পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অমানবিক

করোনা মহামারীর মধ্যেই আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে প্রতি ১ হাজার লিটারে পানির দাম ৫ শতাংশ হারে বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা। আগামী ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর হবে। গত সোমবার ওয়াসার বোর্ডসভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নতুন দর অনুযায়ী আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম দাঁড়াবে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। যা বর্তমানে ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা। আর বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম দিতে হবে ৪২ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ টাকা।

মহামারীর এ সময়ে পানির দাম বাড়ানো অমানবিক। এ সময় অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অনেকের আয় কমে গেছে। নতুন করে পানির দাম বাড়লে তাতে মানুষের অস্বস্তি বাড়বে। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। মহামারীর সময় এর আগেও এক দফা পানির দাম বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় দাম বাড়ানো নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্টও। কিন্তু ওয়াসা তার সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি। ওয়াসা পানির দাম গত ১৩ বছরে ১৩ বার বাড়িয়েছে। এবার মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে মোট ১৪ বার পানির দাম বাড়বে।

ক্রমান্বয়ে পানির দাম বাড়লেও ওয়াসার সেবার মান যে বাড়েনি এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বেশিরভাগ জায়গায়, বিশেষত ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে, পরিষেবাটি নিম্নমানের। গত বছরের এপ্রিলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায়ও গ্রাহকদের অসন্তুষ্টির বিষয়টি উঠে এসেছিল। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা ওয়াসার সেবায় গ্রাহকদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি অসন্তুষ্ট। ওয়াসার পানিতে ময়লা, দুর্গন্ধ থাকায় মানুষের ভোগান্তি কতটা, তা বোঝাতে ২০১৯ সালের এপ্রিলে মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি ওয়াসার পানি দিয়ে বানানো শরবত খাওয়াতে চেয়েছিলেন সংস্থার এমডিকে। কিন্তু ওয়াসার এমডি নিজেই নিজের সংস্থার পানি খাননি। অথচ পরিষেবার মান উন্নত না করে, প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়ম দূর না করে প্রতিনিয়তই পানির দাম বাড়িয়ে চলেছে ঢাকা ওয়াসা।

পানির মতো একটি সংবেদনশীল সেবা খাতে বারবার দাম বাড়ানোর পদক্ষেপ সমর্থনযোগ্য নয়। দাম বাড়ানোর চেয়ে বরং দুর্নীতি ও সিস্টেম লস কমানো উচিত। যেসব বাসাবাড়ি বা এলাকায় পানি নেই এবং নোংরা ময়লা পানি আসছে, সেসব এলাকায় দ্রুত নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। বছরের পর বছর কীভাবে নোংরা, দূষিত পানি সরবরাহ করল ওয়াসা, সে বিষয় তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১ , ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ শাওয়াল ১৪৪২

পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অমানবিক

করোনা মহামারীর মধ্যেই আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে প্রতি ১ হাজার লিটারে পানির দাম ৫ শতাংশ হারে বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা। আগামী ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর হবে। গত সোমবার ওয়াসার বোর্ডসভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নতুন দর অনুযায়ী আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম দাঁড়াবে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। যা বর্তমানে ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা। আর বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম দিতে হবে ৪২ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ টাকা।

মহামারীর এ সময়ে পানির দাম বাড়ানো অমানবিক। এ সময় অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অনেকের আয় কমে গেছে। নতুন করে পানির দাম বাড়লে তাতে মানুষের অস্বস্তি বাড়বে। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। মহামারীর সময় এর আগেও এক দফা পানির দাম বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় দাম বাড়ানো নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্টও। কিন্তু ওয়াসা তার সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি। ওয়াসা পানির দাম গত ১৩ বছরে ১৩ বার বাড়িয়েছে। এবার মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে মোট ১৪ বার পানির দাম বাড়বে।

ক্রমান্বয়ে পানির দাম বাড়লেও ওয়াসার সেবার মান যে বাড়েনি এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বেশিরভাগ জায়গায়, বিশেষত ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে, পরিষেবাটি নিম্নমানের। গত বছরের এপ্রিলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায়ও গ্রাহকদের অসন্তুষ্টির বিষয়টি উঠে এসেছিল। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা ওয়াসার সেবায় গ্রাহকদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি অসন্তুষ্ট। ওয়াসার পানিতে ময়লা, দুর্গন্ধ থাকায় মানুষের ভোগান্তি কতটা, তা বোঝাতে ২০১৯ সালের এপ্রিলে মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি ওয়াসার পানি দিয়ে বানানো শরবত খাওয়াতে চেয়েছিলেন সংস্থার এমডিকে। কিন্তু ওয়াসার এমডি নিজেই নিজের সংস্থার পানি খাননি। অথচ পরিষেবার মান উন্নত না করে, প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়ম দূর না করে প্রতিনিয়তই পানির দাম বাড়িয়ে চলেছে ঢাকা ওয়াসা।

পানির মতো একটি সংবেদনশীল সেবা খাতে বারবার দাম বাড়ানোর পদক্ষেপ সমর্থনযোগ্য নয়। দাম বাড়ানোর চেয়ে বরং দুর্নীতি ও সিস্টেম লস কমানো উচিত। যেসব বাসাবাড়ি বা এলাকায় পানি নেই এবং নোংরা ময়লা পানি আসছে, সেসব এলাকায় দ্রুত নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। বছরের পর বছর কীভাবে নোংরা, দূষিত পানি সরবরাহ করল ওয়াসা, সে বিষয় তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।