ডুবে আছে জমি ঘরবাড়ি, ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দী

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর প্রভাবে বাঁধ ভেঙে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, মাছের ঘের। উপকূলের ৫ লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দী। এসব এলাকার মানুষ খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে রয়েছে। খুলনা, পিরোজপুর, বরগুনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, বাগেরহাটে হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

পিরোজপুর : প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’- এর প্রভাবে জোয়ারের পানির চাপে পিরোজপুরে ৫ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে খাল-বিলে পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে অসংখ্য গ্রাম, ফসলি জমি ও মাছের ঘের। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ।

সাতক্ষীরা : ২২টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সাড়ে তিন হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ২৪টি ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সুন্দরবনে নোনা পানিতে মিষ্টি পানির পুকুর তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। অর্ধ-শতাধিক কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে।

বরগুনা ও তালতলী : বরগুনার তালতলীতে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদীর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছেন। এসব এলাকার মানুষ খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে রয়েছে বলে জানা যায়। স্বল্প উচ্চতা ও ভাঙা বেড়িবাঁধই এ দুর্ভোগের কারণ বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

খুলনা : খুলনার কয়রা উপজেলার চারটি ইউনিয়নে অন্তত ১০টি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে এমন স্থানের সংখ্যা আরও অন্তত ১৫। ৫ হাজার ৮৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত বাড়ির সংখ্যা ১ হাজার ২০০। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৫০টির মতো ঘর। আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ হাজার ২০০ মানুষ রয়েছেন। ২ হাজার ১০০ মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বরিশাল : উপকূলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, নদী তীর রক্ষা বাঁধ এবং পানি অবকাঠামো ছাড়াও উপকূলের বিপুল সংখ্যক চিংড়ি ঘেরসহ বিভিন্ন ধরনের বদ্ধ জলাশয়ের কোটি কোটি টাকার মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এ দুটি সেক্টরেই ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক পরিমাণ আড়াইশ কোটি টাকারও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভোলা : ভোলা সদর বোরহানউদ্দিন, মনপুরাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে মেঘনার জোয়ারের পানি প্রবেশ করে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খান। মনপুরায় ঈশ্বরগঞ্জ এলাকায় নতুন বেড়িবাঁধের ৫০ মিটার ধসে গেছে।

নোয়াখালী ও হাতিয়া : জলোচ্ছ্বাসে নোয়াখালীর হাতিয়ায় পুকুর ভেসে ১৫ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে।

কক্সবাজার : সেন্টমার্টিনের পর্যটন জেটি আংশিক ভেঙে গেছে। পন্টুনে ফাটলসহ অধিকাংশ রেলিং ও সিঁড়ি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে।

পাথরঘাটা (বরগুনা) : পাথরঘাটার পদ্মা, জিনতলা, পশ্চিম কাঁঠালতলী ও উত্তর কাঁঠালতলী বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সহ¯্রাধিক বাড়িঘর তলিয়ে গেছে।

গলাচিপা (পটুয়াখালী) : দুই কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে ৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া আরও ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) : উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সন্তোষপুর গ্রামের প্রায় ১০০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে পূর্ব রামপুর ও সন্তোষপুর গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। ৬০ হেক্টর কৃষি জমি প্লাবিত হয় ও ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১ , ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৫ শাওয়াল ১৪৪২

ইয়াস-এর প্রভাব

ডুবে আছে জমি ঘরবাড়ি, ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দী

সংবাদ ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর প্রভাবে বাঁধ ভেঙে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, মাছের ঘের। উপকূলের ৫ লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দী। এসব এলাকার মানুষ খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে রয়েছে। খুলনা, পিরোজপুর, বরগুনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, বাগেরহাটে হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

পিরোজপুর : প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’- এর প্রভাবে জোয়ারের পানির চাপে পিরোজপুরে ৫ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে খাল-বিলে পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে অসংখ্য গ্রাম, ফসলি জমি ও মাছের ঘের। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ।

সাতক্ষীরা : ২২টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সাড়ে তিন হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ২৪টি ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সুন্দরবনে নোনা পানিতে মিষ্টি পানির পুকুর তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। অর্ধ-শতাধিক কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে।

বরগুনা ও তালতলী : বরগুনার তালতলীতে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদীর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছেন। এসব এলাকার মানুষ খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে রয়েছে বলে জানা যায়। স্বল্প উচ্চতা ও ভাঙা বেড়িবাঁধই এ দুর্ভোগের কারণ বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

খুলনা : খুলনার কয়রা উপজেলার চারটি ইউনিয়নে অন্তত ১০টি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে এমন স্থানের সংখ্যা আরও অন্তত ১৫। ৫ হাজার ৮৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত বাড়ির সংখ্যা ১ হাজার ২০০। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৫০টির মতো ঘর। আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ হাজার ২০০ মানুষ রয়েছেন। ২ হাজার ১০০ মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বরিশাল : উপকূলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, নদী তীর রক্ষা বাঁধ এবং পানি অবকাঠামো ছাড়াও উপকূলের বিপুল সংখ্যক চিংড়ি ঘেরসহ বিভিন্ন ধরনের বদ্ধ জলাশয়ের কোটি কোটি টাকার মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এ দুটি সেক্টরেই ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক পরিমাণ আড়াইশ কোটি টাকারও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভোলা : ভোলা সদর বোরহানউদ্দিন, মনপুরাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে মেঘনার জোয়ারের পানি প্রবেশ করে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খান। মনপুরায় ঈশ্বরগঞ্জ এলাকায় নতুন বেড়িবাঁধের ৫০ মিটার ধসে গেছে।

নোয়াখালী ও হাতিয়া : জলোচ্ছ্বাসে নোয়াখালীর হাতিয়ায় পুকুর ভেসে ১৫ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে।

কক্সবাজার : সেন্টমার্টিনের পর্যটন জেটি আংশিক ভেঙে গেছে। পন্টুনে ফাটলসহ অধিকাংশ রেলিং ও সিঁড়ি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে।

পাথরঘাটা (বরগুনা) : পাথরঘাটার পদ্মা, জিনতলা, পশ্চিম কাঁঠালতলী ও উত্তর কাঁঠালতলী বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সহ¯্রাধিক বাড়িঘর তলিয়ে গেছে।

গলাচিপা (পটুয়াখালী) : দুই কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে ৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া আরও ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) : উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সন্তোষপুর গ্রামের প্রায় ১০০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে পূর্ব রামপুর ও সন্তোষপুর গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। ৬০ হেক্টর কৃষি জমি প্লাবিত হয় ও ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।