মানুষ ও বন্যপ্রাণী উভয়কেই রক্ষা করতে হবে

হাতি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের সীমান্তসংলগ্ন গ্রামগুলোর মানুষ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহরও বেশি সময় ধরে বন ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে হাতির একাধিক দল। একেকটি দলে হাতি রয়েছে ৩০-৪০টি। তারা স্থানীয়দের ফলদ গাছের ক্ষতি করছে, জমির ফসল নষ্ট করছে, বাড়ি-ঘর তছনছ করছে। বন্য হাতির আক্রমণে গত দুই বছরে হালুয়াঘাটে তিনজনের মৃত্যুও হয়েছে। হাতির দল থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় বাসিন্দারা সনাতনী পদ্ধতি অবলম্বন করছেন। বন বিভাগের কর্তারা শুধু সতর্কবাণী শুনিয়েই কাজ সারছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ছাড়াও জামালপুর, শেরপুর, কক্সবাজারসহ তিন পার্বত্য জেলায় বন্য হাতি বছরের বিভিন্ন সময় লোকালয়ে চলে আসে। বন্য হাতির কারণে গত ১০ বছরে এসব এলাকায় প্রায় অর্ধশত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, ফল-ফসল ও বসতভিটার ক্ষতি তো হয়েছেই।

হাতির উপস্থিতিতে স্থানীয় মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়, প্রাণহানি ঘটে- এজন্য তাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। হাতির উপস্থিতি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ‘উপদ্রব’ বলে মনে হলেও তারা নেহায়েত ক্ষুধার তাড়নায় বন থেকে লোকালয়ে এসে হাজির হয়। বনগুলোতে খাদ্যচক্র দিন দিন ধ্বংস হচ্ছে। খাদ্যসংকট দেখা দেয় বলেই হাতি লোকালয়ে প্রবেশ করে। খাদ্য সংস্থান হলে আবার তারা বনে ফিরেও যায়।

হাতি তাড়ানোর জন্য বন বিভাগ এখনও সনাতনী পদ্ধতি অনুসরণ করে বলে জানা যায়। এ পদ্ধতিতে শস্য ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাক রেখে দেওয়া হয়, হাতিকে লক্ষ্য করে জ্বলন্ত মশাল ও পটকা ছোড়া হয় এবং ঢাক-ঢোল পেটানো হয়। আবার স্থানীয়রা দেশি বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। লোকালয়ে ঢুকে পড়া হাতিকে অনেক সময় মেরেও ফেলা হয়। এটা কাম্য নয়।

হাতির পাল তখনই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে যখন আতঙ্কিত মানুষ তাদের স্বাভাবিক চলাচলের পথে বিঘœ তৈরি করে। হাতির পালের সঙ্গে সাধারণত তাদের বাচ্চা থাকে। হাতি তাড়ানোর সনাতনী পদ্ধতির কারণে তারা ধারণা করে বাচ্চাদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। এ কারণে অনেক সময় মা হাতি হিংস্র হয়ে ওঠে।

তাড়ানোর সময় হাতি যাতে আটকা না পড়ে নির্বিঘ্নে চলে যেতে পারে সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখতে হবে। হাতি তাড়ানোর বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও কার্যকর কৌশল শেখানো যেতে পারে। বন্য হাতি থেকে রক্ষা পেতে বনবিভাগের আধুনিক প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন করাও জরুরি। অ্যালিফেন্ট রেসকিউ টিম গঠন করা যেতে পারে। আর একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো ‘ইনফ্রাসাউন্ড’। এ পদ্ধতিতে এমন মৃদু তরঙ্গের শব্দ সৃষ্টি করা হয় যা মানুষ শুনতে পায় না কিন্তু হাতির কানে সেটি বিকট আওয়াজ তৈরি করে। বিজ্ঞানীদের মতে এ শব্দ অনেকদূর পৌঁছাতে পারে। ফলে ইনফ্রাসাউন্ড হাতিকে লোকালয় থেকে অনেক দূর তাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে। কারণ হাতির শ্রবণশক্তি প্রখর।

আমরা চাই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমন ব্যবস্থা নেবে যাতে মানুষ ও হাতি উভয়েই রক্ষা পায়। মানুষের ক্ষয়ক্ষতি বা বন্য প্রাণীর অনিষ্ট কোনটাই কাম্য নয়।

রবিবার, ৩০ মে ২০২১ , ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৭ শাওয়াল ১৪৪২

লোকালয়ে হাতি

মানুষ ও বন্যপ্রাণী উভয়কেই রক্ষা করতে হবে

হাতি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের সীমান্তসংলগ্ন গ্রামগুলোর মানুষ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহরও বেশি সময় ধরে বন ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে হাতির একাধিক দল। একেকটি দলে হাতি রয়েছে ৩০-৪০টি। তারা স্থানীয়দের ফলদ গাছের ক্ষতি করছে, জমির ফসল নষ্ট করছে, বাড়ি-ঘর তছনছ করছে। বন্য হাতির আক্রমণে গত দুই বছরে হালুয়াঘাটে তিনজনের মৃত্যুও হয়েছে। হাতির দল থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় বাসিন্দারা সনাতনী পদ্ধতি অবলম্বন করছেন। বন বিভাগের কর্তারা শুধু সতর্কবাণী শুনিয়েই কাজ সারছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ছাড়াও জামালপুর, শেরপুর, কক্সবাজারসহ তিন পার্বত্য জেলায় বন্য হাতি বছরের বিভিন্ন সময় লোকালয়ে চলে আসে। বন্য হাতির কারণে গত ১০ বছরে এসব এলাকায় প্রায় অর্ধশত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, ফল-ফসল ও বসতভিটার ক্ষতি তো হয়েছেই।

হাতির উপস্থিতিতে স্থানীয় মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়, প্রাণহানি ঘটে- এজন্য তাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। হাতির উপস্থিতি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ‘উপদ্রব’ বলে মনে হলেও তারা নেহায়েত ক্ষুধার তাড়নায় বন থেকে লোকালয়ে এসে হাজির হয়। বনগুলোতে খাদ্যচক্র দিন দিন ধ্বংস হচ্ছে। খাদ্যসংকট দেখা দেয় বলেই হাতি লোকালয়ে প্রবেশ করে। খাদ্য সংস্থান হলে আবার তারা বনে ফিরেও যায়।

হাতি তাড়ানোর জন্য বন বিভাগ এখনও সনাতনী পদ্ধতি অনুসরণ করে বলে জানা যায়। এ পদ্ধতিতে শস্য ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাক রেখে দেওয়া হয়, হাতিকে লক্ষ্য করে জ্বলন্ত মশাল ও পটকা ছোড়া হয় এবং ঢাক-ঢোল পেটানো হয়। আবার স্থানীয়রা দেশি বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। লোকালয়ে ঢুকে পড়া হাতিকে অনেক সময় মেরেও ফেলা হয়। এটা কাম্য নয়।

হাতির পাল তখনই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে যখন আতঙ্কিত মানুষ তাদের স্বাভাবিক চলাচলের পথে বিঘœ তৈরি করে। হাতির পালের সঙ্গে সাধারণত তাদের বাচ্চা থাকে। হাতি তাড়ানোর সনাতনী পদ্ধতির কারণে তারা ধারণা করে বাচ্চাদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। এ কারণে অনেক সময় মা হাতি হিংস্র হয়ে ওঠে।

তাড়ানোর সময় হাতি যাতে আটকা না পড়ে নির্বিঘ্নে চলে যেতে পারে সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখতে হবে। হাতি তাড়ানোর বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও কার্যকর কৌশল শেখানো যেতে পারে। বন্য হাতি থেকে রক্ষা পেতে বনবিভাগের আধুনিক প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন করাও জরুরি। অ্যালিফেন্ট রেসকিউ টিম গঠন করা যেতে পারে। আর একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো ‘ইনফ্রাসাউন্ড’। এ পদ্ধতিতে এমন মৃদু তরঙ্গের শব্দ সৃষ্টি করা হয় যা মানুষ শুনতে পায় না কিন্তু হাতির কানে সেটি বিকট আওয়াজ তৈরি করে। বিজ্ঞানীদের মতে এ শব্দ অনেকদূর পৌঁছাতে পারে। ফলে ইনফ্রাসাউন্ড হাতিকে লোকালয় থেকে অনেক দূর তাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে। কারণ হাতির শ্রবণশক্তি প্রখর।

আমরা চাই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমন ব্যবস্থা নেবে যাতে মানুষ ও হাতি উভয়েই রক্ষা পায়। মানুষের ক্ষয়ক্ষতি বা বন্য প্রাণীর অনিষ্ট কোনটাই কাম্য নয়।