টিকা সংকটে দ্বিতীয় ডোজের কী হবে?

শফিকুর রহমান

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে উৎকণ্ঠা ও ভয় শেষ না হতেই ঈদের ছুটির পর থেকে দেশে আবার করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনা পরিস্থিতি নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশের সীমান্ত রাজ্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও করোনার অধিক সংক্রমণশীল ভ্যারিয়েন্টগুলো ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে আক্রান্তের হার ও মৃত্যুর মিছিল দিন দিন বেড়েই চলেছে। করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টগুলো পাশের দেশ নেপালেও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। কাজেই, এ সময় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টগুলোকে প্রতিরোধ করে ঠেকিয়ে রাখা এবং টিকা কার্যক্রম জোরদার করা বাংলাদেশের জন্য সবচে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

টিকার মাধ্যমে অন্তত ৭০-৮০ শতাংশ মানুষের হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা ছাড়া করোনা মহামারি থেকে মুক্তির আপাতত কোন পথ নেই, বিধায় শুরু থেকেই বিভিন্ন দেশ ভিন্ন ভিন্ন উৎস থেকে তাদের চাহিদার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ডোজ টিকা সংগ্রহের জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ধনী দেশগুলোর মধ্যে কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া তাদের মোট চাহিদার যথাক্রমে ৪০০, ২৯৫ ও ২৬৯ শতাংশ ডোজ করোনার টিকা বিভিন্ন কোম্পানিতে বুকিং দিয়ে রেখেছে। যেখানে আমাদের বাংলাদেশের চাহিদা হচ্ছে ২০-২৫ কোটি ডোজ, সেখানে আমরা কেবল ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা কোভিশিল্ডের মাত্র ৩ কোটি ডোজের জন্য বুকিং দিয়ে রেখেছি এবং কয়েক কোটি ডোজ গাভি পরিচালিত কোভ্যাক্স থেকে পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। ভারত সরকার টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে সেরাম থেকে আমাদের টিকা সংগ্রহে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার জন্য প্রায় ১৪.৫ লাখ ডোজ টিকার অভাব রয়েছে।

টিকা সংকটের কারণে এখন যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ নিয়ে দুমাস পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন না, তারা কি করবেন? তারা কী দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষা করবেন, নাকি অন্য কোম্পানির বা ব্র্যান্ডের টিকা মিশ্র বা বুস্টার ডোজ হিসেবে দ্বিতীয় ডোজ নেবেন, এ প্রশ্নটি এখন সামনে এসেছে।

কানাডা ও যুক্তরাজ্যে অধিকসংখ্যক লোককে দ্রুত টিকার আওতায় এনে করোনা থেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকাসহ সব টিকার প্রথম ডোজ দেয়ার ১৬ সপ্তাহ বা চার মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হচ্ছে। এতে টিকাগুলোর কার্যকারিতায় কোন কমতি দেখা যায়নি। কাজেই, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ডোজ সংকটের কারণে আমাদের দেশেও প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যবর্তী সময় বাড়িয়ে ১৬ সপ্তাহ করলে এর মধ্যে দ্বিতীয় ডোজের ঘাটতি পূরণে চেষ্টা করা যেতে পারে।

যুক্তরাজ্যের এক গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, প্রথম ডোজের চেয়ে আলাদা ব্র্যান্ডের থেকে কডিড-১৯ টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়া অধিক নিরাপদ। তবে দ্বিতীয়টি শরীরে হালকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি দেখায় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে মাথাব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, পেশী ব্যথা, ঠা-া লাগা বা জ্বর আসার সম্ভাবনা বেশি। এ গবেষণায় ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সী ৮৩০ জনকে চার সপ্তাহের ব্যবধানে মিশ্র টিকা ডোজ দেয়া হয়েছিল এবং ল্যানসেট জার্নালের একটি গবেষণামূলক চিঠিতে প্রাথমিক ফলাফলগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের সমীক্ষায় দেখা গেছে, টিকার মিশ্র ডোজে ফাইজারের পরে যারা দ্বিতীয় বুস্টার শট হিসাবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ ও যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার পরে দ্বিতীয় বুস্টার শট হিসাবে ফাইজার নিয়েছেন তাদের ৩৪ শতাংশ হালকা জ্বরজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বোধ করেছেন। তবে, এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো কোন উপসর্গ দেখা যায়নি।

সম্প্রতি স্পেনের একটি গবেষণায় করোনা টিকার মিশ্র ডোজ নিয়ে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। প্রথম ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার এবং দ্বিতীয় ডোজ মর্ডানা বা ফাইজারের টিকা দেয়ার ফলে মানুষের শরীরের অ্যান্টিবডি ৩০-৪০ গুণ বেড়েছে বলে স্পেনের এ গবেষণা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

গবেষণার এসব ফলফল আসার আগেই মিশ্র ডোজ দেয়া শুরু করেছিল ফ্রান্স। দেশটিতে প্রথম ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধার অভিযোগ ওঠার কারণে টিকাটির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয় এবং অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম ডোজ পাওয়া সবাইকে ফাইজারের তৈরি টিকা দ্বিতীয় ডোজ হিসাবে দেয়া শুরু করে। এতে মারাত্মক কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এজন্য যদি অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ চার মাসের মধ্যে দেয়া সম্ভব না হয়, তবে মিশ্র ডোজ হিসাবে অন্য কোম্পানির টিকা বুস্টার বা দ্বিতীয় ডোজ হিসাবে দিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজের টিকা ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজের টিকা একই ধরনের এবং একই পদ্ধতিতে তৈরি। তাছাড়া ভাইরাসের ফ্লু টিকাগুলো সাধারণত এক ডোজের হয় এবং প্রতি বছরই এক ডোজ করে নিতে হয়। কাজেই, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ চার মাসের মধ্যে না নিতে পারলেও পরবর্তীতে যখন টিকা পাওয়া যাবে তখন নিলেও হবে, এতে দুশ্চিন্তার কারণ নেই।

টিকা সংগ্রহে শুধু ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার খেসারত এখন দিতে হচ্ছে আমাদের। যদি টিকা সংগ্রহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও গাছাড়া ভাবের কারণে এমনটি বা বিলম্ব হয়ে থাকে, তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে হলেও জনগণের সুরক্ষার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে করোনা টিকা উৎপাদনকারী সবগুলো উৎস থেকেই পর্যাপ্তসংখ্যক ডোজ টিকা দ্রুত আনার ব্যবস্থা করে করোনা মোকাবিলায় সরকারের অর্জনকে সমুন্নত রাখা খুবই জরুরি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশের সব নাগরিককে টিকার আওতায় আনার জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক ডোজ করোনা টিকা এ বছরের মধ্যে শুধু ভারত, চীন ও রাশিয়া থেকে সংগ্রহ করা মোটেও সম্ভব নয়। তাই আমরা আশা করব বাংলাদেশ সরকার পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে টিকা সংগ্রহে ভারত, চীন ও রাশিয়ার ওপর একমাত্র নির্ভরশীল না থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যসহ সব উৎস থেকেই অতি দ্রুত টিকা সংগ্রহের কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করে দেশের নাগরিকদের করোনা থেকে সুরক্ষা দেবে। পাশাপাশি সরকার আমাদের দেশেও করোনা টিকা উৎপাদনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দেরি করবে না বলে আমাদের প্রত্যাশা।

[লেখক : অধ্যাপক, মাইক্রোবাুয়োলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়]

বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১ , ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ শাওয়াল ১৪৪২

টিকা সংকটে দ্বিতীয় ডোজের কী হবে?

শফিকুর রহমান

image

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে উৎকণ্ঠা ও ভয় শেষ না হতেই ঈদের ছুটির পর থেকে দেশে আবার করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনা পরিস্থিতি নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশের সীমান্ত রাজ্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও করোনার অধিক সংক্রমণশীল ভ্যারিয়েন্টগুলো ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে আক্রান্তের হার ও মৃত্যুর মিছিল দিন দিন বেড়েই চলেছে। করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টগুলো পাশের দেশ নেপালেও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। কাজেই, এ সময় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টগুলোকে প্রতিরোধ করে ঠেকিয়ে রাখা এবং টিকা কার্যক্রম জোরদার করা বাংলাদেশের জন্য সবচে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

টিকার মাধ্যমে অন্তত ৭০-৮০ শতাংশ মানুষের হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা ছাড়া করোনা মহামারি থেকে মুক্তির আপাতত কোন পথ নেই, বিধায় শুরু থেকেই বিভিন্ন দেশ ভিন্ন ভিন্ন উৎস থেকে তাদের চাহিদার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ডোজ টিকা সংগ্রহের জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ধনী দেশগুলোর মধ্যে কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া তাদের মোট চাহিদার যথাক্রমে ৪০০, ২৯৫ ও ২৬৯ শতাংশ ডোজ করোনার টিকা বিভিন্ন কোম্পানিতে বুকিং দিয়ে রেখেছে। যেখানে আমাদের বাংলাদেশের চাহিদা হচ্ছে ২০-২৫ কোটি ডোজ, সেখানে আমরা কেবল ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা কোভিশিল্ডের মাত্র ৩ কোটি ডোজের জন্য বুকিং দিয়ে রেখেছি এবং কয়েক কোটি ডোজ গাভি পরিচালিত কোভ্যাক্স থেকে পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। ভারত সরকার টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে সেরাম থেকে আমাদের টিকা সংগ্রহে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার জন্য প্রায় ১৪.৫ লাখ ডোজ টিকার অভাব রয়েছে।

টিকা সংকটের কারণে এখন যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ নিয়ে দুমাস পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন না, তারা কি করবেন? তারা কী দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষা করবেন, নাকি অন্য কোম্পানির বা ব্র্যান্ডের টিকা মিশ্র বা বুস্টার ডোজ হিসেবে দ্বিতীয় ডোজ নেবেন, এ প্রশ্নটি এখন সামনে এসেছে।

কানাডা ও যুক্তরাজ্যে অধিকসংখ্যক লোককে দ্রুত টিকার আওতায় এনে করোনা থেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকাসহ সব টিকার প্রথম ডোজ দেয়ার ১৬ সপ্তাহ বা চার মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হচ্ছে। এতে টিকাগুলোর কার্যকারিতায় কোন কমতি দেখা যায়নি। কাজেই, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ডোজ সংকটের কারণে আমাদের দেশেও প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যবর্তী সময় বাড়িয়ে ১৬ সপ্তাহ করলে এর মধ্যে দ্বিতীয় ডোজের ঘাটতি পূরণে চেষ্টা করা যেতে পারে।

যুক্তরাজ্যের এক গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, প্রথম ডোজের চেয়ে আলাদা ব্র্যান্ডের থেকে কডিড-১৯ টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়া অধিক নিরাপদ। তবে দ্বিতীয়টি শরীরে হালকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি দেখায় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে মাথাব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, পেশী ব্যথা, ঠা-া লাগা বা জ্বর আসার সম্ভাবনা বেশি। এ গবেষণায় ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সী ৮৩০ জনকে চার সপ্তাহের ব্যবধানে মিশ্র টিকা ডোজ দেয়া হয়েছিল এবং ল্যানসেট জার্নালের একটি গবেষণামূলক চিঠিতে প্রাথমিক ফলাফলগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের সমীক্ষায় দেখা গেছে, টিকার মিশ্র ডোজে ফাইজারের পরে যারা দ্বিতীয় বুস্টার শট হিসাবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ ও যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার পরে দ্বিতীয় বুস্টার শট হিসাবে ফাইজার নিয়েছেন তাদের ৩৪ শতাংশ হালকা জ্বরজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বোধ করেছেন। তবে, এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো কোন উপসর্গ দেখা যায়নি।

সম্প্রতি স্পেনের একটি গবেষণায় করোনা টিকার মিশ্র ডোজ নিয়ে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। প্রথম ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার এবং দ্বিতীয় ডোজ মর্ডানা বা ফাইজারের টিকা দেয়ার ফলে মানুষের শরীরের অ্যান্টিবডি ৩০-৪০ গুণ বেড়েছে বলে স্পেনের এ গবেষণা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

গবেষণার এসব ফলফল আসার আগেই মিশ্র ডোজ দেয়া শুরু করেছিল ফ্রান্স। দেশটিতে প্রথম ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধার অভিযোগ ওঠার কারণে টিকাটির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয় এবং অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম ডোজ পাওয়া সবাইকে ফাইজারের তৈরি টিকা দ্বিতীয় ডোজ হিসাবে দেয়া শুরু করে। এতে মারাত্মক কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এজন্য যদি অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ চার মাসের মধ্যে দেয়া সম্ভব না হয়, তবে মিশ্র ডোজ হিসাবে অন্য কোম্পানির টিকা বুস্টার বা দ্বিতীয় ডোজ হিসাবে দিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজের টিকা ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজের টিকা একই ধরনের এবং একই পদ্ধতিতে তৈরি। তাছাড়া ভাইরাসের ফ্লু টিকাগুলো সাধারণত এক ডোজের হয় এবং প্রতি বছরই এক ডোজ করে নিতে হয়। কাজেই, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ চার মাসের মধ্যে না নিতে পারলেও পরবর্তীতে যখন টিকা পাওয়া যাবে তখন নিলেও হবে, এতে দুশ্চিন্তার কারণ নেই।

টিকা সংগ্রহে শুধু ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার খেসারত এখন দিতে হচ্ছে আমাদের। যদি টিকা সংগ্রহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও গাছাড়া ভাবের কারণে এমনটি বা বিলম্ব হয়ে থাকে, তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে হলেও জনগণের সুরক্ষার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে করোনা টিকা উৎপাদনকারী সবগুলো উৎস থেকেই পর্যাপ্তসংখ্যক ডোজ টিকা দ্রুত আনার ব্যবস্থা করে করোনা মোকাবিলায় সরকারের অর্জনকে সমুন্নত রাখা খুবই জরুরি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশের সব নাগরিককে টিকার আওতায় আনার জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক ডোজ করোনা টিকা এ বছরের মধ্যে শুধু ভারত, চীন ও রাশিয়া থেকে সংগ্রহ করা মোটেও সম্ভব নয়। তাই আমরা আশা করব বাংলাদেশ সরকার পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে টিকা সংগ্রহে ভারত, চীন ও রাশিয়ার ওপর একমাত্র নির্ভরশীল না থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যসহ সব উৎস থেকেই অতি দ্রুত টিকা সংগ্রহের কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করে দেশের নাগরিকদের করোনা থেকে সুরক্ষা দেবে। পাশাপাশি সরকার আমাদের দেশেও করোনা টিকা উৎপাদনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দেরি করবে না বলে আমাদের প্রত্যাশা।

[লেখক : অধ্যাপক, মাইক্রোবাুয়োলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়]