অভিজাত শ্রেণীর বেকার যুবকরা মাদক এলসিডিতে আসক্ত

দেশে নতুন ভয়ঙ্কর মাদক এলএসডির (লাইসার্জিক এসিড ডাইইথালএমাইড) সন্ধান পাওয়া গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) গত বুধবার রাতে রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমন্ডি ও লালমাটিয়ায় অভিযান চালিয়ে এলএসডি মাদকসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা গোয়েন্দা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, সাদমান সাকিব ওরফে রূপল, আসহাব ওয়াদুদ ওরফে তূর্য ও আদিব আশরাফ। তাদের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা মূল্যের ২শ’ ব্লট মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেদারল্যান্ড ও ইউরোপসহ বিশ্বের উন্নত দেশে এ মাদক পাওয়া যায়। এক গ্রাম মাদকের মূল্য ৭০ হ্জাার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা। দেশে সর্বপ্রথম ২০১৯ সালে অভিজাত পরিবারের এক সন্তানকে আটক করা হয়েছিল। আটককৃত ওই যবকের নাম ইয়াসের রিদোওয়ান। সে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। তার বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা হয়েছে। এ বছর এটি দ্বিতীয় অভিযান।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার জানান, পাশ্চাত্য বিশ্বে এ মাদককে হ্যালোসিনোজেনিক ড্রাগও বলা হয়। উক্ত মাদক ব্লট আকারে পাওয়া যায়। যা ছোট কাগজের টুকরো সাদৃশ মাদক মিশ্রিত বস্তু। উক্ত মাদকের ব্লট জিহবার নিচে বা উপরে দিয়ে নেশা করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত ৩ জন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত।

গ্রেপ্তারকৃত সাদমান নেদারল্যান্ডস হতে মেইল ও চিঠির মাধ্যমে ডাক টিকিটের মতো দেখতে এ মাদকটি ৮শ থেকে এক হাজার টাকার ব্লট কিনে। নেদারলান্ডসের একজন নাগরিকের কাছ থেকে টেলিগ্রাম অ্যাপস্-এর মাধ্যমে যোগাযোগ করে মেইলের মাধ্যমে টাকা পাঠায়। আর কুরিয়ার সার্ভিসের পার্সেলের মাধ্যমে এ মাদক গ্রহণ করে।

এ মাদকসেবীদের একটি ফেইসবুক আইডি আছে। যার নাম আপনার আব্বা। একটি গ্রুপ আছে। এ গ্রুপে এক হাজার সদস্য। গ্রেপ্তারকৃত সাদমান, আসহাব ওয়াদুদ ও আদিব আশরাফ ফেইসবুক আইডি ও গ্রুপের মাধ্যমে এ মাদক বিক্রি করতো। এটি নতুন ও দামি মাদক হওয়ায় গ্রেপ্তারকৃতরা ৩ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায় ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতো। ডিবির এই কর্মকর্তা আরও জানান, পৃথিবীর উন্নত দেশে এ মাদক নিষিদ্ধ। এমনকি এ মাদকের কেনাবেচা বাংলাদেশের প্রচলিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। নতুন ও ভয়ংকর এ মাদক দেশে যাতে বিস্তার লাভ করতে না পারে তার জন্য ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সর্বসাধারণকে এ ড্রাগের বিষয়ে সচেতন হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন ডিবির এক কর্মকর্তা। আর এ ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত পলাতক অন্যদের গ্রেপ্তারে ডিবির চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানান।

ডিবি কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের (নাম-হাফিজুর রহমান) আত্মহত্যার বিষয়টি নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগ ছায়া তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের সময় তারা ওই ছাত্রের কয়েকজন বন্ধুকে (ছাত্র) জিজ্ঞাসাবাদ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নতুন এ ভয়ংকর মাদকের সন্ধান পায়।

যেভাবে উদ্ঘাটন : নিহত হাফিজুরের বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর বহিস্কৃত ছাত্র সাদমানকে গ্রেপ্তার করে। সে বর্তমানে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ে। আর তার বন্ধু নিহত হাফিজুর রহমান মুকাভিনয় শিল্পী ছিল।

পুলিশের অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি একটি হ্যালোসেনিক বা হ্যালোপিনোজেনিক বা ভ্রমো উৎপাদক মাদকদ্রব্য। এটা কল্পিত, সেবনের পর দুঃখ কষ্ট ভুলে যায়। নিজেকে নিজে রাজা উজির মনে করে। দেশের অভিজাত শ্রেণীর ছেলেরা এ মাদক সেবন করে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা গোয়েন্দা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সর্বপ্রথম এলএসডি আটক ও মামলা করেছিল। তরল এলএসডির সঙ্গে ব্লটিং পেপার ছিল। ব্লটিং পেপারে মাদক মিশিয়ে জিহবায় লাগানো হয়। এক ইঞ্চি ব্লুটিং পেপারের ১০ ভাগের এক ভাগে এ মাদক দেয়া হয়। এটা কোন উদ্ভিদ থেকে উপাদন করা হয় না। এটা সিনথেটিক ড্রাগ। এর উৎপত্তিস্থল কানাডা, ইউরোপ ও আমেরিকা।

এ মাদক সেবনে চেতনা স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে না। চিন্তার বাহিরে চলে যায়। বড় লোকের সন্তানরা এটি সেবন করে। প্রতি গ্রাম মাদক ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় বিক্রি হয়। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, এ মাদক ব্যবহার করলে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত এর অ্যাকশন থাকে। এর পারিপাশ্বিক চেতনা পরিবর্তন করে। সেবনকারী দৃষ্টি ও শ্রুতির মধ্যে হ্যালোসিনেসান তৈরি করে। এটি সেবন করলে চোখের মনি বিকৃতি ঘটে। ব্লাডপ্রেসার ও শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১ , ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৫ শাওয়াল ১৪৪২

অভিজাত শ্রেণীর বেকার যুবকরা মাদক এলসিডিতে আসক্ত

বাকী বিল্লাহ

দেশে নতুন ভয়ঙ্কর মাদক এলএসডির (লাইসার্জিক এসিড ডাইইথালএমাইড) সন্ধান পাওয়া গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) গত বুধবার রাতে রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমন্ডি ও লালমাটিয়ায় অভিযান চালিয়ে এলএসডি মাদকসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা গোয়েন্দা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, সাদমান সাকিব ওরফে রূপল, আসহাব ওয়াদুদ ওরফে তূর্য ও আদিব আশরাফ। তাদের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা মূল্যের ২শ’ ব্লট মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেদারল্যান্ড ও ইউরোপসহ বিশ্বের উন্নত দেশে এ মাদক পাওয়া যায়। এক গ্রাম মাদকের মূল্য ৭০ হ্জাার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা। দেশে সর্বপ্রথম ২০১৯ সালে অভিজাত পরিবারের এক সন্তানকে আটক করা হয়েছিল। আটককৃত ওই যবকের নাম ইয়াসের রিদোওয়ান। সে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। তার বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা হয়েছে। এ বছর এটি দ্বিতীয় অভিযান।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার জানান, পাশ্চাত্য বিশ্বে এ মাদককে হ্যালোসিনোজেনিক ড্রাগও বলা হয়। উক্ত মাদক ব্লট আকারে পাওয়া যায়। যা ছোট কাগজের টুকরো সাদৃশ মাদক মিশ্রিত বস্তু। উক্ত মাদকের ব্লট জিহবার নিচে বা উপরে দিয়ে নেশা করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত ৩ জন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত।

গ্রেপ্তারকৃত সাদমান নেদারল্যান্ডস হতে মেইল ও চিঠির মাধ্যমে ডাক টিকিটের মতো দেখতে এ মাদকটি ৮শ থেকে এক হাজার টাকার ব্লট কিনে। নেদারলান্ডসের একজন নাগরিকের কাছ থেকে টেলিগ্রাম অ্যাপস্-এর মাধ্যমে যোগাযোগ করে মেইলের মাধ্যমে টাকা পাঠায়। আর কুরিয়ার সার্ভিসের পার্সেলের মাধ্যমে এ মাদক গ্রহণ করে।

এ মাদকসেবীদের একটি ফেইসবুক আইডি আছে। যার নাম আপনার আব্বা। একটি গ্রুপ আছে। এ গ্রুপে এক হাজার সদস্য। গ্রেপ্তারকৃত সাদমান, আসহাব ওয়াদুদ ও আদিব আশরাফ ফেইসবুক আইডি ও গ্রুপের মাধ্যমে এ মাদক বিক্রি করতো। এটি নতুন ও দামি মাদক হওয়ায় গ্রেপ্তারকৃতরা ৩ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায় ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতো। ডিবির এই কর্মকর্তা আরও জানান, পৃথিবীর উন্নত দেশে এ মাদক নিষিদ্ধ। এমনকি এ মাদকের কেনাবেচা বাংলাদেশের প্রচলিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। নতুন ও ভয়ংকর এ মাদক দেশে যাতে বিস্তার লাভ করতে না পারে তার জন্য ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সর্বসাধারণকে এ ড্রাগের বিষয়ে সচেতন হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন ডিবির এক কর্মকর্তা। আর এ ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত পলাতক অন্যদের গ্রেপ্তারে ডিবির চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানান।

ডিবি কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের (নাম-হাফিজুর রহমান) আত্মহত্যার বিষয়টি নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগ ছায়া তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের সময় তারা ওই ছাত্রের কয়েকজন বন্ধুকে (ছাত্র) জিজ্ঞাসাবাদ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নতুন এ ভয়ংকর মাদকের সন্ধান পায়।

যেভাবে উদ্ঘাটন : নিহত হাফিজুরের বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর বহিস্কৃত ছাত্র সাদমানকে গ্রেপ্তার করে। সে বর্তমানে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ে। আর তার বন্ধু নিহত হাফিজুর রহমান মুকাভিনয় শিল্পী ছিল।

পুলিশের অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি একটি হ্যালোসেনিক বা হ্যালোপিনোজেনিক বা ভ্রমো উৎপাদক মাদকদ্রব্য। এটা কল্পিত, সেবনের পর দুঃখ কষ্ট ভুলে যায়। নিজেকে নিজে রাজা উজির মনে করে। দেশের অভিজাত শ্রেণীর ছেলেরা এ মাদক সেবন করে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা গোয়েন্দা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সর্বপ্রথম এলএসডি আটক ও মামলা করেছিল। তরল এলএসডির সঙ্গে ব্লটিং পেপার ছিল। ব্লটিং পেপারে মাদক মিশিয়ে জিহবায় লাগানো হয়। এক ইঞ্চি ব্লুটিং পেপারের ১০ ভাগের এক ভাগে এ মাদক দেয়া হয়। এটা কোন উদ্ভিদ থেকে উপাদন করা হয় না। এটা সিনথেটিক ড্রাগ। এর উৎপত্তিস্থল কানাডা, ইউরোপ ও আমেরিকা।

এ মাদক সেবনে চেতনা স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে না। চিন্তার বাহিরে চলে যায়। বড় লোকের সন্তানরা এটি সেবন করে। প্রতি গ্রাম মাদক ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় বিক্রি হয়। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, এ মাদক ব্যবহার করলে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত এর অ্যাকশন থাকে। এর পারিপাশ্বিক চেতনা পরিবর্তন করে। সেবনকারী দৃষ্টি ও শ্রুতির মধ্যে হ্যালোসিনেসান তৈরি করে। এটি সেবন করলে চোখের মনি বিকৃতি ঘটে। ব্লাডপ্রেসার ও শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।