শিক্ষা খাত ও বাজেট

মাছুম বিল্লাহ

করোনার অতিমারীতে যেসব খাতের চরম ক্ষতি হয়েছে সেগুলো দৃশ্যমান কিন্তু শিক্ষার ক্ষতি দৃশ্যমান নয়। আর তাই এটি বেশি ভয়াবহ, কারণ দৃশ্যমান নয় বলে এর প্রতিকারের পদক্ষেপ কী হবে সেটি নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।

৩ জুন ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট পেশ হতে যাচ্ছে। প্রতি বছরের মতো এবারো কি সেই চিরাচরিত বাজেটই পেশ করা হবে, নাকি নতুন কোন বিষয় অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছেÑ সেটি একটি প্রশ্ন। কারণ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ১৫ মাস যাবত বন্ধ, শিক্ষার্থীর একটি অংশ ইতোমধ্যে ঝরে পড়েছে, একটি অংশ আর বিদ্যালয়েই আসবে না। বাকিরা সাধারণ উপায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারছে না। এ বাস্তবতায় কেমন হওয়া উচিত এবারকার শিক্ষা বাজেট? করোনাকাল দীর্ঘায়িত হলে বিকল্প পাঠদানের কথা ভাবতেই হবে। সেটি ভার্চুয়াল ক্লাস, অনলাইন এবং ডিজিটাল ল্যাব তথা ক্লাসরুমের চিন্তা করতে হবে এবং দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। সেটি করতে হলে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী কোথাও বিনামূল্যে কোথাও স্বল্পসুদে ল্যাপটপ প্রদান, মোবাইল ডাটা, অ্যান্ড্রয়েড ফোন ক্রয়ের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অনলাইনে লেকচার-ক্লাস আপলোড, অনলাইনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, নম্বর প্রদানের সফটওয়্যার ক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের অনলাইনে পাঠদানের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। এগুলো সবই অর্থের সঙ্গে যুক্ত আর বাজেটও সেভাবে প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

বাজেটে অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি খরচের দিকনির্দেশনাও থাকতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে কোন খাত থেকে প্রাপ্ত অর্থ জমা-খরচের হিসাব রাখার জন্য প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়ে এরপর প্রয়োজনে উত্তোলন করে খরচ করতে হবে। এতে ব্যাংকে জমা-উত্তোলনের হিসাব থাকবে। দুর্নীতির সুযোগ কমবে। দুর্নীতি রুখতে হবে যে কোন মূল্যে; তা নাহলে সরকারের সব উন্নয়ন উদ্যোগ বিফলে যাবে। দেশের বাইরে যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে সেগুলো যদি দেশে থাকতো তাহলে শিক্ষাসহ সব ধরনের জরুরি খাতগুলোতে এখন সে অর্থ ব্যয় করা যেত।

চরম ক্ষতির শিকার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী ও ৫০ লাখ শিক্ষক। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতিও কম নয়। গণসাক্ষরতা অভিযানে সমীক্ষা অনুযায়ী ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ও দূরশিক্ষণ বা বেতার, টেলিভিশন, অনলাইনের বিভিন্ন প্লাটফর্ম এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেয়া পাঠদানের আওতায় এসেছে। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি ৯২ শতাংশ আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনের পাঠদানের আওতায় এসেছে।

পিপিআরসি ও বিআইজিডির গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের চিত্র আরো ভয়াবহ। অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো। ভাড়াবাড়িতে অল্প পুঁজিতে চলা এসব স্কুলের একটি অংশ বন্ধ হয়ে গেছে। শিশু শিক্ষার্থীরা অবাক বিস্ময়ে দেখছেÑ যে স্কুলে তারা লেখাপড়া করতো, সেটি রাতারাতি উধাও হয়ে গেছে। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এম ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, সারাদেশে প্রায় ৬৫ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল ছিল। এর অন্তত অর্ধেক করোনাকালে বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলোর শিক্ষক ও স্টাফরা না খেয়ে, একবেলা খেয়ে কোনরকম বেঁচে আছেন।

দেশের ইতিহাসে এই প্রথম বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে প্রথম বর্ষে কোন শিক্ষার্থী নেই। কারণ ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারেনি কোন বিশ^বিদ্যালয়। এটি কীভাবে জোড়া লাগানো যাবে কিংবা স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা হবে তার নির্দেশনাও বাজেটে থাকা বাঞ্ছনীয়। গত বছর অটোপাসের মাধ্যমে যারা এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, সেসব শিক্ষার্থীই প্রথমবর্ষে ভর্তি হওয়ার কথা। কিন্তু করোনার কারণে এখনো ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারেনি বিশ^বিদ্যালয়গুলো। সঠিক সময়ে ভর্তি কার্যক্রম শেষ হলে গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বর থেকে এসব শিক্ষার্থীর ক্লাস শুরু হয়ে যেত।

প্রতি বছর বাজেটে ফলাও করে বলা হয় যে, শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বাজেট। আকারের দিক থেকে হয়তো এটি সত্য কিন্তু শিক্ষার পরিবর্তনে এর কোন দৃশ্যমান প্রভাব পড়ে কিনা সেটি দেখতে হবে। বাজেটের আকারের চেয়ে অর্থ ব্যয়ের সদিচ্ছা, আন্তরিকতা এবং সর্বোপরি দক্ষতার বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এগুলোর সঙ্গে জড়িত সঠিক পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও সততা। শুধু এ খাতে এত টাকা ব্যয় হবে, এ টাকার এত শতাংশ আসবে প্রত্যক্ষ কর থেকে, বাকিটা দাতাগোষ্ঠী থেকে ইত্যাদি ইত্যাদি ঠিক আছে। কিন্তু এর সঙ্গে একটি কৌশলপত্রও থাকতে হবেÑ কীভাবে কোন সময়ের মধ্যে অর্থ ব্যয় হবে। সঙ্গে থাকতে হবে দুর্নীতি রোধের রক্ষাকবচও। এটি কীভাবে তৈরি করা সম্ভব?

সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয় নিজ নিজ বিষয়, উন্নয়ন, সংশোধন, ব্যয়সীমা, ব্যয়ের প্রকৃতি, পদ্ধতি ও দুর্নীতি রোধের উপায়সহ অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে এবং এর প্রতিটি বিষয় জনগণের কাছে উন্মুক্ত থাকতে হবে। জনগণের কাছ থেকে যতই বিষয়গুলো গোপন করা হবে, জনগণ ততই ঠকতে থাকবে। অন্ধকে হাইকোর্ট দেখানো সহজ হয় কিন্তু প্রকৃত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন উন্মুক্ত তথ্য অধিকার। যেমন আপনি সরকারি কোন দপ্তরে একটি দরখাস্ত করেছেন, আপনাকে জানতে হবে, কার কাছে সেটি করতে হবে এবং কতদিনের মধ্যে সেটির সুরাহা হবে। তা না জানলে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা (যারা মূলত জনগণের সেবক) জনগণকে অন্ধকারে রাখবেন, হাইকোর্ট দেখাবেনÑ সেবাদান হবে সুদূরপরাহত। রাষ্ট্রকে জানাতে হবে তার জনগণ রাষ্ট্রের কাছে কী কী পাবেন, কোন সময়ে পাবেন এবং কীভাবে পাবেন। এসব বিষয় জানালে রাষ্ট্র ও জনগণের মাঝে কোন গ্যাপ তৈরি হবে না, সেবা নিশ্চিত হবে। আর সেবা নিশ্চিত হলে বাজেটের বৃহত্তর অংশ সঠিক পথে, কাক্সিক্ষত পথে ব্যয় হবে। দুর্নীতি হ্রাস পাবে। এটি একটি চেইন। একটির সঙ্গে আরেকটি জড়িত।

[লেখক : ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত]

বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১ , ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ শাওয়াল ১৪৪২

শিক্ষা খাত ও বাজেট

মাছুম বিল্লাহ

করোনার অতিমারীতে যেসব খাতের চরম ক্ষতি হয়েছে সেগুলো দৃশ্যমান কিন্তু শিক্ষার ক্ষতি দৃশ্যমান নয়। আর তাই এটি বেশি ভয়াবহ, কারণ দৃশ্যমান নয় বলে এর প্রতিকারের পদক্ষেপ কী হবে সেটি নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।

৩ জুন ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট পেশ হতে যাচ্ছে। প্রতি বছরের মতো এবারো কি সেই চিরাচরিত বাজেটই পেশ করা হবে, নাকি নতুন কোন বিষয় অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছেÑ সেটি একটি প্রশ্ন। কারণ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ১৫ মাস যাবত বন্ধ, শিক্ষার্থীর একটি অংশ ইতোমধ্যে ঝরে পড়েছে, একটি অংশ আর বিদ্যালয়েই আসবে না। বাকিরা সাধারণ উপায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারছে না। এ বাস্তবতায় কেমন হওয়া উচিত এবারকার শিক্ষা বাজেট? করোনাকাল দীর্ঘায়িত হলে বিকল্প পাঠদানের কথা ভাবতেই হবে। সেটি ভার্চুয়াল ক্লাস, অনলাইন এবং ডিজিটাল ল্যাব তথা ক্লাসরুমের চিন্তা করতে হবে এবং দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। সেটি করতে হলে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী কোথাও বিনামূল্যে কোথাও স্বল্পসুদে ল্যাপটপ প্রদান, মোবাইল ডাটা, অ্যান্ড্রয়েড ফোন ক্রয়ের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অনলাইনে লেকচার-ক্লাস আপলোড, অনলাইনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, নম্বর প্রদানের সফটওয়্যার ক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের অনলাইনে পাঠদানের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। এগুলো সবই অর্থের সঙ্গে যুক্ত আর বাজেটও সেভাবে প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

বাজেটে অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি খরচের দিকনির্দেশনাও থাকতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে কোন খাত থেকে প্রাপ্ত অর্থ জমা-খরচের হিসাব রাখার জন্য প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়ে এরপর প্রয়োজনে উত্তোলন করে খরচ করতে হবে। এতে ব্যাংকে জমা-উত্তোলনের হিসাব থাকবে। দুর্নীতির সুযোগ কমবে। দুর্নীতি রুখতে হবে যে কোন মূল্যে; তা নাহলে সরকারের সব উন্নয়ন উদ্যোগ বিফলে যাবে। দেশের বাইরে যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে সেগুলো যদি দেশে থাকতো তাহলে শিক্ষাসহ সব ধরনের জরুরি খাতগুলোতে এখন সে অর্থ ব্যয় করা যেত।

চরম ক্ষতির শিকার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী ও ৫০ লাখ শিক্ষক। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতিও কম নয়। গণসাক্ষরতা অভিযানে সমীক্ষা অনুযায়ী ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ও দূরশিক্ষণ বা বেতার, টেলিভিশন, অনলাইনের বিভিন্ন প্লাটফর্ম এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেয়া পাঠদানের আওতায় এসেছে। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি ৯২ শতাংশ আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনের পাঠদানের আওতায় এসেছে।

পিপিআরসি ও বিআইজিডির গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের চিত্র আরো ভয়াবহ। অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো। ভাড়াবাড়িতে অল্প পুঁজিতে চলা এসব স্কুলের একটি অংশ বন্ধ হয়ে গেছে। শিশু শিক্ষার্থীরা অবাক বিস্ময়ে দেখছেÑ যে স্কুলে তারা লেখাপড়া করতো, সেটি রাতারাতি উধাও হয়ে গেছে। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এম ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, সারাদেশে প্রায় ৬৫ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল ছিল। এর অন্তত অর্ধেক করোনাকালে বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলোর শিক্ষক ও স্টাফরা না খেয়ে, একবেলা খেয়ে কোনরকম বেঁচে আছেন।

দেশের ইতিহাসে এই প্রথম বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে প্রথম বর্ষে কোন শিক্ষার্থী নেই। কারণ ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারেনি কোন বিশ^বিদ্যালয়। এটি কীভাবে জোড়া লাগানো যাবে কিংবা স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা হবে তার নির্দেশনাও বাজেটে থাকা বাঞ্ছনীয়। গত বছর অটোপাসের মাধ্যমে যারা এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, সেসব শিক্ষার্থীই প্রথমবর্ষে ভর্তি হওয়ার কথা। কিন্তু করোনার কারণে এখনো ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারেনি বিশ^বিদ্যালয়গুলো। সঠিক সময়ে ভর্তি কার্যক্রম শেষ হলে গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বর থেকে এসব শিক্ষার্থীর ক্লাস শুরু হয়ে যেত।

প্রতি বছর বাজেটে ফলাও করে বলা হয় যে, শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বাজেট। আকারের দিক থেকে হয়তো এটি সত্য কিন্তু শিক্ষার পরিবর্তনে এর কোন দৃশ্যমান প্রভাব পড়ে কিনা সেটি দেখতে হবে। বাজেটের আকারের চেয়ে অর্থ ব্যয়ের সদিচ্ছা, আন্তরিকতা এবং সর্বোপরি দক্ষতার বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এগুলোর সঙ্গে জড়িত সঠিক পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও সততা। শুধু এ খাতে এত টাকা ব্যয় হবে, এ টাকার এত শতাংশ আসবে প্রত্যক্ষ কর থেকে, বাকিটা দাতাগোষ্ঠী থেকে ইত্যাদি ইত্যাদি ঠিক আছে। কিন্তু এর সঙ্গে একটি কৌশলপত্রও থাকতে হবেÑ কীভাবে কোন সময়ের মধ্যে অর্থ ব্যয় হবে। সঙ্গে থাকতে হবে দুর্নীতি রোধের রক্ষাকবচও। এটি কীভাবে তৈরি করা সম্ভব?

সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয় নিজ নিজ বিষয়, উন্নয়ন, সংশোধন, ব্যয়সীমা, ব্যয়ের প্রকৃতি, পদ্ধতি ও দুর্নীতি রোধের উপায়সহ অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে এবং এর প্রতিটি বিষয় জনগণের কাছে উন্মুক্ত থাকতে হবে। জনগণের কাছ থেকে যতই বিষয়গুলো গোপন করা হবে, জনগণ ততই ঠকতে থাকবে। অন্ধকে হাইকোর্ট দেখানো সহজ হয় কিন্তু প্রকৃত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন উন্মুক্ত তথ্য অধিকার। যেমন আপনি সরকারি কোন দপ্তরে একটি দরখাস্ত করেছেন, আপনাকে জানতে হবে, কার কাছে সেটি করতে হবে এবং কতদিনের মধ্যে সেটির সুরাহা হবে। তা না জানলে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা (যারা মূলত জনগণের সেবক) জনগণকে অন্ধকারে রাখবেন, হাইকোর্ট দেখাবেনÑ সেবাদান হবে সুদূরপরাহত। রাষ্ট্রকে জানাতে হবে তার জনগণ রাষ্ট্রের কাছে কী কী পাবেন, কোন সময়ে পাবেন এবং কীভাবে পাবেন। এসব বিষয় জানালে রাষ্ট্র ও জনগণের মাঝে কোন গ্যাপ তৈরি হবে না, সেবা নিশ্চিত হবে। আর সেবা নিশ্চিত হলে বাজেটের বৃহত্তর অংশ সঠিক পথে, কাক্সিক্ষত পথে ব্যয় হবে। দুর্নীতি হ্রাস পাবে। এটি একটি চেইন। একটির সঙ্গে আরেকটি জড়িত।

[লেখক : ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত]