পাহাড়ে কাজুবাদাম চাষ : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

জামাল উদ্দিন

পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অন্যতম একটি অতি পরিচিত ফসলের নাম কাজুবাদাম। এটি তাদের আয়ের অন্যতম একটি উৎস হিসাবে হাতছানি দিচ্ছে। পাহাড়ের একেক জনগোষ্ঠী একে একেক নামে ডাকে। চাকমা ভাষায় হাজুবাদাম বা তাংগুলো, মারমা ভাষায় বাদাংসি, বম ভাষায় ক্যাশনাক, ত্রিপুরা ভাষায় বাদাম-বাথাই আর চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় টাম এবং ইংরেজিতে ক্যাশনাট বা বাংলায় কাজুবাদাম নামে পরিচিত। যে যেই নামেই ডাকুক না কেন? তার কদর বাড়ছে দিনে দিনে। দীর্ঘ ২০-৩০ বছর আগে থেকেই এই কাজুবাদাম পাহাড়ে চাষ হয়ে আসছে অনেকটা অবহেলিত অবস্থায়। তার কদর তখন কেউ বুঝে উঠতে পারেনি। যুগের পরিবর্তনে এর চাহিদা বেড়ে এখন আকাশচুম্বী। আন্তর্জাতিক বাজারেও এর চাহিদা ব্যাপক। ফলে রপ্তানির একটা অমিত সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববাজারে রপ্তানি করতে হলে এর গুণগতমান সর্বাগ্রে বিবেচনায় রাখতে হবে। তার জন্য গবেষণার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গবেষণার মাধ্যমেই উন্নত জাত উদ্ভাবন, মান-সম্মত বাদাম উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমেই রপ্তানি সম্ভব। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কাজুবাদাম চাষ উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও রপ্তানির বিষয়ে বেশ আন্তরিক। ফলে নতুন নতুন প্রকল্পও গ্রহণ করছে। ফলশ্রুতিতে দেশের অথনীতিতে অবদান রাখবে এতে কোন সন্দেহ নাই।

দেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্যের তালিকায় বাদাম জাতীয় ফসলে কাজুবাদাম শীর্যে রয়েছে। এ ফসলের যেমন রয়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্ব তেমনি রয়েছে পুষ্টিগুণও, যা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ চমকপ্রদ। কাজুবাদাম হৃৎপিন্ডের জন্য শক্তিদায়ক, ডায়াবেটিক রোগের জন্য উপকারী, হজমে সহায়ক, ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে, পিত্তথলি ও কিডনিতে পাথর তৈরিতে বাধা দেয়, রক্ত শূন্যতায় কাজ দেয়, হাঁড় ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে, ব্লাড প্রেসার কমায়, অবসাদ দূর করে ভালো ঘুম আনয়নে সাহায্য করে। পাহাড়ি অঞ্চলকে কাজুবাদাম চাষ সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের দ্বার বলা যায়। দেশের এক দশমাংশ এলাকাজুড়ে এ পার্বত্য অঞ্চল। এ অঞ্চলের আবহাওয়া জলবায়ু মাটি সবই কাজুবাদাম চাষের জন্য বেশ উপযোগী। দেশে যে পরিমাণ কাজু বাদাম উৎপন্ন হয় তার অর্ধেক আসে বান্দরবান পার্বত্য জেলা থেকে। বিশেষ করে থানচি ও রুমা উপজেলায় এর ব্যাপক চাষ হয়। উন্নত জাতসহ আধুনিক চাষাবাদে সহায়তা পেলে পুরো তিন পার্বত্য জেলায় এ কাজুবাদাম চাষের বিপ্লব ঘটবে। কাজুবাদাম পচনশীল নয় বলে পাহাড়ের প্রত্যান্ত অঞ্চলেও চাষ করার সুযোগ রয়েছে।

পাহাড়ি এলাকায় এখনও বহু পতিত ভূমি রয়েছে। সেচ সুবিধার অভাবে চাষাবাদ করা কঠিন হয়ে পড়ে। যেহেতু কাজুবাদাম একটি উষ্ণমন্ডলীয় ফল। তাই এতে পানি ব্যবহার কম লাগে। পাহাড়ি এলাকায় নভেম্বর থেকে এপ্রিল/মে মাস পর্যন্ত তেমন বৃষ্টি দেখা যায় না। সে সময় বেশ খরা ও গরম আবহাওয়া থাকে। সে অবস্থায় অন্যান্য ফসল দাঁড়াতে না পারলেও কাজুবাদাম সদর্পে টিকে থাকে। কাজুবাদাম চাষে খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এ ফসলে সার ও সেচের তেমন বেশি প্রয়োজন পড়ে না। তবে কাজুবাদাম গাছে উচ্চ ফলন প্রাপ্তির জন্য সুপারিশকৃত সারের মাত্রা নির্ধারণ জরুরি। তার জন্য গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। পোকা-মাকড়ের আক্রমণও তেমন হয় না বললেই চলে। যেসব রোগ-বালাই সচরাচর দেখা যায় তা দমন করা গেলে উৎপাদনশীলতা আরও বাড়বে। বর্তমানে প্রতি হেক্টরে কাজুবাদামের গড় উৎপাদশীলতা (ফলন) ১.৫-১.৮ টন বলে জানা যায়। যদিও গবেষণার মাধ্যমে এর উৎপাদনশীলতা আরও বাড়ানো সম্ভব।

লাভের দিক বিবেচনা করলে কাজুবাদাম একটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল। কেননা এই কাজুবাদাম শুধু বাদাম নয়। এর বহুমাত্রিক ব্যবহার বিদ্যমান। বলা যায় একই অঙ্গে বহুরূপ। বাদামের খোসা থেকে উৎপাদিত তৈল দিয়ে উৎকৃষ্টমানের জৈব বালাইনাশক, ভিনেগার, এলকোহল তৈরি করা যায় বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত রয়েছে। বাদামের সঙ্গে লাগোয়া উপরের ফল থেকে জুস তৈরি করা যেতে পারে। এ কাজু এ্যাপল ফলে ৮০ শতাংশ জুস থাকে। উহা অনেক ঔষধিগুণ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ। এ জুসে কমলালেবুর চেয়ে ছয়গুণ বেশি ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এসব প্রক্রিয়াজাত জুস বিক্রি করেও অতিরিক্ত আয় করা সম্ভব। প্রতি ৩.৫-৪.০ কেজি খোসাযুক্ত বাদাম থেকে ১ কেজি প্রক্রিয়াজাত বাদাম পাওয়া যায়। যার গড় বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৮০০-১২০০ টাকা। আর খোসাযুক্ত বাদামের কৃষক পর্যায়ে মূল্য ৫০-৬০ টাকা। মূলত: প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে এ বাদামের অধিক মূল্য পাওয়া সম্ভব। তাই প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। বর্তমানে রাঙ্গামাটি, বান্দরবানের মুসলিমপাড়ায় এবং চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানা রয়েছে। উৎপাদান বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি করা দরকার। পার্বত্য এলাকায় সরকারিভাবে একটি কফি ও কাজুবাদাম গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পাহাড়ে কাজুবাদাম চাষে প্রধান চেলেঞ্জ হলো বিদ্যমান জাতের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে চাষিদের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। কাজুবাদাম গাছের শিকড় অগভীর হওয়ায় ফলবান বৃক্ষ ঝড়ো-হাওয়ায় উপড়ে পড়ে যায়। এটা রোপণ পদ্ধতি সঠিক না হওয়ার কারণেও ঘটে থাকে। কাজুবাদামের বাগান বেশিরভাগ প্রত্যান্ত অঞ্চলে বিধায় পরিবহন খরচ বেশি পড়ে। তাছাড়া বেপারীদের দৌরাত্ম্য তো আছেই। কাজুবাদাম সংগ্রহ, শুকানো ও সংরক্ষণের ব্যাপারে কৃষকরা উদাসীন ও অনভিজ্ঞ। কাজুবাদাম পাকা অবস্থায় গাছ থেকে ঝরে পড়ে। কৃষক মাটি থেকে উহা সঠিক সময়ে সংগ্রহ না করার কারণে মাটির সংস্পর্শে এসে বা বৃষ্টির পানিতে ভিজে কালো হয়ে যায় এবং গুণগত মান নষ্ট হয়। ফলে বাজারমূল্য অনেক কমে যায়। এক্ষত্রে ঝরে পড়া বাদাম তাড়াতাড়ি সংগ্রহপূর্বক শুকিয়ে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা দরকার। অধিক উৎপাদনশীল জাত প্রবর্তন জরুরি। সে সঙ্গে আধুনিক উৎপাদন কলাকৌশল, সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে চাষিদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান দরকার। প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানায় গ্রেডিং করে মান-সম্মত বাদাম সরবরাহ করা গেলে অধিক মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে। সে সঙ্গে উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) নীতিমালা অনুসরন করে মান-সম্মত কাজুবাদাম উৎপাদন করতে পারলে রপ্তানির সুযোগ বাড়বে বহুগুণে।

[লেখক : জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সাবেক ন্যাশনাল কনসালটেন্ট; ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম]

রবিবার, ৩০ মে ২০২১ , ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৭ শাওয়াল ১৪৪২

পাহাড়ে কাজুবাদাম চাষ : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

জামাল উদ্দিন

পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অন্যতম একটি অতি পরিচিত ফসলের নাম কাজুবাদাম। এটি তাদের আয়ের অন্যতম একটি উৎস হিসাবে হাতছানি দিচ্ছে। পাহাড়ের একেক জনগোষ্ঠী একে একেক নামে ডাকে। চাকমা ভাষায় হাজুবাদাম বা তাংগুলো, মারমা ভাষায় বাদাংসি, বম ভাষায় ক্যাশনাক, ত্রিপুরা ভাষায় বাদাম-বাথাই আর চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় টাম এবং ইংরেজিতে ক্যাশনাট বা বাংলায় কাজুবাদাম নামে পরিচিত। যে যেই নামেই ডাকুক না কেন? তার কদর বাড়ছে দিনে দিনে। দীর্ঘ ২০-৩০ বছর আগে থেকেই এই কাজুবাদাম পাহাড়ে চাষ হয়ে আসছে অনেকটা অবহেলিত অবস্থায়। তার কদর তখন কেউ বুঝে উঠতে পারেনি। যুগের পরিবর্তনে এর চাহিদা বেড়ে এখন আকাশচুম্বী। আন্তর্জাতিক বাজারেও এর চাহিদা ব্যাপক। ফলে রপ্তানির একটা অমিত সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববাজারে রপ্তানি করতে হলে এর গুণগতমান সর্বাগ্রে বিবেচনায় রাখতে হবে। তার জন্য গবেষণার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গবেষণার মাধ্যমেই উন্নত জাত উদ্ভাবন, মান-সম্মত বাদাম উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমেই রপ্তানি সম্ভব। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কাজুবাদাম চাষ উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও রপ্তানির বিষয়ে বেশ আন্তরিক। ফলে নতুন নতুন প্রকল্পও গ্রহণ করছে। ফলশ্রুতিতে দেশের অথনীতিতে অবদান রাখবে এতে কোন সন্দেহ নাই।

দেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্যের তালিকায় বাদাম জাতীয় ফসলে কাজুবাদাম শীর্যে রয়েছে। এ ফসলের যেমন রয়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্ব তেমনি রয়েছে পুষ্টিগুণও, যা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ চমকপ্রদ। কাজুবাদাম হৃৎপিন্ডের জন্য শক্তিদায়ক, ডায়াবেটিক রোগের জন্য উপকারী, হজমে সহায়ক, ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে, পিত্তথলি ও কিডনিতে পাথর তৈরিতে বাধা দেয়, রক্ত শূন্যতায় কাজ দেয়, হাঁড় ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে, ব্লাড প্রেসার কমায়, অবসাদ দূর করে ভালো ঘুম আনয়নে সাহায্য করে। পাহাড়ি অঞ্চলকে কাজুবাদাম চাষ সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের দ্বার বলা যায়। দেশের এক দশমাংশ এলাকাজুড়ে এ পার্বত্য অঞ্চল। এ অঞ্চলের আবহাওয়া জলবায়ু মাটি সবই কাজুবাদাম চাষের জন্য বেশ উপযোগী। দেশে যে পরিমাণ কাজু বাদাম উৎপন্ন হয় তার অর্ধেক আসে বান্দরবান পার্বত্য জেলা থেকে। বিশেষ করে থানচি ও রুমা উপজেলায় এর ব্যাপক চাষ হয়। উন্নত জাতসহ আধুনিক চাষাবাদে সহায়তা পেলে পুরো তিন পার্বত্য জেলায় এ কাজুবাদাম চাষের বিপ্লব ঘটবে। কাজুবাদাম পচনশীল নয় বলে পাহাড়ের প্রত্যান্ত অঞ্চলেও চাষ করার সুযোগ রয়েছে।

পাহাড়ি এলাকায় এখনও বহু পতিত ভূমি রয়েছে। সেচ সুবিধার অভাবে চাষাবাদ করা কঠিন হয়ে পড়ে। যেহেতু কাজুবাদাম একটি উষ্ণমন্ডলীয় ফল। তাই এতে পানি ব্যবহার কম লাগে। পাহাড়ি এলাকায় নভেম্বর থেকে এপ্রিল/মে মাস পর্যন্ত তেমন বৃষ্টি দেখা যায় না। সে সময় বেশ খরা ও গরম আবহাওয়া থাকে। সে অবস্থায় অন্যান্য ফসল দাঁড়াতে না পারলেও কাজুবাদাম সদর্পে টিকে থাকে। কাজুবাদাম চাষে খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এ ফসলে সার ও সেচের তেমন বেশি প্রয়োজন পড়ে না। তবে কাজুবাদাম গাছে উচ্চ ফলন প্রাপ্তির জন্য সুপারিশকৃত সারের মাত্রা নির্ধারণ জরুরি। তার জন্য গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। পোকা-মাকড়ের আক্রমণও তেমন হয় না বললেই চলে। যেসব রোগ-বালাই সচরাচর দেখা যায় তা দমন করা গেলে উৎপাদনশীলতা আরও বাড়বে। বর্তমানে প্রতি হেক্টরে কাজুবাদামের গড় উৎপাদশীলতা (ফলন) ১.৫-১.৮ টন বলে জানা যায়। যদিও গবেষণার মাধ্যমে এর উৎপাদনশীলতা আরও বাড়ানো সম্ভব।

লাভের দিক বিবেচনা করলে কাজুবাদাম একটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল। কেননা এই কাজুবাদাম শুধু বাদাম নয়। এর বহুমাত্রিক ব্যবহার বিদ্যমান। বলা যায় একই অঙ্গে বহুরূপ। বাদামের খোসা থেকে উৎপাদিত তৈল দিয়ে উৎকৃষ্টমানের জৈব বালাইনাশক, ভিনেগার, এলকোহল তৈরি করা যায় বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত রয়েছে। বাদামের সঙ্গে লাগোয়া উপরের ফল থেকে জুস তৈরি করা যেতে পারে। এ কাজু এ্যাপল ফলে ৮০ শতাংশ জুস থাকে। উহা অনেক ঔষধিগুণ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ। এ জুসে কমলালেবুর চেয়ে ছয়গুণ বেশি ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এসব প্রক্রিয়াজাত জুস বিক্রি করেও অতিরিক্ত আয় করা সম্ভব। প্রতি ৩.৫-৪.০ কেজি খোসাযুক্ত বাদাম থেকে ১ কেজি প্রক্রিয়াজাত বাদাম পাওয়া যায়। যার গড় বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৮০০-১২০০ টাকা। আর খোসাযুক্ত বাদামের কৃষক পর্যায়ে মূল্য ৫০-৬০ টাকা। মূলত: প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে এ বাদামের অধিক মূল্য পাওয়া সম্ভব। তাই প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। বর্তমানে রাঙ্গামাটি, বান্দরবানের মুসলিমপাড়ায় এবং চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানা রয়েছে। উৎপাদান বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি করা দরকার। পার্বত্য এলাকায় সরকারিভাবে একটি কফি ও কাজুবাদাম গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পাহাড়ে কাজুবাদাম চাষে প্রধান চেলেঞ্জ হলো বিদ্যমান জাতের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে চাষিদের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। কাজুবাদাম গাছের শিকড় অগভীর হওয়ায় ফলবান বৃক্ষ ঝড়ো-হাওয়ায় উপড়ে পড়ে যায়। এটা রোপণ পদ্ধতি সঠিক না হওয়ার কারণেও ঘটে থাকে। কাজুবাদামের বাগান বেশিরভাগ প্রত্যান্ত অঞ্চলে বিধায় পরিবহন খরচ বেশি পড়ে। তাছাড়া বেপারীদের দৌরাত্ম্য তো আছেই। কাজুবাদাম সংগ্রহ, শুকানো ও সংরক্ষণের ব্যাপারে কৃষকরা উদাসীন ও অনভিজ্ঞ। কাজুবাদাম পাকা অবস্থায় গাছ থেকে ঝরে পড়ে। কৃষক মাটি থেকে উহা সঠিক সময়ে সংগ্রহ না করার কারণে মাটির সংস্পর্শে এসে বা বৃষ্টির পানিতে ভিজে কালো হয়ে যায় এবং গুণগত মান নষ্ট হয়। ফলে বাজারমূল্য অনেক কমে যায়। এক্ষত্রে ঝরে পড়া বাদাম তাড়াতাড়ি সংগ্রহপূর্বক শুকিয়ে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা দরকার। অধিক উৎপাদনশীল জাত প্রবর্তন জরুরি। সে সঙ্গে আধুনিক উৎপাদন কলাকৌশল, সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে চাষিদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান দরকার। প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানায় গ্রেডিং করে মান-সম্মত বাদাম সরবরাহ করা গেলে অধিক মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে। সে সঙ্গে উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) নীতিমালা অনুসরন করে মান-সম্মত কাজুবাদাম উৎপাদন করতে পারলে রপ্তানির সুযোগ বাড়বে বহুগুণে।

[লেখক : জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সাবেক ন্যাশনাল কনসালটেন্ট; ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম]