ডাক অধিদপ্তরকে অনলাইন ব্যবসায় আরও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে

্আধুনিক ডাক ভবন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাক অধিদপ্তরকে অনলাইন ব্যবসায় সর্বাধিক সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, কারণ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু অনলাইন ক্রয়-বিক্রয় জনপ্রিয়তা লাভ করছে। কাজেই, ডাকঘর পিছিয়ে থাকলে চলবে না। ডাক বিভাগকে এ ব্যাপারে আরও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে, এটাও হবে ডাকবিভাগের জন্য একটি বড় ব্যবসা ক্ষেত্র।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর আগারগাঁওস্থ শেরেবাংলা নগরে আধুনিক স্থাপত্য নকশায় ১৫০ ফুট উঁচু গাড়ি পার্কিং-এর সুবিধাসংবলিত ১৪তলা বিশিষ্ট লেটার বক্সের আকৃতিতে নির্মিত ডাক বিভাগের নতুন সদর দপ্তর ‘ডাকভবন’-এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি এই ভবনের উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমারা ডাক বিভাগের পরিবহন ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করতে ১১৮টি ডাক গাড়ি সংযোজন করেছি। এ সব গাড়ি চালনার জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীকে গাড়িচালক হিসেবে নিয়োজিত করেছি। তিনি বলেন, ‘ডাক বাছাই ত্বরান্বিতকরণ ও পচনশীল দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য চিলিং চেম্বারের সুবিধাসংবলিত ওয়্যারহাউসযুক্ত ১৪টি অত্যাধুনিক মেইল প্রসেসিং ও লজিস্টিক সার্ভিস সেন্টার নির্মাণের কাজ সমাপ্তির পথে।

তিনি বলেন, প্রথমে আমরা বিভাগ এবং জেলা পর্যায়ে এগুলো করছি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য থাকবে এবং আমি এটা ডাক বিভাগকে বলবো একদম উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অর্থাৎ ডাকঘর যেখানে থাকবে সেখানেই এই ব্যবস্থাটা নিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই করোনাভাইরাসের কারণে এখন বেশিরভাই অনলাইন সেবা চলছে, অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় চলছে। পচনশীল জিনিষ অর্থাৎ খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে ফলমূল তরিতরকারি এগুলো যেন ডাকের মাধ্যমে পাঠানো যায়।

তিনি উদাহারণ দেন- কেউ নিজে রান্না করে আরেক জেলায় আত্মীয়ের কাছে খাবার পাঠাবেন, সেটাও যেন পাঠাতে পারেন। সেই জন্যই এই চিলিং সিস্টেমটা বা কুলিং সিস্টেমটা খুব দরকার। অর্থাৎ সেই ধরনের ফ্রিজিং টেম্পারেচার করে দেয়া যাতে জিনিসটা নষ্ট হবে না এবং সঠিক ব্যক্তির কাছে গিয়ে পৌঁছবে। তার ব্যবস্থাটা ডাক বিভাগকে নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে এরকম সেন্টার থাকবে যেখান থেকে পোর্টেবল বক্সে করে এসব ডেলিভারি হবে সেভাবেই ডাকের সেবাটাকে একেবারে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে এবং সে ব্যবস্থাটাও আপনাদের এখন নিতে হবে।

‘৩৮টি মডেল ডাকঘর নির্মাণের কাজ সরকার হাতে নিয়েছে,’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি চাইবেন সারা বাংলাদেশে এটা করে দিতে। যাতে ঘরে বসেও অনেকে টাকা-পয়সা উপার্জন করতে পারবেন। এতে মানুষের যেমন কর্মসংস্থান হবে তেমনি মানুষ সেবাটাও পাবে।

তার সরকার ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়নের রূপরেখার আওতায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ডাকপরিসেবা বাড়াতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

ভবনটি নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৯১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ভবনটিতে সুসজ্জিত ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, আধুনিক পোস্টাল মিউজিয়াম, সুপরিসর অডিটোরিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া, ডে-কেয়ার সেন্টার, মেডিকেল সুবিধা, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও সার্বক্ষণিক ওয়াইফাইসহ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তিগত সুবিধা রয়েছে।

এ উপলক্ষে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী এই বিশেষ স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত করেন । অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আফজাল হোসেন বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস পিএমও থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ গণভবন এবং পিএমও’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পোস্ট ই-সেন্টার প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের ৮,৫০০টি ডাকঘরকে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যেই ডিজিটাল ডাকঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে সামাজিক উদ্যোক্তা সৃষ্টির পাশাপাশি প্রতিবন্ধী মহিলা ও পুরুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই ডাকঘর থেকে বিভিন্ন বয়সী প্রশিক্ষণার্থী কম্পিউটারের ওপর মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন এবং গ্রামীণ জনগণ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর সেবা, যেমন : ইন্টারনেট ব্রাউজিং, বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ভর্তি ফরম অনলাইনে পূরণ, ফলাফল ডাউনলোড, দেশে-বিদেশে ভিডিও কনফারেন্সিং, ছবি তোলা, ডকুমেন্ট প্রিন্ট আউট প্রভৃতি সেবা লাভ করছে।

শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১ , ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৫ শাওয়াল ১৪৪২

ডাক অধিদপ্তরকে অনলাইন ব্যবসায় আরও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে

্আধুনিক ডাক ভবন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

বাসস

image

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাক অধিদপ্তরকে অনলাইন ব্যবসায় সর্বাধিক সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, কারণ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু অনলাইন ক্রয়-বিক্রয় জনপ্রিয়তা লাভ করছে। কাজেই, ডাকঘর পিছিয়ে থাকলে চলবে না। ডাক বিভাগকে এ ব্যাপারে আরও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে, এটাও হবে ডাকবিভাগের জন্য একটি বড় ব্যবসা ক্ষেত্র।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর আগারগাঁওস্থ শেরেবাংলা নগরে আধুনিক স্থাপত্য নকশায় ১৫০ ফুট উঁচু গাড়ি পার্কিং-এর সুবিধাসংবলিত ১৪তলা বিশিষ্ট লেটার বক্সের আকৃতিতে নির্মিত ডাক বিভাগের নতুন সদর দপ্তর ‘ডাকভবন’-এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি এই ভবনের উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমারা ডাক বিভাগের পরিবহন ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করতে ১১৮টি ডাক গাড়ি সংযোজন করেছি। এ সব গাড়ি চালনার জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীকে গাড়িচালক হিসেবে নিয়োজিত করেছি। তিনি বলেন, ‘ডাক বাছাই ত্বরান্বিতকরণ ও পচনশীল দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য চিলিং চেম্বারের সুবিধাসংবলিত ওয়্যারহাউসযুক্ত ১৪টি অত্যাধুনিক মেইল প্রসেসিং ও লজিস্টিক সার্ভিস সেন্টার নির্মাণের কাজ সমাপ্তির পথে।

তিনি বলেন, প্রথমে আমরা বিভাগ এবং জেলা পর্যায়ে এগুলো করছি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য থাকবে এবং আমি এটা ডাক বিভাগকে বলবো একদম উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অর্থাৎ ডাকঘর যেখানে থাকবে সেখানেই এই ব্যবস্থাটা নিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই করোনাভাইরাসের কারণে এখন বেশিরভাই অনলাইন সেবা চলছে, অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় চলছে। পচনশীল জিনিষ অর্থাৎ খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে ফলমূল তরিতরকারি এগুলো যেন ডাকের মাধ্যমে পাঠানো যায়।

তিনি উদাহারণ দেন- কেউ নিজে রান্না করে আরেক জেলায় আত্মীয়ের কাছে খাবার পাঠাবেন, সেটাও যেন পাঠাতে পারেন। সেই জন্যই এই চিলিং সিস্টেমটা বা কুলিং সিস্টেমটা খুব দরকার। অর্থাৎ সেই ধরনের ফ্রিজিং টেম্পারেচার করে দেয়া যাতে জিনিসটা নষ্ট হবে না এবং সঠিক ব্যক্তির কাছে গিয়ে পৌঁছবে। তার ব্যবস্থাটা ডাক বিভাগকে নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে এরকম সেন্টার থাকবে যেখান থেকে পোর্টেবল বক্সে করে এসব ডেলিভারি হবে সেভাবেই ডাকের সেবাটাকে একেবারে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে এবং সে ব্যবস্থাটাও আপনাদের এখন নিতে হবে।

‘৩৮টি মডেল ডাকঘর নির্মাণের কাজ সরকার হাতে নিয়েছে,’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি চাইবেন সারা বাংলাদেশে এটা করে দিতে। যাতে ঘরে বসেও অনেকে টাকা-পয়সা উপার্জন করতে পারবেন। এতে মানুষের যেমন কর্মসংস্থান হবে তেমনি মানুষ সেবাটাও পাবে।

তার সরকার ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়নের রূপরেখার আওতায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ডাকপরিসেবা বাড়াতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

ভবনটি নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৯১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ভবনটিতে সুসজ্জিত ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, আধুনিক পোস্টাল মিউজিয়াম, সুপরিসর অডিটোরিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া, ডে-কেয়ার সেন্টার, মেডিকেল সুবিধা, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও সার্বক্ষণিক ওয়াইফাইসহ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তিগত সুবিধা রয়েছে।

এ উপলক্ষে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী এই বিশেষ স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত করেন । অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আফজাল হোসেন বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস পিএমও থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ গণভবন এবং পিএমও’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পোস্ট ই-সেন্টার প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের ৮,৫০০টি ডাকঘরকে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যেই ডিজিটাল ডাকঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে সামাজিক উদ্যোক্তা সৃষ্টির পাশাপাশি প্রতিবন্ধী মহিলা ও পুরুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই ডাকঘর থেকে বিভিন্ন বয়সী প্রশিক্ষণার্থী কম্পিউটারের ওপর মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন এবং গ্রামীণ জনগণ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর সেবা, যেমন : ইন্টারনেট ব্রাউজিং, বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ভর্তি ফরম অনলাইনে পূরণ, ফলাফল ডাউনলোড, দেশে-বিদেশে ভিডিও কনফারেন্সিং, ছবি তোলা, ডকুমেন্ট প্রিন্ট আউট প্রভৃতি সেবা লাভ করছে।