকেন ভিন্ন ব্যবসা। শুরু করেন পুকুর ভাড়া নিয়ে মাছ চাষের ব্যবসা। এ ব্যবসা কিছুদিন করার পরে আশানুররূপ মুনাফা না হওয়ায় সেটিও ছেড়ে দিয়ে এক বিঘা জমি বন্ধক নিয়ে তাতে নিম গাছের বীজ রোপণ করেন। এই এক বিঘা জমির নিম চারা বিক্রি করে তার প্রচুর মুনাফা হয়। এতে তিনি ঝুঁকে পড়েন নার্সারি ব্যবসার দিকে। এভাবে পর্যায়ক্রমে নিজের আট বিঘা ও অন্যের ১৭ বিঘা জমি নিয়ে নার্সারি ব্যবসা করতে থাকেন। আজ তিনি একজন সফল নার্সারি ব্যবসায়ী।
স্ত্রী ও দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে লেবু মিয়ার সংসার। ছোট ছেলে এ আর মামুন রংপুর সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করছে। মেয়ে মাহামুদা আক্তার লিহা নীলফামারী সরকারি মহিলা কলেজে এইচএসসির ছাত্রী। ছোট ছেলে ও মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পেরে আজ গর্বিত বাবা।
লেবু মিয়া জানান, নার্সারি ব্যবসাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পেছনে সক্রিয়ভাবে তাকে সহযোগিতা করছে ছোট ছেলে এ আর মামুন। তার শ্রম আর মেধা নার্সারি ব্যবসাকে সফলতার শীর্ষে নিয়ে গেছে। এছাড়াও বন বিভাগের কর্মকর্তা মাহবুবার রহমান নানান পরামর্শ দিয়ে তাকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। প্রতিবছর জেলা পর্যায়ে চারা মেলায় তার এ আর মামুন নার্সারি অংশ নেয় এবং প্রতিবারই প্রথম স্থান অর্জন করে। তার নার্সারির নাম আজ সকলের মুখে মুখে।
তিনি আরও জানান, এখন গাছ থেকে কলম (গ্রাফটিং) করে নিজেরাই চারা উৎপাদন করছেন। নার্সারিতে ফলজ, বনজ, ভেষজ ও শোভাবদ্ধনসহ ছয়শ’র বেশি দেশি ও বিদেশি জাতের চারা রয়েছে। নার্সারিতে ফলজ গাছের মধ্যে অন্যতম কমলার জাত সাদকি, দার্জিলিং, পাকিস্তানী, থাই ও জর্ডান, মালটার জাত বাড়ি-১, বাউ-৩, ওয়াশিংটন নেভাল, সাউথ আফ্রিকান ইয়োলো, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম, থাই জমবুরা, এবাকাডো ফল, ম্যাঙ্গোস্টিন ফল গাছ, এফ্রিকট গাছ, পিনাটবাটার, ফুলচান, রামবুটান, মালবেরী, ভেষজ গাছ যেমন ক্যান্সার প্রতিরোধক করোসল গাছ, ননীফল গাছ, ডায়াবেটিক গাছ যেমন গোয়নূরা প্রোগাম্বেস, ডাইবেটিক আম গাছের চারা রয়েছে। গাছ ও প্রকৃতিকে ভালবেসে প্রতিষ্ঠিত এ নার্সারি দেখতে প্রতি মৌসুমে কৃষি ও বন বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তা পরিদর্শন করে তাকে দিয়েছে উৎসাহ।
নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, তার নার্সারির সফলতা শুনে আমি মুগ্ধ হয়েছি। মামুন নার্সারি আজ অনুকরণীয়। তার নার্সারি মতো আরও অনেকে নার্সারি ব্যবসায় এগিয়ে এলে অনায়াসেই স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।