বাজেট প্রস্তাবে সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের

২০২১-২০২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের পে-স্কেলসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদ। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের মহাসচিব, জাতীয় শ্রমিক লীগের নির্বাহী সদস্য এবং শ্রম আদালত-৩ এর সদস্য আমজাদ আলী খান বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ২০০৯ সালে সপ্তম জাতীয় পে-স্কেল প্রদান করা হয় এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালে অষ্টম পে-স্কেল প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রদান করা হয়। বর্তমান সময়ে বাজার মূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি ও পারিবারিক ব্যয় বৃদ্ধির দরুন ২০২১ সালে নবম জাতীয় পে-স্কেল প্রদান অনিবার্য হয়ে পড়েছে।’

এ সময় সাত দফা দাবি তুলে বলা হয়, জাতীয় স্থায়ী বেতন কমিশন গঠনপূর্বক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ১৯৭৩ সনে প্রবর্তিত কাঠামো অনুযায়ী ১০ ধাপে নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন করতে হবে। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের পার্থক্য ১:৫ হতে হবে। পূর্বের মতো শতভাগ পেনশনপ্রথা পুনর্বহাল করতে হবে। এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি চালুসহ সচিবালয়ের ন্যায় সচিবালয়ের বাইরের সরকারি কর্মচারীদের পদ ও বেতন বৈষম্য দূর করতে হবে। আয়কর বিভাগসহ অন্যান্য দপ্তরের ব্লক পোস্টধারীদের পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

আউটসোর্সিং পদ্ধতি বাতিলপূর্বক উক্ত পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে। বিভিন্ন দপ্তর/প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন খাতে কর্মরত কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে। ডাক বিভাগের প্রার্থীপ্রথা চালুসহ মাস্টার রোল ও অন্যান্য দপ্তরে কর্মরত মাস্টার রোল, কন্টিজেন্স ও ওয়ার্কচার্জ কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের পূর্বের মতো ৩টি টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড এবং বেতন সমতাকরণ পুনর্বহাল করতে হবে। জীবনযাত্রার মান সমুন্নত রাখার স্বার্থে ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয় বিবেচনা করে পেনশনের হার ৯০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ এবং গ্র্যাচ্যুইটির হার ২৩০ টাকার স্থলে ৪০০ টাকায় উন্নীত করতে হবে। নবম পে-স্কেল প্রদানের পূর্ব পর্যন্ত দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির বিষয় বিবেচনা করে ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা অবিলম্বে দিতে হবে। প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত কর্মচারীদের মতো ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের সরকারি কর্মচারীদের বিনাসুদে ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ দিতে হবে এবং উন্নয়ন খাতের কর্মচারীদের যোগদানের দিন থেকে সিনিয়রিটি পাওয়ার জন্য করা রিট মামলায় হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত আদেশ অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর এবং অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৬২ বছর করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো অন্য সব দপ্তরে পোষ্য কোটা চালু করতে হবে।

এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা প্রত্যাশা করছি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি, পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যয় বৃদ্ধি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কর্মচারীর প্রতি আন্তরিকতার বিষয় বিবেচনা করে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ১৯৭৩ সালের পে-স্কেলের মতো ১০ ধাপে নবম জাতীয় পে-স্কেলসহ উপস্থাপিত ৭ দফা দাবি প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতায় অন্তর্ভুক্ত করে আগামী ২ জুন প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করতে হবে। ২ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের পে-স্কেলসহ ৭ দফা দাবি উপস্থাপিত না হলে আগামী ৫ জুন সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার বরাবর বর্ণিত বিষয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের সভাপতি মো. ওয়ারেছ আলী, শুভেচ্ছা বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খায়ের আহমেদ মজুমদার। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন, বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগর কমিটির সভাপতি সৈয়দ রেজাউল করিম, কার্যকরী সভাপতি কে. বি. জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী পরিষদ (১৭-২০ গ্রেড) এর সভাপতি মো. মতিয়ার রহমান প্রমুখ।

রবিবার, ৩০ মে ২০২১ , ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৭ শাওয়াল ১৪৪২

বাজেট প্রস্তাবে সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

২০২১-২০২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের পে-স্কেলসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদ। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের মহাসচিব, জাতীয় শ্রমিক লীগের নির্বাহী সদস্য এবং শ্রম আদালত-৩ এর সদস্য আমজাদ আলী খান বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ২০০৯ সালে সপ্তম জাতীয় পে-স্কেল প্রদান করা হয় এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালে অষ্টম পে-স্কেল প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রদান করা হয়। বর্তমান সময়ে বাজার মূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি ও পারিবারিক ব্যয় বৃদ্ধির দরুন ২০২১ সালে নবম জাতীয় পে-স্কেল প্রদান অনিবার্য হয়ে পড়েছে।’

এ সময় সাত দফা দাবি তুলে বলা হয়, জাতীয় স্থায়ী বেতন কমিশন গঠনপূর্বক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ১৯৭৩ সনে প্রবর্তিত কাঠামো অনুযায়ী ১০ ধাপে নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন করতে হবে। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের পার্থক্য ১:৫ হতে হবে। পূর্বের মতো শতভাগ পেনশনপ্রথা পুনর্বহাল করতে হবে। এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি চালুসহ সচিবালয়ের ন্যায় সচিবালয়ের বাইরের সরকারি কর্মচারীদের পদ ও বেতন বৈষম্য দূর করতে হবে। আয়কর বিভাগসহ অন্যান্য দপ্তরের ব্লক পোস্টধারীদের পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

আউটসোর্সিং পদ্ধতি বাতিলপূর্বক উক্ত পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে। বিভিন্ন দপ্তর/প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন খাতে কর্মরত কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে। ডাক বিভাগের প্রার্থীপ্রথা চালুসহ মাস্টার রোল ও অন্যান্য দপ্তরে কর্মরত মাস্টার রোল, কন্টিজেন্স ও ওয়ার্কচার্জ কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের পূর্বের মতো ৩টি টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড এবং বেতন সমতাকরণ পুনর্বহাল করতে হবে। জীবনযাত্রার মান সমুন্নত রাখার স্বার্থে ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয় বিবেচনা করে পেনশনের হার ৯০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ এবং গ্র্যাচ্যুইটির হার ২৩০ টাকার স্থলে ৪০০ টাকায় উন্নীত করতে হবে। নবম পে-স্কেল প্রদানের পূর্ব পর্যন্ত দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির বিষয় বিবেচনা করে ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা অবিলম্বে দিতে হবে। প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত কর্মচারীদের মতো ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের সরকারি কর্মচারীদের বিনাসুদে ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ দিতে হবে এবং উন্নয়ন খাতের কর্মচারীদের যোগদানের দিন থেকে সিনিয়রিটি পাওয়ার জন্য করা রিট মামলায় হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত আদেশ অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর এবং অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৬২ বছর করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো অন্য সব দপ্তরে পোষ্য কোটা চালু করতে হবে।

এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা প্রত্যাশা করছি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি, পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যয় বৃদ্ধি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কর্মচারীর প্রতি আন্তরিকতার বিষয় বিবেচনা করে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ১৯৭৩ সালের পে-স্কেলের মতো ১০ ধাপে নবম জাতীয় পে-স্কেলসহ উপস্থাপিত ৭ দফা দাবি প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতায় অন্তর্ভুক্ত করে আগামী ২ জুন প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করতে হবে। ২ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের পে-স্কেলসহ ৭ দফা দাবি উপস্থাপিত না হলে আগামী ৫ জুন সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার বরাবর বর্ণিত বিষয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের সভাপতি মো. ওয়ারেছ আলী, শুভেচ্ছা বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খায়ের আহমেদ মজুমদার। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন, বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগর কমিটির সভাপতি সৈয়দ রেজাউল করিম, কার্যকরী সভাপতি কে. বি. জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী পরিষদ (১৭-২০ গ্রেড) এর সভাপতি মো. মতিয়ার রহমান প্রমুখ।