সরকারি ত্রাণ বিতরণে বৈষম্য ও অনিয়ম

অতি দরিদ্র ৭৫ শতাংশ কর্মসূচির আওতায় থাকলেও পায়নি সহায়তা

করোনা মহামারীর মধ্যে সরকারি ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক বৈষম্যর তথ্য উঠে এসেছে একটি গবেষণায়। সেই গবেষণায় বলা হয়, মহামারীর মধ্যে অতি দরিদ্রের ৭৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীই সরকারের সামাজিক কর্মসূচির আওতায় দেয়া সহায়তা পায়নি। মাত্র ২৫ শতাংশ অতি দরিদ্র মানুষ সরকারের দেয়া সহায়তা পেয়েছেন। দরিদ্র মানুষ গ্রামে বেশি বসবাস করলেও গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষকে বেশি ত্রাণ সুবিধা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১৭ শতাংশকে সরকারি ত্রাণ পেতে ঘুষ দিতে হয়েছে। তবে যারা এই সুবিধা পেয়েছেন, তারা সবচেয়ে কম আয়ের মানুষ নন। এমনও দেখা অপেক্ষাকৃত সচ্ছল মানুষও সরকারের সামাজিক সহায়তা নিয়েছে।

গতকাল ‘করোনা মোকাবিলায় ত্রাণ কর্মসূচি : কতটা কার্যকর ছিল?’ শীর্ষক গবেষণা থেকে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সিপিডি, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যৌথভাবে গবেষণা ও সংলাপটি আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। সংলাপটি পরিচালনা করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য।

তিনটি সামাজিক কর্মসূচির ওপর গবেষণাটি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, খাদ্য সাহায্য, খাদ্য সাহায্যের জন্য প্রণোদনা ও ২৫০০ টাকা করে ৫০ লাখ দরিদ্র মানুষকে সরকারের নগদ সহায়তা। গবেষণায় মোট দুই হাজার ৬০০ খানাকে বিবেচনা করা হয়েছে। চলতি বছরে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারের দেয়া সামাজিক কর্মসূচির ওপর ভিত্তি করে জরিপের কাজ করা হয়।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. দীপঙ্কর দত্ত সংলাপে সূচনা বক্তব্য রাখেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এতে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম, সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী সংলাপে যুক্ত ছিলেন।

মোস্তাফিজুর রহমান তার উপস্থাপনায় বলেন, ‘সরকারের দেয়া সামাজিক কর্মসূচির আওতায় আসা জনগোষ্ঠীকে নিয়ে জরিপকালে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ, যাদের টার্গেট করার দরকার ছিল, তারা পুরোপুরি এর আওতায় আসেনি। আমরা দেখেছি, সবচেয়ে কম আয়ের মানুষদের মধ্যে ২৫ শতাংশকে সামাজিক কর্মসূচির আওতায় আনা গেছে। বাকি যারা এই সুবিধা পেয়েছেন, তারা সবচেয়ে কম আয়ের মানুষ নন। এমনও দেখা গেছে, অপেক্ষাকৃত ধনী মানুষও ওই তিন সুবিধা নিয়েছে।’

গবেষণা জরিপে আরও দেখা গেছে, গ্রামীণ অঞ্চলের তুলনায় শহর অঞ্চলে ওই প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন অপেক্ষাকৃত ভালো হয়েছে। সবচেয়ে কম আয়ের মানুষ বিবেচনায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ সরকারের দেয়া ওই সুবিধা পেয়েছেন, যেখানে শহর অঞ্চলে সুবিধা পাওয়া মানুষদের সংখ্যা ৪৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। প্রযুক্তি জ্ঞান ও প্রযুক্তি সুবিধা না থাকার কারণে সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। অনেক ক্ষেত্রে নগদ সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তার ১৭ শতাংশ মানুষকে ঘুষ বা অন্যান্য খরচ হিসেবে ব্যয় করতে হয়েছে। অন্যদিকে করোনা মহামারীতে নতুন করে দরিদ্র হওয়া মানুষদের মধ্যে ৭৭ দশমিক ৩০ শতাংশই সরকারের দেয়া খাদ্য, খাদ্যের প্রণোদনা কিংবা মোবাইলে দেয়া নগদ সহয়তা- এই তিনটা সাহায্য পাননি। শুধু তাই নয়, নতুন করে দরিদ্র হওয়া মানুষগুলো সরকারে দেয়া ওই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগও তেমন পাননি।

পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তালিকা না হওয়ার কারণে অনেক অভিযোগ উঠেছে দাবি করে মোস্তাফিজুর রহমান তার উপস্থাপনায় বলেন, ‘যারা সুবিধা পেয়েছেন, তাদের ৪৪ শতাংশই দাবি করেছেন, কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার যথেষ্ট অভাব ছিল। তালিকা করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ছিল না। তালিকা কোথাও টানানো হয়নি। কারা সাহায্য পেলেন, কোন ক্যাটাগরিতে দেয়া হলো ইত্যাদি জানানো হয়নি। এ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে তালিকা করা গেলে বেসরকারি পর্যায়ে যথাযথ সাহায্য পেতে সুবিধা হতো বলে সিপিডি মনে করে।’

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সরকারের সামাজিক কর্মসূচি পরিচালনার ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার তুলনায় জনসংখ্যা হিসেবে এলাকা ভাগ করে সাহায্য দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কোন এলাকায় বেশি দরিদ্র থাকলেও তা বিবেচনায় নিয়ে অধিক গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টি আমলে নেয়া হয়নি।’

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের প্রকল্প পরিচালক, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপের সভাপতিত্ব করেন। তিনি মন্তব্য করেন, ‘কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারি ও ব্যক্তি সহয়তা প্রদানে উৎসাহ কম রয়েছে ত্রাণের সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে তথ্য প্রচার ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করতে হবে। ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নজরদারি নিশ্চিত করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংবাদমাধ্যম ও সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. দীপঙ্কর দত্ত তাদের বক্তব্যে বলেন, ‘সংলাপের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য ত্রাণ সহায়তা কর্মসূচির বিতরণ ব্যবস্থার কার্যকারিতা সম্পর্কিত গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল উপস্থাপন করা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সরকারের বিভিন্ন ত্রাণ কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে বিতরণ প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকরী করার কথা বলেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং ত্রাণ বিতরণ ও গ্রহণের ক্ষেত্রে সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দেন যেন সঠিক মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছান সম্ভব হয়।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী সংলাপে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জেলা পর্যায়ের দরিদ্রতার ভিত্তিতে ত্রাণ বিতরণের কথা বলেন এবং জনপ্রতিনিধিদের এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়ে তার মতামত তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ সরকারের এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে যথাযথ সহযোগিতা দেয়ার উদ্দেশ্যে সিপিডি, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশের ১৩টি জেলায় ‘গণতান্ত্রিক সুশাসনে জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে- এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সরকারসহ বেসরকারি পর্যায়ের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনের অংশগ্রহণ ও সক্রিয় অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে তাদের সক্ষমতা তৈরির চেষ্টা করা। তাই সংলাপে ১৩টি জেলা থেকে স্থানীয় জনগণ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, উন্নয়নকর্মী, এনজিও প্রতিনিধি, ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যুক্ত ছিলেন।

শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১ , ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৫ শাওয়াল ১৪৪২

সরকারি ত্রাণ বিতরণে বৈষম্য ও অনিয়ম

অতি দরিদ্র ৭৫ শতাংশ কর্মসূচির আওতায় থাকলেও পায়নি সহায়তা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

করোনা মহামারীর মধ্যে সরকারি ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক বৈষম্যর তথ্য উঠে এসেছে একটি গবেষণায়। সেই গবেষণায় বলা হয়, মহামারীর মধ্যে অতি দরিদ্রের ৭৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীই সরকারের সামাজিক কর্মসূচির আওতায় দেয়া সহায়তা পায়নি। মাত্র ২৫ শতাংশ অতি দরিদ্র মানুষ সরকারের দেয়া সহায়তা পেয়েছেন। দরিদ্র মানুষ গ্রামে বেশি বসবাস করলেও গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষকে বেশি ত্রাণ সুবিধা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১৭ শতাংশকে সরকারি ত্রাণ পেতে ঘুষ দিতে হয়েছে। তবে যারা এই সুবিধা পেয়েছেন, তারা সবচেয়ে কম আয়ের মানুষ নন। এমনও দেখা অপেক্ষাকৃত সচ্ছল মানুষও সরকারের সামাজিক সহায়তা নিয়েছে।

গতকাল ‘করোনা মোকাবিলায় ত্রাণ কর্মসূচি : কতটা কার্যকর ছিল?’ শীর্ষক গবেষণা থেকে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সিপিডি, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যৌথভাবে গবেষণা ও সংলাপটি আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। সংলাপটি পরিচালনা করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য।

তিনটি সামাজিক কর্মসূচির ওপর গবেষণাটি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, খাদ্য সাহায্য, খাদ্য সাহায্যের জন্য প্রণোদনা ও ২৫০০ টাকা করে ৫০ লাখ দরিদ্র মানুষকে সরকারের নগদ সহায়তা। গবেষণায় মোট দুই হাজার ৬০০ খানাকে বিবেচনা করা হয়েছে। চলতি বছরে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারের দেয়া সামাজিক কর্মসূচির ওপর ভিত্তি করে জরিপের কাজ করা হয়।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. দীপঙ্কর দত্ত সংলাপে সূচনা বক্তব্য রাখেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এতে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম, সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী সংলাপে যুক্ত ছিলেন।

মোস্তাফিজুর রহমান তার উপস্থাপনায় বলেন, ‘সরকারের দেয়া সামাজিক কর্মসূচির আওতায় আসা জনগোষ্ঠীকে নিয়ে জরিপকালে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ, যাদের টার্গেট করার দরকার ছিল, তারা পুরোপুরি এর আওতায় আসেনি। আমরা দেখেছি, সবচেয়ে কম আয়ের মানুষদের মধ্যে ২৫ শতাংশকে সামাজিক কর্মসূচির আওতায় আনা গেছে। বাকি যারা এই সুবিধা পেয়েছেন, তারা সবচেয়ে কম আয়ের মানুষ নন। এমনও দেখা গেছে, অপেক্ষাকৃত ধনী মানুষও ওই তিন সুবিধা নিয়েছে।’

গবেষণা জরিপে আরও দেখা গেছে, গ্রামীণ অঞ্চলের তুলনায় শহর অঞ্চলে ওই প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন অপেক্ষাকৃত ভালো হয়েছে। সবচেয়ে কম আয়ের মানুষ বিবেচনায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ সরকারের দেয়া ওই সুবিধা পেয়েছেন, যেখানে শহর অঞ্চলে সুবিধা পাওয়া মানুষদের সংখ্যা ৪৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। প্রযুক্তি জ্ঞান ও প্রযুক্তি সুবিধা না থাকার কারণে সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। অনেক ক্ষেত্রে নগদ সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তার ১৭ শতাংশ মানুষকে ঘুষ বা অন্যান্য খরচ হিসেবে ব্যয় করতে হয়েছে। অন্যদিকে করোনা মহামারীতে নতুন করে দরিদ্র হওয়া মানুষদের মধ্যে ৭৭ দশমিক ৩০ শতাংশই সরকারের দেয়া খাদ্য, খাদ্যের প্রণোদনা কিংবা মোবাইলে দেয়া নগদ সহয়তা- এই তিনটা সাহায্য পাননি। শুধু তাই নয়, নতুন করে দরিদ্র হওয়া মানুষগুলো সরকারে দেয়া ওই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগও তেমন পাননি।

পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তালিকা না হওয়ার কারণে অনেক অভিযোগ উঠেছে দাবি করে মোস্তাফিজুর রহমান তার উপস্থাপনায় বলেন, ‘যারা সুবিধা পেয়েছেন, তাদের ৪৪ শতাংশই দাবি করেছেন, কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার যথেষ্ট অভাব ছিল। তালিকা করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ছিল না। তালিকা কোথাও টানানো হয়নি। কারা সাহায্য পেলেন, কোন ক্যাটাগরিতে দেয়া হলো ইত্যাদি জানানো হয়নি। এ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে তালিকা করা গেলে বেসরকারি পর্যায়ে যথাযথ সাহায্য পেতে সুবিধা হতো বলে সিপিডি মনে করে।’

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সরকারের সামাজিক কর্মসূচি পরিচালনার ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার তুলনায় জনসংখ্যা হিসেবে এলাকা ভাগ করে সাহায্য দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কোন এলাকায় বেশি দরিদ্র থাকলেও তা বিবেচনায় নিয়ে অধিক গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টি আমলে নেয়া হয়নি।’

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের প্রকল্প পরিচালক, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপের সভাপতিত্ব করেন। তিনি মন্তব্য করেন, ‘কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারি ও ব্যক্তি সহয়তা প্রদানে উৎসাহ কম রয়েছে ত্রাণের সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে তথ্য প্রচার ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করতে হবে। ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নজরদারি নিশ্চিত করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংবাদমাধ্যম ও সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. দীপঙ্কর দত্ত তাদের বক্তব্যে বলেন, ‘সংলাপের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য ত্রাণ সহায়তা কর্মসূচির বিতরণ ব্যবস্থার কার্যকারিতা সম্পর্কিত গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল উপস্থাপন করা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সরকারের বিভিন্ন ত্রাণ কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে বিতরণ প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকরী করার কথা বলেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং ত্রাণ বিতরণ ও গ্রহণের ক্ষেত্রে সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দেন যেন সঠিক মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছান সম্ভব হয়।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী সংলাপে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জেলা পর্যায়ের দরিদ্রতার ভিত্তিতে ত্রাণ বিতরণের কথা বলেন এবং জনপ্রতিনিধিদের এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়ে তার মতামত তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ সরকারের এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে যথাযথ সহযোগিতা দেয়ার উদ্দেশ্যে সিপিডি, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশের ১৩টি জেলায় ‘গণতান্ত্রিক সুশাসনে জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে- এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সরকারসহ বেসরকারি পর্যায়ের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনের অংশগ্রহণ ও সক্রিয় অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে তাদের সক্ষমতা তৈরির চেষ্টা করা। তাই সংলাপে ১৩টি জেলা থেকে স্থানীয় জনগণ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, উন্নয়নকর্মী, এনজিও প্রতিনিধি, ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যুক্ত ছিলেন।