দু’জনেই ৫ দিনের রিমান্ডে
পরকীয়ার জেরে রাজধানীর দক্ষিণখানে গার্মেন্ট কর্মী আজহারুলকে (৩০) তার স্ত্রীর পরিকল্পনায় খুন করে মসজিদের ইমাম আবদুর রহমান। গত মঙ্গলবার রাতে র্যাবের হাতে আজহারুলের স্ত্রী আসমা বেগম গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানা গেছে। র্যাব জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে আসমা বেগম নিজেকে এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে স্বীকার করেছেন। তার নির্দেশেই ইমাম আবদুর রহমান পরিকল্পিতভাবে আজহারুল ইসলামকে হত্যা করে।
রাজধানীর দক্ষিণখান সরদার বাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে গার্মেন্ট কর্মী আজহারুলের ছয় টুকরা লাশ উদ্ধারের ঘটনার দায়ের করা মামলায় মসজিদের ইমাম আবদুর রহমান ও নিহতের স্ত্রী আসমা বেগমকে পৃথকভাবে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার এসআই অনুজ কুমার সরকার প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আসামিদের ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করেন। মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসি রিমান্ড শুনানি শেষে ৫ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার ভোরে দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে আজহারুলের ছয় টুকরা লাশ উদ্ধারের পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে র্যাব আবদুল্লাহপুর থেকে নিহতের স্ত্রী আসমা বেগমকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে নিহতের ছোট ভাই মোহাম্মদ হাসান বাদী হয়ে আসমা বেগম ও সরদার বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম আবদুর রহমানকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসমার পরিকল্পনায় খুন
মঙ্গলবার রাতে র্যাবের হাতে আসমা বেগম গ্রেপ্তার হওয়ার পর র্যাব প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ইমামের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। প্রেমের সম্পর্ক গভীর করার জন্য তার স্বামী ও চার বছরের সন্তানকে কোরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য ইমামকে বাসায় আসতে দেন। এভাবেই তাদের পরকীয়ার সম্পর্ক চলছিল। কিন্তু মার্চ মাসে আজহারুল বিষয়টি টের পেয়ে যান। এরপরই আজহার বাসা পরিবর্তন করে দক্ষিণখানের মধুবাগ এলাকার হাজী মার্কেটের সামনে চলে যান। এতেও চিড় ধরেনি আসমা-ইমামের সম্পর্কে। নিয়মিত দেখা হতো তাদের। তারা কথোপকথনের জন্য পৃথক মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন। গার্মেন্টে চাকরি করতে যাওয়ার পর সারাদিন মোবাইল ফোনে ইমামের সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন।
এ বিষয়টি তার ছেলে স্বামীকে জানিয়ে দেয়। এরপর থেকে আসমা তার স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন। এ নিয়ে তিনি ইমামের সঙ্গে কথাও বলেন। ইমামকে ভাড়াটিয়া কিলার গ্রুপ ঠিক করতে বলেন। কিন্তু ইমাম তাকে জানান, ভাড়াটিয়া কিলার গ্রুপ দিয়ে হত্যা করলে ঘটনা যে কোন সময় ফাঁস হয়ে যেতে পারে। এ কারণে তিনি নিজেই হত্যা করার কথা বলেন। ঈদ উদযাপন করতে আজহারুল স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে তার নিজ বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে চলে যান। তখন আসমা বেগম পরকীয়ার বিষয়টি নিয়ে নিজেই তার স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করে ঝগড়া বাধিয়ে দেন। আসমার পরিকল্পনা হচ্ছে, তার স্বামী ঢাকায় চাকরিতে গিয়ে একবার হলেও ইমামের সঙ্গে দেখা করলে, তাকে খুন করবে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঈদ পরবর্তীতে ১৯ মে আজহারুল তার স্ত্রী ও সন্তানকে টাঙ্গাইলের বাড়িতে রেখে ঢাকায় আসেন। ওইদিন গার্মেন্টেসে ডিউটি করে সন্ধ্যার পর আজহারুল চলে যান সরদার বাড়ি জামে মসজিদে ইমামের সঙ্গে দেখা করার জন্য। ওই দিন এশার নামাজ মসজিদে আদায় করার পর বিষয়টি নিয়ে আলাপ করার জন্য তিনি ও ইমাম একসঙ্গে ইমামের কক্ষে যান। সেখানে স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার বিষয়টি নিয়ে ইমামের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ইমাম কক্ষে রাখা গরু জবাই করা ছুরি দিয়ে আজহারুলের শরীরে দুইটি আঘাত করে। আজহারুল ওই কক্ষ থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে ইমাম গলায় উপর্যুপরি কোপ দেয়। এতেই আজহারুল নিহত হয়। পরে রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ইমাম পর্যায়ক্রমে আজহারুলের মৃতদেহ ছুরি ও চাপাতি দিয়ে ছয় টুকরা করে। ফজরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগেই ইমাম একেকটি টুকরা মসজিদের নিচতলায় সিঁড়ির নিচে সেফটিক ট্যাংকে ফেলে দেন। তিনি নিজের কক্ষের এবং সেপটিক ট্যাংকের আশপাশের রক্তের দাগ পরিষ্কার করেন। এরপর ঢাকনার ওপর দুইটি সিমেন্টের বস্তা রেখে দেন।
দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক বলেন, এই ঘটনায় আসমা ও আবদুর রহমানকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১ , ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ শাওয়াল ১৪৪২
দু’জনেই ৫ দিনের রিমান্ডে
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
পরকীয়ার জেরে রাজধানীর দক্ষিণখানে গার্মেন্ট কর্মী আজহারুলকে (৩০) তার স্ত্রীর পরিকল্পনায় খুন করে মসজিদের ইমাম আবদুর রহমান। গত মঙ্গলবার রাতে র্যাবের হাতে আজহারুলের স্ত্রী আসমা বেগম গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানা গেছে। র্যাব জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে আসমা বেগম নিজেকে এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে স্বীকার করেছেন। তার নির্দেশেই ইমাম আবদুর রহমান পরিকল্পিতভাবে আজহারুল ইসলামকে হত্যা করে।
রাজধানীর দক্ষিণখান সরদার বাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে গার্মেন্ট কর্মী আজহারুলের ছয় টুকরা লাশ উদ্ধারের ঘটনার দায়ের করা মামলায় মসজিদের ইমাম আবদুর রহমান ও নিহতের স্ত্রী আসমা বেগমকে পৃথকভাবে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার এসআই অনুজ কুমার সরকার প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আসামিদের ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করেন। মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসি রিমান্ড শুনানি শেষে ৫ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার ভোরে দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে আজহারুলের ছয় টুকরা লাশ উদ্ধারের পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে র্যাব আবদুল্লাহপুর থেকে নিহতের স্ত্রী আসমা বেগমকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে নিহতের ছোট ভাই মোহাম্মদ হাসান বাদী হয়ে আসমা বেগম ও সরদার বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম আবদুর রহমানকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসমার পরিকল্পনায় খুন
মঙ্গলবার রাতে র্যাবের হাতে আসমা বেগম গ্রেপ্তার হওয়ার পর র্যাব প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ইমামের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। প্রেমের সম্পর্ক গভীর করার জন্য তার স্বামী ও চার বছরের সন্তানকে কোরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য ইমামকে বাসায় আসতে দেন। এভাবেই তাদের পরকীয়ার সম্পর্ক চলছিল। কিন্তু মার্চ মাসে আজহারুল বিষয়টি টের পেয়ে যান। এরপরই আজহার বাসা পরিবর্তন করে দক্ষিণখানের মধুবাগ এলাকার হাজী মার্কেটের সামনে চলে যান। এতেও চিড় ধরেনি আসমা-ইমামের সম্পর্কে। নিয়মিত দেখা হতো তাদের। তারা কথোপকথনের জন্য পৃথক মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন। গার্মেন্টে চাকরি করতে যাওয়ার পর সারাদিন মোবাইল ফোনে ইমামের সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন।
এ বিষয়টি তার ছেলে স্বামীকে জানিয়ে দেয়। এরপর থেকে আসমা তার স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন। এ নিয়ে তিনি ইমামের সঙ্গে কথাও বলেন। ইমামকে ভাড়াটিয়া কিলার গ্রুপ ঠিক করতে বলেন। কিন্তু ইমাম তাকে জানান, ভাড়াটিয়া কিলার গ্রুপ দিয়ে হত্যা করলে ঘটনা যে কোন সময় ফাঁস হয়ে যেতে পারে। এ কারণে তিনি নিজেই হত্যা করার কথা বলেন। ঈদ উদযাপন করতে আজহারুল স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে তার নিজ বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে চলে যান। তখন আসমা বেগম পরকীয়ার বিষয়টি নিয়ে নিজেই তার স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করে ঝগড়া বাধিয়ে দেন। আসমার পরিকল্পনা হচ্ছে, তার স্বামী ঢাকায় চাকরিতে গিয়ে একবার হলেও ইমামের সঙ্গে দেখা করলে, তাকে খুন করবে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঈদ পরবর্তীতে ১৯ মে আজহারুল তার স্ত্রী ও সন্তানকে টাঙ্গাইলের বাড়িতে রেখে ঢাকায় আসেন। ওইদিন গার্মেন্টেসে ডিউটি করে সন্ধ্যার পর আজহারুল চলে যান সরদার বাড়ি জামে মসজিদে ইমামের সঙ্গে দেখা করার জন্য। ওই দিন এশার নামাজ মসজিদে আদায় করার পর বিষয়টি নিয়ে আলাপ করার জন্য তিনি ও ইমাম একসঙ্গে ইমামের কক্ষে যান। সেখানে স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার বিষয়টি নিয়ে ইমামের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ইমাম কক্ষে রাখা গরু জবাই করা ছুরি দিয়ে আজহারুলের শরীরে দুইটি আঘাত করে। আজহারুল ওই কক্ষ থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে ইমাম গলায় উপর্যুপরি কোপ দেয়। এতেই আজহারুল নিহত হয়। পরে রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ইমাম পর্যায়ক্রমে আজহারুলের মৃতদেহ ছুরি ও চাপাতি দিয়ে ছয় টুকরা করে। ফজরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগেই ইমাম একেকটি টুকরা মসজিদের নিচতলায় সিঁড়ির নিচে সেফটিক ট্যাংকে ফেলে দেন। তিনি নিজের কক্ষের এবং সেপটিক ট্যাংকের আশপাশের রক্তের দাগ পরিষ্কার করেন। এরপর ঢাকনার ওপর দুইটি সিমেন্টের বস্তা রেখে দেন।
দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক বলেন, এই ঘটনায় আসমা ও আবদুর রহমানকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।