১৩ জুন স্কুল-কলেজ খোলার পরিকল্পনা

আগামী ১৩ জুন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মূলত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পাঠদানের লক্ষে সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে এর বাস্তবায়ন নির্ভর করছে দেশের করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির ওপর। সংক্রমণ বাড়লে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে।

দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ‘খুব বেশি প্রতিকূল না হলে’ এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের মধ্যে এলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।’

যদিও গত কয়েকদিনে দেশে করোনা শনাক্ত বেড়েছে। গতকাল দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৯ দশমিক ১১ শতাংশ। এর আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ০৮ শতাংশ, ২৪ মে তা ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, ২৩ মে শনাক্তের হার ছিল ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং ২২ মে শনাক্তের হার ছিল ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ।

গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসার পর মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল শিক্ষা প্রশাসনের। কিন্তু মার্চের শুরুতে ফের বাড়তে থাকে সংক্রমণ। এক পর্যায়ে সংক্রমণের হার ২৪ শতাংশেও উঠেছিল।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ১৩ জুন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ১২ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হয়।

বিশ^বিদ্যালয় খুলে দেয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী জানান, শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে।

এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরোপুরি শ্রেণী কার্যক্রম হচ্ছে না জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী জানান, ‘পর্যায়ক্রমে কারও ছয় দিন হবে, কারও একদিন হবে। যারা ২০২১ সালে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা দেবে তারা সপ্তাহে ছয় দিন এবং অন্য ক্লাসগুলোর একদিন ক্লাস হবে এবং পর্যায়ক্রমে এটা বাড়ানো হবে।’ দুই মাসের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি খুলে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে করোনা সংক্রমণের ওপর।

ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা প্রথমে সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস করবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমে আমরা দেখব কত দ্রুততার সঙ্গে তাদের ক্লাসটা একদিন থেকে সময়টা বাড়ানো যায়। এরপর ক্রমাগত বাড়িয়ে দুই, তিন, চারদিন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে পূর্ণাঙ্গভাবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চলবে।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ কর্মদিবস এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৮৪ কর্মদিবস ক্লাস নেয়া হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এর দুই সপ্তাহ পর পরীক্ষা নেয়া হবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ক্লাস শুরুর পরে জানিয়ে দেয়া হবে।

আলাদাভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা নেই জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘কোথাও কোথাও বন্ধ রাখা, কোথাও খুলে দেয়া- এটাও বলছেন অনেকে। কিন্তু আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কোথাও খুলব, কোথাও খুলব না; সেক্ষেত্রে অসাম্য আরও বেশি তৈরি হবে।’

করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত বছরের পঞ্চম শ্রেণী ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করেছে সরকার। এবারও এই পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ বছরের প্রায় অর্ধেক শেষ হতে চললেও এখন পর্যন্ত শ্রেণীকক্ষে বসতে পারছে না ছাত্রছাত্রীরা।

সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা স্কুলগুলো খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পঞ্চম শ্রেণীগুলো সপ্তাহে ছয়দিন এবং বাকিগুলো একদিন করে ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এখন আমরাও ১৩ জুন থেকে স্কুলগুলো খোলার চেষ্টা করব।’

তবে অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার বিষয়ে কোন পরিকল্পনা হয়নি জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘জেএসসির ব্যাপারে আমরা ভাবছি অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে যদি এটা করা সম্ভব হয়, সেটি আমরা দেখব। পরীক্ষা নেবার মতো পরিস্থিতি থাকলে সেদিকে আমরা যাব। তা না হলে অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করব।’

অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়ার পর খুলবে বিশ^বিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকাদান নিশ্চিত করার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু এতদিন ৪০ বছরের নিচে কাউকে শিক্ষাদানের পরিকল্পনা ছিল না। এ কারণে শিক্ষার্থীরা টিকা পেয়েছে কী না সেটা নিশ্চিত হয়। টিকা স্বল্পতার কারণে প্রথম পর্যায়ের টিকাদান কর্মসূচিও বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

তবে চীন সরকারের কাছে উপহার হিসেবে পাওয়া পাঁচ লাখ ডোজ টিকা ২৫ মে থেকে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হয়েছে; বিশেষ করে এমবিবিএসের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়া হচ্ছে। কারণ টিকাদান শেষে তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে সম্পৃক্ত করা হতে পারে।

সাধারণ বিশ^বিদ্যালয়ের টিকাদান শুরু হবে আগামী ২ জুন। চীন আরও ছয় লাখ ডোজ টিকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে, সেগুলো কবে আসবে তা নিশ্চিত নয়। চীনা টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৪২টি পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পৌনে সাত লাখ, সরকারি ও বেসরকারি ১০৫টি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫৩ হাজার এবং ১০৭টি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় দুই লাখ।

সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে সাত লাখ শিক্ষার্থীকে করোনা টিকার আওতায় আনতে হলে প্রায় ১৫ লাখ ডোজ টিকার দরকার। তাছাড়াও শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের টিকা দিলেই হবে না; সব বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী টিকা পেয়েছেন কীনা সেটিও নিশ্চিত নয়। জুনের মধ্যে সরকার চীন, রাশিয়া ও ভারত থেকে টিকা পাওয়ার আশা করছে। জুনে আরও টিকা পেলেও সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীর দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করতে জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি খুলে দেয়ার পরিকল্পনাও পিছিয়ে যেতে পারে।

বিশ^বিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকাদানের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আবাসিক হলগুলোতে অনেক ভিড় আছে, আমরা সেটি দেখছি। টিকা দেয়ার ব্যাপারে আমরা তথ্যগুলো চেয়েছি ইউজিসির মাধ্যমে, কতজন টিকা পেয়েছেন। আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই ৪০ বছরের নিচে। তাই আমরা ধরেই নিয়েছি তাদের অধিকাংশেরই টিকা দিতে হবে এবং কাজটি আমরা দ্রুত শুরু করতে পারব। প্রথম ডোজ দিলেই তো হবে না, দ্বিতীয় ডোজও দিতে হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমাদের আরেকটু চিন্তা করতে হচ্ছে।’

এক বছরের বেশি সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে জানিয়ে দীপু মনি কলেন, ‘যেহেতু আমরা এখন নানা ধরনের প্রযুক্তির ওপর নির্ভর হয়ে গেছি, তাই সেই ক্ষতিটা আরও কম সময়ে আমরা পূরণ করতে পারব।’

করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেক দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সরকারের সবশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ২৯ মে পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা ছিল। গতকালের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ছুটি আরও বাড়ল।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে যুক্ত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১ , ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ শাওয়াল ১৪৪২

১৩ জুন স্কুল-কলেজ খোলার পরিকল্পনা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

আগামী ১৩ জুন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মূলত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পাঠদানের লক্ষে সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে এর বাস্তবায়ন নির্ভর করছে দেশের করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির ওপর। সংক্রমণ বাড়লে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে।

দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ‘খুব বেশি প্রতিকূল না হলে’ এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের মধ্যে এলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।’

যদিও গত কয়েকদিনে দেশে করোনা শনাক্ত বেড়েছে। গতকাল দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৯ দশমিক ১১ শতাংশ। এর আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ০৮ শতাংশ, ২৪ মে তা ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, ২৩ মে শনাক্তের হার ছিল ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং ২২ মে শনাক্তের হার ছিল ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ।

গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসার পর মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল শিক্ষা প্রশাসনের। কিন্তু মার্চের শুরুতে ফের বাড়তে থাকে সংক্রমণ। এক পর্যায়ে সংক্রমণের হার ২৪ শতাংশেও উঠেছিল।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ১৩ জুন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ১২ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হয়।

বিশ^বিদ্যালয় খুলে দেয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী জানান, শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে।

এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরোপুরি শ্রেণী কার্যক্রম হচ্ছে না জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী জানান, ‘পর্যায়ক্রমে কারও ছয় দিন হবে, কারও একদিন হবে। যারা ২০২১ সালে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা দেবে তারা সপ্তাহে ছয় দিন এবং অন্য ক্লাসগুলোর একদিন ক্লাস হবে এবং পর্যায়ক্রমে এটা বাড়ানো হবে।’ দুই মাসের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি খুলে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে করোনা সংক্রমণের ওপর।

ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা প্রথমে সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস করবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমে আমরা দেখব কত দ্রুততার সঙ্গে তাদের ক্লাসটা একদিন থেকে সময়টা বাড়ানো যায়। এরপর ক্রমাগত বাড়িয়ে দুই, তিন, চারদিন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে পূর্ণাঙ্গভাবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চলবে।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ কর্মদিবস এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৮৪ কর্মদিবস ক্লাস নেয়া হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এর দুই সপ্তাহ পর পরীক্ষা নেয়া হবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ক্লাস শুরুর পরে জানিয়ে দেয়া হবে।

আলাদাভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা নেই জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘কোথাও কোথাও বন্ধ রাখা, কোথাও খুলে দেয়া- এটাও বলছেন অনেকে। কিন্তু আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কোথাও খুলব, কোথাও খুলব না; সেক্ষেত্রে অসাম্য আরও বেশি তৈরি হবে।’

করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত বছরের পঞ্চম শ্রেণী ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করেছে সরকার। এবারও এই পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ বছরের প্রায় অর্ধেক শেষ হতে চললেও এখন পর্যন্ত শ্রেণীকক্ষে বসতে পারছে না ছাত্রছাত্রীরা।

সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা স্কুলগুলো খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পঞ্চম শ্রেণীগুলো সপ্তাহে ছয়দিন এবং বাকিগুলো একদিন করে ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এখন আমরাও ১৩ জুন থেকে স্কুলগুলো খোলার চেষ্টা করব।’

তবে অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার বিষয়ে কোন পরিকল্পনা হয়নি জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘জেএসসির ব্যাপারে আমরা ভাবছি অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে যদি এটা করা সম্ভব হয়, সেটি আমরা দেখব। পরীক্ষা নেবার মতো পরিস্থিতি থাকলে সেদিকে আমরা যাব। তা না হলে অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করব।’

অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়ার পর খুলবে বিশ^বিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকাদান নিশ্চিত করার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু এতদিন ৪০ বছরের নিচে কাউকে শিক্ষাদানের পরিকল্পনা ছিল না। এ কারণে শিক্ষার্থীরা টিকা পেয়েছে কী না সেটা নিশ্চিত হয়। টিকা স্বল্পতার কারণে প্রথম পর্যায়ের টিকাদান কর্মসূচিও বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

তবে চীন সরকারের কাছে উপহার হিসেবে পাওয়া পাঁচ লাখ ডোজ টিকা ২৫ মে থেকে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হয়েছে; বিশেষ করে এমবিবিএসের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়া হচ্ছে। কারণ টিকাদান শেষে তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে সম্পৃক্ত করা হতে পারে।

সাধারণ বিশ^বিদ্যালয়ের টিকাদান শুরু হবে আগামী ২ জুন। চীন আরও ছয় লাখ ডোজ টিকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে, সেগুলো কবে আসবে তা নিশ্চিত নয়। চীনা টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৪২টি পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পৌনে সাত লাখ, সরকারি ও বেসরকারি ১০৫টি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫৩ হাজার এবং ১০৭টি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় দুই লাখ।

সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে সাত লাখ শিক্ষার্থীকে করোনা টিকার আওতায় আনতে হলে প্রায় ১৫ লাখ ডোজ টিকার দরকার। তাছাড়াও শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের টিকা দিলেই হবে না; সব বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী টিকা পেয়েছেন কীনা সেটিও নিশ্চিত নয়। জুনের মধ্যে সরকার চীন, রাশিয়া ও ভারত থেকে টিকা পাওয়ার আশা করছে। জুনে আরও টিকা পেলেও সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীর দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করতে জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি খুলে দেয়ার পরিকল্পনাও পিছিয়ে যেতে পারে।

বিশ^বিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকাদানের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আবাসিক হলগুলোতে অনেক ভিড় আছে, আমরা সেটি দেখছি। টিকা দেয়ার ব্যাপারে আমরা তথ্যগুলো চেয়েছি ইউজিসির মাধ্যমে, কতজন টিকা পেয়েছেন। আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই ৪০ বছরের নিচে। তাই আমরা ধরেই নিয়েছি তাদের অধিকাংশেরই টিকা দিতে হবে এবং কাজটি আমরা দ্রুত শুরু করতে পারব। প্রথম ডোজ দিলেই তো হবে না, দ্বিতীয় ডোজও দিতে হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমাদের আরেকটু চিন্তা করতে হচ্ছে।’

এক বছরের বেশি সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে জানিয়ে দীপু মনি কলেন, ‘যেহেতু আমরা এখন নানা ধরনের প্রযুক্তির ওপর নির্ভর হয়ে গেছি, তাই সেই ক্ষতিটা আরও কম সময়ে আমরা পূরণ করতে পারব।’

করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেক দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সরকারের সবশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ২৯ মে পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা ছিল। গতকালের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ছুটি আরও বাড়ল।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে যুক্ত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।