নাটোরে এমপি শিমুলের ভাগ্নে অন্তর কারাগারে

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী লাঞ্ছিত ও অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় এমপি শিমুলের ভাগ্নে নাফিউল ইসলাম অন্তরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার নাটোর শহরের বড়গাছা এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের ভাগ্নে পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর নাফিউল ইসলাম অন্তরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে নাটোরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস ভবন, পরিদর্শন বাংলো মেরামত ও সংরক্ষণ কাজে নি¤œমানের টাইলস ব্যবহারে সম্মতি না দেয়ায় বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হানকে মারপিট ও অফিসে ভাঙচুর করার অভিযোগে অন্তরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। অন্তর জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও ঠিকাদার মীর আমিরুল ইসলাম জাহানের ছেলে। গত সোমবার বিকেল ৫টায় ঘটনাটি ঘটলেও মামলা দায়ের করা হয় রাত ১১টায়। তবে ঘটনার সময় ঠিকাদার মীর আমিরুল ইসলাম জাহান ও তার ম্যানেজার উপস্থিত থাকলেও তাদের আসামি করা হয়নি। ওইদিন নাটোর থানায় মামলা দায়ের করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান।

নাটোর থানায় দায়ের করা এজাহার সূত্রে জানা যায়, নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস চত্বরে প্রায় ৪০ লাখ টাকার নির্মাণাধীন একটি প্রকল্প কার্যালয়ের ভবন নির্মাণের দায়িত্ব পান রংপুরের ঠিকাদার হাসিবুল হাসান। তার প্রতিনিধি হিসেবে ভবনটি নির্মাণ করছিলেন নাটোরের ঠিকাদার অন্তর ও তার বাবা আমিরুল ইসলাম জাহান।

সোমবার দুপুরে আমিরুল ইসলাম জাহান বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হানকে ফোন করে জানান, তার নির্দেশিত টাইলস ভবনে লাগানো যাবে না। ওই টাইলস লাগালে খরচ বেশি হবে। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে তিনি ও তার ছেলে অন্তর, ম্যানেজার রাজিব হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে গিয়ে অকথ্যভাষায় গালাগাল করতে শুরু করেন।

এক পর্যায়ে ঠিকাদার অন্তর হত্যার উদ্দেশে প্রকৌশলী আবু রায়হানের গলা চেপে ধরেন এবং কিলঘুষি মারতে থাকেন। এতে তার ঠোঁট কেটে রক্তপাত হয়। এ সময় অফিসের অন্যরা এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করেন। প্রকৌশলী তাৎক্ষণিক ঘটনাটি নাটোরের পুলিশ সুপারকে জানান। পরে পুলিশ এসে কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘটনার ব্যাপারে কথা বলেন। আহত প্রকৌশলীকে প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর তাকে রাজশাহীতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি বাড়িতেই চিকিৎসকের পরামর্শে রয়েছেন।

এদিকে সোমবার রাত ১১টায় নির্বাহী প্রকৌশলী বাদী হয়ে হামলাকারী নাফিউল ইসলাম অন্তরের বিরুদ্ধে সদর থানায় সরকারি কাজে বাধা প্রদান, ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন।

প্রকৌশলী আবু রায়হান বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভবনের টাইলস লাগানোর কাজ করছেন ঠিকাদার আমিরুল ইসলাম জাহান। সেখানে শিডিউল মোতাবেক টাইলস লাগাতে বললে ঠিকাদার তাতে অস্বীকৃতি জানায়। সোমবার এসব বিষয়ে অফিসে এসে কথা বলতে চায় ঠিকাদার। এ সময় অকথ্য ভাষায় আমাকে গালাগাল করতে থাকেন ঠিকাদার আমিরুল ইসলাম ও তার ছেলে অন্তর।

তিনি আরও বলেন, ‘গালাগাল না করে ভদ্রভাবে কথা বললে ঠিকাদারের ছেলে অন্তর উত্তেজিত হয়ে আমাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এতে আমার ঠোঁট কেটে যায় এবং হাত, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত লাগে।

প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘আমি জেনেছি আমার মামলায় হত্যাচেষ্টার ধারা যুক্ত করা হয়নি এবং শুধু একজনকে আসামি করা হয়েছে।’ এ ব্যাপারে তার কোন অভিযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তো আইনের এতসব বুঝি না। পুলিশ সবকিছু দেখছে।’

এ বিষয়ে পুলিশের কাছে গ্রেপ্তারের আগে অন্তরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বাবা ইসলাম কনস্ট্রাশনের স্বত্বাধিকারী মীর আমিরুল ইসলাম জাহানের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

নাটোর সদর থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকারি কাজে বাধা প্রদান, মারধর এবং হত্যার হুমকির কথা উল্লেখ করে প্রকৌশলী আবু রায়হান স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা অন্তরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এ ঘটনায় আসামি অন্তরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১ , ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ শাওয়াল ১৪৪২

প্রকৌশলী লাঞ্ছিত

নাটোরে এমপি শিমুলের ভাগ্নে অন্তর কারাগারে

প্রতিনিধি, নাটোর

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী লাঞ্ছিত ও অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় এমপি শিমুলের ভাগ্নে নাফিউল ইসলাম অন্তরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার নাটোর শহরের বড়গাছা এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের ভাগ্নে পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর নাফিউল ইসলাম অন্তরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে নাটোরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস ভবন, পরিদর্শন বাংলো মেরামত ও সংরক্ষণ কাজে নি¤œমানের টাইলস ব্যবহারে সম্মতি না দেয়ায় বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হানকে মারপিট ও অফিসে ভাঙচুর করার অভিযোগে অন্তরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। অন্তর জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও ঠিকাদার মীর আমিরুল ইসলাম জাহানের ছেলে। গত সোমবার বিকেল ৫টায় ঘটনাটি ঘটলেও মামলা দায়ের করা হয় রাত ১১টায়। তবে ঘটনার সময় ঠিকাদার মীর আমিরুল ইসলাম জাহান ও তার ম্যানেজার উপস্থিত থাকলেও তাদের আসামি করা হয়নি। ওইদিন নাটোর থানায় মামলা দায়ের করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান।

নাটোর থানায় দায়ের করা এজাহার সূত্রে জানা যায়, নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস চত্বরে প্রায় ৪০ লাখ টাকার নির্মাণাধীন একটি প্রকল্প কার্যালয়ের ভবন নির্মাণের দায়িত্ব পান রংপুরের ঠিকাদার হাসিবুল হাসান। তার প্রতিনিধি হিসেবে ভবনটি নির্মাণ করছিলেন নাটোরের ঠিকাদার অন্তর ও তার বাবা আমিরুল ইসলাম জাহান।

সোমবার দুপুরে আমিরুল ইসলাম জাহান বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হানকে ফোন করে জানান, তার নির্দেশিত টাইলস ভবনে লাগানো যাবে না। ওই টাইলস লাগালে খরচ বেশি হবে। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে তিনি ও তার ছেলে অন্তর, ম্যানেজার রাজিব হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে গিয়ে অকথ্যভাষায় গালাগাল করতে শুরু করেন।

এক পর্যায়ে ঠিকাদার অন্তর হত্যার উদ্দেশে প্রকৌশলী আবু রায়হানের গলা চেপে ধরেন এবং কিলঘুষি মারতে থাকেন। এতে তার ঠোঁট কেটে রক্তপাত হয়। এ সময় অফিসের অন্যরা এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করেন। প্রকৌশলী তাৎক্ষণিক ঘটনাটি নাটোরের পুলিশ সুপারকে জানান। পরে পুলিশ এসে কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘটনার ব্যাপারে কথা বলেন। আহত প্রকৌশলীকে প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর তাকে রাজশাহীতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি বাড়িতেই চিকিৎসকের পরামর্শে রয়েছেন।

এদিকে সোমবার রাত ১১টায় নির্বাহী প্রকৌশলী বাদী হয়ে হামলাকারী নাফিউল ইসলাম অন্তরের বিরুদ্ধে সদর থানায় সরকারি কাজে বাধা প্রদান, ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন।

প্রকৌশলী আবু রায়হান বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভবনের টাইলস লাগানোর কাজ করছেন ঠিকাদার আমিরুল ইসলাম জাহান। সেখানে শিডিউল মোতাবেক টাইলস লাগাতে বললে ঠিকাদার তাতে অস্বীকৃতি জানায়। সোমবার এসব বিষয়ে অফিসে এসে কথা বলতে চায় ঠিকাদার। এ সময় অকথ্য ভাষায় আমাকে গালাগাল করতে থাকেন ঠিকাদার আমিরুল ইসলাম ও তার ছেলে অন্তর।

তিনি আরও বলেন, ‘গালাগাল না করে ভদ্রভাবে কথা বললে ঠিকাদারের ছেলে অন্তর উত্তেজিত হয়ে আমাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এতে আমার ঠোঁট কেটে যায় এবং হাত, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত লাগে।

প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘আমি জেনেছি আমার মামলায় হত্যাচেষ্টার ধারা যুক্ত করা হয়নি এবং শুধু একজনকে আসামি করা হয়েছে।’ এ ব্যাপারে তার কোন অভিযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তো আইনের এতসব বুঝি না। পুলিশ সবকিছু দেখছে।’

এ বিষয়ে পুলিশের কাছে গ্রেপ্তারের আগে অন্তরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বাবা ইসলাম কনস্ট্রাশনের স্বত্বাধিকারী মীর আমিরুল ইসলাম জাহানের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

নাটোর সদর থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকারি কাজে বাধা প্রদান, মারধর এবং হত্যার হুমকির কথা উল্লেখ করে প্রকৌশলী আবু রায়হান স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা অন্তরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এ ঘটনায় আসামি অন্তরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।