কাজলা নদীর পাড় দখল করে পুকুর খনন!

বাড়ি-ঘর ধসে পড়ার আশঙ্কা

গাংনীর কাজলা নদীর পাড় দখল করে ও নিজেদের জমিতে পুকুর খনন করছেন গাড়াডোব গ্রামের গৃহবধূ রেবেকা খাতুন ও তার স্বামী হাসেম আলী। জেলা প্রশাসন থেকে দেয়া শর্তাবলি ভঙ্গ করে পুকুর খনন করায় বিপাকে পড়েছেন ওই গ্রামের অন্তত ৫০টি পরিবার। ইতোমধ্যে গ্রামের লোকজন ওই পুকুর খনন বন্ধে মানববন্ধন করেছেন। তবে প্রশাসন বলছে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয়রা জানান, গাংনীর গাড়াডোব কুঠিপাড়ার কাজলা নদীর কোল ঘেঁসে পুকুর খননের অনুমতি নেন রেবেকা খাতুন ও হাশেম আলী। জমির শ্রেণি পরিবর্তন ও কারও কোন ক্ষতি হবে না মর্মে জেলা প্রশাসনের কাছে দেয়া শর্ত অনুযায়ী পুকুর খননের অনুমতি চান রেবেকা ও তার স্বামী। জেলা প্রশাসন আটটি শর্তজুড়ে দিয়ে ৮২ শতক জমিতে পুকুর খননের অনুমতি দেন। অথচ পুকুর খনন করা হচ্ছে ১৪১ শতক। শর্তে বলা হয়, পুকুরের মাটি বিক্রি করা যাবে না অথচ ওই মাটি স্থানীয় দু’টি ইট ভাটাই বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। কাজলা নদীর একেবারে কোল ঘেঁসে নিজের জমির মালিকানা দাবি করায় স্থানীয় জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার প্রবীণদের ধারণা পুকুর খনন করা হচ্ছে ওই জমির অনেকাংশ কাজলা নদীর। সরকারিভাবে কাজলা নদী জরিপের দাবিও করেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইলের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন জানান, হাশেম আলীর জমির মাথায় তাদের বাড়ির জমি আছে এখানে পুকুর খনন করা হলে তাদের জমি ধসে পড়াসহ শিশুরা ঝুঁকিতে থাকবে। হেরেন শেখের ছেলে আমিরুল জানান, আমরা গরিব মানুষ। এখানকার মাটি নরম। তাই বাড়িঘরও বেশ দুর্বল। পুকুর খনন করা হলে বাড়ি ঘর ধসে পড়বে। স্থানীয় খেদের আলী জানান, এ জমিটি একটি আবাদি জমি। তাছাড়া কাজলা নদীর সাথেই। এখানে পুকুর খনন করতে হলে সরকারি সার্ভেয়ার দ্বারা জমি জরিপ করা প্রয়োজন ছিল। তা করা হয়নি। বরং কাজলা নদীর কিছু অংশ নিজেদের বলে দাবি করে পিলার পুঁতে খনন করছেন।

মাটিবহন কারি কাজে নিয়োজিত ট্রাক্টর ড্রাইভার রাশেদুল ইসলাম বলেন, মাটি যাচ্ছে স্থানীয় একটি ইট ভাটায়। তবে কার ভাটায় যাচ্ছে তার নাম বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। আর এক ড্রাইভার সাহাজান আলী জানান, স্থানীয় এরশাদ আলীর ভাটায় মাটি যাচ্ছে। পুকুর পাড়ে অনেক মাটি রাখার জায়গা না থাকায় মাটি অন্যত্র রাখা হচ্ছে বলে জানান স্কেবেটর চালক। গ্রামের রুবেল হোসেন বলেন, আমি জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসে আবেদন করেছি। তবে এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ওদিকে জমির মালিক দেদারছে পুকুর খনন করেই চলেছেন। পুকুর খনন বন্ধ না হলে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান তিনি। জনগণের পক্ষেই তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে আবেদন করেছেন। আবেদনে সাড়া না পেয়ে মানববন্ধন করেন তারা।

জমির মালিক হাশেম আলী জানান, ওই জমিতে আমাদের কোন আবাদ করতে দিতো না ওই এলাকার মানুষ। যে আবাদ করা হতো তা তছরুপ করে নষ্ট করে দিতো তারা। তারপরেও নিচু জমি। এখানে পুকুর খনন ছাড়া বিকল্প কিছু করা সম্ভব হচ্ছিল না তাই পুকুর খনন করা হচ্ছে। তবে পুকুর পাড় না ভাঙ্গে এর জন্য খনন শেষে প্যালাসাইডিং করা হবে। প্রয়োজন হলে প্রাচীর দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, প্রশাসন থেকে দেয়া সব শর্ত মেনেই পুকুর খনন করা হচ্ছে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম বলেন, কাজলা নদীর পাড় ঘেঁসে যেহেতু পুকুর খনন করা হচ্ছে সে বিষয়টি মাথায় রেখে সরেজমিনে যাব। তাছাড়া জমির মালিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে অনুমোদন নিয়েছেন শর্ত সাপেক্ষে। শর্তভঙ্গ করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১ , ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৫ শাওয়াল ১৪৪২

কাজলা নদীর পাড় দখল করে পুকুর খনন!

বাড়ি-ঘর ধসে পড়ার আশঙ্কা

প্রতিনিধি, মেহেরপুর

image

মেহেরপুর : জেলা প্রশাসকের দেয়া শর্ত ভেঙে এভাবেই খনন করা হচ্ছে পুকুর। ইনসেটে মানববন্ধন -সংবাদ

গাংনীর কাজলা নদীর পাড় দখল করে ও নিজেদের জমিতে পুকুর খনন করছেন গাড়াডোব গ্রামের গৃহবধূ রেবেকা খাতুন ও তার স্বামী হাসেম আলী। জেলা প্রশাসন থেকে দেয়া শর্তাবলি ভঙ্গ করে পুকুর খনন করায় বিপাকে পড়েছেন ওই গ্রামের অন্তত ৫০টি পরিবার। ইতোমধ্যে গ্রামের লোকজন ওই পুকুর খনন বন্ধে মানববন্ধন করেছেন। তবে প্রশাসন বলছে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয়রা জানান, গাংনীর গাড়াডোব কুঠিপাড়ার কাজলা নদীর কোল ঘেঁসে পুকুর খননের অনুমতি নেন রেবেকা খাতুন ও হাশেম আলী। জমির শ্রেণি পরিবর্তন ও কারও কোন ক্ষতি হবে না মর্মে জেলা প্রশাসনের কাছে দেয়া শর্ত অনুযায়ী পুকুর খননের অনুমতি চান রেবেকা ও তার স্বামী। জেলা প্রশাসন আটটি শর্তজুড়ে দিয়ে ৮২ শতক জমিতে পুকুর খননের অনুমতি দেন। অথচ পুকুর খনন করা হচ্ছে ১৪১ শতক। শর্তে বলা হয়, পুকুরের মাটি বিক্রি করা যাবে না অথচ ওই মাটি স্থানীয় দু’টি ইট ভাটাই বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। কাজলা নদীর একেবারে কোল ঘেঁসে নিজের জমির মালিকানা দাবি করায় স্থানীয় জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার প্রবীণদের ধারণা পুকুর খনন করা হচ্ছে ওই জমির অনেকাংশ কাজলা নদীর। সরকারিভাবে কাজলা নদী জরিপের দাবিও করেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইলের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন জানান, হাশেম আলীর জমির মাথায় তাদের বাড়ির জমি আছে এখানে পুকুর খনন করা হলে তাদের জমি ধসে পড়াসহ শিশুরা ঝুঁকিতে থাকবে। হেরেন শেখের ছেলে আমিরুল জানান, আমরা গরিব মানুষ। এখানকার মাটি নরম। তাই বাড়িঘরও বেশ দুর্বল। পুকুর খনন করা হলে বাড়ি ঘর ধসে পড়বে। স্থানীয় খেদের আলী জানান, এ জমিটি একটি আবাদি জমি। তাছাড়া কাজলা নদীর সাথেই। এখানে পুকুর খনন করতে হলে সরকারি সার্ভেয়ার দ্বারা জমি জরিপ করা প্রয়োজন ছিল। তা করা হয়নি। বরং কাজলা নদীর কিছু অংশ নিজেদের বলে দাবি করে পিলার পুঁতে খনন করছেন।

মাটিবহন কারি কাজে নিয়োজিত ট্রাক্টর ড্রাইভার রাশেদুল ইসলাম বলেন, মাটি যাচ্ছে স্থানীয় একটি ইট ভাটায়। তবে কার ভাটায় যাচ্ছে তার নাম বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। আর এক ড্রাইভার সাহাজান আলী জানান, স্থানীয় এরশাদ আলীর ভাটায় মাটি যাচ্ছে। পুকুর পাড়ে অনেক মাটি রাখার জায়গা না থাকায় মাটি অন্যত্র রাখা হচ্ছে বলে জানান স্কেবেটর চালক। গ্রামের রুবেল হোসেন বলেন, আমি জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসে আবেদন করেছি। তবে এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ওদিকে জমির মালিক দেদারছে পুকুর খনন করেই চলেছেন। পুকুর খনন বন্ধ না হলে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান তিনি। জনগণের পক্ষেই তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে আবেদন করেছেন। আবেদনে সাড়া না পেয়ে মানববন্ধন করেন তারা।

জমির মালিক হাশেম আলী জানান, ওই জমিতে আমাদের কোন আবাদ করতে দিতো না ওই এলাকার মানুষ। যে আবাদ করা হতো তা তছরুপ করে নষ্ট করে দিতো তারা। তারপরেও নিচু জমি। এখানে পুকুর খনন ছাড়া বিকল্প কিছু করা সম্ভব হচ্ছিল না তাই পুকুর খনন করা হচ্ছে। তবে পুকুর পাড় না ভাঙ্গে এর জন্য খনন শেষে প্যালাসাইডিং করা হবে। প্রয়োজন হলে প্রাচীর দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, প্রশাসন থেকে দেয়া সব শর্ত মেনেই পুকুর খনন করা হচ্ছে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম বলেন, কাজলা নদীর পাড় ঘেঁসে যেহেতু পুকুর খনন করা হচ্ছে সে বিষয়টি মাথায় রেখে সরেজমিনে যাব। তাছাড়া জমির মালিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে অনুমোদন নিয়েছেন শর্ত সাপেক্ষে। শর্তভঙ্গ করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।