ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত পুনর্বাসন করুন

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বাংলাদেশে আঘাত না হানলেও জলোচ্ছ্বাস ও বেড়িবাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর মধ্যে খুলনা, সাতক্ষীরা, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ধসে গেছে প্রায় শতাধিক বেড়িবাঁধ। এছাড়া জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বরগুনার ২৬টি গ্রাম, বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে পটুয়াখালীর ৩৪টি গ্রাম, ৩-৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে ফেনীতে পানিতে ডুবে মারা গেছেন এক জেলে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল ও ঝিনাইদহে ঝড়ো হাওয়ায় অর্ধশত বাড়িঘর লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এতে সারা দেশে প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন বলে স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানান।

আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল যে, ইয়াস সরাসরি বাংলাদেশে প্রবেশ করবে না। তবে এর প্রভাব পড়বে। তারপরেও উপকূলের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করার মতো। এর প্রভাবে জোয়ারের পানিতে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

করোনাকালে এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ দেশের উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য এক বাড়তি দুর্যোগ। আয় কমে যাওয়ার এই সময়ে ক্ষেতের ফল-ফসল, বাড়িঘর ঝড়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা মানুষকে সমস্যায় ফেলেছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সাড়ে ১৬ হাজার প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিবেচনায় এর পরিমাণ যথেষ্ট নয়। পানিবন্দী সব মানুষের জীবনধারণের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ দিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, সামাজিক সংগঠন ও অবস্থাসম্পন্নদের এগিয়ে আসা উচিত।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যারা আশ্রয়হীন হয়েছেন তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। দ্রুততার সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়িগুলোর বেশিরভাগই কাঁচা। উপকূলীয় এলাকায় পাকা ঘর গড়ে তোলা গেলে মানুষের আশ্রয়স্থল আরও নিরাপদ হতে পারে। বিষয়টি সরকারকে সক্রিয়ভাবে ভেবে দেখতে হবে।

কোন ঘূর্ণিঝড়ের পরে ক্ষতিগ্রস্ত ও অরক্ষিত বাঁধগুলো দিয়ে জোয়ারের পানি অবাধে ঢুকে আরেকটি বিপর্যয় তৈরি করে। যা আইলা ও সিডরের পরে উপকূলবাসীকে বেশ ভুগিয়েছে। এবারও একই ঘটনা ঘটছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো দ্রুত সংস্কার করা উচিত। বাঁধ সংস্কারে যেন অনিয়ম-দুর্নীতি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বহু কৃষক ও খামারি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমরা চাইব, সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াক। কোন কৃষক বা খামারির যদি ঋণ থাকে তবে সে ঋণ মওকুফ করতে হবে।

উপকূলে সুপেয় পানির সংকট দিন দিন তীব্র হচ্ছে। এ সংকট দূর করার জন্য পানির প্ল্যান্ট স্থাপনের দাবি উঠেছে। এ দাবি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হবে সেটা আমাদের প্রত্যাশা। বৃষ্টির পানি ধরে রেখে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।

শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১ , ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৫ শাওয়াল ১৪৪২

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত পুনর্বাসন করুন

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বাংলাদেশে আঘাত না হানলেও জলোচ্ছ্বাস ও বেড়িবাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর মধ্যে খুলনা, সাতক্ষীরা, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ধসে গেছে প্রায় শতাধিক বেড়িবাঁধ। এছাড়া জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বরগুনার ২৬টি গ্রাম, বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে পটুয়াখালীর ৩৪টি গ্রাম, ৩-৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে ফেনীতে পানিতে ডুবে মারা গেছেন এক জেলে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল ও ঝিনাইদহে ঝড়ো হাওয়ায় অর্ধশত বাড়িঘর লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এতে সারা দেশে প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন বলে স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানান।

আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল যে, ইয়াস সরাসরি বাংলাদেশে প্রবেশ করবে না। তবে এর প্রভাব পড়বে। তারপরেও উপকূলের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করার মতো। এর প্রভাবে জোয়ারের পানিতে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

করোনাকালে এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ দেশের উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য এক বাড়তি দুর্যোগ। আয় কমে যাওয়ার এই সময়ে ক্ষেতের ফল-ফসল, বাড়িঘর ঝড়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা মানুষকে সমস্যায় ফেলেছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সাড়ে ১৬ হাজার প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিবেচনায় এর পরিমাণ যথেষ্ট নয়। পানিবন্দী সব মানুষের জীবনধারণের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ দিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, সামাজিক সংগঠন ও অবস্থাসম্পন্নদের এগিয়ে আসা উচিত।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যারা আশ্রয়হীন হয়েছেন তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। দ্রুততার সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়িগুলোর বেশিরভাগই কাঁচা। উপকূলীয় এলাকায় পাকা ঘর গড়ে তোলা গেলে মানুষের আশ্রয়স্থল আরও নিরাপদ হতে পারে। বিষয়টি সরকারকে সক্রিয়ভাবে ভেবে দেখতে হবে।

কোন ঘূর্ণিঝড়ের পরে ক্ষতিগ্রস্ত ও অরক্ষিত বাঁধগুলো দিয়ে জোয়ারের পানি অবাধে ঢুকে আরেকটি বিপর্যয় তৈরি করে। যা আইলা ও সিডরের পরে উপকূলবাসীকে বেশ ভুগিয়েছে। এবারও একই ঘটনা ঘটছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো দ্রুত সংস্কার করা উচিত। বাঁধ সংস্কারে যেন অনিয়ম-দুর্নীতি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বহু কৃষক ও খামারি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমরা চাইব, সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াক। কোন কৃষক বা খামারির যদি ঋণ থাকে তবে সে ঋণ মওকুফ করতে হবে।

উপকূলে সুপেয় পানির সংকট দিন দিন তীব্র হচ্ছে। এ সংকট দূর করার জন্য পানির প্ল্যান্ট স্থাপনের দাবি উঠেছে। এ দাবি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হবে সেটা আমাদের প্রত্যাশা। বৃষ্টির পানি ধরে রেখে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।